■ কাজী রুনা লায়লা খানম | দড়ি ধরে মারো টান

■ কাজী রুনা লায়লা খানম |দড়ি ধরে মারো টান

বেশ কিছুদিন আগে ফেসবুকে এই লাইনদুটো লিখেছিলাম​ "সব সাবাড় করে এবার শকুনের নজর চাষীর ক্ষেতে ? মনে রেখো, ওদের কাছে মাটি কিন্তু শুধু মাটি নয় ,ওদের জীবন ! ভালোবাসা! এখানে হাত দিলে ওই হাত কেটে হাতে ধরিয়ে দিতে দু'বার ভাববে না ওরা" দু একজন শহুরে শিক্ষিত মানুষের বিষয়টিকে 'উস্কানিমূলক'লেগেছিলো।মানুষকে লেলিয়ে দেওয়ার 'ইন্ধন' আছে নাকি আমার কথায়।​ আজ হয়তো তারা বুঝলে বুঝতেও পারবেন সেদিনের কথাগুলোর কতোখানি তাৎপর্য ছিলো ।

আমার জন্ম গ্রামে। আমি দেখেছি মাটির প্রতি টান আপামর গ্রামীণ মানুষের। ভূমির প্রতি ভালোবাসা মাটিসংগ্ন মানুষের ।খুব কাছ থেকে দেখেছি শক্ত মাটিকে এই ভূমিজ সন্তান কতোখানি মেহনত আর ভালোবাসা দিয়ে ফসলসম্ভবা করে তোলে! আমি ওদের ঘামের ইতিবৃত্ত জানি। সহজ সারল্য চিনি । মুঠোর দৃঢ়তাও চিনি।রোদে, জলে, তেতে-পুড়ে-ভিজে ,খরা ,বন্যা, অর্ধাহার,অনাহার কোনো কিছুর কাছে মাথা না নোয়ানো এক সর্বংসহ জীবনকে দেখেছি খুব কাছে থেকে। আপনারা ওদের চাষী বলেন, চাষা বলেন।আমি বলি 'মাঠের ঈশ্বর' । মৃত্তিকার প্রকৃত প্রেমিক। ফসলের প্রকৃত অনুবাদক।

ওরা আজ বিপন্ন।কেন্দ্র সরকারের কালা কৃষি বিল থাবা বাড়িয়েছে ওদের স্বপ্নে বোনা ধানে। ওদের ভালোবাসার,মেহনতের ফসলে।ওদের ভাতের থালায়।ওদের অস্তিত্বে।এ দেশের জনসংখ্যার সত্তর শতাংশ কৃষক।আর তার মধ্যে ছিয়াছি শতাংশ প্রান্তিক চাষী।যারা চিরকালই কমবেশি বঞ্চিত মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা। বড় জোতের কৃষকেরা তবু খানিকটা স্বস্তিতে ছিলো এতোদিন কৃষিপণ্য বিপণনে সরকারী নিয়ন্ত্রণের জন্য। কিন্তু কৃষিবিল ২০২০ সমগ্র দেশের কৃষকের জন্য এক অশনিসংকেত।

কি আছে এই কৃষি বিল এ ? দেখে নেয়া যাক একঝলক।

■ ১ .কৃষকের উৎপাদন ,ব্যবসা ও বানিজ্য ।(প্রচার ও সুবিধাদি) বিল, ২০২০

প্রথম বিলটি কৃষি বাজার সংক্রান্ত। এই বিলে বলা হয়েছে এমন একটি বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা হবে, যেখানে কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা রাজ্যের কৃষি পণ্য বাজার কমিটির আওতায় নিবন্ধিত কৃষিমান্ডিগুলির বাইরে খামারজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের স্বাধীনতা পাবেন।

রাজ্যের ভিতরে ও বাইরে কৃষি উৎপাদনের বাণিজ্য বাধামুক্ত হবে।

বিপণন ও পরিবহন ব্যয় কমবে, যার ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের আরও ভাল দাম পাবেন।

কৃষকদের ই-কমার্সের জন্য একটি সুবিধাজনক পরিকাঠামোও সরবরাহ করবে এই বিল।

কার্যত যা হবে __এই ব্যবস্থার ফলে রাজ্যগুলির রাজস্ব সংগ্রহে বড় ক্ষতি হবে। কারণ, কৃষকরা নিবন্ধিত মান্ডিগুলির বাইরে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় শুরু করলে রাজ্য 'মান্ডি ফি' পাবে না।

এছাড়া, যদি সম্পূর্ণ কৃষিবাণিজ্যই মান্ডির বাইরে চলে যায়, সেই ক্ষেত্রে রাজ্যের নিযুক্ত 'কমিশন এজেন্টদের' কী হবে?সেই সঙ্গে এই বিল শেষ পর্যন্ত​ সরকারের বেঁধে দেওয়া ন্যুনতম সমর্থিত মূল্যের ক্রয় ব্যবস্থার অবসান ঘটাবে। সরকারি কৃষিপণ্য বিক্রয়ের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মতো বৈদ্যুতিন বাণিজ্য সংস্থাগুলি কৃষি মান্ডিগুলির পরিকাঠামোই ব্যবহার করে। ব্যবসা বাণিজ্যের অভাবে যদি মান্ডিগুলিই ধ্বংস হয়ে যায় সেই প্ল্যাটফর্মগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে, সেই নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

■ ২. কৃষকদের (ক্ষমতায়ন এবং সুরক্ষা) মূল্য আশ্বাস এবং খামার পরিষেবার চুক্তির বিল, ২০২০

এই বিলটি চুক্তিভিত্তিক চাষ সংক্রান্ত। এতে বলা হয়ছে, কৃষকরা ভবিষ্যতের কৃষি পণ্য বিক্রির জন্য কৃষিবাণিজ্য সংস্থা, প্রক্রিয়াকারক সংস্থা, হোলসেলার, পাইকারি ব্যবসাদার, রফতানিকারক বা বড়মাপের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে প্রাক-সম্মত মূল্যে চুক্তি করতে পারবেন।

এই চুক্তির মাধ্যমে পাঁচ হেক্টরের কম জমির মালিক প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা লাভবান হবেন (ভারতের মোট কৃষকদের ৮৬ শতাংশই প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষক)।

এতে করে অপ্রত্যাশিত বাজারের ঝুঁকি কৃষকদের কাঁধ থেকে তাদের স্পনসর সংস্থাগুলির কাঁধে স্থানান্তরিত হবে।

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষকদের আরও ভাল তথ্য পেতে সক্ষম করবে।বিপণনের ব্যয় কমিয়ে কৃষকদের আয় বাড়াবে।মধ্যস্থতাকারীদের এড়িয়ে কৃষকরা সরাসরি বিপণনে জড়িত থেকে সম্পূর্ণ দাম নিজেরাই পেতে পারবেন।প্রতিকারের সময়সীমা বেঁধে বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তির কার্যকরী প্রক্রিয়া তৈরি করা হবে।কিন্তু এরফলে কৃষকদের ক্ষতিই হবে। কারণ তারা চুক্তির অন্য পক্ষের মতো দরাদরি করার বিষয়ে দক্ষ নন, তাই তাদের প্রয়োজনটা আদায় করতে পারবেন না।টুকরো টুকরো করে বহু সংখ্যক ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি করতে সম্ভবত স্পনসররা পছন্দ করবে না।বড় বেসরকারী সংস্থাগুলিই হোক কিংবা রফতানিকারী, পাইকারি ব্যবসায়ী বা প্রক্রিয়াকারকরা, বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ছোট কৃষকদের থেকে তারা অবশ্যই বেশি সুবিধা পাবে।যেখানে অধিকাংশ কৃষকের নুন্যতম সার বীজ কেনার সংস্থানটুকু নেই সেখানে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার দিবাস্বপ্নমাত্র।

■ ৩. অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) বিল, ২০২০

এই বিলটি পণ্য সম্পর্কিত। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে খাদ্যশস্য, ডালশস্য, তৈলবীজ, পেঁয়াজ এবং আলু জাতীয় পণ্য সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে এই বিলে। যুদ্ধের মতো কোনও 'অস্বাভাবিক পরিস্থিতি' বাদে এই জাতীয় পণ্যগুলি মজুতে সীমা আরোপ করা হবে না।এই বিধান বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা দূর করবে। ফলে বেসরকারী ক্ষেত্র / বিদেশী বিনিয়োগকারীরা কৃষিক্ষেত্রে আকৃষ্ট হবেন।​ ​

এতে করে, কোল্ড স্টোরেজের মতো কৃষি পরিকাঠামো এবং খাদ্য সরবরাহের শৃঙ্খলকে আধুনিকীকরণের জন্য বিনিয়োগ আসবে।

দামে স্থিতিশীলতা এনে কৃষক এবং গ্রাহক উভয়ই সহায়তা করা হবে।

প্রতিযোগিতামূলক বাজারের পরিবেশ তৈরি করে কৃষিপণ্যের অপচয় বন্ধ করা হবে।আদতে যা হবে _

বড় সংস্থাগুলি পণ্য মজুত করার স্বাধীনতা অর্জন করার অর্থ তারা কৃষকদের উপর শর্ত আরোপ করার সুযোগ পাবেন। যার ফলে চাষীরা কৃষিপণ্যের কম মূল্য পেতে পারেন।এই বিধান পেঁয়াজের রফতানি উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহের পরিবেশ তৈরি করেছে।​

আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে মোদি পোষিত কর্পোরেট দের হাতে কৃষিপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রিত হলে আখেরে যে পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা বোঝার জন্য অর্থনীতিবিদ হওয়ার দরকার পড়ে না।এই সরকারের আমলেই সর্বাধিক কৃষকের আত্মহত্যা কৃষকদের প্রতি সরকারের মনোভাব স্পষ্ট করেছে বহু আগেই। যাদের একমাত্র লক্ষ্য অতিরিক্ত মুনাফা সেই কর্পোরেটরা সাধারণ নাগরিকের স্বার্থ নিয়ে,বাঁচামরা নিয়ে থোড়াই কেয়ার করবে?আর তখন শুধু কৃষক নয় এর সুদূরপ্রসারী ফল ভুগতে হবে সাধারণ নাগরিককে।যেসব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কম তারা আরো সংকটে পড়বে।এ দেশে এখন শ্রমজীবীর, সাধারণ নাগরিকের জীবন বিকিয়ে যায় খোলামকুচির মতো। কর্পোরেটের পা চাটা একজন আপাদমস্তক ভন্ড, মিথ্যেবাদী, স্বৈরাচারী, ভাষণবাজ, উর্বর মস্তিষ্কওয়ালার ওপর যে দেশের চালনার ভার ন্যস্ত তার বালখিল্যতায় বিপন্ন আমরা সকলেই।সাধারণ​ নাগরিকের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ,সংবিধান প্রদত্ত অধিকারগুলোকে সুনিশ্চিত করা জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ।সে জন্যই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন।কিন্তু স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে এতোটা ছিনিমিনি খেলা এর আগে কখনো হয় নি।ভারতবর্ষ সহিষ্ণুতার দেশ ।তাই সয়ে গেছে মানুষ ।কিন্তু পাপের ঘড়া পূর্ণ হলে সময়ই সবক শেখায়।​

নোটবন্দীর নামে বালখিল্যতা মানুষ বুঝতে পেরেও সময় দিয়েছে শোধরানোর।আমাদের নিরো কিন্তু​ আপনাতে আপনি বিহ্বল। এন.আর.সি.র নামে দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষের জীবনকে শেকড় থেকে উৎখাত করার অপপ্রচেষ্টা​ মানুষকে বিহ্বল করেছে। আন্দোলনে সামিল হয়েছে শাহিনবাগ । তখনও আমরা​ কিছু সংখ্যক মানুষ পাশ কাটিয়ে গিয়েছি ওটা 'মুসলমানের বিষয়' বলে। কিন্তু এই ঘটনাগুলি একটু একটু করে দুঃসাহসী করে তুলেছে রাষ্ট্রকে।সাহস যুগিয়েছে স্বৈরাচারে। আবার এরই মাঝে একটু একটু করে শক্ত হয়েছে মানুষের মুঠো।যে আঙুল গুলোকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছে 'হিন্দুমুসলিম' গেমপ্ল্যান করে।সেই আঙুলগুলো ক্রমশ জুড়ে গিয়ে দৃঢ় হচ্ছে মুঠো।এটা আংশিক হলেও স্বস্তির ।

'হিন্দুরাষ্ট্র' র ললিপপ ঝুলিয়ে দিয়ে কিছু উর্বর মস্তিষ্ককে লেলিয়ে দিয়ে সম্প্রীতির এই দেশকে অস্থির করে তুললেও শাহিনবাগ কিন্তু দড়ি ধরে দিয়েছে মোক্ষম টান।সর্বাত্মক সাফল্য আসেনি করোনা পরিস্থিতির জন্য বা অন্য অনেক ইস্যুর কারণে।সে অন্য কথা।

​মহামারীর কবলে যখন পুরো দেশ।করোনা প্রতিরোধের পরিকল্পিত পথ খোঁজা নয় তিনি তালি থালি বাজানোর জন্য দেশকে উদ্বুদ্ধ করলেন। আর কানার দ্যাশে ফলিপড়া রাজার অন্ধ স্তাবকতায় আমরাও জোরসে তালি দিলাম,থালি বাজালাম, মোমবাতি জ্বালালাম। করোনা আক্রান্তে দেশকে পৃথিবীর শীর্ষে তুললাম। ডক্টর, স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যর্থতা ঢাকতে তিনি 'পুষ্পবৃষ্টি' র নিদান দিলেন ।আমরা দেখলাম হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টি হলো।আমাদের করের কোটি কোটি টাকা নয়ছয় হলো। ইতিমধ্যে গড়ে উঠলো পি.এম. কেয়ার ফান্ড।দেশসেবার নামে হাপিস হলো সাধারণের কোটি কোটি টাকা। ঠিক সেই সময়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের বিপন্নতা, হাহাকার দেখলো, মৃত্যু দেখলো এই দেশ। আর কি আশ্চর্য সেই 'পরিযায়ী'দের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে ! রাষ্ট্রের কাছে খবর নেই কতোজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে?কতোজন পরিযায়ী শ্রমিক বিপর্যয়ের​ মুখে দাঁড়িয়ে? সেদিন কিন্তু পুরো দেশ আমরা দাঁড়াতে পারিনি সেইসব শ্রমজীবীর পাশে।সে কি গণতন্ত্রের প্রতি স্বাভাবিক আস্থা, বিশ্বাস! যা মানুষকে​ সংযত রেখেছে ? না কি নিজের মেরুদন্ডের জোর নেই আমাদের মতো শিক্ষিত সচেতন (!) শান্তিপ্রিয় (!)দুদুভাতু নেকুপুসু জনগণের নেই বলে ?​

'দলিত নিধন, 'মুসলিম নিধন', 'ধর্ষণ',একের পর এক ঘটনাগুলো ঘটে গেছে রাষ্ট্রীয় মদতে। চেতনা সম্পন্ন মানুষের ভেতরে একটু একটু করে জমাট বাঁধছে হতাশা। তা থেকে​ ক্ষোভ ক্রোধ।তবু কোথায় যেন একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে । একটা বিক্ষিপ্তি ।এন. আর. সি. মুসলিমের লড়াই ,দলিত নিধন দলিতের বিষয়। বাবরি মসজিদ প্রহসন​ 'মহামান্য আদালতের রায়' বলে মেনে নিয়েছিলো মানুষ।কিংবা এই রায়ে সাধারণ মানুষের লাভ ক্ষতির হিসেবটা তেমন জোরালো নয় তাই মেনে নিয়েছিলো।পিঠ না পুড়ে যাওয়া পর্যন্ত পাশ ফিরে শোয়া আমাদের সহজাত বলেই হয়তো।

কর্মসংস্থানে দেশের অবস্থান স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে সবচেয়ে নীচে,ক্ষুধাসূচকে বাংলাদেশ নেপাল ভুটানের চেয়ে নীচে, শান্তিরক্ষায় বিশ্বের দেশগুলির তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে দেশ । একেকটা ইলেকশন আসে আর পাকিস্তান ইস্যু তৈরী করে,পাকিস্তানের ওপর ভুয়ো হামলার নাটক ফেঁদে ,পরিকল্পিতভাবে সেনানিধন করে দেশবাসীকে বোকা বানানোর চাতুরী সব দেখছে দেশ। আলোচনা সমালোচনা করেছি আমরা। কিন্তু ওই যে ব্যক্তিগত লাভক্ষতির বাইরে সম্মিলিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত নই । আমরা যারা বছর বছর ইনক্রিমেন্ট ,ডি.এ. নিয়ে ভাবিত,যারা ভালো মাইনে, সুখী গৃহকোণ,বছরে ছমাসে দু'চারটে ভ্রমণে আর স্বকীয়া পরকীয়ায় রমণে তৃপ্ত মানুষ ,আমরা যারা সখের প্রতিবাদী কিংবা যারা সোশালমিডিয়া বীর আর সর্বোপরি রাজনীতির কারবারী ।তারা নিজের স্বার্থ বুঝে জল মেপে তবেই মাঠে নামার কথা ভাবি।আর সেই সুযোগে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি আরো বেড়ে যায়। দীর্ঘ হয় আস্তিনে লুকানো নোখ ।

কিন্তু "বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাবে ধান " তা তো হবার নয় ! কালা​ কৃষিবিল সেই ঘুঘুর ধান খাওয়ার মুখে এবার মোক্ষম ঢিলটি ছুঁড়েছে। কৃষকের বুকের চাতাল তার জমি। মাটি তার মা। তার অস্তিত্ব । ভালোবাসা। উৎপাদিত ফসল তার স্বপ্ন।সেই মাটির দিকে,সেই স্বপ্নের দিকে হাত বাড়িয়েছো তুমি ঘুঘু । সাধারণের ওপর এ যাবৎ ঘটে যাওয়া সমস্ত অন্যায়ের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে একটু একটু শক্ত হচ্ছিলো মুঠো কৃষকের 'দিল্লী চলো' তারই বহিঃপ্রকাশ। দিল্লীর শাহিনবাগের আন্দোলন আর পঞ্জাব- হরিয়ানা- উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের গণঅভ্যুত্থান বুঝিয়ে দিলো আর নয় । এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ​ আপডেট অনুযায়ী তিনরাজ্যের কৃষকেরা (এখন কেরালাও একই পথে।) সরকারের ব্যারিকেড,কাঁদানে গ্যাস ,জলকামান,লাঠিচার্জ​ সবকিছুকে ব্যর্থ করেই ক্ষান্ত হয়নি। সরকারকেই আলোচনায় বসতে বাধ্য করেছে।এটা গণতন্ত্রের জয়।আত্মশক্তির জয়।সম্মিলিত শক্তির জয়।কৃষিবিল প্রত্যাহার হবে কি না সেটা সময় বলবে।সংখ্যাগরিষ্ঠতার কিছু কুফলও আছে।।তার খেসারত আমাদের দিতেও হয় কখনো সখনো।কিন্তু এই আন্দোলন দেখিয়ে দিলো যা অন্যায় যা অকল্যাণকর তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো বুকের পাটা ওই প্রান্তিক মানুষগুলোরই আছে ।সারাদেশের মানুষের সম্মিলিতভাবে এখন এই প্রবচনটা সত্যি করার সময় এসেছে "বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান /এইবার ঘুঘু তোমার বধিবো পরান"​




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.