সম্পাদকীয় | প্রিয়দীপ

"কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না"!
সকলেই জানি যার সামগ্রীক অর্থ শাররীক ভাবে অক্ষম ব্যাক্তির অক্ষমতার দিকটি প্রকাশ্যে তুলে না ধরা। যা আমাদের মানবিকতা - শিষ্টাচার বহির্ভুত গহির্ত সামাজিক অপরাধ। 

ছোটবেলা থেকেই পুঁথি পুস্তক এমনকি বাড়ীর বয়োজ্যৈষ্ঠদের থেকে শোনা বাক্যটির গভীরতা এবং তার তাৎক্ষণিক উপলব্ধি করুণ হলেও অভিজ্ঞতার সঞ্চারে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বাক্যটির ভাবাবেগ একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অর্থাৎ, প্রকৃতি প্রতিবন্ধীরাই যে শুধু অন্ধ, খোঁড়া, বধির তা নয়। সমাজের মূল স্রোতে অসংখ্য ভুয়া কানা, খোঁড়া, বোধিরই এখন নাগরিক সমাজের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। 

এদের অতি বোধিরতা, অতি নির্লজ্জতা, অতি নির্মমতার স্বতঃস্ফূর্ততায় স্মরণে এলো জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতা - 

"
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই—প্রীতি নেই
—করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব'লে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়"। 

এত নৈরাজ্যের পরও প্রশ্ন এসেই যায়, ক্ষীণদৃষ্টি সম্পন্ন কোন জাতিকে তার সামগ্রীক দীনতার দিকটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার পরও - যখন তার চিন্তা চেতনা  স্থবির থাকে,  ক্ষোভ বিক্ষোভ প্রতিবাদ প্রতিরোধ কোনোকিছুতেই স্বতঃস্ফূর্ত মতামত / অংশগ্রহণ থাকে না, আদৌ কী তাকে সুচিন্তক মানুষ বলা যায়? অথবা অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থানের মৌলিক অধিকার যখন রাজনৈতিক মাস্তান / ক্যাডারদের কব্জায় ভূলুণ্ঠিত, নিয়ন্ত্রিত তখন এহেন নাগরিক সমূহের নিস্পৃহতা! কি বলবেন? 

সম্পাদকীয় | প্রিয়দীপ ১২তম বর্ষপূর্তি
চলছে শব্দের মিছিলের ১২তম সংকলন। সম্পাদকীয়তে কোথায় বিগত বর্ষ সমূহের ফিরিস্তি লিখব, লিখবো ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো লেখকদের স্তুতিকথা, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে মেহনতি মানুষের জন্য আকুল সাহিত্যিকদের কথা, নানা বর্ণের শিল্পীদের কথা, তা নয় লিখছি - 

ভোট এলেই বঙ্গজুড়ে উলঙ্গ মাস্তান বাটপারদের অস্ত্রের মহড়া । নির্বিঘ্নে হত্যা লুঠ দাঙ্গা যেন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।  যার যত নৈপুণ্যতা তাদের প্রতিই আইন ব্যবস্থার আনুগত্য প্রকাশ। 

তবে কি রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় বেআইনি অস্ত্র প্রদর্শন, গোলা বারুদ বিস্ফোরণ, হত্যা  গণতন্ত্রে  সাতখুন মাফ? আদতে রাজকোষ লুন্ঠনের এই অভিসন্ধি কেউ কি দেখার নেই? সত্যিই কেউ কি শোনার নেই? বোঝার নেই? তবে যে এতসব গালভরা বিভিন্ন সাংবিধানিক পদ! আইন কানুন থেকে রক্ষক! 

এমন বহুবিধ প্রশ্ন, গালভরা বুদ্ধিবৃত্তি বিবেক সর্বস্ব মানুষের কাছে আজ উন্মুক্ত। হ্যাঁ শুধুই উম্মুক্ত। কেননা অবিবেচক, বিকলাঙ্গ, বধির এবং চাটুয়া সমমনস্ক সমবেত জল্লাদদের নিরঙ্কুশ অত্যাচারে মানুষ ভয়ে হোক, ভক্তিতে হোক চূড়ান্ত নির্লিপ্ত। 

এর থেকে পরিত্রাণ ? উপায় ?  গণবিদ্রোহ! 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.