দেখতে-দেখতে ১০ বছর! শব্দের মিছিলের বর্ষপূর্তি সংকলন প্রকাশের সময় এ খুব অবিশ্বাস্য মনে হয়। কিন্তু অজস্র লেখক, পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সমর্থনে আমরা অনায়াসেই পেরিয়ে এসেছি এই দশটি বছর, উপস্থিত হয়েছি এই ৯৫ তম সংকলনে।
শব্দের মিছিল শুরু থেকেই মানুষের কথা তুলে ধরতে চেয়েছে, মানুষের কথা বলতে চেয়েছে। সাহিত্যচর্চার পরিধির দলাদলি ও তেল-মারামারির বাইরে থেকে তুলে আনতে চেয়েছে অক্ষরকর্মীদের নিজস্বতা। তাই মিছিল নিজেও এক নিজস্বতা অর্জন করতে পেরেছে, যা আমাদের সম্পদ।
সমাজ-সচেতন প্রকাশ মাধ্যম হিসেবে শব্দের মিছিল প্রথম থেকেই নানা অন্যায়, অবিচার, অসঙ্গতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। এই বর্ষপূর্তিতে এসেও, সেই প্রয়োজন কমছে না। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরবর্তী বিভিন্ন হিংসাত্মক কাণ্ড আমাদের যথারীতি উদ্বিগ্ন করছে। যেখানে বিরোধী দলের হয়ে কাজ করা বা বিরোধী দলকে সমর্থন করার অধিকার এখনও নিরাপদ নয়, সেখানে যে গণতন্ত্র আসলে একটি শব্দের বেশি কিছু নয়, সেকথা ভাবলে দুঃখিত হতেই হয়। বিশেষত এই করোনা পরিস্থিতিতে, যেখানে মানুষের জীবনই চরম অনিশ্চয়তার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো যে কীভাবে এখনও পারস্পরিক সংঘর্ষে মেতে থাকে, তা সাধারণ মানুষের বুদ্ধির অগম্য হয়েই থেকে যাবে।
করোনার দ্বিতীয় প্রকোপ আমাদের গত বছরের থেকেও বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। এ দায় কার কতটা, তা নিয়ে অনেক তর্ক হতে পারে। কিন্তু সত্যটা হলো, কেন্দ্রীয় সরকার, বিভিন্ন রাজ্য সরকার এবং জনসাধারণ, কেউই এর দায় এড়াতে পারে না। দেশে করোনা সংক্রমণ এত বেড়ে যাওয়ার পরেও, অধিকাংশ নাগরিককে এখনও ভ্যাক্সিনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কত অনুন্নত, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে দেশজুড়ে করোনা আক্রান্তদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহের অভাব। কেন্দ্রীয় সরকারও এ বিষয়ে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। অথচ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যে আসবেই, তা নিয়ে অনেক আগেই বিশেষজ্ঞ মহল থেকে সতর্কবার্তা ছিল।
আর আমজনতার কথা তো আলাদা করে না বললেই নয়! করোনার প্রথম প্রকোপ একটু কমতে না কমতেই তারা যেভাবে সব বিধিনিষেধ উড়িয়ে দিয়ে নানারকম খেলা, মেলা ও মোচ্ছবে মেতে উঠেছিল, তা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার চূড়ান্ত এক উদাহরণ হয়ে থাকবে। আজ দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে যখন সেকথা বোঝা যাচ্ছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
তবুও শব্দের মিছিল আশা নিয়ে কাজ করতে চায়। একদিন পৃথিবী আবার করোনাকে স্থায়ীভাবে পরাজিত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেই, এই আশায় থাকতে চায়। পূর্বঘোষণা মতো আগামী পাঁচটি সংকলন অর্থাৎ ১০০ তম সংকলন প্রকাশের পরেই আমাদের মাসিক সংকলন প্রকাশের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু শব্দের মিছিল বন্ধ হবে না। তখনও আমরা আমাদের কবি-লেখকদের কাছে তাদের সৃষ্টি প্রেরণের আহ্বান করবো। তখন আমরা যেমন-যেমন লেখা পাবো, তার মধ্যে থেকে মানোত্তীর্ণ লেখাগুলো দৈনিক ভিত্তিতে প্রকাশ করতে থাকবো। শব্দের মিছিল গত দশ বছরে মানুষের এত ভালোবাসা পেয়েছে যে, মিছিল থেমে যাবে একথা আমরা ভাবতেও পারি না।
সুতরাং, ৫টি সঙ্কলন অর্থাৎ ১০০তম সঙ্কলন শেষে শব্দের মিছিল প্রতিদিন।
পরিশেষে, মিছিলে সমবেত সকলের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা।
শব্দের মিছিল
সুচিন্তিত মতামত দিন