শনিরবচন | ইউনিপোলার সিলেবাস

মিছিল  ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ

আসুন মাথা মুড়িয়ে নিই। মাথা এগিয়ে দিই বিবিসি সিএনএন এবিসি সিএনবিসি ফক্স নিউজ থেকে শুরু করে নিজ নিজ দেশের মগজ ধোলাই যন্ত্রে। মগজ ধোলাই যন্ত্রের অভাব কি? রিমোট অন করলেই মগজ ধোলাইয়ের যন্ত্র। লগইন করলেই মগজ ধোলাইয়ের যন্ত্র। মগজটা শুধু আমার। ধোলাইয়ের যন্ত্র এক এক কোম্পানির। কিন্তু ধোলাই মন্ত্র ও প্রক্রিয়া একটাই। সেই মন্ত্রের স্ক্রিপ্ট ও প্রক্রিয়ার স্টেপ ঠিক করে দেওয়ার মালিকও একজন। মনে রাখতে হবে। এটা ইউনিপোলার ওয়ার্ল্ড। সেখানে একটি মাত্র শক্তিই মগজ ধোলাইয়ের বিশ্ব-পেটেন্ট নিয়ে রেখে দিয়েছে। সে যে কথা বলবে। সেটাই কায়মনবাক্যে বিশ্বাস করে নিতে হবে আমাদেরকে। এবং আনন্দের সাথে। না, বেজার মুখে বিশ্বাস করলে তো চলবে না। আনন্দের মৌতাতটুকুও উপভোগ করে নিতে হবে বই’কি। ফলে আপনাকে দেখে নিতে হবে। যে যাই বলুক না কেন। তার পিছনে ওয়াশিংটন ডিসির এন্ডোর্সমেন্ট রয়েছে কিনা। যিনি বক্তব্য রাখছেন। বিবৃতি দিচ্ছেন। তাঁর পিছনে পেন্টাগনের লোগো দেখা যাচ্ছে কিনা। দেখা গেলেই আপনি আমি নিশ্চিন্ত। ঈশ্বরে বিশ্বাস না থাকতে পারে। ক্ষতি নাই। কিন্তু পেন্টাগনকে অবিশ্বাস! ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ব্রডকাস্ট করা বাণীকে অবিশ্বাস! সে তো মহাপাপ! 
হ্যাঁ সূর্য পশ্চিমে উঠলেও উঠতে পারে কোন এক দিন। পৃথিবীর আহ্নিক গতি যদি দিক পরিবর্তন করে, সেটাও সম্ভব হবে। কিন্তু পেন্টাগন মিথ্যে খবর দেবে? ওয়াশিংটন ডিসি থেকে লোক ঠকানো বিবৃতি দেওয়া হবে?
এও কখনো হয় নাকি? ফলে আপনাকে মিলিয়ে নিতে হবে। যে যাই বলুক না কেন। সেকথা পেন্টাগন অনুমদিত কিনা। ওয়াশিংটন ডিসি অনুমোদিত কিনা। ইউনিপোলার ওয়ার্ল্ডে কে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। আমরা জানি। ফলে তার কথা অমান্য করা মানবতা বিরোধী অপরাধ। সে যা করতে অনুমোদন দেবে। সেইটুকুই করা যাবে। না, তাই বলে নিজের খেয়াল খুশি মর্জি মাফিক তাকে নকলও করা যাবে না তাই বলে। নিজের স্বার্থে হলেও।

আগে অনুমতি নিতে হবে। পেলে ভালো। না পেলে সামলে যাও। এই সত্যটুকু আমরা সকলেই জেনে গিয়েছি। পুতিনও জানে বইকি। কিন্তু কথায় বলে না, অতি দর্পে হতা লঙ্কা। পুতিনের এখন সেই দশা। ওয়াশিংটন যে কাজ করতে অধিকারী। রাশিয়াকে সেই একই কাজ করার অধিকার কে দিল? ওয়াশিংটন ইরাক আক্রমণ করতে পারে। দুনিয়া শুদ্ধু মানুষকে মিথ্যা কথা বলে। দিনে দুপুরে ঠগবাজি করে। ওয়াশিংটন আফগানিস্তান আক্রমণ করতে পারে আত্মরক্ষার মিথ্যা অজুহাতে। ওয়াশিংটন ন্যাটোকে দিয়ে লিবিয়া ধ্বংস করে দিতে পারে। গদ্দাফিকে বিশেষ অপছন্দ করার কারণে। ওয়াশিংটন সিরিয়ায় আগুন লাগাতে পারে। সিরিয়ায় ইসলামী মৌলবাদের প্রতিষ্ঠা করতে। ওয়াশিংটন গোটা মধ্যপ্রাচ্যের খনিজ তেল লুঠ করতে দেশের পর দেশে কোটি কোটি মানুষ খুন করতে পারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ডায়লগ দিতে দিতে। ওয়াশিংটন পারে। তার ডান হাত ইজরায়েল পারে। আট দশক প্যালেস্টাইনে বিদ্ধংসী তাণ্ডব লীলা চালিয়ে যেতে। ওয়াশিংটনের হুকুমে ন্যাটো পারে। ইউরোপ আফ্রিকায় এশিয়ায় কোটি কোটি মানুষ মারা প্রকল্পের যুদ্ধে অংশ নিতে। এই সকল যুদ্ধই কিন্তু হিউম্যানিটেরিয়ান ওয়ার। শুরুটা অবশ্য হয়েছিল কোরিয়া আর ভিয়েতনাম থেকেই। কিন্তু তাই বলে। সেই একই কাজ। ওয়াশিংটন ডিসি’র গুডবুকে না থাকা রাশিয়া কি করে করতে পারে? এত আস্পর্ধা সে পায় কোথা থেকে। বিশেষ করে যেখানে ইউক্রেনেই পেন্টাগনের আণ্ডারে ৩০টি বায়ো-উইপেনের ল্যাবোরেটারিতে ভয়ানক সব ভাইরাস তৈরীর গবেষণা ও উৎপাদনের কাজ চলছে। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার প্রজেক্টে। এই রকম ভাবে মাঝপথে আটকে দেওয়া? এখন দামি দামি সব স্যাম্পেল নষ্ট করার হুকুম দিতে হচ্ছে ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যাণ্ডকে। রাগ তো হওয়ারই কথা। ফলে রাশিয়ার এই অভিযান যে একটা ব্যরবেরিক ওয়ার। সেই বিষয়ে আমাদেরও কোন সন্দেহ রাখলে চলবে না।

মগজ ধোলাইয়ের এই স্ক্রিপ্টে যুদ্ধ কয় প্রকার? না, যুদ্ধ দুই প্রকার। প্রথম প্রকার যুদ্ধ সেটাই। যেটি ওয়াশিংটন ডিসি অনুমোদিত। এবং পেন্টাগন পরিচালিত। সেটি হচ্ছে ‘হিউম্যানিটেরিয়ন ওয়ার’। উদাহরণ: ভিয়েতনাম। যুগোস্লাভাকিয়া। আফগানিস্তান। ইরাক। লিবিয়া। সিরিয়া। প্যালেস্টাইন। ইত্যাদি ইত্যাদি। আর দ্বিতীয় প্রকার যুদ্ধ হল সেটাই। যেটা ওয়াশিংটন ডিসি কর্তৃক অনুমোদিত নয়। এবং পেন্টাগন কর্তৃক পরিচালিত নয়। যেমন ইউক্রেন। যে যুদ্ধকে বলা হচ্ছে ‘ব্যারবেরিক ওয়ার’। এই সোজা কথাটা বিশ্বশুদ্ধ যারা বুঝতে পেরে গিয়েছে। তারা ভালো মানুষ। তারা হিউম্যানেটেরিয়ান ওয়ারের পক্ষ নিয়ে ঘরে বসে বসে সেই সব যুদ্ধের লাইভ টেলিকাস্ট দেখে আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠে। আর ব্যারবেরিক যুদ্ধের বিপক্ষে বিশ্বজুড়ে নগরে নগরে রাজপথে অবস্থান নিয়ে ‘স্টপ ওয়ার’ প্ল্যাকার্ড হাতে বিশেষ বিশেষ দেশের নাগরিকের জন্য অশ্রুমোচন করে থাকে।

এটাই বিশ্বজুড়ে মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার সিলেবাস। সেই সিলেবাসের বাইরে যেতে চাইলেই হলো? কারা সেই সিলেবাসকে অস্বীকার করে? না যারা মানবতা বিরোধী শক্তি। যারা ওয়াশিংটন বিরোধী শক্তি। যারা পেন্টাগন বিরোধী শক্তি। যারা ন্যাটো বিরোধী শক্তি। এবং যারা ইসরায়েল বিরোধী শক্তি। যাদের একটা অংশ আবার মাঝে মধ্যেই পেগাসাস বিরোধী কথাবার্তাও বলে থাকে। দিয়েছে গোবলয়ের মানুষ তাদের মুখে ঝামা ঘষে। অন্তত যতক্ষণ ইভিএমের কারিকুরি সামনে না আসছে। বা আসতে পারছে। ফলে ওয়াশিংটন-ডিসি’র তৈরী এই সিলেবাসে পেন্টাগন অনুমোদিত প্রক্রিয়ায় আমাদের সকলকেই নিজের পছন্দের মগজ ধোলাইয়ের যন্ত্রে মগজ ঢুকিয়ে দিয়ে, শিক্ষিত হয়ে উঠতে হবে। এবং একমাত্র তখনই আমরা বিশ্বনাগরিক বলে বিবেচিত হব। এটাই ইউনিপোলার সিস্টেমের গোড়ার কথা। এইভাবে সুশিক্ষিত না হতে পারলেই মুশকিল। তখন আমরা আবার বেয়াড়া সব প্রশ্ন করতে শুরু করে দেবো। পুতিনের মুণ্ডুপাত করতে হবে ভালো কথা। দুইবেলা না হয়, সেই কাজও করলাম। কিন্তু তাই বলে আমার রান্নার সর্ষের তেলে আগুল লাগবে কেন? ইউক্রেনে খাদ্য না পাঠিয়ে অস্ত্র পাঠানো অগ্রাধিকার পাবে কেন? ইরাকের মানুষ মরলে আমায় আনন্দ করতে হবে। ইউক্রেনে মানুষ মরলে আমায় কাঁদতে হবে। এমন বিপ‌রীত হোমটাস্ক কেন?

না, এমন সব বেয়াড়া প্রশ্ন যাতে আমাদের মাথায় না আসে। সেই জন্যেই এই ইউনিপোলার সিলেবাস। সকলেই এক ভাবে একই সময়ে আনন্দ করো। দুঃখ করো। রাগ করো। মাথার চুল ছিঁড়তে থাকো। হিংস্র হয়ে ওঠো। সহিংস হও। আবার বিশ্বশান্তির জন্য গলা ফাটাও। সকলেই এক সাথে সাদ্দাম গদ্দাফি বাশার পুতিনের মুণ্ডু চাই বলে পথরোধ করে দাঁড়াও। কিন্তু কার পথরোধ করে দাঁড়িয়ে পড়ছো। ভুলেও সেটা বুঝতে যাওয়ার চেষ্টাও করো না। তাহলেই তুমিও টার্গেটে পরিণত হয়ে যেতে পারো বই’কি। কি হবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। তার থেকে বাবা, সিলেবাসে থাকো। সকলের সাথে থাকো। তাকিয়ে দেখো। তুমি যতক্ষণ সকলের সাথে রয়েছো। সকলেও তোমার সাথেই আছে।

তাই ভুলেও আফগানিস্তানে আসলে কি ঘটেছিল। ইরাকে কি সমস্যা তৈরী করা হয়েছিল। কেন লিবিয়া ধ্বংস করে দেওয়া হলো। সিরিয়া কেন জ্বলছে। বেলগ্রেডে কেন টানা আড়াই মাস ন্যাটো বোমা ফেলে গেল নিরাপদ দূরত্ব থেকে। আর ইউক্রেনে কয়টি বায়োউইপেন তৈরীর ল্যাবোরেটরি তৈরী করা হয়েছে। কে কার কতটা ক্ষতি করতে এবং কোন ব্যাবসার পত্তন করতে সেই সব ল্যাবে অর্থলগ্নী করেছে। ভুলেও সেই সব প্রশ্নকে নিজের মাথার ধারে কাছে ঢুকতে দিও না। কারণ প্রশ্ন করলেই উত্তরের মিছিল এসে ভিড় করবে। সবকিছু জলের মতো পরিস্কার হয়ে যাবে। সেটা বিপদজনক এক প্রবণতা। নিজেকে বেকুব বানিয়ে রাখতে। মানুষের তখন লজ্জা লাগবে। রাগ হবে্। মানুষ বেয়াড়া ছাত্রের মতো সিলেবাসের বাইরে ছুটে যেতে চাইবে। সে খুব মুশকিলের ব্যাপার। আর সেই সংক্রমণ যদি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে যায়। তাহলে তো আঠারো আনা ক্ষতি। গোয়াল ফাঁকা হয়ে যেতে পারে। ঘরে ঘরে অশান্তির আগুন। ঘরে ঘরে মানুষ নিজের চোখে সব কিছু দেখতে চাইবে। নিজের বুদ্ধিতে সব কিছু’র বিচার করতে চাইবে। সত্য আর মিথ্যা। ঘটনা আর ধোঁকাবাজির ফারাক করতে পারবে। বিচার করতে পারবে ন্যায় আর অন্যায়ের। একবার যদি মানুষ ইউনিপোলার সিলেবাসের ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত করতে পারে নিজেকে। না, সেই অধিকার কোন মানুষকেই দিয়ে রাখেনি ওয়াশিংটন ডিসি। ফলে আমাদের যাবতীয় আনন্দ আর মৌতাত সিলেবাসের ভিতরে থেকেই। তাতে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাক। ক্ষতি নেই। মগজ ধোলাইয়ের যন্ত্রে মাথাটুকুকে ধরে রাখতে পারলেই যথেষ্ট। না হলে আমরা বুঝবো কি করে? কোনটা ব্যারবেরিক ওয়ার। আর কোনটা হিউম্যানিটেরিয়ান ওয়ার। কখন কোন যুদ্ধের পক্ষে থাকতে হবে। আর কোন যুদ্ধের বিরুদ্ধে দুনিয়াশুদ্ধু রাজপথ কাঁপাতে হবে।

*কপিরাইট সংরক্ষিত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.