ত নি মা হা জ রা

শব্দের মিছিল

ঠিক রাত সাড়ে বারোটায় যমুনার ফোন এলো, বৌদি ঘুমোলে?​

কলকাতায় থাকার সময় যমুনা আমার বাড়িতে কাজ করত, আমি তো অনেকদিন প্রবাসে।।​ ফোন নং আছে ওর কাছে। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমার সাধ্যমতো কিছু পাঠাই হয়ত পেটিএম মারফৎ।।​

-এতো রাতে কী ব্যাপার যমুনা?​ বুঝিবা বিপদ। বুকটা ধড়াস করে ওঠে।।​

যমুনা খিলখিল করে হাসে, বৌদি এই করোনা আসা ইস্তক দিনে কাজ তো সব ঘরে ছাড়িয়ে দেছে গো। তাই একোন রেতে কাজ করি,তাই রাত জাগি ।।​

রাতে কি কাজ যমুনা??​

সেই আদিম কাজ গো বৌদি, যে কাজ আইনের ছাপ মারা বৌ বিনমাইনায় করলে তারে সোহাগপনা কয় আর ট্যাকা নিয়ে করলে কয় বেশ্যাগিরি।। আবার খিলখিল করে হাসে যমুনা।। যেন দারুণ আমোদ।।​

দ্যাকো বৌদি ঘরদোর আমার আর নিজের ছিল​ কবে,কিন্তু পুষ্যি ছিল ঘাড়ে এক গাদা, একোনো আচে। বাপ,মা,এন্ডিগেন্ডি ভাইবুইন একপাল।। তোমাদেরই সাতঘরে ঘুরে ঘুরে নিজের ঘর ভেবে​ কত্ত যে যত্ন করে ঘরকন্নার কাজ সারতুম আর থাকতুম। স্বপ্ন দেকতুম আমারও একদিন এট্টা ঘর হবে।। মাস গেলে দেশে ট্যাকা পাঠাতুম।।​

ঘরে ঘরে ভালো কাজে বাহবা, ফাঁকি মারলে গালমন্দ।।​

ঝিগিরির ঘরকন্না করতে গিয়ে যেমনটি তকতকান কইর্যে ঘর মুছতুম, বাসন পোস্কার করতুম, জামা কাপড় আছাড় মেরে মেরে কাচতুম, তেলমশ্লায় কষে কষে গরগরে করে টক- ঝাল-লোনতা -মিঠে রাধতুম,​ এখনো তেমন পুরুষ মানুষ মুছে, পোস্কার করে, আছাড় মেরে মেরে কেচে, আগুনে চড়িয়ে রেঁধে বরকন্না করে বেড়াচ্ছি বৌদি।। হেব্বি মজা।।

নগদা কাজে নগদা ট্যাকা। আমার এই গতরখানায় এত যে রস, এত যে আস্বাদ তাতো কুনোদিন টের পাইনি গো বৌদি।। মিনসে গুলানের নাল ঝরা চোখ আর নেকড়ের মতো দাঁত দেকে বুজি আমুও একট্টা নোভের খাদ্দ।।​

যে মড়াদের মরণের ডর নেই গো এই মহামারিতে এট্টুকুনি, কিংবা তারাও আমার মতো হ্যাংলা ক্যাংলা হাড় মরক্কুট্টে, মরার আগে তারা সব মরণ কামড় মারতে আসে আমার গতরে।।

আর আমিও টেইম বুজে একোন বেলাকে শরীল বিকুচ্চি। হ্যাঁ বৌদি, ব্যালাকে যদি রেশন, ক্যারাচিন সব বিক্কিরি হয়, মেয়েমাগীর মাংসই বা বাদ যাবে কেন নিজের ঘরকন্না তো আর করা হল না, ভাবলাম মরে যদি যাই তার আগে চুটিয়ে বরকন্না করেই মরি।।

কি খিলখিল করে হেসে উঠলো যে যমুনা,যেন ভারি মজার প্রসঙ্গ।।

​ওর হাসির ধাক্কায় ঘূর্ণিঝড় লেগে এইসব মহামারীর হামাগুড়ি দিয়ে আসা থাবা, ক্ষিধে, চাপা উৎকন্ঠা,​ আইন, সমাজ, যৌনতার মেকি রাংতাগুলো সব উড়ে খুলে ন্যাংটো যেতে থাকলো হু হু করে।।

​প্রতিমাসে ওর পুরো সংসারের দায়িত্ব নিই এমন সাধ্য তো আমার নেই, কিইবা শুকনো উপদেশ দেব অন্য কাজের।উপদেশে তো আর পেট ভরে না এতগুলো জীবের।।​

বল্ল, হ্যাঁ বৌদি, তোমাকে ফোন কচ্চি অন্য কারণে, কাকে আর বলি, ঝা রোগ নিয়ে আসচে সব, মরে আমি আজ নয় কাল অবিশ্যি যাবো নিঘঘাত। তা,তুমি তো অনেক নেকাঝোকা করো,​ আমায় নিয়ে একখান গপ্পো লিখো তো তোমার ওই ছাপা বই কাগোচে, বেশ একখানি টক-ঝাল-লোনতা-মিষ্টি​ মরণভাতারি বরকন্নার গপ্পো।



[গত বৎসরের একটি সত্যঘটনা অবলম্বনে লিখিত ]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.