ত নি মা হা জ রা | নানা রঙের ভাষা
ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে টুসকি। ঘুম এলেও কিছুতেই সে ঘুমোবে না। আজকাল সে একটা নতুন খেলায় মেতেছে। রাত হলে কমলামাসি যখন ঘুমিয়ে পড়ে তার ঘরের মেঝেয় পাতা বিছানায় তখন চুপিচুপি উঠে গিয়ে মাবাবার ঘরে উঁকি মারা। ওরা কেমন দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে, জামাকাপড় সব খুলে ফেলে, সেটা দেখতে দেখতে ওর শরীরের ভেতরটা কেমন যেন পাকায়, গলার কাছটা কেমন যেন শুকিয়ে টানটান হয়ে আসে, কোমরের নীচটায় কেমন যেন ঝিম ধরে যায়, কিন্তু খুব আরাম লাগে তাতারপর শরীর ভেসে যায় অব্যক্ত ভাষায়।
শিথিল ঘুমের আনন্দে গাল দিয়ে নাল গড়িয়ে বালিশ পর্যন্ত চুপচুপে ভিজে যায়।।
সেদিন রাত্তিরে খুব জল তেষ্টার চোটে কমলামাসিকে হাজারবার গুঙিয়ে ডেকেও যখন সাড়া পেল না তখন মা বাবার জানালায় ওদের ডাকতে গিয়ে ওই অদ্ভুত ব্যাপারটা প্রথম দেখে ফেলে টুসকি। তারপর থেকে রোজ রাত্তিরে এটাই তার চুপটি চুপটি মজার খেলা।
টুসকি অমিয়ার ষোলো বছরের মেয়ে যার মস্তিষ্ক অবিকশিত , যে কথা বলতে পারে না।
তার ভাষা শুধুই গোঙানি।।
অমিয়া আর রবীনের জীবনে আর সব কিছুই ঠিকঠাক, শুধু টুসকি ছাড়া।রবীনের বড়সড় চাকরি, অমিয়ার কলেজের শিক্ষকতা, বিশাল বাংলো বাড়ি, দামী গাড়ি, বছরে দুতিনবার দেশবিদেশ ঘোরা, সমাজে সম্মান প্রতিপত্তি।।
অমিয়া চল্লিশ আর রবীন বিয়াল্লিশ।
কিন্তু ওদের সব কিছু অপর্যাপ্ত খুশি গিঁট মেরে থেমে আছে ওই টুসকিতেই।।
টুসকিকে নিয়ে প্রথম বছর দশেক সারিয়ে তোলার আশায় নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করে তারপর ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে এসেছে ওদের আশা, উৎসাহ।।
এখন দুজনের মনে কাজ করে নিজেদের বাকি সুখগুলো নিয়ে বেঁচে থাকার এক স্বার্থপরতার ভাষা।।
সব সময়ের কাজের মেয়ে কমলাদিই সারাদিন টুসকির দেখভাল করে। ঘন্টাদুয়েকের জন্য স্পেশাল স্কুলে নিয়ে যায়। ওই সময়টা খুব ভালো থাকে টুসকি।। অমিয়া আর রবীন কোথাও বেড়াতে গেলে মাঝে মাঝে টুসকি আর কমলাদি সাথে যায়, মাঝে মাঝে ওরা বাড়িতেই থাকে।
টুসকিও যেন কেমন আস্তে আস্তে কমলাদি ঘেঁষাই হয়ে পড়ছে। নিঃসন্তান কমলাদি আধফোটা টুসকিতেই দুধের সাধ জলে মেটাচ্ছে সবটুকু স্নেহ দিয়ে।।
স্পষ্ট হয়ে উঠছে তার না মেটা মাতৃত্বের ভাষা।।
সেই বিশ্বস্ত নির্ভরতা থেকেই বোধহয় অমিয়া আর রবীন টুসকি থেকে কেমন যেন আস্তে আস্তে সরে আসছে, কেমন যেন ওদের মনে হচ্ছে ও ওদের সব জিতে যাওয়ার মাঝখানে একদলা হেরে যাওয়া।
চিকিৎসকরা বলছেন এইসব বাচ্চারা কুড়ি বাইশ বছরের বেশি বাঁচেও না। তবে কি টুসকির থেকে দূরে সরে আসা আসলে অমিয়া আর রবীনের আস্তে আস্তে মায়াডোর ছেঁটে ফেলা, কেটে ফেলা আবেগ আর বাৎসল্য? নইলে আরও বড় যে বিচ্ছেদের দুঃখ ওদের দিকে হিংস্র শ্বাপদের মতো এগিয়ে আসছে গুটি গুটি পায়ে তাকে জয় করবে কি করে তারা? কি শীতল সেই অপেক্ষার ভাষা!!
টুসকিও যেন কেমন আস্তে আস্তে কমলাদি ঘেঁষাই হয়ে পড়ছে। নিঃসন্তান কমলাদি আধফোটা টুসকিতেই দুধের সাধ জলে মেটাচ্ছে সবটুকু স্নেহ দিয়ে।।
স্পষ্ট হয়ে উঠছে তার না মেটা মাতৃত্বের ভাষা।।
সেই বিশ্বস্ত নির্ভরতা থেকেই বোধহয় অমিয়া আর রবীন টুসকি থেকে কেমন যেন আস্তে আস্তে সরে আসছে, কেমন যেন ওদের মনে হচ্ছে ও ওদের সব জিতে যাওয়ার মাঝখানে একদলা হেরে যাওয়া।
চিকিৎসকরা বলছেন এইসব বাচ্চারা কুড়ি বাইশ বছরের বেশি বাঁচেও না। তবে কি টুসকির থেকে দূরে সরে আসা আসলে অমিয়া আর রবীনের আস্তে আস্তে মায়াডোর ছেঁটে ফেলা, কেটে ফেলা আবেগ আর বাৎসল্য? নইলে আরও বড় যে বিচ্ছেদের দুঃখ ওদের দিকে হিংস্র শ্বাপদের মতো এগিয়ে আসছে গুটি গুটি পায়ে তাকে জয় করবে কি করে তারা? কি শীতল সেই অপেক্ষার ভাষা!!
টুসকি যত বড় হচ্ছে তত কেমন যেন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে ওর চোখ মুখের ভঙ্গি, সারল্য অতিক্রম করে মাঝেই ঝিলিক দিয়ে যায় কেমন একটা হিংস্রতা। কেমন একটা গোঙানি মতো বের হয় তখন ওর গলা থেকে। জামাকাপড় টেনে খুলে ফেলতে চায় নিজের, জাপ্টে জড়িয়ে ধরে এক এক সময় রবীন, অমিয়া কিংবা কমলাকে। টেনে ছাড়ানো যায় না তখন, কেমন গোঁ গোঁ করে গোঙায় আর মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে।।
কেউ শনাক্তই করতে পারে না তার শরীর কাঁপিয়ে গর্জে ওঠা হিংস্রতার অতলে আসলে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটুকরো আশ্রয় ভিক্ষা করতে চাওয়া প্রেমের ভাষা!!
কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন