প্রিয়দীপ

শব্দের মিছিল সম্পাদকীয়

একুশে ফেব্রুয়ারি। অগণতি শহীদের রক্তে অর্জিত ভাষার প্রতিষ্ঠার অধিকার। যে ভাষা মায়ের ভাষা, আন্দোলনের ভাষা, স্বৈরাচার থেকে মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ভাষা। শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্ম সাহিত্য সাংস্কৃতির মেলবন্ধনের ভাষা। সম্প্রীতির ভাষা, সৌহার্দের ভাষা। ভাষা স্নেহের, ভাষা প্রেমের, ভাষা আমরি বাংলা ভাষার।

শুধু এই ভাষা সমকালীন রাজনীতির ভাষা নয়! কেননা, রাজনীতিই যেখানে দেশ এবং নাগরিকের চালিকাশক্তি, যে রাজনীতি এবং তার রাজনৈতিক আদর্শ, রাজনৈতিক কর্মসূচি, রাজনৈতিক ভাষ্য দেশ এবং নাগরিকের প্রভূত উন্নতি সাধনের স্পৃহায় গণ মানুষের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে, বোধ এবং মননে প্রতিফলন ঘটায় - সেই রাজনীতির অঙ্গন এখন চাতুর্যপূর্ণ। দুর্নীতির অধিষ্ঠান।  স্বাভাবিক ভাবেই অসৎ, অযোগ্য মানুষের ভিড়ে -  স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বর্তমান রাজনীতির জোয়ারে সাধারন মানুষের আদতে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

স্লোগান হোক কিংবা ভাষণ, রাজনীতির অঙ্গনে সুমধুর বাংলা ভাষাও আজ নিপীড়িত মানুষের ত্রাস হয়ে উঠেছে। আরও আশ্চর্য্য - মানুষের মৌলিক অধিকার কায়েমের ভোট উৎসবে নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষেরও মনের ভাষার দূরদর্শী এবং দিকনির্দেশনামূলকও কোনো প্রতিফলন নেই।

যারা বিশিষ্ট তারাই যেন পাপিষ্ঠ, যারা শোভিত শিষ্টাচার তারাই অধিক ভ্রষ্টাচার। যারা লোলুপ তাদের সারাজীবন মুখে কলুপ। আমরা আহম্মক তাইতো টেলিভিশনের পর্দা জুড়ে গন্ডায় গন্ডায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সবজান্তা। জোয়ার ভাটার মতো এদের মতাদর্শ এদের ভাব প্রকাশের অবাধ গতি এবং তার ধারা।

অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার বিবিধ মসনদ, তার চেয়ার, তার নানান উপঢৌকন এর স্বপ্নে বুদ হয়ে থাকার অঙ্কুরিত বীজ তাই আজ উন্নয়নের পথেঘাটে। লাঞ্ছিত নিপীড়িত অসহায় বুভুক্ষ মানুষও এই রঙিন স্বপ্নের বাইরে নন। তারাও ভিড় করছেন, তারাও ভীত গড়ছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম মেধা হত্যার খেলায়।

এখানেই চলমান রাজনীতি এবং তার পেটেন্ট পাওয়া জনদরদী সেবায়তদের সফলতা। তাদের একমাত্র লক্ষ্য মানুষকে তার বোধগম্য ভোতা করে দাও। শিক্ষা কে দাসত্বে পরিণীত করে দাও। শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের হাত কে মুষ্ঠিবদ্ধ নয় - কর্মে বুনিয়াদ নয়, ভিক্ষার দোরগোড়ায় পৌঁছে দাও। প্রতিবাদী কণ্ঠকে নির্মূল করে দাও। অন্যথায় সুড়সুড়ি দাও ধর্মে। নাওয়া খাওয়া ভুলে - রাজনীতির ফুলে ফলে অসংখ্য অসভ্য মানুষ মেতে থাকুক, দুয়ারে মদে বুদ হয়ে থাকুক ভিটামাটি উচ্ছেদে।

ঠিক এখানেই রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থকতা। একমাত্র ছাত্র সমাজই এই ঘুনেধরা রাজনীতির আমূল পরিবর্তনের নির্ণায়ক হতে পারে। যেমনটি পেরেছিলেন ওপার বাংলার দেশ বরণ্যে দামাল সন্তানেরা। একটি ভাষা আন্দোলনই ভীত গড়ে দিয়েছিল সোনার বাংলার। জয় বাংলার।

তাইতো, সে দেশের প্রয়াত কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার ‘একুশে ফেব্রুয়ারির উত্তাপ ও গতি’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি শুধু বাংলা ভাষা আদায়ের দাবি জানাবার দিন নয়, মানুষের প্রতিবাদকে প্রকাশ করার, প্রতিরোধকে ভাষা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারি।’

অথচ এই একুশে ফেব্রুয়ারি? এই বাংলায়? নিছকই জয় বাংলার নিস্পৃহ ধ্বনি। বরং দূর থেকে প্রকট হয়ে ভেসে আসে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন .... 


প্রি য় দী প


Previous Post Next Post