অমৃতসদনে চল যাই - পর্ব- ২
ঠাণ্ডা, স্যাঁতস্যাঁতে, প্রায়ান্ধকার কারাগৃহের ভিতরে ভাল করে কিছুই দৃষ্টিগোচর হয় না। এমনকি দু’হাত দূরের মানুষটার চেহারাও অস্পষ্ট। তবুও তো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ওর শরীরের যন্ত্রণাগুলো। হ্যাঁ, ওই শরীরটা পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষের মতোই রক্ত-মাংসে গড়া। ও চাইলে, যন্ত্রণা এড়িয়ে যেতে পারত। যেমনটা তার চিকিৎসক জীবনে বার বার লুক দেখেছে, মানুষ যন্ত্রণাকে ভয় পায়। কিন্তু যে মানুষটা তার দু’হাত দূরে দাঁড়িয়ে, সে বার বার যন্ত্রণাকে স্বাগত জানিয়েছে তার জীবনে, প্রভুকে আরও বেশী ভালবাসবে বলে, প্রভুর যন্ত্রণাকে অনুভব করবে বলে। আর ওর ওই ভালবাসাতেই লুকও বাঁধা পড়ে গেছে প্রভুর ব্রত সাধনে। অজস্র ঝড়ে বিধ্বস্ত নৌকার ক্লান্ত নাবিকের মত চেয়ে আছে পল। তবুও দুচোখে এখনও আশার আলো। সে আলো যেন আরও উসকে দিয়েছে লুকের আগমন। গত ত্রিশটি বছরেরও বেশী সময় ধরে পলের কত যুদ্ধের সাক্ষী হয়েছে লুক। রুগ্ন শরীরে সিংহের মনোবল নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছে প্রভুর বার্তা বয়ে এক শহর থেকে আরেক শহরে। প্রত্যেক যুদ্ধের শেষে আহত গরুড়ের মত ক্ষতবিক্ষত পল-কে পরম মমতায়, সযত্ন শুশ্রূষায় সুস্থ করে তুলেছে লুক। অন্যের উপর পল-এর অলৌকিক শক্তির প্রয়োগ যতই দেখেছে লুক, ততই ‘মানুষ’ পল-কে ভালবেসেছে।
পল সুদর্শন নয়, অন্তত বাইবেলের কোনও সংস্করণেই তেমনটা পাওয়া যায়নি। চার ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার পল-কে বেঁটেই বলা যায়, তাঁর ত্বক রুক্ষ ও লাল, টাক মাথা, পা বেঁকা, শরীর যেন ধনুকের মতো বাঁকা, তবুও স্বাস্থ্য তাঁর ভালোই, জোড়া ভ্রু, টিয়া পাখির মত তীক্ষ্ণ নাসা, লাল উজ্জ্বল মুখ। ঈর্ষা ও শত্রুতার জন্য তাঁকে ৭ বার বন্দীদশা ভোগ করতে হয়েছে, নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে, পাথর ছুঁড়ে মারা হয়েছে, পূর্বে ও পশ্চিমে অক্লান্ত ভাবে মিশনারি প্রচার কাজ করেছেন, সমগ্র বিশ্বকে বিশ্বাস ও সততার শিক্ষা দিয়েছেন, আর এই নির্যাতন সহ্য করার পুরস্কার স্বরূপ, পল তাঁর নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘তিতিক্ষা’ অর্জন, হিন্দুর ভগবদ্গীতায় যে কথা বলা হয়েছে—‘সহনং সর্ব দুঃখানাং অপ্রতিকারপূর্বকম্’—ফলস্বরূপ ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ।
এখন অন্ধকার নিস্তব্ধ রাত্রি রোম নগরীর বুকে। তার চেয়েও বেশী অন্ধকার এই কারাগৃহের ভিতরে। আর এই অন্ধকারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুই সুহৃদ যোদ্ধা ভাবছে—‘কি পরিণতি আমাদের ‘দ্য ওয়ে’-আন্দোলনের?’
এর অনেক অনেক যুগ পরে, সবচেয়ে বেশী সংখ্যক পঙক্তির সাপেক্ষে লুকের গসপেল নিউ-টেস্টামেন্ট-এ সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অবদানের দাবীদার হবে, যে আন্দোলন এখনও কোন নাম সহ পরিচিতি লাভ করেনি, তারা যাকে ‘এই-ই পথ’ বা কেবল ‘পথ’ (‘দ্য ওয়ে’) বলে উল্লেখ করে, তাইই ‘ক্রিশ্চিয়ানিটি’ নামে অর্ধেক পৃথিবী শাসন করবে, নিউ-টেস্টামেন্ট-এর একমাত্র অ-ইহুদী রচয়িতা নামে লুক পরিচিত হবে, পণ্ডিতদের বিচারে সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক দলিল সমৃদ্ধ হিসাবে পরিগণিত হবে লুকের ‘গসপেল’ ও তারই পরিবর্ধিত অঙ্গ ‘অ্যাক্টস অব অ্যাপস্টলস’, পলের জীবনের অন্তিম দিন পর্যন্ত সঙ্গী হওয়া সত্ত্বেও শেষ অঙ্কটি রচনা না করবার জন্য ভাবী প্রজন্ম লুকের কাছে জবাব চাইবে।
এসব প্রসঙ্গে আসব। তার আগে, আমার পরিচয়টা দিই। আর বলি, কিভাবে পলের সঙ্গে আমি বাঁধা পড়লাম আজীবন বন্ধুত্বের ডোরে!
আমার নাম লুকাস। আমি চিকিৎসক, বলা ভাল, চিকিৎসক ছিলাম, কিন্তু ইদানীং বোধহয় আমার ভূমিকা ও পরিচিতি এক ঐতিহাসিক হিসেবেই বিখ্যাত হতে চলেছে! কিন্তু এসব এখন থাক, তোমরা আমাকে লুক নামেই ডেকো।
সময়টা এই শতাব্দীর ৬৭ তম বছর। রোম শাসন করছেন নিরো—নিরো ক্লডিয়াস সিজার অগাস্টাস জার্মানিকাস। তিনি সম্রাটের সিংহাসনে ১৩ বছর অধিষ্ঠিত। সবে শীত পড়তে আরম্ভ হয়েছে। আমি কারাবন্দী। পলের সঙ্গে। আর থাকবও, তাঁর শেষ দিন পর্যন্ত। পল—প্রভুর চিহ্নিত বার্তাবহ ‘অ্যাপস্টল পল’! তবে, ঠিক ঠিক বলতে গেলে, কারাবন্দী আমরা দুজন নই, বন্দী একজনই—সে পল। আমি আছি তাঁর সঙ্গে কেবল তাঁর শারীরিক সুবিধা অসুবিধাগুলো দেখার জন্য। তিনি গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো চিঠি লিখবেন। আমি এই ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করব। পলের পক্ষে নিজে লেখা সম্ভব নয়। ওঁর এক হাত শেকল দিয়ে পিঠের সঙ্গে বাঁধা, আরেক হাত সম্রাট নিযুক্ত একজন প্রহরীর সঙ্গে অষ্টপ্রহর বাঁধা।
তবে একেবারে মনের কথা বলি, আমার আসল উদ্দেশ্য, পলের কাছ থেকে অনেক অজানা তথ্য জেনে নেওয়া, যদিও আমাদের দুজনের কেউই রক্তমাংসের প্রভুকে, যাকে আমরা বলি, ‘Jesus in flesh’ দেখিনি, কিন্তু পলের কাছে তিনি নিজেকে প্রকাশিত করেছিলেন। পলের সেই ভিশনের কথা, ওঁর আরও অনেক অলৌকিক অনুভূতি ও দর্শনের কথা, সবটুকু আমাকে জেনে নিতে হবে। আমি লিখছি সম্পূর্ণ নতুন একটি গসপেল, যা হবে সম্পূর্ণ তথ্য নির্ভর। সে তথ্য অনেকাংশে আমি সংগ্রহও করেছি নানা স্থানে ঘুরে ঘুরে, যাঁরা প্রভুর সময়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে দেখা করে, কথা বলে ও তাঁদের সঙ্গ করে। আরও লিখব ‘অ্যাক্টস অব অ্যাপস্টলস’, যেখানে থাকবে প্রভুর কাজে যাঁরা জীবনপণ করেছেন, তাঁদের কথা।
পলের প্রচার-কাজের প্রথম দিকে, যখন তিনি চার্চ অব গ্যালাশিয়া-কে চিঠি লিখেছেন, তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমার শরীর জেসাসের চিহ্ন বহন করছে!” একথায় পল হয়তো বোঝাতে চাইতেন যে, খ্রিস্টের বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে যে সমস্ত দৈহিক অত্যাচার তিনি সহ্য করেছেন, সেই সব ক্ষতচিহ্নের কথা। একজন চিকিৎসক হিসেবে, আমি বলছি তোমাদের, একথায় পল-এর যন্ত্রণাকে অত্যন্ত লঘু করে দেখা হবে। পলের শরীরে আঘাত করা হয়েছে অজস্র বার, সেসমস্ত ক্ষত অত্যন্ত গম্ভীর। আমার থেকে বেশী তা কেউ জানে না। এখন, এই বয়সে এসে পল এমনকি ভালভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারে না! নিরন্তর চাবুকের মার সহ্য করতে করতে পলের সমস্ত পিঠটা উনুনের গনগনে আগুনের মত দগদগে ঘা-এ ভর্তি! চাবুক মেরে, পাথর ছুঁড়ে মেরে, মারতে মারতে আধমরা করে ওরা তাঁকে কতবার ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে পথের ধুলোয়। সেখান থেকে নিজের শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে বা কারো কাঁধে চড়ে তিনি পৌঁছেছেন আমার কাছে। আমি ২০০০ বছর আগেকার কথা বলছি। তখন না ছিল কোন অ্যান্টিবায়োটিক, না হাইড্রোজেন পেরক্সাইড, না নিওস্পোরিন, কিচ্ছু না, আহত মানুষটাকে চোখের সামনে দেখেছি প্রায় সপ্তাহভোর যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে কখনও জ্ঞান হারাচ্ছেন, আবার ক্ষণিকের জন্য জ্ঞান ফিরে আসছে, আবার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছেন, যতক্ষণ না তাঁর শরীরের ভিতরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সংক্রমণ ও জ্বরের সঙ্গে লড়াই করে জিতে গেছে—ততক্ষণ পর্যন্ত সেই অকথ্য যন্ত্রণার সাক্ষী থেকেছি আমি বার বার! তাই বলছি, যখন তিনি বলতেন, “My body bore, ‘The Mark of Jesus’”, তার গভীরতা তোমরা ঠিক বুঝতে পারবে না!
যাইহোক, আমি আমার পুরনো কথায় ফিরে যাই। আমার ডাক্তারি বিদ্যা আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে—এই পর্যবেক্ষণের তিন ধাপ, প্রথম, কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখব, দ্বিতীয়, কিভাবে তাকে ব্যাখ্যা করব, এবং তৃতীয়, কিভাবে তাকে নথিভুক্ত করব। এরপর পুনরায় দেখা, পুনরায় ব্যাখ্যা, পুনরায় নথিবদ্ধকরণ। প্রথমে আমার চিকিৎসক সত্তা, পরে আমার ঐতিহাসিক সত্তা, দুজন মিলিত ভাবে কাজ করি। তাই ভুলের সম্ভাবনা কম। কিন্তু আমি আবারও একই কথা বলব, আমি চিকিৎসক জীবনে যন্ত্রণাকাতর যত মানুষ দেখেছি, সকলেই প্রায় সর্বদাই যন্ত্রণা এড়াতে চায়, পল তার ব্যতিক্রম!
আমি মধ্যযুগের প্রথম-ভাগের রোমের বাসিন্দা, যাকে বলে ‘পাক্স রোমানা’, অর্থাৎ শান্তির রোম! যেখানে বাসিন্দাদের লক্ষ্য হল—যে কোন মূল্যে কষ্টকে এড়িয়ে চলা। যদিও খুব কম লোকই সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। যদি কষ্টভোগ একান্তই অপ্রতিরোধ্য হয়, বেশ, তবে অন্য কেউ তা ভোগ করুক! মানে হল, নিজে শ্রম না করে, শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো; যুদ্ধ করব না, যোদ্ধাদের লড়তে প্রণোদিত করব। অতএব, রোম সাম্রাজ্যের অর্ধেকের বেশী সংখ্যক মানুষই দাস, আমরা আমাদের নিজেদের কষ্ট অন্যদের দিয়ে ভোগ করিয়ে নিতাম।
যখন পল-এর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়, খ্রিস্টের পুনরুত্থানের পরের ঘটনা সেটা, আনুমানিক ৫২ তম খ্রিস্টীয় বছর। পলের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল ট্রোয়াস-এ, যাকে তোমরা এখন এশিয়া মাইনর বলো, বোধহয় এফিসাস-এর প্রায় একশ মাইল উত্তরে। পল তখন তাঁর দ্বিতীয় মিশনারি অভিযানের মাঝামাঝি, ট্রোয়াস হয়ে চলেছিলেন তিনি। একটা কথা পরিষ্কার বলি, পল কখনও কোনও একটা শহরের মধ্যে দিয়ে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করেননি। সত্যি বলতে কি, আমার সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয় তখনই, যখন তিনি সদ্য লিস্ট্রা থেকে আসছেন, সেখানে তাঁকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু প্রভুর ইচ্ছায় তাঁর মৃত্যু হয়নি, তারা তাঁকে মৃতপ্রায় অবস্থায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল, কিন্তু তাঁর দেহে যেটুকু প্রাণ অবশিষ্ট ছিল, সেইটুকু নিয়ে তাঁকে আমার কাছে আনা হয়েছিল। আমি ঐ একই জাহাজে ছিলাম, যেখানে পল-কে নিয়ে তাঁর বিশ্বস্ত অনুচর বার্নাবাস চলেছিল সামোথ্রেস হয়ে ম্যাকাডোনিয়া। ম্যাকাডোনিয়া পৌঁছে আমি পল-কে শুশ্রূষা করে সারিয়ে তুলছিলাম। আমি চেষ্টা করেছিলাম ওঁর ক্ষতগুলো সারিয়ে তুলতে। কিন্তু তা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। তখনই জেনেছিলাম ওঁর সম্বন্ধে, ওঁরই মুখে, কিন্তু যেটা ওঁর একটা অদ্ভুত স্বভাব, ভারি অদ্ভুত, সেটা হল, বার বার ও যেন যন্ত্রণা পেতে, আরও বেশী করে পেতে, ঝাঁপিয়ে পড়ে। অনেক পরে বুঝেছিলাম, এভাবেই ও প্রভুর যন্ত্রণাকে অনুভব করতে চায়।
এরপর থেকে পল আমাকে কাছ ছাড়া করতে চাননি। আর আমিও তাঁকে ছেড়ে যেতে চাইনি। তাঁর সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের টানে আমি আটকে পড়েছিলাম। তাঁকে ভালবেসেছিলাম, আর আমাদের দুজনকে যিনি মিলিয়ে দিয়েছেন, সেই জেসাসের প্রেমে পড়ছিলাম একটু একটু করে। এটুকু মনে হত, পলের আমাকে প্রয়োজন। আমরা একসঙ্গে বহু শহরে নগরে মিশনারি অভিযানে গিয়েছি। আর এই সমস্ত ভ্রমণের মধ্যেই জেনেছি পল-এর কথা ওঁরই কাছ থেকে।
এশিয়া মাইনরের টারসাস-এ এক সম্পন্ন ইহুদী (জিউ) পরিবারে জন্ম পলের। রোমান সাম্রাজ্য সিরিয়ার অংশ পূর্ব সিলিসিয়ার একটি বড় শহর টারসাস। সিরিয়ার দুই প্রধান শহর, দামাস্কাস ও অ্যান্তিও তাঁর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল তাঁর চিঠিপত্রে যার উল্লেখ পাওয়া যায়। জন্ম সম্ভবত খ্রিস্টীয় শতকের চতুর্থ বর্ষে, যীশুর সমবয়সী কিম্বা একটু ছোট হবেন তিনি। ৩৩ বর্ষে, যীশুর ক্রুসিফিকেশনের পরে, খ্রিষ্টে বিশ্বাসী হয়ে খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের ৪০-৫০ এর দশকে মিশনারি প্রচার কাজ করেছেন। খ্রিস্টের দ্বাদশ বার্তাবহদের মধ্যে তাঁর নাম না থাকলেও স্বয়ং প্রভুর কাছ থেকেই আদেশ ও উপদেশ প্রাপ্ত—একথা সগর্বে বলে এসেছেন পল—“God was pleased to reveal his son to me." (Galatians 1:16)
ধর্মপ্রাণ ইহুদী পরিবারে পলের জন্ম। ‘তোরাহ’-এর আদেশ মেনে চলতেন তাঁরা নিষ্ঠাভরে। ইহুদীদের বিশ্বাস, ‘তোরাহ’ ঈশ্বরের বাণী, তিনি ইসরায়েলের ইহুদীদের জন্য এই বাণী রেখেছেন মোজেস-এর মাধ্যমে। গোঁড়া ইহুদী পরিবারের নিয়ম অনুসারে আট দিন বয়সে পলের ‘সুন্নৎ’ অর্থাৎ ধর্মীয় অনুশাসনের অঙ্গস্বরূপ লিঙ্গচর্মচ্ছেদ অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেরা ইহুদী শিক্ষকের কাছে তাঁর শিক্ষানবিশি হয়। তাঁর চিঠিপত্র থেকে জানা যায়, তিনি তৎকালীন আলেকজান্দ্রীয় উপভাষা ‘কোইনি গ্রীক’ জানতেন ও হিব্রুও জানতেন। যারা জেসাস-কে অনুসরণ করত, ‘দ্য ওয়ে’ মতে চলত, এভাবেই তখন খ্রিস্টধর্ম বোঝানো হত, নিষ্ঠাবান ইহুদীর মত তাঁদের উপর রীতিমত অত্যাচার করতেন পল। হ্যাঁ, এসব কথা পলই নিজমুখে স্বীকার করেছেন লুক-এর কাছে। কিন্তু তারপরেই তাঁর জীবনে ঘটল সেই অত্যাশ্চর্য ঘটনা, জেরুজালেম থেকে দামাস্কাস যাওয়ার পথে মেসিহা তাঁকে দর্শন দিলেন, আর পল-এর জীবনটা একেবারে অন্যরকম হয়ে গেল! যেভাবে পুনরুত্থানের পর প্রভু তাঁর শিষ্যদের কাছে আবির্ভূত হয়েছিলেন, পল লিখেছেন, "last of all, as to one untimely born, He appeared to me also." (Corinthians 15:8)
Photo source: St. Paul in prison
(ক্রমশ) ■ আগের পর্ব পড়ুন
সুচিন্তিত মতামত দিন