সুমনা সাহা | অমৃতসদনে চল যাই
0
ফেব্রুয়ারী ২১, ২০২২
পর্ব- ৪ আজ সকাল থেকে অনেক কাজ করেছে মিরিয়ম। তাঁর বাদামী রঙা ছোট্ট দুটি হাত জাদুকরের জাদুদণ্ডের মত ঝকঝকে তকতকে করে তুলেছে উঠোন, শস্য-মরাই; কাকিমা ও পিসিদের সঙ্গে উঠোনের একপাশে রাখা বিরাট জাঁতায় মশলা পেষাই করেছে; তারপর ঘরের সব কাজ শেষ করে এখন ভেড়ার পাল নিয়ে যবের ক্ষেতে চলেছে। যাওয়ার পথে ঐ মজবুত হাতেই চেরি গাছের মোটা ডাল দিয়ে পশমী পশুগুলোকে সারিবদ্ধ রাখে আর কখনো সখনো পথের পাশে ফুটে থাকা ফুটফুটে সাদা ডেইজি বা লাল টুকটুকে পপি কিম্বা মাঠঘাটের বুনো লিলি ফুল ছিঁড়ে নেয়, লাগায় নিজের অবিন্যস্ত কালচে বাদামী চুলে, নিতান্তই কিশোরীসুলভ চাপল্যে। কীই বা বয়স তার? ১৩ পেরিয়ে সবে ১৪য় পড়েছে। তারপর ভেড়াগুলো আপন মনে ঘুরে ঘুরে খাবার খায় আর মিরিয়ম নরম সবুজ ঘাসে আধশোয়া হয়ে আকাশ দেখতে দেখতে কোথায় যেন হারিয়ে যায়! মাথার উপর ছায়া ফেলে কচি যবের শীষ। মিরিয়মের মনে হয়, দেবতারা যখন সমস্ত পৃথিবী গড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, তাদের এই ছোট্ট গ্রামে, গ্যালিলির এই নাজারেথে এসে বোধহয় উঁচুনিচু পাহাড়ের কোলে ঢেউ খেলানো সবুজ মাঠের গালিচায় বিশ্রাম করেছেন। যাওয়ার আগে তাদের ভাললাগা ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন নাজারেথের মাঠেঘাটে পথেপ্রান্তরে মুঠো মুঠো অজস্র ফুলে। সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর মিরিয়মের গ্রামখানি।১ এই আকাশভরা আলো, এমন কুসুমগন্ধবাহী হাওয়া, দূরে পশমের গোলার মত ভেড়ার দল, আরও দূরে মাঠের শেষপ্রান্তে বিশাল ঝাঁকড়া উইলো গাছের ওপারে আবছা হয়ে যাওয়া নাম না জানা গ্রাম... সব যেন এক একখানি অপরূপ ছবি হয়ে মিরিয়মের সঙ্গে কথা বলে। হৃদয় কী এক শান্তি আর আনন্দে কানায় কানায় ভরে ওঠে, তা সে বুঝিয়ে বলতে পারবে না। মিরিয়ম এক ঘোরের মধ্যে প্রবেশ করে।
সূর্যের আলো তেরচা হয়ে পশ্চিমে ঢলে পড়েছে। কাজ আর কাজ। অ্যানির ফুরসত নেই এতটুকু। তবুও কাজের ফাঁকে ফাঁকে কচিকাচাদের খেয়াল রাখে। কে জানে, কখন চোখের বাইরে চলে যায়! গ্যালিলির রাজধানী সেফোরিস নাজারেথ থেকে মাত্র একঘণ্টার পথ। গ্যালিলির অধিকাংশ অঞ্চলই রোমের অমানবিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ জেহাদ ঘোষণা করেছে। নাজারেথ থেকে মোটে চার মাইল দূরত্বে সেফোরিস, গণ্ডগোলের কেন্দ্র সেখানেই। রোম-সম্রাট মিলিটারি মোতায়েন করেছেন, সেনারা ছাউনি ফেলেছে। মাঝে মাঝে সৈনিকরা ঘোড়া ছুটিয়ে এই গ্রামের সীমানা দিয়ে টহল দিয়ে যায়। অ্যানির চিন্তা মিরিয়মকে নিয়ে। মেয়েটা কী এক ঘোরে থাকে, সে বোঝে না, ওর বয়ঃসন্ধির মনের মধ্যে কী চলছে। অথচ বড় হচ্ছে মিরিয়ম, গত নিসান২-এ ঋতুমতী হয়েছে সে, এবার য়োআহিম-কে জানাতে হবে। ও রাব্বিকে জানাবে। রাব্বি ঠিক করে দেবেন মিরিয়মের ইরুসিন৩ সংক্রান্ত সবকিছু।
নিরীহ কয়েকঘর চাষি আর মিস্ত্রী-মজুর পরিবার নিয়ে নাজারেথ গ্রাম। সর্বসাকুল্যে ৪০০ জন মানুষের বসতি। এই গ্রাম সম্বন্ধে কারো মনেই কোনও সোনালী আশা নেই। গ্রামের ভালমন্দ নিয়েও কেউ ভাবে না। আর ভালমন্দ চিন্তা করবেই বা কে? মিলিটারি সেনারা যাকে রোমের সিংহাসনে বসিয়েছে, সেই হেরোদ তাদেরই ইশারায় নাচা এক পুতুল ছাড়া আর কী? পুতুলের মতই নিষ্প্রাণ তার মস্তিষ্ক, হৃদয় নির্দয় পশুর। মিরিয়মের মস্তিষ্ক স্বচ্ছ, মন গ্রহীষ্ণু। গ্যালিলিয় টানে স্থানীয় কথ্যভাষা অ্যারামিক বলতে অভ্যস্ত হলেও গ্রামের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মুখে শুনে শুনে সে রপ্ত করেছে কোইনি গ্রীক ভাষা, রোমান সৈনিকদের বাক্যালাপ থেকে খানিকটা আয়ত্ত করেছে ল্যাটিন ভাষা এবং হিব্রু ভাষায় রচিত ধর্মগ্রন্থ ‘তোরাহ্’৪ পাঠ শুনে হিব্রুও শিখেছে। গ্রামের ৯০ শতাংশই কাঠ-মিস্ত্রী ও ঘরামি। কথায় বলে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। নাজারেথের গরীব বাসিন্দাদের উপর চেপেছে তিনরকমের করের বোঝা। রোম-সাম্রাজ্যের কর, সম্রাট হেরোদকে দেওয়া কর আর মন্দিরের পুরোহিতকূলের জন্য নির্দিষ্ট কর। অভাবের সংসার। য়োআহিম-এর কাঠের কাজের একটি ছোট দোকান। ছোটখাট আসবাবপত্র তৈরি করে সে শহরে বেচতে যায়। এক উঠোনে গায়ে গা লাগিয়ে কয়েকঘর বাস করে। সকলেই একটি বড় চুল্লী, একটি জল সঞ্চয়ের চৌবাচ্চা, একটি মশলা পেষার উদুখল ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে। অভাবের সংসারে প্রত্যেককেই পরিশ্রম করতে হয়। মিরিয়মকেও মায়ের সঙ্গে দিনের মধ্যে প্রায় ১০ ঘণ্টা কায়িক শ্রমে নিযুক্ত থাকতে হয়। কিন্তু যখনই ঘরের চৌহদ্দির বাইরে আসে সে, নীলাকাশের চাঁদোয়া থাকে মাথার উপর, মিরিয়ম সংসারের ক্ষুদ্র আবেষ্টনী ভুলে যায়। যেমন সে আজও একটা ঘোরের মধ্যে তলিয়ে যেতে থাকে। আর সেইসব সময়ে সে চারপাশে একটা আলো দেখতে পায়। খুব উজ্জ্বল সেই আলো। কিন্তু চোখ ধাঁধিয়ে দেয় না। তার কেমন ঘুম ঘুম পায়। ঘুমের আবেশে ডুবে যেতে যেতে সে দেখে, মুখের উপর ঝুঁকে আছে একটা আলোমাখা মুখ, সে যেন আলতো স্বরে, যেন মিরিয়মের একেবারে বুকের ভিতর থেকে বলে, “মিরিয়ম, মারিয়ম, আমার মারিয়া, মেরি, ওঠ গো মেয়ে, আর ঘুমিও না। তোমাকে জাগতে হবে অনেক বিনিদ্র রজনী। আমি আসব যে তোমার কাছে! তোমার জরায়ুর গ্রন্থি ছিঁড়ে, তোমার যোনির ক্লেদাক্ত পথ দিয়েই আমি আসব। তোমাকে আমার বড় প্রয়োজন! তোমার শরীর দিয়ে, মন দিয়ে, সমগ্র সত্তা দিয়ে, তোমার সর্বস্ব দিয়ে আমাকে গ্রহণ কর!” মনের অচেতন স্তর থেকেই প্রতিবাদ করে ওঠে মিরিয়ম, “সে কী হয়? আমি যে কুমারী! কোন পুরুষ এখনও আমাকে স্পর্শ করেনি!” সেই আলো মুখ ঝাপসা হতে থাকে, মিরিয়ম তাকে দেখার জন্য, স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য অস্ফুট চিৎকার করে—“কে তুমি? আমার কাছে কেন আসো?” সেই স্বর মিলিয়ে যায় অনেক দূরে—“আমি মেসিহা...জোশুয়া... তোমার কাছেই আসব, হ্যাঁ, তোমার কাছেই, তুমি যে পবিত্র, মেরী! আমার যে একটি পবিত্র মাতৃজঠর চাই!”
“মিরিয়ম! মারিয়ম! মারিয়া! কোথায় তুমি?” স্বপ্নোত্থিত মারিয়া সাড়া দেয়, “যাই মা যাই!”
চটপট উঠে পড়ে মিরিয়ম, মা আজ আবার বকবে। কিন্তু সারাদিনের পরিশ্রমের পর এই খোলা হাওয়ায় কখন যে ঘুমিয়ে এসে যায়, জানতে পারে না সে। শান্তশিষ্ট ভেড়াগুলো আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে। পড়ন্ত বিকেলের আলোয় দূরে আজও দেখে এক ঘোড়সওয়ার যুবক নিঃশব্দে মিলিয়ে যাচ্ছে দিগন্তরেখায়। কে ও? কদিন ধরে ঘুম ভাঙলে ওকেই রোজ দেখে মিরিয়ম। ওই কি স্বপ্নে আসে? ওর মুখটা দেখার সাধ হয় বড়। ভয়ও হয়। থাক, দূরেই থাক সে। মা বলে, ঘোড়ায় চড়া মানুষ মেয়েদের কাছে এলেই সর্বনাশ। মা আরও বলেন, মারিয়াকে এখন আগের থেকে অনেক বেশী সাবধান হতে হবে। সে নাকি বড় হয়ে গেছে। এইবার তাকে স্বামীর ঘরে যেতে হবে। তাই খুব সাবধানে রক্ষা করতে হবে তার শরীর। এই মেয়ে শরীর নাকি বড়ই বিপদের। কিন্তু ঐ আলোমুখ মন থেকে সরাতে পারে না মিরিয়ম। সে কি আকাশ থেকে আসে? নাকি ঘোড়ায় চড়েই আসে? সেও যে বলে, তার মারিয়মকেই চাই? কী যেন নাম বলছিল ওর? জেশুয়া...জেশু...কী জানি, মনে পড়ছে না। মা-কে এসব কিছুই বলা হয় না।
রাত্রে মারিয়ম ও তার আরও দুটি বোন গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়লে অ্যানি য়োআহিমকে বলে, “মারিয়ার ঋতুস্রাব হয়েছে বছরের শুরুতেই, সে এখন ‘বিতুলাহ্’৫, জানোই তো সেকথা। এবার রাব্বিকে বলতে হবে যে মেয়ের বিয়ের জন্য! য়োআহিম-এর ফ্যালফ্যালে দৃষ্টি দেখে কিঞ্চিৎ অসহিষ্ণু অ্যানি মনে করায়, “‘মিকবা’৬-তে স্নান করানো হল, মনে নেই?”
য়োআহিম তাকায় ঘুমন্ত মেয়েদের দিকে। জলপাই-এর তেলের মাটির প্রদীপ জ্বলছে ঘরের কোনে। সেই কাঁপা কাঁপা মৃদু আলোয় বড়ই মায়াময় তার ঘুমন্ত সন্তানরা, গনগনে আঁচে রুটি সেঁকে তোলা তার স্ত্রী আনা, ফুটোফাটা ঘর আর এই অভাবের সংসার। য়োআহিম বলে, “আমি ভেবে রেখেছি একজনের কথা মারিয়মের জন্যে। বড় ভাল মানুষ গো। আমাদেরই মত কাঠের কারবার। বয়স যদিও আমাদের মারিয়ার তুলনায় একটু বেশী। বৌটা মরেছে সদ্য। একলা সে দুটি ছেলে নিয়ে নাজেহাল। যোসেফ, হয়তো দেখেছ তাকে তুমি। এই গাঁয়েরই শেষপ্রান্তে বাসা তার। ছেলেটি ভক্তিমান, সৎ, পরিশ্রমী। মারিয়াকে ভালোই রাখবে।”
“আগের পক্ষের ছেলে রয়েছে, বয়স বেশী, এ কেমন সম্বন্ধ করতে চলেছ আমাদের আদরের মারিয়ার জন্য?”
“আমার অবস্থা তো তোমার অজানা নয়। বিয়ে সমানে সমানে হওয়াই ভাল বলে আমি মনে করি। ওর প্রয়োজন, তাই গরজ বেশী, অতএব, মোহর কয়েকটা বেশীই দেবে। আমাদের মারিয়াও কিছু আহামরি সুন্দরী নয়। কিন্তু মা-মরা দুটি বালককে সে খুব সামলাতে পারবে, যেভাবে বোনদুটিকে সামলায়। এ বিয়ে মন্দ হবে না, তুমি দেখে নিও!” অ্যানিকে চুপ করে থাকতে দেখে য়োআহিম আবার বলে, “সুন্দর চেহারা, মানানসই বয়স, সৎ বংশ, আর্থিক সচ্ছলতা, আর কিছুটা শাস্ত্রজ্ঞান—প্যালেস্টাইনের যত মেয়ে আছে, সৎ পাত্র হিসেবে এই তো তাদের চাওয়া? তা, যোসেফ সেদিক থেকে কমতি কিসে? এখন তাদের অবস্থা পড়ে গেছে বটে, যোসেফ কিন্তু রাজা ডেভিডের বংশের ছেলে, ‘তোরাহ্’ও পড়েছে সে।”
অ্যানি আর কথা বাড়ায় না। পুরুষের মুখের উপর তর্ক করার রেওয়াজও নেই। নীরবতা ভঙ্গ করে একসময় বলে, “দেরী কোরো না। বিয়ের দিন ঠিক করে ফেল যতশীঘ্র পারো। সেনারা গ্রামের দিকে চলে আসছে যখন তখন। মারিয়া ক্ষেতে যায় পশুচারণে। আগে তোমাকে বলিনি। একটি যুবককে প্রায়ই দেখি ঘোড়ার পিঠে, খুব কাছে আসে না, তবে আমি মারিয়ার খোঁজ করতে গিয়ে তাকে দূর থেকে যেতে দেখেছি কয়েকবার। আমার বুকের ভিতর ছ্যাঁৎ করে ওঠে। মারিয়া একেবারে সরল। কিছুই বোঝে না। পুরুষমানুষ সম্পর্কে তার এখনও কোন জ্ঞান হয়নি। তবে তাকে সাবধান করতে হবে এবার। কে ঐ যুবক, খোঁজ নিও তো!”
য়োআহিম নিঃশব্দে আহার সম্পূর্ণ করে। এ ঘটনা তারও তো অজানা নয়। তাদের ধর্মে মেয়েদের রজঃস্বলা হওয়ার পরেই বিলম্ব না করে বিবাহ দেওয়ার রীতি, যাতে করে অধিককাল সন্তানের জন্ম দেওয়ার সুযোগ পায় সে। তোরাহ্-তে এমন নিয়মই রয়েছে, আল্লাহ-র নির্দেশ, ইহুদী সংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রয়োজনে। প্রথমে রজঃস্বলা হওয়ার সংবাদ বেত-হা-তেফিলা-র (মন্দির) ভারপ্রাপ্ত প্রধান পুরোহিতকে জানাতে হবে। তিনি গ্রামের বিবাহযোগ্য পুরুষদের মন্দিরে ডেকে পাঠাবেন। যারা ঋতুমতী হয়েছে, সেইসব মেয়েরাও উপস্থিত হবে। ঋতুমতী হওয়ার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যেই ‘ইরুসিন’, অর্থাৎ বিয়ের প্রাথমিক পর্ব বা বাগদান সেরে ফেলতে হবে। এরপর মন্দিরে কিম্বা আঞ্চলিক প্রধান পুরোহিতের বাড়িতে ছেলে ও মেয়ে পক্ষের লোকজন হাজির হয়ে একটি ছোট অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পাত্র পাত্রীর পিতাকে মোহর বা কিছু ধন দান করে পাত্রীর অধিকার অর্জন করে নেবে। এরপর সে গাধার পিঠে চড়িয়ে বৌকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে কিম্বা বাগদত্তা স্ত্রী তার পিতৃগৃহেও থাকতে পারে। কারণ তার শরীর তখনও সন্তান ধারণের উপযুক্ত হয়নি। এই সময় সর্বাধিক এক বছর পর্যন্ত হতে পারে। বিধবা মেয়েদের পুনর্বিবাহের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা একমাস। তবে বাগদত্তা স্ত্রীকে পাত্র নিজের ঘরে নিয়ে গেলেও তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করতে পারবে না এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত। এই সময়কালে পাত্রীকে দৈহিকভাবে সম্পূর্ণ পবিত্র থাকতে হবে। যদি সে কোনও পরপুরুষের সঙ্গে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তার শাস্তি হবে। এই শাস্তি ভয়ানক। গ্রামের সকলে তাকে পাথর ছুঁড়ে মারতে মারতে মেরে ফেলবে। ইরুসিনের পর পবিত্রভাবে এক বছর কাটানো হয়ে গেলে সম্পন্ন হবে বিয়ের পরবর্তী পর্ব—নিসুইন। এটি স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলনের আরম্ভ পর্ব। য়োআহিম জানে, ধর্মের আইন যতই কঠোর হোক না কেন, ফাঁকফোকর গলে নিষিদ্ধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে অনেকেই। অনেকক্ষেত্রে পরিবারের মধ্যে জ্ঞাতগোষ্ঠীরাই ‘বিতুলাহ্’ মেয়েটির সর্বনাশ করে। রোমের সৈনিকদের ধর্ষণের শিকার হওয়ার সংবাদও প্রতিদিনই পাওয়া যায়। য়োআহিম নিঃশ্বাস ফেলে বলে, “দেরী করব না। কালই শূল-এ গিয়ে রাব্বির সঙ্গে দেখা করে আসব।” অ্যানির মাতৃহৃদয় বুঝি ক্ষণেক জুড়ালো। মা হওয়ার বড় জ্বালা।
(ক্রমশ) ৩য় পর্ব পড়ুন
পাদটীকা:
(১) বিখ্যাত অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ-কাহিনী লেখক ডেভিড রবার্টস দেড়দিনের এক দীর্ঘ পর্বত পরিক্রমা শেষে যখন নাজারেথ দর্শন করেন, পাহাড়ে ঘেরা এই প্রাচীন গ্রামটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁর মনে হয়েছিল, যে পাহাড়গুলো গ্রামটিকে বেষ্টন করে রয়েছে, গ্রামটি যেন তাদের হৃদয়স্বরূপ (“the beautiful hamlet of Nazareth nestled as it were in the bosom of the hills by which it is surrounded”)
(২) নিসান-ইহুদী ক্যালেন্ডার অনুসারে নতুন বছর, ইংরাজি মার্চ-এপ্রিল মাস।
(৩) ইরুসিন-প্রাচীন ইহুদী-বিবাহ প্রথায় বিয়ের প্রথম ভাগ-বাকদান; দ্বিতীয় ভাগ নিসুইন, স্বামী-স্ত্রী-র দৈহিক সম্পর্কের মাধ্যমে বিয়ে সম্পূর্ণ হওয়া।
(৪) তোরাহ্- হিব্রু ভাষায় লেখা ইহুদী ধর্মগ্রন্থ।
(৫) বিতুলাহ্-ঋতুমতী বিবাহযোগ্যা মেয়ে।
(৬) মিকবাহ্-প্রথম ঋতুস্রাব শেষ হওয়ার পরে বৃষ্টির জল ধরে রাখা বিশেষ জলাধারে শুদ্ধি-স্নান।
Tags
সুচিন্তিত মতামত দিন