প্রিয়দীপ

মিছিল

রুল অর্থাৎ শাসন। রুল অর্থাৎ মনিরুল - আরাবুল থেকে সদ্য আনারুল। শাসনের সমিয়ানায় সব প্রতিষ্ঠিত মনিমুক্ত। এদের ব্রত যেমন অনুব্রত। আবার প্রায় এক যুগ আগেও ছিল নারায়ণ - লক্ষণ- শঙ্কর দেবতাদের তাণ্ডব। আইনের উর্ধ্বে নিজ শর্তে সমাজের সর্বস্তরে যাদের অবাধ বিচরণ। ঘুষ দুর্নীতি রাহাজানি স্বজনপোষণ ধর্ষন ইত্যাদি প্রীতি মানুষের বিপুল সমর্থনে এদের অভাবনীয় অর্থনৈতিক থেকে সামাজিক উত্থান এবং তার অকল্পনীয় বিস্তার প্রতিষ্ঠিত সজ্জন বিশিষ্টদের কাছেও যেমন লজ্জার, তেমনই লজ্জা বেকারত্বের ধব্জা ধরা অসংখ্য পুঁথি পুস্তকে নোয়ানো অসংখ্য গাধার। হ্যাঁ গাধা। নইলে ঝর বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে, শিক্ষা অর্জনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কেউ কারো অনুনয়ের অপেক্ষা করে, দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে? কে দেখবে, কে বুঝবে অক্ষর কাঁদছে আর নিরক্ষর হাসছে?

বঙ্গে অনেকেই এমন পারদর্শী। সুদক্ষ। শুধু আজ নয়। এই ধারা দীর্ঘদিনের। আধুনিকতার চটুল কৌশলে এই রাজনৈতিক দীক্ষা এবং তার শিক্ষা নতুন মোড়কে আরো অমানবিক।

বঙ্গের দক্ষিণের সাথে উত্তরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানসিক এবং মানবিক দিক সমূহের তফাৎ থাকলেও মহাসমারোহে রাজনৈতিক গুন্ডা, সন্ত্রাসীদের আবির্ভাব আজ প্রায় সমমান। এদের অর্থনৈতিক উত্থান, সামাজিক সম্মান অন্তত লেখাপড়া জানা মানুষের কাছে ঈর্ষণীয়।

যদিও তাদের এই মেধা,তাদের পরিশ্রম, তাদের জীবন সংশয় জেনেও আজ তারা নিজগুণে প্রতিষ্ঠিত। হোক না সে ক্যাডার, হোক না সে দুর্নীতি বাজ। হোক না সে গুন্ডা। আমি বা অন্য কেউ পারছি না বা পারব না ভেবে শুধুই হতাশ হয়ে লাভ কি? সুতরাং নিজ গুনে চেষ্টা করেই যে কোনো একটি আকারে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই শ্রেয়। এই সমাজ অর্থনৈতিক এবং প্রভাব সম্পন্ন মানুষকেই আজ গুরুত্ব দেয়। বুর্জোয়া - পুঁজিবাদ - দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক এখানে একটি শব্দের গিমিক ছাড়া কিছুই না। তাই খবরের কাগজ হোক আর টিভির তথাকথিত দের বকবক হোক। শুনবেন না। পড়বেন না। আপনাকে আরো দিকভ্রান্ত করে তুলবে। কেননা, এরা এক হাতে অর্থ অন্য হতে শান্তির প্রস্তাব গ্রহন করে। হ্যাঁ এটাই সুশীল সমাজ। সুতরাং মনিরুল আরাবুল আনারুল একমাত্র সর্বগ্রাসী ভাবার কোনো কারণ নেই। ভাবার কোনো কারণ নেই লক্ষণ নারায়ণ শঙ্কর আমাদের দেবদূত ছিল।  কারণ আমরা। হ্যাঁ আমরা। যারা লাইনে দাঁড়িয়ে সব জেনেও বিশ্বাস করি - আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক দেশ। আমাদের দেশ মানবতার দেশ। আমাদের দেশ সৌহার্দ্য সম্প্রীতির দেশ। 

সুতরাং আমরা প্রতিনিয়ত নয়, প্রতিক্ষণ এখন আশাবাদী। প্রশ্ন এখন একটাই । আমরা আইপিএস ক্যাডার হবো নাকি রাজনৈতিক ক্যাডার? আমরা সর্বজনীন শিক্ষা ব্যাবস্থা গড়ে তুলব নাকি শুধুই ভোটের গুটি হয়ে বেড়ে উঠব। প্রশ্ন হাজারো। উত্তর সেও সকলের জানা। শুধু জানা নেই, অন্যায় কে প্রশ্রয় দেবার অপরাধে আমাদের শাস্তি কতটা নির্মম হতে পারে আগামীতে।  

পড়ছিলাম সমাজ সচেতন, একনিষ্ঠ সাহিত্য কর্মী অগ্রজ চিন্ময় ঘোষের একটি কবিতা। পড়েছি তার অসংখ্য লেখা এবং  বিভিন্ন গণ মাধ্যমে তার স্বতঃপ্রণোদিত মতামত। সমাজের নানান কোনে তার অক্ষরের অবাধ চলাচল।  গণ মানুষের কথা, তাদের ব্যথা তার কলম যেন শাণিত তরবারি। 

।। মুখগ্রন্থ উদ্গার।।
- চিন্ময় ঘোষ

চামড়ায় আস্তরণ, জমাট​ বেঁধেছে পোড়া ছাই
গণ্ডারের দুর্ভেদ্য চামড়ার মতো​
আস্তরণ ভেদ করে লাভাস্রোত​
বেরোয়না আর তাই।

এতো যে আগুন​
পুড়ে​ যাচ্ছে ঘরবাড়ি মানুষের দেহ​ ​
মোটা দাগে যা দেখি - এটাই কি সব!

প্রবৃত্তির বিষফলা জ্বেলেছে সমিধ​
লুঠ লাভ দখলের লেলিহান শিখায়​
মনুষ্যত্বও পুড়ে গেছে পূর্ণাহুতি হয়ে​
মানুষের বাকলের নিচে​
অন্যতর হিংস্রতার বসত ঠিকানা।

আঙুলের ফাঁক গলে উড়ে যাচ্ছে​
উদাসীন​ দিন,বিপ্লবী আঙুল তবু সদাব্যস্ত​
অপার্থিব ধ্যানে
আকাশ প্রমাণ যত উষ্মা ও বিক্ষোভের বুলি
বর্তুলে পাক খায় সীমায়িত আঙুল চলনে
প্রতিবাদ-ডানা যেন ধূমায়িত মূক বিজ্ঞাপন​ আত্মশ্লাঘার ডুব জলে বুজকুড়ি ফোটে
অজস্র উদ্গার শুধু মুখগ্রন্থ মুখরিত করে।


পরিশেষে, আজ শব্দের মিছিলের এগারো তম বর্ষপূর্তি। গুগল ভিউয়ার্সে আমাদের জন্য অভাবনীয় এক সনদ। বারো লক্ষর অধিক মানুষের ছোঁয়া আজ আমাদের হৃদয়ে। আমরা নতুজান হয়ে তাদের শ্রদ্ধা জানাই, আমাদের স্পর্ধাকে ভালোবেসে প্রশ্রয় দেবার জন্য। অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানাই সেই সব অক্ষর কর্মীদের, যাঁরা ভয় কে উপেক্ষা করে, পুরস্কার কে তাচ্ছিল্য করে বিগত দিনগুলোয় মানুষের কথা তুলে ধরেছেন মিছিলের গায়ে।আমরা ভালোবাসি তোমাদের। তোমরা প্রতিবাদী, তাই তোমাদের ডাকি।


প্রিয়দীপ


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.