তুমি অধম, তা বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?” – লাইনটি প্রবচনের মতই মজ্জায় মিশে গেছে। যদি কোনও প্রতিবাদী কথাটি উল্টিয়ে দিয়ে বলেন- ‘তুমি উত্তম, তা বলিয়া আমি অধম হইব না কেন” – বিপত্তি সেখানেই। প্রতিবাদই যে বিপত্তির কারণ।অনুমান করা যায় প্রতিবাদী ব্যক্তিটি জীবন নামক মেগা-সিরিয়ালে গ্রহন বর্জনের পরখ করেই উত্তমের মধ্যে কোনও সংজ্ঞাসূচক বিরল গুণপনা দেখেনি। এক্ষেত্রে বিচার অবশ্যই ব্যক্তিব্যক্তি একটা খোঁজ তো নিয়তই চলতে থাকে। খোঁজের জন্য যেমন পথ আবশ্যিক আবার না ও। দূরাবলোকনের একটা স্পৃহা থাকে।সেক্ষেত্রে পথ এসে দাঁড়ায় ঘর বরাবর।শিক্ষার বিপাক এখানেই। উত্তম ব্যক্তিটির শীতকাতরতা হেতু অপর্যাপ্ত পরিচর্যার পোশাক আশাক ভবানন্দের সংক্রান্তির কোন কাজে? একটা অমায়িক হাসি(যা রপ্ত করতে হয়) ক’জনকে ছুঁল, কতজন এই আভিজাত্যকে দূর থেকে পেন্নাম করল ?
যে মহিলাটি দোকানে ভিড়ের মধ্যে আমার ঠিক পিছনে ফিসফিস করে বললেন,একটা পাউরুটি হবে? – পিছনে ফিরে দেখি কোনও কুণ্ঠা তাকে তারই অবচেতনে অথবা আত্মসম্মান বোধের অবশিষ্টাংশটুকু নিয়ে নিজেকে পুনরায় নির্জনে ঠেলে দিয়েছে। সাধ্য অনুযায়ী কিছু কিনে দিতে,তার উজার করা আশীর্বাদ কি সেই মহিলাটিকে উত্তম ভাবতে কোনও সাহায্য করে না ?
এরা কিন্তু বারবার আসে না। দৈবাৎ দেখা যায়। এদের জন্য অপেক্ষা জরুরি।এদের ঈশ্বর ভাবি।খোঁজ তো নিরন্তরই।কোথায় গেল, কথায় গেল, একবার দেখা দিয়েই—আমার আলো বাতাস, আমার পরিবেশ প্রতিবেশী এর খোঁজ জানে না।
এইসব কেয়ার অফ ফুটপাত – কখন ওষুধের দোকান বন্ধ হবে, কখন ফ্ল্যাটবাড়ির সিঁড়ির লাইট নিভে যাবে—খিদে যদি জৈবিক তাড়না হয় তবে ঘুম যে জৈবিক বিরাম।আমাদের নিশ্ছিদ্র বিশ্রামঘরে বিনোদনের টিভি সিরিয়ালে শীতের দৃশ্যই! যেখানে ঘনিষ্ঠতা টনিকের কাজ করে।সকাল হতেই ব্যাগের ভিতর গরম চাদর নিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজি সেইসব শীতজর্জরিত আশীর্বাদকে।ভুলে যাই আশীর্বাদের পর ঈশ্বরের অন্তর্ধান অবধারিত।
শীতের ডাইরি
জমি মাপতে এলে ওদের বুকে ডঙ্কা বাজে। নির্জনতায় দীক্ষিত হচ্ছে ওদের পাঠক্রম। ব্ল্যাকবোর্ডে সোরগোল আঁকা যায় না। আঁকা যায় না সম্ভোগের অপমান। অতএব সতীর্থরা উপলব্ধ শিক্ষায় মৌনতা অবলম্বন কর। এখন এক মিনিট নীরবতারও ছবি তোলা হয়।
মাদাম ক্রিস্টিনা শৈশব কেমন ছিল ? শীতল সম্পর্কে কোনও উষ্ণতা খুঁজেছিলেন কি তিনি ? খুব শীতে বিড়ালছানাগুলোর ঘাড়ে আলতো কামড় দিয়ে মা- বিড়াল প্যাকিং বাক্সের গুদামে লুকিয়ে রাখছিল। সেখানে শীত পৌঁছায়নি তখনও।
এই বাঁচিয়ে রাখা, এই লালন পালন—উলের গোলা নিয়ে লোফালুফির বিজ্ঞাপন আমাদের কোন্ উন্নততর জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ! একযুগ ধরে রাতের আকাশ ভুলে গেছি আমরা। যখন ভোরের আজান পৌঁছে যায় সব ঘুমের দরজায়, আঞ্জু বানু বসে থাকে জয়পুরের স্টেশনে। ভোর কথা বলতে চাইলেও তার অন্যমনস্কতা নিখোঁজ মানুষটাকে পরিহাসের দীর্ঘ কবিতাটি তুলে দিয়ে দায়মুক্ত হবে। সমস্ত রক্তপাতই অনুবাদ হয়ে গেছে। সব ভুমিকম্প অধ্যুষিত আবক্ষ মূর্তি মূর্তি উন্মোচনের উদ্বোধনী সঙ্গীতও। অনুষ্ঠানসূচী থেকে বাদ গেছে যারা, তারা বলছে –‘ আমি বলব’ ‘আমি বলব’ ............মাদাম ক্রিস্টিনা বলছেন, ধীরে ধীরে – একে একে ............
অথচ আজ তার শীত করছে। তার এত শীত করছে যে – সেই তুষার প্রত্যঙ্গে মৃত সন্ন্যাসের কোনও যুতসই অজুহাত নেই । হয়ত অনেকেই প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান লিখতে গিয়ে থেমে গিয়েছে। সেই ট্রমা, সেই অতর্কিত গেরিলাবাহিনি – ন্যক্কারজনকভাবে বেআব্রু করেছে উত্তরাঞ্চল,মধ্য প্রদেশ অথবা দাক্ষিণাত্য। গাঢ় অন্ধকারও তাকে আশ্রয় দিতে পারেনি। তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সব নালিশগুলো সংযমের কান্নাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছে সময়ের চাকা ক্রমশ মলিন করে দেবে কাঞ্চনজঙ্ঘার রক্তস্রোত অথবা জমাট হয়ে থাকবে বক্ষসন্ধির কালশিটের মত।
ওরা হুল্লোড় করে আসে, ঘোষণা করতে করতে ফিরে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা শহিদ বেদীতে ঝড় জল সহ্য করে। সহনশীলতার পাঠ অর্জন করেছে বলেই। মাদাম ক্রিস্টিনা এখন কোথায় ? কোন ঘেরাটোপে, কোন অজ্ঞাতবাসে ? সে দেশে কি স্লেজগাড়ি চেপে ত্রাণ পৌঁছায়, সে দেশের সূর্য কী প্রথম কিরণের রশ্মিতেও সংযত? কারণ প্রকৃতিই প্রকৃতির নিয়ামক। প্রকৃতিই সীমালঙ্ঘনের স্পর্ধার পরাকাষ্ঠা। যখন একটা জানলাকেও বিশ্বাস করা যায় না, দরজাকেও না অথবা বিশ্রামের বিছানাকেও না তখন অপারেশন থিয়েটারে গ্লাভস্ পরা হাতদুটিকে অবিশ্বাস করতে শুরু করে মুমূর্ষু। অনেককিছুই তো ঘুমের মধ্যে ঘটে যায়। তখন যুগল ফটোফ্রেমকে আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলতে এক মুহূর্তও লাগে না।
নিজেকে তার জায়গায় বসিয়ে সেই বাক্য গঠনের উদ্দেশ্য আর বিধেয়কে গ্রহণযোগ্যতা দিতে না পারা’র জন্য কোনও অপরাধবোধ আর নেই। কারণ সরেজমিন তদন্তের পর বেকসুর খালাস পেয়ে যাওয়া মুখগুলো হয়ত এবার আমাকেই টার্গেট করছে। নাম বদলিয়ে দিলে চরিত্র বদল হয় না। চরিত্র বদলে গেলে নামের মাহাত্ম্য গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে,প্রগতিকে মুক্তাঞ্চলের আলো আঁধারি। মিডিয়ার সামনে একটা কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে হয়ত মাদাম ক্রিস্টিনা বলতেন, ‘ক্ষমা করে দিলাম সেই ঈশ্বরের বরপুত্রদের, অন্ত্যেষ্টির আয়োজন কর’।
সুচিন্তিত মতামত দিন