আকাশ নীল বিশ্বাস
তব চুম্বনে, ওঠে এলোকেশী ঝড়
অনুভব করি এক দূরাগত নৈশব্দের স্বর,
শান্ত-স্নিগ্ধ-সংযত, অথচ অপরিণত,
অনেকটা দ্রাক্ষাফলের অকালপক্কতার মতো।
তব পদচারণা, সুললিত ছন্দবদ্ধ গুঞ্জন
হৃদমাঝারে বাজে প্রতিক্ষণ, ক্ষণেক্ষণ।
জানি, তুমি বারাঙ্গনা,
সমাজের চোখে বহুভোগ্যা, অনাকাঙ্খিতা
তবু, বিশ্বাস করো
আমার হৃদয়তন্ত্রীতে, ইতস্তত বিক্ষিপ্ত আগাছার মতো,
পরিকীর্ণতাময় হয়ে আছো তুমি।
তোমার বচনসুধায়, বাহুমূলের ইঙ্গিতে, ক্ষীণকটির ললিতকলায়, গ্রীবাঞ্চলের আহ্বানে, চক্ষুপল্লবজাত বরাভয়ে -
তৃষাতুর হয়ে ওঠে মন...
খোঁজে অন্তহীন এক সুগভীর পরিতৃপ্তি।
তোমার অবহেলা, অবমাননার রোষানল জাগায় হৃদয়ে...
তব উর্বরা বসুধায়,
বিচরণ করে চলে যায় কত কীট, পশুপক্ষী।
কত পূর্ণাঙ্গ রোহিত, প্রত্যহ
অবগাহন করে, তব নাভিমূলজাত স্রোতস্বিনী ঝর্ণায়, পান করে তব শৃঙ্গার রস।
নেপথ্যচারী আমি, সেই বামাচারীদের মাধুকরীতায়,
রোষানলে দ্বগ্ধ হই ক্রমাগত।
তুমি দাও বাধা, ভিক্ষা করো আমার নিষ্পৃহতা,
ক্রোধান্বিত অসহায়তায়, বন্য হিংস্রতায়, গর্জে উঠি আমি
ধিক্কার দিই, তোমার সর্বংসহা অবরুদ্ধ চেতনাকে...
তুমি করোনা প্রতিবাদ, নীরবে শুনে যাও শুধু, আহত কৃষ্ণসারের ন্যায়, নতনেত্রে।
তোমায় স্তব্ধবাক দেখে, ব্যথাতুর চিত্তে ভাবি,
সমভিব্যাহারে, যাবো একদিন, তোমায় নিয়ে, অলকানন্দার তীরে, পবিত্র সঙ্গমস্থলে...
শুনেছি, জাহ্নবীস্রোত মুছে দেয় বহু কলঙ্ক,
আবার ভাবি, সত্যিই কি তুমি কলঙ্কিনী?
তুমি তো অপাপবিদ্ধা
ভাগ্যদোষে পরিত্যক্তা - জানিনা কোন অপরাধে এথেনার শাপগ্রস্ত হয়ে
রূপসী হয়েছিল সর্পকেশী,
মাথা পেতে নিয়েছিল দেবরোষ
শিকার হয়েছিল বিকৃত লালসার...
যখন পান করি তব শৃঙ্গার রস,
ডুব দিই এক মোহিনী মাদকতায়,
কালোত্তীর্ণ হয়ে ওঠে, চিরন্তন দুটি তরতাজা প্রাণ
আবাহন করে এক স্বর্গীয় প্রেমমত্ততাকে
আদিম উদ্দামতায় শঙ্খ লাগে দুটি বিষধর ফণাসর্পের,
মৃগনয়নী, ত্রস্ত তোমার দুচোখ দেখে ভাবি -
কেমন অনুভূতি হয়েছিল মেডুসার?
এথেনার মানমন্দিরে, পসাইডনের বক্ষলগ্না হয়ে?
সুচিন্তিত মতামত দিন