✓ মনোনীতা চক্রবর্তী । ইন্দ্রাবতীর ডায়েরি থেকে-২২

মিছিল

ইন্দ্রাবতী মরিয়াও মরে নাই। সে কেবলই গায়। মূল্যের পরিমাণ না-জানিয়াই কুসুমের কথা ভাবিয়া চলে শুধু। বন-মন-কুসুম। কিঞ্চিৎ দূরে অকিঞ্চিৎ সুখ বিছাইয়া মঞ্জরী গাইয়া ওঠে _ " আমার জীবন পাত্র উচ্ছ্বলিয়া মাধুরী করেছ দান...তুমি জানোনাই...তুমি জানোনাই... তুমি জানোনাই তার মূল্যেরও পরিমান......"

সেই মাধুরীটুকুই তো সব...মাধুরীটুকুই তো আসল। আসলে সুদ-আসলে বাড়তে থাকা ক্রমাগত ঋণে বোঝা বাড়ে অথই দৃষ্টির। ভারী হয় বুক। তুমুল বর্ষার মতো কখন যেন ভিজিয়ে দিয়েছ আশীর্বাদী লাল জবায়। গোপনটুকু দেরাজ থেকে নামিয়ে রোজ পাটভাঙা তাঁতের শাড়ি মতো পরে। উছলে পড়ে আস্ত যমুনা। অঙ্গের সবটা সোনা। অপ্রচলিত বানানের ন্যায় ঠায় টেলিগ্রামের প্রতীক্ষায় দাঁড়াইয়া থাকে। ইন্দ্রাবতী যে মরিয়াও জাগিয়া আছে, অসংলগ্ন সম্পাদনার ভিতর...

প্রতিটি নারীর ভেতর ঘর থেকে টপকে পালায়, আবার ঘরে ফেরে এক-একটা বসন্তসেনা..

ভাণ্ড উপচে ছলকে পড়ছে মাধুরী.. কেউ ছন্দে ধরে; কেউ-বা সুরে, কেউ-কেউ বা স্বরে। রিদমটাই আসল, মোদ্দাকথা... বাকিটা তো, বসন্তসেনা ভুল করে ছেড়েই এসেছে তান্ত্রিকের নরম বিছানায়।

ওই যে তিনি বলে গেছেন.... " অধরা মাধুরী ধরেছে ছন্দ-বন্ধনে..." শুধু ধরতে হবে সঠিক টেম্পো....ব্যস!

স্বচ্ছ জল ঠেলে সবটুকু মাধুরী নিয়ে দ্যাখো, সে কেমন ভেজা গায়ে ঠায় অপেক্ষা করছে..
আর মাধুকরী মন্ত্রে বাসন্তীরঙা আঁজলা ছড়িয়ে দু'মুঠো খুদ-কুড়োর আশায় চোখ মেলাচ্ছে আকাশগঙ্গায়...

তখনও কানে ফিসফিস করে আদর করে কবিতার মতো কে-যেন বলেই চলেছে... "আমার জীবন পাত্র উচ্ছ্বলিয়া মাধুরী করেছ দান.... " আমিও তো সেই উচ্চারণই তো করেই চলেছি আনমনে.....আমার মায়া কাজল-চোখ ভাসছে চরম- চূড়ান্ত সুখে বিস্তৃত নীল যমুনায়...

ইন্দ্রাবতীর দেহ কুসুমের চক্ষুর সম্মুখেই ভাসিয়া গেল।কুসুম পা ছড়াইয়া তাহা বর্ণনা করিতে বসিল।মঞ্জরী স্টোরিতে খোলা পিঠ রাখিল...

তাহারা তিনজনাই ফিরিয়া তাকাইয়াছিল;

জন্মাইবার আগেই মৃত্যু একটা কোরাস গান,
তাহারা তাহাতে সুর দিয়াছিল প্রাণ ঢালিয়া...


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.