আস্ত একেকটা নারকেল ভাতে ভাতে পাতে পাবে জনগণ। আস্ত নারকেল পেতে হলে কী করতে হবে ভাগ্না?
মামাকে নারকেল গাছে তুলতে হবে।
তোল মামাকে নারকেল গাছে।
বোতামে চাপ দিতেই মামা সোজা নারকেল গাছে।
স্বপনদিঘির মানুষ মামার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত। একতা কী না পারে? কিন্তু, এসবই রাতের স্বপ্ন করে, সব নারকেল হাতিয়ে মামা হেলিকপ্টারে হাওয়া। বৃহত্তর কাজে এমন মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা বিবেচনা করে দেশের রানি/রাজা হেলিকপ্টার পাঠিয়েছিল।
—যাবে না মামা? মামা কি যাবে না?
—না, এগল্প শুধু স্বপনদিঘির মানুষদের বোকা হওয়ার গল্প নয়, কোনও একটা রাজ্যের নয়, সমগ্র দেশের প্রতিভূ এই আয়রন মামা। আর এখান থেকেই তৈরি হয় অজস্র প্রশ্ন। তৈরি হয় আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা। এই আয়রন মামারা আসলে কারা? কী করে চিনবে আমজনতা।
বিজ্ঞান আজ শুক্রাণু-ডিম্বাণু ছাড়াই স্টেমসেল দিয়ে মানুষ তৈরি করছে। AI মানুষের বিকল্প হয়ে উঠছে, অথচ এই মামাদের অন্তর পড়ার কোনও যন্ত্র নেই। এরা তো আমজনতার মতোই বেড়ে ওঠা মানুষ। একই রকম দেখতে। শুধু এদের ভিতরে শয়তান বাস করে। এদের চেনা বড্ড কঠিন। এক শ্রেণীর মানুষ জন্মগতভাবেই বুঝি বিশ্বাসঘাতক হয়। লোভ একটা প্রবৃত্তি। সবার আছে, প্রতিটি মানুষ, পাখি, জীবজন্তু সবার, কিন্তু লোভকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো তীক্ষ্ম অস্ত্র কেবল মানুষের হাতেই আছে। দু:খ এটাই যে, মানুষ এই অস্ত্রটির ব্যবহার জানে না। এ যে নিতান্তই অপাত্রে দান।
আসলে সমাজ এক গভীর অসুখে নিমজ্জিত।
রাজনীতি কোথায় নেই? সংসার, সমাজ, এমনকি স্ত্রী ও পুরুষের ভিতরেও একে অপরকে হারানোর এক সূক্ষ্ম রাজনীতি বয়ে চলে। এই অসুস্থ সমাজে, এই অসুস্থ রাজনীতির নামে বমি পায় আমাদের। রাজনীতির এই অবনতি কি শুধু নেতা নেত্রীদের কারণেই? আমজনতার এতে কোনও হাত নেই কি? এদের কালো হাত কাদের মদতে পরিপুষ্ট হচ্ছে? দেওয়াল হয়ে কে বা কারা এদের রক্ষা করছে? একটা একা কলাগাছ কি ঝড়ের সাথে যুদ্ধ করতে পারত?
আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ বিকিয়ে যাচ্ছে লোভের কাছে।
এই নেতা, নেত্রীরা, এই বিকিয়ে যাওয়া মানুষগুলো, এরা কারা —ভাই? আমার আপনার বাড়িতেই বড়ো হয়েছে এরা। কারোর ভাই, কারোর বোন। একটা সুষ্ঠ পারিবারিক শিক্ষা একজন সুষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। শিক্ষা আর দরিদ্রতা একে অপরের পরিপূরক নয়। শিক্ষা শুধু পুঁথিগতও নয়। আমাদের যেমন টাকার অভাব আছে, তেমনই অভাব আছে শিক্ষারও।
ক'জন বাবা-মা তাদের সন্তানকে উদার হওয়ার মতো মানবিক শিক্ষা দেন? ক' জন বাবা-মা তার সন্তানকে বলেন, " পরীক্ষা হলে খাতা ঢেকে লেখার দরকার নেই, কেউ তোমার দেখে লিখে যদি উপকার পায়, তো পাক।" এটা তো শিশুর প্রাথমিক বিকাশের জায়গা, এখান থেকেই তে সে মানবিকতার পাঠ পায়। শিশুর মনের বিকাশ না-হলে সত্যিই কি দেশের বিকাশ সম্ভব? যে শিশু শুধু নিতে নিতে বড়ো হয়, সে তো নেওয়াটাই সঠিক মনে করবে। যে শিশু কেড়ে খেতে খেতে বড়ো হয়, সে তো ছিনিয়ে নিতেই শিখবে। যে শিশু অধিকার জমানোর নামে হত্যা দেখবে, সে তো হত্যাই শিখবে।
পৃথিবীর সবথেকে বড়ো রাজনীতি ক্রিয়াক্ষেত্র মহাভারত। ক্ষমতাই শেষ কথা। আমরা মহাভারতের রাজনীতির ধ্বংসাত্মক শিক্ষাটা গ্রহণ করে, ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার অসৎ উপায়টাই গ্রহণ করেছি। আমরা মহাভারতের প্রতিশোধ নেওয়ার আস্ফালনটাই গ্রহণ করেছি। ত্যাগ, ক্ষমা, স্নেহ, ভালোবাসা, এগুলো আমাদের গ্রহণের বাইরে থেকে গিয়েছে। আসলে নেগেটিভিটি অনেকবেশি দ্রবণীয়। সহজেই মানুষের মস্তিষ্কের কোষে কোষে মিশে যায় ।পজিটিভির আলো এত তীব্র যে, সহজে নিজের শরীরে শোষণ করা যায় না।
আজ নেতিবাচক শক্তি মানব সভ্যতাকে পিছিয়ে দিতে দিতে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়েছে। এখনই শেষ সময়।
—"হে মানুষ, আত্মবিশ্বেষণ করো"
সভ্যতার সংকট.... নতুন পৃথিবী গড়তে হলে, যে কোনও রকম লোভকে একবার বুক চিতিয়ে বলো —" না"
সভ্যতার সংকট.... নতুন পৃথিবী গড়তে হলে, যে কোনও রকম লোভকে একবার বুক চিতিয়ে বলো —" না"
এ সমাজ রঙে নয়, ধর্মে নয়, ক্ষতমায় নয়, লোভে নয়... শুধু মানবিকতা-ই এর চালিকা শক্তি হোক।
সুচিন্তিত মতামত দিন