ঝিমলি এখনো জানেনা তার মা কোথায় আছে। মা ফিরলে সে আজকে একটা ছাতা উপহার পাবে। মা কথা দিয়েছে একটা ফুল আঁকা ছাতা তাকে কিনে দেবে। দুপুরবেলায় একটা কাঁথা সেলাই করছিল ঝিমলির দিদা। আর ঝিমলি উঠোনে বসে বসে পায়ে আলতা পরছে।
মা বেরিয়ে গেলে ও দিদার কাছেই থাকে। ঝিমলির বাবা ওর মাকে ছেড়ে চলে গেছে। অন্য কোথাও অন্য কারো সাথে সংসার করে। ঝিমলি শুধু জানে বাবা দূরে কাজ করতে গেছে। এবার নতুন ইস্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়বে ঝিমলি। ঝিমলি জানে,তার মা আজ সুচেতা কাকিমার বাড়িতে কাজ সেরে একটা ছাতা কিনে নিয়ে ফিরবে।
এদিকে উমা,মানে ঝিমলির মা এখনো কাজে আসেনি।
ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে সুচেতা।
"এদের কখনো ভালো করতে নেই। এই সেদিন ছুটি নিলো। আবার আজকে। বলল দেরী হলেও আসবে। এখনও এলো না।এইবার সব কাজ নিজে করো। চালাকি করে আবার ফোনটাকে সুইচ অফ করে রেখেছে। "
বেলা গড়িয়ে প্রায় একটা। রাগে গজগজ করতে করতে কাজ সারছে সুচেতা। বিকেলে বাপের বাড়ি যাবে। অনেকদিন মাকে দেখতে যাওয়া হয়নি। মেয়ে রূপসা ফিরবে সাড়ে তিনটে নাগাদ। তার টিফিন বানাতে হবে। রূপসা ক্লাস সেভেনে পড়ে পাবলিক স্কুলে। স্কুল বাসেই যাতায়াত করে। আজকে ওর ব্যাগে ছাতাটা ঢুকিয়ে দিতে ভুলে গেছে সুচেতা। এত বড় হয়েছে তবু মনে করে জিনিসগুলো ব্যাগে গুছিয়ে নেবেনা। মোড়ের মাথা থেকে বাড়ি অবধি রোদে রোদেই ফিরবে। যদিও রাস্তার দূরত্ব খুবই অল্প। তবে রোদ লাগলে মেয়ের মাথার যন্ত্রণা হয়। দেখা যাক টিফিনটা বানিয়ে নিয়ে যদি সাড়ে তিনটে নাগাদ একটু এগিয়ে যাওয়া যায়।
ছাতাটা কোথায় যেন! রূপসার পড়ার টেবিলের ওপর থেকে ছাতাটা নিয়ে এসে সোফার ওপর রাখল সুচেতা। নিজের আত্মবিশ্বাসে ভরসা করেই মেয়েকে মানুষ করছে ও। দুর্ঘটনায় উজানের মৃত্যু হয়েছে বছর দুয়েক। এখনো ঘটনাটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি সুচেতা। ঘরের কাজগুলো সারতে সারতেই স্যান্ডুইচ বানানোর জন্য ও আলু, ডিম সেদ্ধ করতে বসিয়ে দিল । আজকে মা আর ভাইয়ের জন্যও বানিয়ে নিয়ে যাবে। রূপসাও খুব খুশি। দিদানের সাথে দেখা হবে। কাজ সারতে সারতে কখন যে ঘড়িতে তিনটে চল্লিশ, খেয়ালই করেনি । ঝটপট চুলটা যা হোক করে চিরুনি দিয়ে একটু ঠিকঠাক করে নিয়ে জোরে পা চালিয়ে চলে এলো মোড়ের মাথায়। হেঁটে দু'তিন মিনিট । গ্রীষ্মের চড়া রোদ। মোবাইলের আলোটা অন করে সুচেতা দেখল তিনটে পঁয়তাল্লিশ।
কি হলো! স্কুল বাসটা তো এতক্ষণে এসে যাওয়ার কথা।
আরও কিছুটা সময় কাটল। সুচেতা উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন করল স্কুলে। স্কুলের অফিসে কেউ একজন ফোন ধরে বলল
---বাস তো অনেক আগে বেরিয়ে গেছে।
--- আচ্ছা, বাস ড্রাইভারের নম্বরটা একটু পাওয়া যাবে?
--- নম্বরটা স্কুল থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো।
বাড়িতে একটা ডায়েরিতে নম্বরটা ছিলো। কিন্তু ফোনে সেভ করে রাখেনি সুচেতা।ফোন নম্বরটা ডায়াল করল।
---- হ্যালো
---- হ্যাঁ দাদা,রূপসার মা বলছি। ওকে নিতে এসে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। কতটা দেরী হবে?
--- ম্যাডাম ওকে তো নামিয়ে দিয়ে এসেছি অনেকক্ষণ। একদম পাক্কা টাইমে।
--- সে কি! ও তো আসেনি।
--- সেটা আমি কি করে বলব ম্যাডাম।
--- তুমি দেখেছ ওকে নামতে?
--- আমি নিজে দেখেছি। আপনি একটু দেখুন ওখানেই হয়ত কোথাও...
ফোনটা কেটে দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে ঘরে ফিরে এলো সুচেতা। যদি রূপসা ঘরে ফিরে আসে। হতে পারে হয়ত রাস্তায় ক্রস করেছে কোথাও। খেয়াল করেনি।
নাহ্ নেই।
গোটা রাস্তা, পাশের দোকান সব জায়গায় খুঁজেও মেয়ের কোনো হদিশ মিলল না। বাপের বাড়িতে ফোন করল। রূপসার দু একজন বন্ধুর নম্বরেও ফোন করল সুচেতা। সবাই বলল রূপসাকে বাড়ির রাস্তার মোড়েই নামানো হয়েছে।
ভাইকে অফিসে ফোন করে সবটা জানাল সুচেতা।
ঘড়িতে পাঁচটা।। ঠিক হলো পুলিশের কাছে যাবে ওরা।
সুচেতা আর সুচেতার এক বান্ধবী রাখী, ওর ভাই অনিরুদ্ধ গাড়ি নিয়ে থানায় বেরোলো।রাস্তায় একটা জায়গায় ভীষণ জটলা। সামনের গাড়িগুলো আটকে আছে। সুচেতার খুব তাড়া।
"অনি তুই নাম না। নেমে দেখ কি হয়েছে "
অনি গাড়ি থেকে নেমে দেখে এলো।
--- কেউ একজন মারা গেছে রে দিদি।
সুচেতা ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করল
---দাদা গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য দিক থেকে যাওয়া যায় তো চলুন না
ড্রাইভার বলল-
দেখছি ম্যাডাম। দাঁড়ান, আমি একবার দেখে আসি।তারপর না হয় ঘুরিয়ে নেব।
তারপর গাড়ি থেকে নেমে প্রায় পাঁচ সাত মিনিট সে ঐ জটলার কাছে। এদিকে ঘড়িতে প্রায় সাড়ে পাঁচটা ।সুচেতা আর ধৈর্য্য ধরতে না পেরে ছুটে গেলো। কি হয়েছে সে কিছুই জানেনা। কে মারা গেছে,দূর্ঘটনায়, না কিভাবে।সে শুধু জানে তার একমাত্র মেয়ে এখনো স্কুল থেকে বাড়ী ফেরেনি। জটলার কাছে এসে রূপসা একে ওকে হাত দিয়ে ঠেলে একবার উঁকি মারল। রাস্তার ওপর বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে থাকা দেহটা দেখে কেঁপে উঠল সুচেতা।একটা প্রায় থেঁতলে যাওয়া শরীর, ক্ষতবিক্ষত মুখ --- নিশ্চল পাথরের মত পড়ে আছে উমা।
দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না আর সুচেতা। মাথাটা ঘুরছে। ততক্ষণে অনি আর রাখী এসে সুচেতার হাতটা শক্ত করে ধরেছে।ভাইয়ের দিকে অসহায়ভাবে তাকাল সুচেতা। আঙুলটা দিয়ে পড়ে থাকা দেহটার দিকে ইঙ্গিত ক'রে ঝরঝর করে কাঁদতে কাঁদতে সুচেতা বলল
--- অনি উমা রে
অনিরুদ্ধর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে সে জিজ্ঞেস করল
--- কি হয়েছিলো দাদা? অ্যাক্সিডেন্ট?
--- আমিও ঠিক ঠাক জানিনা। বলছে তো সবাই যে ছেলেধরা। সন্দেহজনকভাবে বালিকা শিক্ষা সদনের সামনে ঘোরাঘুরি করছিলো। লোকেরা প্রশ্ন করেছে। ঠিক করে উত্তরও দিতে পারেনি। মিথ্যা বলছিলো, নাকি ওর মেয়েকে ভর্তি করতে এসেছে স্কুলে। এরা তখন বুঝতে পেরেছে যে উদ্দেশ্য ভালো নয়,তাই মারধোর করেছে। তবে মেরে ফেলাটা ঠিক হয়নি। পুলিশে দিতে পারত।
ড্রাইভার ততক্ষণে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে ওয়েট করছে। দূর থেকে তার কন্ঠস্বর শোনা গেলো।
"দাদা চলে আসুন এখানে জটলা কাটতে দেরী হবে। অন্য দিক দিয়ে নিয়ে যাব "
দূর থেকে হাত দেখিয়ে সুচেতা ওকে দাঁড়াতে বলল
...তারপর ভীড় ঠেলে এগিয়ে উমার কাছে গিয়ে বসল। সুচেতা জানে উমা কাজে এলে ওর সঙ্গে এই ব্যাগটাই থাকে। উমার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে দিতে গেলে ভীড় থেকে একটা লোক বলে উঠল
--- হাত দেবেন না ম্যাডাম, পুলিশ কেস আছে।
কথায় কান না দিয়ে সুচেতা উমার ব্যাগটা খুলল।ব্যাগে সুচেতার মোবাইল, একটা ছোট্ট টাকার ব্যাগ আর দুপুরে খাওয়ার ওষুধ গুলো থাকে।সুচেতার বাড়ীতে ন বছর কাজ করেছে উমা। প্রায়দিনই ওকে ব্যাগ থেকে মোবাইল, ওষুধ বার করতে দেখেছে ও।
রাস্তার ওপর পড়ে থাকা ব্যাগটায় একটা ওষুধের পাতা আর একটা ছোট্ট কাগজ। কাগজটা হাতে নিয়ে সুচেতা দেখলো একশ আশি টাকা দিয়ে কেনা একটা ছাতার বিল।
পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সেখান থেকে রুদ্ধশ্বাসে ওরা ছুটে গিয়েছিল থানায়। গাড়ির মধ্যে সারা রাস্তা কাঁদছিল সুচেতা।
পুলিশি তৎপরতায় পরদিনই রূপসাকে ফিরে পায় সুচেতা। যদিও অনেকদিন রূপসা একটা ট্রমার মধ্যে ছিলো। স্কুল বাস থেকে নেমে ওর সাথে ঠিক কি কি হয়েছিল সেটাও স্পষ্ট মনে নেই ওর। কিন্তু যা কিছু হতে পারত তার থেকে বেঁচে গিয়েছিল রূপসা। এস পি মৈনাক ত্রিবেদী উজানের ভীষণ ভালো বন্ধু। ওনার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে সুচেতা। তবে উমার মৃত্যুতে আজও নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনি ও। যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিনই হয়ত সেই অভিশপ্ত স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াবে তাকে।
সেদিন ছিলো বুধবার... উমা কাজে এসেছিল সুচেতার বাড়ি।
---গতকাল এলি না কেন? তোর এই যখন তখন ছুটি নেওয়াটা একটা অভ্যেসে দাঁড়িয়েছে।
--- কি করব দিদি, মেয়েটা তো ঘরে একা। পাড়াটা তো ভালো নয়। ওকে একা রেখে আসতে পারিনি। উঠতি ছেলেগুলোনের উপদ্রব যা বাড়ছে! জানলার কাছে এসে শিস দেয়, কাগজ ছুঁড়ে মারে।আরও কত রকম বাঁদরামি ক'রে মরে। তার ওপর তো ছেলেধরা বেরিয়েছে। তুমি শোনোনি?
---ছেলেধরা বেরিয়েছে?
-- হ্যাঁ গো। কোথায় কালী মন্দির হবে,মন্দিরের ভীতে নাকি বাচ্চা বলি দেবে বলে ছেলেমেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পাড়ায় পাড়ায় তো সব বলছিল যে বাচ্চাদের চুরি করে নাকি বিদেশে বেচবে। কাটা মাথা নিয়ে কি সব...
--- যত্তসব। মন্দিরের ভীতে বাচ্চাদের মুন্ডু দিয়ে কি করবে! এসব কোথা থেকে শুনিস। হ্যাঁ বাচ্চাদের চুরি করে, পাচার করে দেওয়া হয় এটা ঠিক। কিডনি বেচে দেওয়া হয়।এইসব সত্যি। কিন্তু ছেলেধরাটরা সব গুজব।
--- এগুলো শুনলে কি আর একা ফেলে আসতে পারি দিদি। এখন তো কেউ কারো বাচ্চাকে বাইরে একা একা ছাড়ছেই না। তুমিও রূপসা দিদিভাইকে একা কোথাও ছেড়োনা। ছেলেধরা খুব বেড়ে গেছে।
--- তোর মেয়ে তো তোর মায়ের কাছেই থাকে...
--- মা সেদিন ছোটমামার বাড়ি গিয়েছিল যে। মামার অবস্থা খুব খারাপ। মরোমরো।
--- আচ্ছা ছাড়্, এগুলো কেটে কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখ। আর শোন্ এভাবে চলে না বুঝলি? মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি কর।
--- ও আর যেতে চাইছেনা দিদি
--- যেতে চাইবে কি করে? ও তো দিব্যি মজা পেয়ে গেছে। পড়াশোনা নেই কিছু নেই, এরপর আর একটু বয়স হলেই তোর মত ঘরে ঘরে কাজে চলে যাবে।নিজের জীবনটা তো গেছেই,মেয়েটারও কপাল পোড়াবি
--- তোমার কাছে আনব। তুমি একটু বুঝিয়ে বলো না।
--আমার বোঝানোর কোনো দরকার নেই। তুই মা,তোর দায়িত্ব মেয়েকে লেখাপড়া শেখানো। ঐ তো রাজমিস্ত্রীকে বিয়ে করেছিলি। পালালো তো তোকে ছেড়ে।
-- ওকে কি আর কম বুঝাই দিদি
--- শোন্ উমা, ক্লাস ফোরের বাচ্চাকে কি বোঝাবি তুই? ও নিজের ভালো মন্দ কিছু বোঝে? এখনও গায়ে গতরে খাটতে পারছিস। মেয়েটাকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ কর।
--- সে ইস্কুলে সে আর যাবেনি গো দিদি। এদিকে নাই কিন্তু ওদিকে আছে।
-- কেন? যাবে না কেন?
--- ফোর পাস করে তো ঘরে বসে আছে একবচ্ছর হতে গেলো। তার লজ্জা লাগে। বন্ধুরা সব উঁচু কেলাসে উঠবেনি! তারপর সেই কোন্ মাস্টার তার সাথে কি করছে ভগবান জানে!
--- সে কি! কোন্ মাস্টার কি করেছে মানে! তুই না মা! খোঁজ নিসনি স্কুলে গিয়ে!
--- কি হবে দিদি, বলতে গেলে আরো অসুবিধা, মেয়ের উপর রাগ বাড়বে। ও কাঁদছিল কটা দিন। তারপর ভুলে গেছে। আমিও আর কিছু বলিনি।
এখন বাচ্চা মেয়ে কি বলতে কি বলছে, কে ওসব করবে বলো দিকিনি
--- আরে বাচ্চা মেয়ে হলেও কিছু তো একটা হয়েছিল, না হলে কি সে কাঁদে! আমি কি যাব স্কুলে?
--- না না দিদি তুমি আর এসব নিয়ে কিচ্ছু করোনি গো।
এমনিতেই স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। পাড়ায় সব কেমন কেমন কথা বলে, কেমন করে তাকায়। কাজে আসি,লোকে ভাবে বোধ হয়...
--- হুম। লোকের আর কাজ কি এসবই তো করবে। যাক গে, ঐ স্কুলে না যেতে চায় না যাক। তোকে তো বললাম আমার বান্ধবীকে বলে দেব। বালিকা শিক্ষা সদনে ভর্তি করে দিয়ে আয়। যাবি? তাহলে ফোনে কথা বলে নেবো আর একবার।
--- স্কুলে ভর্তির টাকা কত গো?
--- তুই যা, গিয়ে কথা বলে আয়,ভর্তির টাকাটা আমি দিয়ে দেব।
--- না, না এই তো মাসের প্রত্থম দিক। টাকা আছে।
--- হ্যাঁ তোর অনেক টাকা। ঠিক করে বল কাল কি যাবি? তাহলে আমি শ্রাবণীকে ফোন করে বলব।
--- কাল? কখন যাই বলো তো? আচ্ছা তাহলে মিত্রদের বাড়ীর কাজটা সেরে ইস্কুল হয়ে তোমার এখানে আসব।
--- তাই কর।
তাহলে আমি ফোনে বলে দিচ্ছি। তুই যাবি। কি কি লাগবে জেনে তোকে বলব। আর যাওয়ার সময় পাঁচশ টাকা নিয়ে যাস্
--- ওরা ভর্তি নেবে তো?
--- নেবে। যাতে নেয় সেই জন্যই তো বলছি কথা। ঘরটা মুছে চাদরগুলো ছাদে দিয়ে আয়।
ঘরে ফিরে উমা তার দশ বছরের মেয়ে ঝিমলিকে বলল
তোকে ইস্কুলে ভর্তি করব কাল।
--- আমি আর পড়ব না।
--- এরকম বলে না লক্ষ্মী মেয়ে আমার। পড়াশোনা না করলে কি করে হবে।
ঝিমলির মনটা গলানোর জন্য চাউমিন বানিয়ে দেয় উমা। আদর করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজী করে স্কুলে যাওয়ার জন্য।
কিন্তু ঝিমলির আর স্কুলে যাওয়া হয়নি।
এলোপাথাড়ি মারধোরে তার মায়ের জাহানটাই চলে গেছে। যারা মারামারিতে অংশগ্রহণ করেননি, তারা যত্ন সহকারে উমার জন্য বরাদ্দ করেছেন তিন চার মিনিটের ভিডিও । সাবধান করার জন্য সচেতনতার পোস্টও ছড়িয়ে দিয়েছেন কোণায় কোণায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিকবার সুচেতার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে সে মারণযজ্ঞ । ভিডিও ভাইরাল হতে কতক্ষণ!সেখানে মন্তব্যেরও শেষ নেই। মতামতের ঝড়-- অকথা,কুকথা।
কতজনকে সত্যিটা বলবে সুচেতা।জনে জনে ঠিক বোঝাতে বোঝাতে ও ক্লান্ত। বিবেকের তাড়া খেয়ে আবার চেষ্টা করে। একশ জনকে বোঝায়, দু'শ জন শেয়ার করে ভাইরাল হওয়া পোস্ট, ভিডিও।
খবর ছড়িয়ে পড়ে আরও হাজার জনের কাছে, হাজার থেকে অযুত। এভাবে আরও কয়েক লক্ষ বার মৃত্যু হয়েছে উমার।পরিচিতজনেরা সুচেতাকে এখনো জিজ্ঞেস করে ঐ ছেলেধরা মেয়েটি তোমার বাড়ীতে কাজ করত? তাই না?
সাবধানে থেকো। দিনকাল ভালো নয়।।
সুচিন্তিত মতামত দিন