কি বিচিত্র এই দেশ। যারা রাষ্ট্রদ্রোহের সাথে জড়িত। তাদের সাতখুন মাফ। কারণ তাদেরই হাতে দেশের শাসন ক্ষমতা। অর্থনৈতিক ক্ষমতা। সামরিক ক্ষমতা। এই তিনটি ক্ষমতা থাকলেই নিজের দেশ ও স্বদেশবাসীর জীবন নরক করে দেওয়া যায়। দেশর সম্পত্তি বিক্রী করে দেওয়া যায় জলের দরে। দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে বিদেশী শক্তির সাথে গাঁটছাড় বেঁধে দেশবাসীর পিছনে বাঁশ দেওয়াও যায়। যে বাঁশের গালভরা নাম পেগাসাস। আহা পক্ষীরাজ ঘোড়ার দেশে বাঁশের নাম পেগাসাস। না যায় দেখা। না পাওয়া যায় টের। না শোনা যায় শব্দ। না যায় তারানো। সে শুধু চুপটি করে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। অন্যের মাইক্রোফোন অন্যের ক্যামেরা চালিয়ে সব কিছু চুরি করে নিয়ে পাচার করে দিচ্ছে ইজরায়েলে। আচ্ছা এই পেগাসাস যদি পাকিস্তানের হতো। ইজরায়েলের না হয়ে? যদি চীনের হতো? এতক্ষণ দেশশুদ্ধ মানুষের বুদ্ধির গোড়া খানিকটা হলেও হয়তো জল ঢুকে যেত। কে দেশদ্রোহের কাজে যুক্ত।
কিন্তু এ যে ইজরায়েল। সাহেবসুবোর দেশ। খোদ মার্কীনদেশের জামাই আদরে থাকা নয়নের মণি। সেই দেশে আমাদের দেশের সকল গুপ্ত তথ্য চলে গেলে কি আর এমন ক্ষতি? বিশেষ করে ভারত মাতা কি জয়ধ্বনির মালিকরা যখন ইজরায়েলকে শত্রুদেশ বিবেচনা করে না। বরং পরম মিত্র বড়ো ভাই মার্কীন দেশের পরম মিত্র যে দেশ। সেই দেশ ভারতবর্ষেরও মিত্র না হয়ে যাবে কোথায়?
তা যাক। ইজরায়েলে ভারতীয় তথ্য গেলে ক্ষতি নেই। কি ভাগ্গিস চীন পাকিস্তানের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গিয়েছে গোটা দেশ। পেগাসাস যদি শত্রু দেশের হতো। কত বড়ো ক্ষতি হয়ে যেত এতক্ষণ ভারতবর্ষের। একটা বড়ো ফাঁড়া থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশ। বরং এই তো ভালো হলো। ইজরায়েলের মতো ত্যাঁদড় একটি দেশ ভারতবর্ষের পাশে থাকলে চীন পাকিস্তান জব্দ হবে। সাথে বড়ো ভাই মার্কীন দেশের নজরদারী তো রয়েইছে। না, ভারতবর্ষ সব দিক দিয়েই আজ চীন পাকিস্তান থেকে সুরক্ষিত। বাছাধনদের আর ট্যাঁফুঁ করতে হচ্ছে না। হ্যাঁ আমাদের দেশের সরকার বিরোধীরা একটু নাচানাচি চীৎকার চেঁচামেচি করবে কদিন। করে নিক। এবার তো বুঝতে পেরে গিয়েছে কার লেজে পা দিতে যাচ্ছিলো? এখন নাকি আবার শোনা যাচ্ছে, বিরোধী জোট হবে। শুনে মানুষ হেসে গড়াগড়ি। এই তো এদের অবস্থা। নিজেদের মোবাইল সেটও সুরক্ষিত রাখার ক্ষমতা নাই। তারা নাকি নিতে চায় দেশ শাসনের ভার! বলিহারি স্বপ্ন। দেশের সুরক্ষা এদের হাতে গিয়ে পড়লেই হয়েছে। চীন পাকিস্তান ছিঁড়েকুড়ে খাক আর কি।
তার থেকে এই ভালো হলো। ইজরায়েলের মতো একটি মহাশক্তিশালী দেশ। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও প্রযুক্তির দেশ এইভাবে ভারতের পাশে থাকলে দেশবাসী নিশ্চিন্ত। ভারতের নাড়িনক্ষত্র যাঁদের নখদর্পনে থাকবে। তারাই তো পারবে ভারতের সুরক্ষার সঠিক বন্দোবস্ত করতে, নাকি। এই সোজা কথাটা দেশের মানুষকে আজ বুঝতে হবে বইকি। তিনি শাসন ক্ষমতায় এসেই এই কথাটা বুঝেছিলেন বলেই না, নেতানেহু থেকে ট্রাম্পকে জিগরি দোস্ত বানিয়ে নিয়েছিলেন। কবে কোন দেশপ্রধান এই কাজ এমন সাফল্যের সাতে করতে পেরেছে শুনি? দুই দিকে দুইজনকে দেশের দুই পাশে খাড়া করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন সময় মতো। না হলে চীন পাকিস্তান কি বসে থাকতো এতদিন? ইজরায়েল ভারত আমেরিকা বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবি হোক। আর সেই বন্ধুত্বের পথে বাধা দিতে এলে লড়াই তো বাঁধবেই! আজ যাঁরা বর্তমান শাসক দল বিরোধী রাজনৈতিক মঞ্চে পেগাসাস ইস্যুতে দেশব্যাপী মহাজোট গড়ার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁরা কিন্তু আসলেই ভারতবর্ষের ভালো চান না। যে মানুষটি ভারতবর্ষকে ইজরায়েল ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গাঁটছাড় বাঁধতে উদয়াস্ত কাজ করে চলেছেন। তাঁকে শাসন ক্ষমতা থেকে হটানোর স্লোগান দেওয়া মানেই তো ভারতবর্ষকে চীন পাকিস্তানের খপ্পরে ফেলে দেওয়া। আর এর থেকে বড়ো দেশ বিরোধী দেশদ্রোহের কাজ আর হয় নাকি? ফলে পেগাসাস ইস্যুতে যাঁরাই বর্তমান শাসক দলের বিরোধীতায় পথে নামবেন। তাঁদেরকেই প্রকৃত দেশদ্রোহী হিসেবে চিনে নিতে হবে এবারে।
না, উপরের ন্যারেটিভটা আদৌ মনগড়া কিছু নয়। এটাই অন্ধভক্তদের ন্যারেটিভ হয়ে উঠতে পারে। হয়তো কেন, নিশ্চয়ই হয়েও গিয়েছে এই কয়দিনে। অনেকেই ভিতরে ভিতরে খুব খুশি। পেগাসাসের কীর্তিকাহিনী জানতে পেরে। অনেকেই আশান্বিত। যাক আর কোনদিন বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরগুলিকে দিল্লীর মসনদে বসতে হচ্ছে না। পেগাসাস একাই সকলের হাঁড়ির খবর আগাম জানিয়ে দিতে পারবে হোম মিনিস্ট্রিকে। আর সেই বুঝে বিরোধী দলগুলির সব ট্যাঁফু দিনের আলো দেখার আগেই চুপষে দেওয়া যাবে মাখনের ভিতরে ছুরি চালানোর মতন করে। তার সাথে সিবিআই, ইডি, এনআইএ, সেবি, ইনকাম ট্যাক্স, ইউএপিএ ইত্যাদির মতো হাতের বাকি তুরুপের তাসগুলি কাজে লাগিয়ে দিলে তো কথাই নাই। বিরোধী ঐক্য বিরোধী জোট, সব দফারফা! আর দেখতে হচ্ছে না। অনেকের কাছেই এখন পরিস্কার। কিভাবে নির্বাচনে পরাজিত হয়েও ক্ষমতায় বসার পথ তৈরী করা হয়। অনেকের কাছেই পরিস্কার কার্ণাটক মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে কিভাবে সরকারের পতন ঘটিয়ে নিজেদের সরকার গড়া হয়। পেগাসাস এই সব কিছুই এখন দিনের আলোর মতোন পরিস্কার করে দিয়েছে। আর তাতেই অন্ধভক্তদের ভিতরে উৎসব শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। না, সেই উৎসব অবশ্যই লোক দেখিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে টেলিকাস্ট করার বিষয় নয়। সেটুকু লজ্জাশরম না থাকলে আবার বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। ফলে গদি টালমাটাল হওয়ার থেকে রক্ষা পেতে সেইটুকু লজ্জাশরম ধরে রাখতেই হবে। তাই চারপাশ বেশ নিস্তবদ্ধ। পেগাসাস নিয়ে বেশি উচ্যবাচ্য শোনা যায় না। যেটুকু শোনানোর দরকার। সেইটুকুই শুনিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের। ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গল্প শুনিয়ে। দেশের মানুষের জন্য সেইটুকুই যথেষ্ঠ। বাকিটুকু ম্যানেজ করে নিতে পারবে মিডিয়াতন্ত্র এবং অন্ধভক্তকুল।
কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরগুলি? তাঁদের সামনে এই মুহুর্তের যেটি দায়িত্ব। তারা কি আদৌ সেই দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা ধরে? ষাট কোটি টকার বোফর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে যেভাবে গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায় ইনজেক্ট করে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল তৎকালীন বিরোধী শিবিরগুলির পক্ষে। আজ এইসময়ে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ষাট হাজার কোটি টাকার রাফায়েল কেলেঙ্কারীর ঘটনাতেও যখন ঘটাতে দেখা যায়নি। তখন বিরোধী শিবিরগুলির উপরে জনগণের বিশেষ ভরসা আছে বলে মনে হয় না আদৌ। ফলে পেগাসাস ইস্যু বিরোধী দলগুলিকে কতটুকু পুষ্টি জোগাবে। সন্দেহ থেকে যাচ্ছে যথেষ্ঠই।
কিন্তু সচেতন নাগরিক? তাঁদেরও কি কোন ভুমিকা থাকা উচিত নয় এইরকম একটি সময়ে? যেখানে সংবিধান লঙ্ঘন করে গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে দেশের আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এইভাবে শতশত মানুষের মোবাইল হ্যাকিং করানো হচ্ছে একটি বিদেশী দেশকে দিয়ে। সেখানে সচেতন নাগরিকরা যদি মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কবে মাঠে নামবে সেই প্রত্যাশায়, তবে দেশের জন্য ভালো কিছু আশা করা সত্যিই কঠিন কিন্তু। মানুষের বোঝা দরকার। ভারতীয় গণতন্ত্রের এই মুহুর্তের সবচেয়ে বড়ো বিপদ হলো, ভরসাযোগ্য নির্ভরশীল কোন বিরোধী রাজনৈতিক শিবির না থাকা। গণতন্ত্রের সবলতা নির্ভর করে সবল বিরোধী পরিসরের উপরেই। ভারতবর্ষের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই রকম বড়ো বিপদ এর আগে কোনদিন দেখা যায় নি। এমনকি পঁচাত্তর সালের জরুরী অবস্থা জারীর সময়েও বিরোধী রাজনৈতিক পরিসর এমন নিদারুণ ভাবে সংকীর্ণ ও দূর্বল হয়ে পড়েছিল না। ফলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণের পক্ষে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটনাও সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশের জনতার হাতের কাছে কোনরকম শক্তিশালী বিরোধী পরিসর নেই। এই না থাকাটাই অন্ধভক্তদের বারবাড়ন্তের পক্ষে সহয়াক হয়ে উঠেছে বিপুল ভাবে। যার সুফল ভোগ করছে শাসকদল। ফলে সচেতন নাগরিকদের ভেবে দেখতে হব। ভারতীয় গণতন্ত্রের এইরকম মুমূর্ষু অবস্থায় মুখে কুলুপ এঁটে ঘরে বসে থাকা উচৎ হবে কিনা। পেগাসসের মতো কাণ্ড যদি কোন রাজনৈতিক বাধার সম্মুখীন না হয়। তাহলে তার পরিণাম কিন্তু ভয়াবহ হতে বাধ্য। পরবর্তী সময়ে যে দলই শাসন ক্ষমতা দখল করুক না কেন। তারাও এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে একই কাজ করে যাবে। ব্যক্তি মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারগুলি রক্ষা করার মতোন আর কোন রক্ষাকবচ থাকবে না সেক্ষেত্রে। যে কোন সুস্থ গণতন্ত্রে ব্যক্তি মানুষের প্রাইভেসির বিষয়টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক শর্তের ভিতরে পড়ে। এটা ভেবে বসে থাকলে সত্যিই বিপদ রয়েছে যে, ওসব পেগাসাস ফেগাসাস সাধারণ মানুষের জন্য নয়। সাধারণ মানুষের প্রাইভেসি নিরাপদই থাকবে। সেই বিশ্বাসে ভরসা করাও যা, চোরাবালির উপরে নিশ্চিন্তে লাফানোও তাই। আজকে যে সরকার বিদেশ থেকে শত শত কোটি টাকায় পেগাসাস ভাড়া করছে। কাল যে সেই সরকারই স্বদেশী পেগাসাস তৈরী করে ফেলতে সক্ষম হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? বিশেষ করে এই ইন্টারনেট আর মোবাইল প্রয়ুক্তির যুগে আসলেই কারুর প্রাইভেসিই আর সুরক্ষিত থাকার কথা নয়। যদি না জনদরদী জনকল্যাণমুখী স্বদেশী সরকার গড়া যায়। এখন দেশবাসীকেই ঠিক করে নিতে হবে। জনগণ কি চায়? গোলামী না স্বাধীনতা? কোনটি!
২৪শে জুলাই’ ২০২১
কপিরাইট শ্রীশুভ্র কর্তৃক সংরক্ষিত
তার থেকে এই ভালো হলো। ইজরায়েলের মতো একটি মহাশক্তিশালী দেশ। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও প্রযুক্তির দেশ এইভাবে ভারতের পাশে থাকলে দেশবাসী নিশ্চিন্ত। ভারতের নাড়িনক্ষত্র যাঁদের নখদর্পনে থাকবে। তারাই তো পারবে ভারতের সুরক্ষার সঠিক বন্দোবস্ত করতে, নাকি। এই সোজা কথাটা দেশের মানুষকে আজ বুঝতে হবে বইকি। তিনি শাসন ক্ষমতায় এসেই এই কথাটা বুঝেছিলেন বলেই না, নেতানেহু থেকে ট্রাম্পকে জিগরি দোস্ত বানিয়ে নিয়েছিলেন। কবে কোন দেশপ্রধান এই কাজ এমন সাফল্যের সাতে করতে পেরেছে শুনি? দুই দিকে দুইজনকে দেশের দুই পাশে খাড়া করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন সময় মতো। না হলে চীন পাকিস্তান কি বসে থাকতো এতদিন? ইজরায়েল ভারত আমেরিকা বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবি হোক। আর সেই বন্ধুত্বের পথে বাধা দিতে এলে লড়াই তো বাঁধবেই! আজ যাঁরা বর্তমান শাসক দল বিরোধী রাজনৈতিক মঞ্চে পেগাসাস ইস্যুতে দেশব্যাপী মহাজোট গড়ার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁরা কিন্তু আসলেই ভারতবর্ষের ভালো চান না। যে মানুষটি ভারতবর্ষকে ইজরায়েল ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গাঁটছাড় বাঁধতে উদয়াস্ত কাজ করে চলেছেন। তাঁকে শাসন ক্ষমতা থেকে হটানোর স্লোগান দেওয়া মানেই তো ভারতবর্ষকে চীন পাকিস্তানের খপ্পরে ফেলে দেওয়া। আর এর থেকে বড়ো দেশ বিরোধী দেশদ্রোহের কাজ আর হয় নাকি? ফলে পেগাসাস ইস্যুতে যাঁরাই বর্তমান শাসক দলের বিরোধীতায় পথে নামবেন। তাঁদেরকেই প্রকৃত দেশদ্রোহী হিসেবে চিনে নিতে হবে এবারে।
না, উপরের ন্যারেটিভটা আদৌ মনগড়া কিছু নয়। এটাই অন্ধভক্তদের ন্যারেটিভ হয়ে উঠতে পারে। হয়তো কেন, নিশ্চয়ই হয়েও গিয়েছে এই কয়দিনে। অনেকেই ভিতরে ভিতরে খুব খুশি। পেগাসাসের কীর্তিকাহিনী জানতে পেরে। অনেকেই আশান্বিত। যাক আর কোনদিন বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরগুলিকে দিল্লীর মসনদে বসতে হচ্ছে না। পেগাসাস একাই সকলের হাঁড়ির খবর আগাম জানিয়ে দিতে পারবে হোম মিনিস্ট্রিকে। আর সেই বুঝে বিরোধী দলগুলির সব ট্যাঁফু দিনের আলো দেখার আগেই চুপষে দেওয়া যাবে মাখনের ভিতরে ছুরি চালানোর মতন করে। তার সাথে সিবিআই, ইডি, এনআইএ, সেবি, ইনকাম ট্যাক্স, ইউএপিএ ইত্যাদির মতো হাতের বাকি তুরুপের তাসগুলি কাজে লাগিয়ে দিলে তো কথাই নাই। বিরোধী ঐক্য বিরোধী জোট, সব দফারফা! আর দেখতে হচ্ছে না। অনেকের কাছেই এখন পরিস্কার। কিভাবে নির্বাচনে পরাজিত হয়েও ক্ষমতায় বসার পথ তৈরী করা হয়। অনেকের কাছেই পরিস্কার কার্ণাটক মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে কিভাবে সরকারের পতন ঘটিয়ে নিজেদের সরকার গড়া হয়। পেগাসাস এই সব কিছুই এখন দিনের আলোর মতোন পরিস্কার করে দিয়েছে। আর তাতেই অন্ধভক্তদের ভিতরে উৎসব শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। না, সেই উৎসব অবশ্যই লোক দেখিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে টেলিকাস্ট করার বিষয় নয়। সেটুকু লজ্জাশরম না থাকলে আবার বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। ফলে গদি টালমাটাল হওয়ার থেকে রক্ষা পেতে সেইটুকু লজ্জাশরম ধরে রাখতেই হবে। তাই চারপাশ বেশ নিস্তবদ্ধ। পেগাসাস নিয়ে বেশি উচ্যবাচ্য শোনা যায় না। যেটুকু শোনানোর দরকার। সেইটুকুই শুনিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের। ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের গল্প শুনিয়ে। দেশের মানুষের জন্য সেইটুকুই যথেষ্ঠ। বাকিটুকু ম্যানেজ করে নিতে পারবে মিডিয়াতন্ত্র এবং অন্ধভক্তকুল।
কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরগুলি? তাঁদের সামনে এই মুহুর্তের যেটি দায়িত্ব। তারা কি আদৌ সেই দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা ধরে? ষাট কোটি টকার বোফর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে যেভাবে গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায় ইনজেক্ট করে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল তৎকালীন বিরোধী শিবিরগুলির পক্ষে। আজ এইসময়ে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ষাট হাজার কোটি টাকার রাফায়েল কেলেঙ্কারীর ঘটনাতেও যখন ঘটাতে দেখা যায়নি। তখন বিরোধী শিবিরগুলির উপরে জনগণের বিশেষ ভরসা আছে বলে মনে হয় না আদৌ। ফলে পেগাসাস ইস্যু বিরোধী দলগুলিকে কতটুকু পুষ্টি জোগাবে। সন্দেহ থেকে যাচ্ছে যথেষ্ঠই।
কিন্তু সচেতন নাগরিক? তাঁদেরও কি কোন ভুমিকা থাকা উচিত নয় এইরকম একটি সময়ে? যেখানে সংবিধান লঙ্ঘন করে গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে দেশের আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এইভাবে শতশত মানুষের মোবাইল হ্যাকিং করানো হচ্ছে একটি বিদেশী দেশকে দিয়ে। সেখানে সচেতন নাগরিকরা যদি মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কবে মাঠে নামবে সেই প্রত্যাশায়, তবে দেশের জন্য ভালো কিছু আশা করা সত্যিই কঠিন কিন্তু। মানুষের বোঝা দরকার। ভারতীয় গণতন্ত্রের এই মুহুর্তের সবচেয়ে বড়ো বিপদ হলো, ভরসাযোগ্য নির্ভরশীল কোন বিরোধী রাজনৈতিক শিবির না থাকা। গণতন্ত্রের সবলতা নির্ভর করে সবল বিরোধী পরিসরের উপরেই। ভারতবর্ষের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই রকম বড়ো বিপদ এর আগে কোনদিন দেখা যায় নি। এমনকি পঁচাত্তর সালের জরুরী অবস্থা জারীর সময়েও বিরোধী রাজনৈতিক পরিসর এমন নিদারুণ ভাবে সংকীর্ণ ও দূর্বল হয়ে পড়েছিল না। ফলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণের পক্ষে ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটনাও সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশের জনতার হাতের কাছে কোনরকম শক্তিশালী বিরোধী পরিসর নেই। এই না থাকাটাই অন্ধভক্তদের বারবাড়ন্তের পক্ষে সহয়াক হয়ে উঠেছে বিপুল ভাবে। যার সুফল ভোগ করছে শাসকদল। ফলে সচেতন নাগরিকদের ভেবে দেখতে হব। ভারতীয় গণতন্ত্রের এইরকম মুমূর্ষু অবস্থায় মুখে কুলুপ এঁটে ঘরে বসে থাকা উচৎ হবে কিনা। পেগাসসের মতো কাণ্ড যদি কোন রাজনৈতিক বাধার সম্মুখীন না হয়। তাহলে তার পরিণাম কিন্তু ভয়াবহ হতে বাধ্য। পরবর্তী সময়ে যে দলই শাসন ক্ষমতা দখল করুক না কেন। তারাও এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে একই কাজ করে যাবে। ব্যক্তি মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারগুলি রক্ষা করার মতোন আর কোন রক্ষাকবচ থাকবে না সেক্ষেত্রে। যে কোন সুস্থ গণতন্ত্রে ব্যক্তি মানুষের প্রাইভেসির বিষয়টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক শর্তের ভিতরে পড়ে। এটা ভেবে বসে থাকলে সত্যিই বিপদ রয়েছে যে, ওসব পেগাসাস ফেগাসাস সাধারণ মানুষের জন্য নয়। সাধারণ মানুষের প্রাইভেসি নিরাপদই থাকবে। সেই বিশ্বাসে ভরসা করাও যা, চোরাবালির উপরে নিশ্চিন্তে লাফানোও তাই। আজকে যে সরকার বিদেশ থেকে শত শত কোটি টাকায় পেগাসাস ভাড়া করছে। কাল যে সেই সরকারই স্বদেশী পেগাসাস তৈরী করে ফেলতে সক্ষম হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? বিশেষ করে এই ইন্টারনেট আর মোবাইল প্রয়ুক্তির যুগে আসলেই কারুর প্রাইভেসিই আর সুরক্ষিত থাকার কথা নয়। যদি না জনদরদী জনকল্যাণমুখী স্বদেশী সরকার গড়া যায়। এখন দেশবাসীকেই ঠিক করে নিতে হবে। জনগণ কি চায়? গোলামী না স্বাধীনতা? কোনটি!
২৪শে জুলাই’ ২০২১
কপিরাইট শ্রীশুভ্র কর্তৃক সংরক্ষিত
সুচিন্তিত মতামত দিন