সারি সারি টিনশেডের একতলা আবাস মেডিকেল ছাত্রদের।হোস্টেলের উল্টো দিকে আমগাছের ফাঁকে ফাঁকে রেস্টুরেন্টের সারি।
আকাশের নীচে পাতা চেয়ার টেবিল আড্ডায় ভরে ওঠে সকাল সন্ধে। ভাত, মাছ, মাংস,শিক কাবাব, পরোটায় সরগরম রেস্টুরেন্ট চত্তর। সন্ধ্যে গুলো গান কবিতায় মুখর,তখন সিডি প্লেয়ার ছিল না- সেভেনটি এইট আর পি এম এর রেকর্ডে গান বাজত গ্রামোফোনে লতা,মুকেশ,হেমন্ত,সতীনাথের। চা আর দ্রুত জ্বলতে থাকা ক্যাপস্টান সিগারেটের মগ্নতায় চলমান রাজনীতির আড্ডা দৌড়ত।
যে দিন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব এলো সেদিনই প্রতিবাদের ঝড় বইতে শুরু করলো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে।সেই সময় রেডিও সরকার নিয়ন্ত্রিত একমাত্র মাধ্যম।পত্রপত্রিকা সীমিত। অগত্যা মাসিক কিছুটা প্রভাব ফেলেছিল নিঃস্বার্থ সাংস্কৃতিক চেতনার ভাষা আন্দোলনে।
নজরুলের 'কারার ওই লৌহকপাট', সলিল চৌধুরীর 'নওজোয়ান নওজোয়ান' আর আব্দুল লতিফের 'ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়' গেয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছাত্রদল।শরীরের স্নায়ুতে রক্তে তন্ত্রীতে যে শব্দের অনুরণন, যে ভাষায় ভালবাসা নামে নদীর বুকে,
যে ভাষায় প্রেমের অনুবাদ হয়,মিছিলের স্পন্দন যে অক্ষরের আদরে,শত শত তাজা মুঠোয় সেই বাংলা ভাষাকে যত্নে রাখার অঙ্গীকারে,একুশে ফেব্রুয়ারির সকালের রোদ বারুদের কুয়াশা মেখে ঢেকে দিল বাংলার সজল মুখ।
গাজীউল হক,আব্দুল মাতিন,গায়ক আব্দুল লতিফ,আলতাফ মাসুদের মত অনেকের তাজা রক্তে স্নান সেরে নবজন্ম হল অন্যায়ের, প্রতিবাদের, আত্মবলিদানের, আদরের, সোহাগের, প্রানের ভাষা -বাংলা ভাষার।
সেই বাংলা ভাষার গৌরব আজ হারাতে বসেছে। নব্য আধুনিকতার আড়ালে বাংলা ভাষাকে অবহেলারএকটা সুচারু প্রয়াস কাজ করে চলেছে। সকলেই আজ এক দিশাহীন শিক্ষাব্যবস্থার দিকে গড়িয়ে চলেছি।দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি মানুষকে যান্ত্রিক করে তুলছে।শিশুকে ছোট্ট বয়স থেকেই যান্ত্রিক শিক্ষাপদ্ধতির সাথে গাঁটছড়া বেঁধে দিচ্ছি।প্রতিযোগিতার দৌড়ে সামিল হতে গিয়ে ইংরেজি শিক্ষার প্রাধান্যের কারণে এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে অপরিসীম পড়ার চাপ ছোট বয়স থেকেই তাদেরকে সাহিত্য থেকে সাহিত্যের রস আস্বাদন থেকে বিমুখ করে তুলছে। আমরা জীবিকা নির্ভর শিক্ষায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছি তাই প্রাথমিক শিক্ষার ভার যে অভিভাবকদের হাতে তাদের সচেতন হবে হবে।কারণ শিশু বয়সেই সেই বীজ বুনে দেওয়া দরকার যে বাংলা ভাষা তোমার প্রাণের ভাষা। অন্যভাষা হোক প্রয়োজনের,মাতৃভাষা হোক প্রাণের,বিনোদনের। লেখার জগতে
একথা ঠিক আজকের পরিস্থিতিতে পাঠক যেমন কমেছে তেমনি কবি-লেখকদের সংখ্যাও কিন্তু বেড়েছে সেই হিসেবে কোথাও একটা সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়। আর এত বই প্রকাশ বা মোড়ক উন্মোচন শুধু আড়ম্বর এ কথা সঠিক নয়।বহু মানুষ তার নিজের মাতৃভাষায় লিখছে,তার মান যেমনই হোক,সে তার ভাষাকে ভালোবেসেই লিখছে।এটাই তো শুভ লক্ষণ।আজকের একটি কনভেন্ট পড়ুয়া কিন্তু কোন বাংলাসাহিত্য না পড়েও কবিতা না পড়েও তার মানসিক চাপ কাটাতে বাংলা গান শোনে।আর আধুনিক প্রজন্মকে সাহিত্যমুখী করে তুলতে লেখার ধরণ বদলানো,সত্তর আশির ট্যাবু ছেড়ে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। আমরা কেউ প্রতিবাদ করি না যখন সিনেমা হলে জাতীয় সঙ্গীত শুরু হলে জন গন মন না বলে হিন্দিতে জানা গানা মানা তেই সুর লাগাই!সবাইকেই ভাবতে হবে সংকট যাতে সত্যিই না এসে পড়ে। আর এটাও খুব সত্যি যে, যে লেখে সে পাঠকের কথা ভেবে লেখে না।লিখতে চায় বলেই লেখে।এ পড়ে সে মনের আনন্দে পড়ে।এই চাওয়া যতদিন বেঁচে থাকবে বাংলা ভাষাও থাকবে।
আমাদের একবার পিছন ফিরে দেখা দরকার। ভাষাশহীদদের স্মরণে মননে সেইসব তরুণ তুর্কির রক্তে ভেজা কন্ঠগুলি ভাষার ভালবাসায় জীবন্ত করে তোলার চেষ্টায় ব্রতী হই আর একবার!
যেন অন্তরে উপলব্ধি করতে পারি 'বাংলা আমার জীবনানন্দ বাংলা আমার প্রাণের সুখ' ...উচ্চারণে অহংকারী হয়ে সমস্বরে বলতে পারি ... 'আ মরি বাংলা ভাষা মোদের গরব মোদের আশা'!.
আর এসব কিছুই যদি না পারি, ভাল তো বাসতেই পারি আমাদের অন্তরের ভাষাকে নিবিড় আন্তরিকতায়, বাংলাকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে!
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
আর এসব কিছুই যদি না পারি, ভাল তো বাসতেই পারি আমাদের অন্তরের ভাষাকে নিবিড় আন্তরিকতায়, বাংলাকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে!
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
Tags:
গদ্য