জয়তী রায় মুনিয়া

শব্দের মিছিল

■ প্রথম পর্ব

গুরু আদেশ দিলেন:

এমন উদ্ভিদ সংগ্রহ করে নিয়ে এসো। যার কোনো ভেষজ গুণ নেই। তবে, সফল হবে শিক্ষা। মানপত্র লাভের অধিকারী হবে।

তক্ষশীলা বিশ্ব বিদ্যালয়। ভারত সহ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জ্ঞান পিপাসুর দল ছুটে আসছে এখানে। ১৬ বৎসর বয়স থেকে ছাত্র ভর্তি করা হত মেধার ভিত্তিতে। বেদ অধ্যয়ন দিয়ে শুরু। ক্রমে ক্রমে উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রগুলো ছিল, বেদ, ভাষা, ব্যাকরণ, দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্র, ধনুর্বিদ্যা, রাজনীতি, যুদ্ধ বিদ্যা, জ্যোতিশাস্ত্র, হিসাব বিজ্ঞান, গণিত, অর্থনীতি, সঙ্গীত ও হস্ত শিল্প।

চিকিৎসা বিভাগে( আয়ুর্বেদ) আছে উচ্চবংশের সমস্ত ছাত্র। তার মধ্যে আছে এক গণিকা পুত্র। মগধ রাজকুমার অভয়ের সুপারিশে গণিকাপুত্র জীবক কোমারভচ্চ এখানে বিদ্যাশিক্ষার সুযোগ পায়।

প্রথম থেকেই চুপচাপ জীবক। আপনমনে কাজ করে যায়। চিকিৎসা বিদ্যায় তাঁর অপার নৈপুণ্য আচার্য কে বিস্মিত করে। এ ছেলে কালে কালে নাম করবে। তিনি সস্নেহে বলেন:

: তুমি প্রমাণ করবে, জন্ম হতে কর্ম বড়।

জীবক কুণ্ঠিত স্বরে বলে:

আচার্য দেব। কায়া বিদ্যার চাইতে শল্যবিদ্যার প্রতি আমার আগ্রহ বেশি।

: কিন্তু, ভারতবর্ষে এখনো তেমন কেউ কিছু করে উঠতে পারেনি বৎস।

: আমি চেষ্টা করব গুরুদেব।

: অবশ্য। এখন এই কাজটি করো, একটি নির্গুণ উদ্ভিদ এনে হাজির করো। তবে বুঝব, কত কি শিখতে পেরেছ।

***

তিনমাস সময়। বেরিয়ে পড়েছে ছাত্রের দল। ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করছে নানা রকম আগাছা। হাসি মুখে হাজির করছে গুরুর দরবারে। শুষ্ক মুখে উপস্থিত জীবক। শূন্য হাত। শুকনো মুখ। নাহ্। সে পায়নি। এমন একটা ও পাতা লতা ঘাস পায়নি, যার ওষুধি গুণ নেই!

: সে কি! বৎস! পাহাড়ের কন্দরে কত বিষাক্ত লতা আছে। সেগুলি?

: তাদেরও ওষুধি গুণ আছে।

: সিদ্ধি পাতা? দেখেছিলে?

: দেখেছি গুরুদেব। শনের মত দেখতে এই পাতার আছে বিশেষ ওষধি গুণ। তুরীয় আনন্দ লাভের সঙ্গে সঙ্গে বহু কঠিন রোগের নিরাময় করে এই সিদ্ধি পাতা।

সহাস্যে বললেন আচার্য দেব:

: তুমি একমাত্র ছাত্র, যে প্রকৃত অর্থে আত্মস্থ করেছ শিক্ষা। হে জীব ক, এমন শিষ্য পাওয়া ভাগ্যের কথা। উদ্ভিদের ওষধি গুণ নিয়ে তুমি কাজ করো।

**

চমকপ্রদ হলেও সত্যি, যে, শিব ঠাকুর , গাঁজা , সিদ্ধি ভাং খান... এমন কত ঠাট্টা করা হয়। কিন্তু কেন ? ব্রহ্মা নন, বিষ্ণু নন, শুধুমাত্র মহাদেবের সঙ্গে কেন জড়িয়ে আছে ভাং সিদ্ধির নাম? সে কি শুধু তুরীয় আনন্দের অর্থে? না কি আরো কোনো গভীর কারণ আছে?

ভারতবর্ষ থেকে লোপ হতে বসেছে প্রাচীন সমস্ত ওষধি গাছ। ফুল। ব্রহ্ম কমল। অসাধারণ এর গুণ। এক রাতের জন্য বাঁচে এই ফুল। মানুষের লোভের হাতে পিষ্ট হচ্ছে এই ফুল।

কোথায় গেল সেই প্রাণশক্তির গাছ? বিশল্য করণী? মৃত সঞ্জীবনী? সুবর্ণকরণী আর সন্ধানী?

কি কাজ ছিল এই সমস্ত গাছের শিকড়ের? পাতার?

মৃত সঞ্জীবনী মৃতপ্রায় শরীরে প্রাণ দিত। বিশল্যকরণী পারে অস্ত্রের ঘা সরিয়ে তুলতে। সুবর্ণকরনীর পক্ষে সম্ভব অসুস্থতার রঙ পাল্টে যাওয়া শরীরের রঙ ফেরানোর। আর কাটা অঙ্গজোড়া বা ভাঙ্গাহাড় জোড়ার কাজ করে সন্ধানী। বাংলা অভিধানে বিশল্য শব্দের অর্থ বেদনাহীন।

**

অমূল্য সমস্ত উদ্ভিদ ঠিক ভাবে প্রতিপালিত হলে, এই মহামারীর যুগে বসেও এত ভয় পেতনা মানুষ। ঘরের পাশের গাছেই থাকত প্রতিষেধক। কিছু সীমিত জ্ঞান নিয়ে শুরু করছি নতুন লেখা।

জীবক ও জীবন সত্য।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.