■ স্বপন পাল | বেঁচে থাকার অ্যালিবাই

শব্দের মিছিল

বেঁচে থাকার অ্যালিবাই
 
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ 
বেঁচে থাকা কোন অপরাধ নয় নিশ্চয়। তাহলে বেঁচে থাকার জন্য অ্যালিবাই হয় নাকি আবার ? আর তা যদি দিতে হয় কাউকে, সেটা কি রকম হবে ?

আমি তো বেঁচে নেই স্যার। খোঁজ নিয়ে দেখুন খুঁটিয়ে বেঁচে আছি কিনা। তখন প্রশ্ন তুলতেই পারেন বাঁচা বলে কারে ? সখি বেঁচে থাকা কারে কয় ? জীব ও জড়ের প্রভেদ লিখতে গিয়ে ছোটবেলার জীবন-বিজ্ঞান ক্লাসে সবাই লিখেছেন, যে খাদ্য গ্রহণ করে, যার পুষ্টি ও বৃদ্ধি হয়, বংশবৃদ্ধি করে ও মৃত্যুমুখে পতিত হয় সেই জীব। এগুলির অনুপস্থিতিতে উহাকে জড়পদার্থ নামে অভিহিত করা হয়। ব্যস খালাস জীবের সংজ্ঞায়। কিন্তু রামলাল চামার বা হরিপদ আঁকুরে বেঁচে আছে কিনা তা প্রমাণ করা অত সহজ নয়।
​ ​ ​ ​ ​ 
প্রথমত বয়সের গাছ পাথর নাই রামলাল বহুকাল তার কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। কখনো সে মুচির কাজ আবার ভাগাড়ে গিয়ে মৃত পশুর চামড়া ছাড়ানোর কাজ করেছে
বটে, তখন এলাকার জন মনিষ্যি চিনতোও তাকে। এখন তার হাত কোনক্রমে মুখ পর্যন্ত উঠলেও অন্য কাজে দিক পায়না। কেউ নেই রামলালের। বাজারে একটা খাবারের দোকানের মালিক এঁটোকাঁটা ফেলবার আগে রামলালের খোঁজ করে, না হলে শেষ বিকেলে হাসপাতালের জমাদার সব এঁটোকাঁটা ক্যানেস্তারায় ভরে তার শুয়োরের জন্য নিয়ে যাবে। তবে পেছন ছেঁচড়ে রামলাল উপস্থিত হয়। সে না এলে কেউ জিজ্ঞাসা করবেনা তার কি হলো। কাছেই সুলভ শৌচালয়ের কোণায় জড়োসড়ো হয়ে
কাটিয়ে দেয় সে দিন আর রাত। শৌচালয়ের ঠিকাদার ধার্মিক মানুষ কিন্তু ভয়ে ভয়ে থাকে, কবে না মরা তুলতে হয়। পুলিশের ঝামেলা না হলেই বাঁচোয়া।
​ ​ ​ ​ 
মোটামুটি এই হলো আমাদের রামলালের বর্তমান, অতীত কিছু পেশ করার মতো নেই। ভবিষ্যৎ শৌচালয়ের ঠিকাদারও জানেনা। হরিপদ আঁকুড়ের বর্তমান রামলালের কাছাকাছি উনিশ কি বিশ। শ্মশানের ডোম, মরলে তাকে কিসে পোড়াবে কেউ জানেনা।

বর্তমান এই দুই চরিত্র আমার প্রিয় জন্মভূমি ভারতের লক্ষ মানুষের। আর বিশ্লেষণ ক্ষমতা যদি থাকে তবে দেখতে পাবেন সংখ্যা কোটি কোটি, আপনি আমিও
ওই সংখ্যাতেই ধরা আছি। জীব খাদ্য গ্রহণ করে, আহার করে। আহার শব্দটি উচ্চারণে প্রথমেই আহা। সে দয়া দেখিয়ে বলা নাকি উত্তমের অব্যয়রূপ ? দু’টোই
বোধহয়। তা আহার বা খাদ্য গ্রহণের পর পুষ্টি ও বৃদ্ধি এই দুই জরুরী ঘটনা জীবদেহে ঘটে থাকে। অপুষ্টি যে দেশের বিশাল জনজীবনের একপ্রকার মাপকাঠি হয়ে
দাঁড়িয়েছে সে দেশে পুষ্টির গল্প আড়ালে করাই ভাল। পুষ্টি নেই তাই বাড় বৃদ্ধি নেই। বাড়ে শুধু বঞ্চনা। বঞ্চিত যারা তারা কোন এক জাদুবলে হাল্লা রাজ্যের জনগণের মতো বোবা। আর যে যন্ত্র তাদের বঞ্চনায় রেখেছে সে যন্ত্রের
সফটওয়্যার বলছে ওরা জড় পদার্থ, ওরা নামানুষ, ওদের পুষ্টিতে কি হবে ? বরং পাথরে দুধ ঢাললে অনেক উবগার হবে। সচেতন মানুষ একত্রিত হবে ও জয়গান গাইবে
পাথরের, মন্দিরের। এইবার আসছে মোক্ষম প্যাঁচের লক্ষণটি। জীব বংশবৃদ্ধি করে। তা পুষ্টি থাক বা না থাক বাড় বৃদ্ধি হোক চাই না হোক বংশ কিন্তু থেমে
নেই বৃদ্ধিতে। তবে তো জীবের বা জীবনের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। না মশাই না।

ইদানিং কোথায় কোথায় যেন পাথরের বৃদ্ধি ও চলন দেখে মানুষ হেব্বি অবাক ও খুশ হয়েছে। এখানে সেখানে সামাজিক মাধ্যমের দেয়ালে তা ছেপ্পে দিয়েছে। তবে
সে সব প্রমাণ করে আমাদের দেশবাসী জনগণকে পাথর বললে মারাত্মক ক্ষেপে যেতে পারেন দেশনেতাগণ। আবার যেখানে জনগণ যত্রতত্র পাথরের মত কি রাস্তায়, কি ফুটপাথে কিম্বা খোলা মাঠে ঘাটে নিজেরাই অবস্থান করে ও জনজীবনের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, তখন বুদ্ধিমান, শক্তিমান স্থানীয় সরকার পাথরের মতোই
তাদের তুলে অন্যত্র সরিয়ে দেয় রাতারাতি। এতেও যদি তাদের জড়ত্ব প্রমাণিত না হয় তবে হে মহান দেশবাসী মহাকালের মন্দিরের সিঁড়ির পাথরে তাদের পাঁজরের
অংশবিশেষ আপনাদের নজর এড়িয়ে না যায় যেন।
​ ​ ​ ​ ​ 
তবে কি এখনও বলবেন রামলাল, হরিপদরা বেঁচে আছে? যে মানুষের ঠিকানা
নেই, ভোটার কার্ড নেই, আধার কার্ড নেই বা প্রমাণ করার মত কোন কাগজ নেই যে সে কোথায় জন্মেছে বা যাদের ঘরে জন্ম নিয়ে ফেলেছে তাদেরও কোন বিধিবদ্ধ
নথিপত্র নেই তাহলেও তো সেই নামানুষই রয়ে গেল। এই দেশ তার নয়, মরার পর সাড়ে তিন হাত মাটিও তার নয়। স্থানু পাথরের মতো বোবা, অবাঞ্চিত এক অদ্ভুত
জীব ও জড়ের মধ্যবর্ত্তী এরা কারা ? অথচ কি বিচিত্র উপায়ে তারা ভোটের আগে আগে জীবের মর্যাদা পেয়ে যাচ্ছে, গণতন্ত্রের ভেল্কি আর মামদোবাজিতে অংশ
নিয়ে মানুষ হয়ে উঠছে রাতারাতি থুরি দিনমানে সে এক জটিলতম অঙ্ক। যে অঙ্ক সবাই কষতে জানেনা। জানলে সেও আর জনগণ থাকেনা। সে হয়ে যায় জনগণেশের দোহাই পেড়ে ফাস্টোকেলাস লুট যন্ত্র।
​ ​ ​ ​ ​ ​ 
অতএব ধর্মাবতার আমি বেঁচে নেই, তার একগুচ্ছ অ্যালিবাই ছিল। আপাতত জাদুকাঠির ছোঁয়ায় জেগেছি, সামান্যই সময়, এসময় বাধ্যতামূলক আপনার দুইচক্ষু
বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে কারণ গণতন্ত্র জাগছে। মুখে কুলুপ আঁটুন বুদ্ধিজীবির দল, ঈশ্বর নিদ্রা গিয়েছেন কলরবে তাঁর নিদ্রাভঙ্গ হবে যে, চুপ চুপ।
​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​ ​

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.