মৌমিতা ঘোষ

মৌমিতা ঘোষ


একটি ইউটিউব চ্যানেলে আজ ইন্টারভিউ মন্দিরার। মন্দিরা চ্যাটার্জি, নারীবাদের অন্যতম শক্তিশালী মুখ।বেদান্ত মুখার্জি ইন্টারভিউ করবে। "ছেলেটা কিন্তু মহা পাকা" বলে সোহিনী, মন্দিরার দীর্ঘ দিনের বন্ধু, কাজের সাথী।

" আমার তাতে কী? আমি তো বানিয়ে বলিনা কিছু, যা বিশ্বাস করি,তাই বলি। মিথ্যে বলিনা যে মনে রাখতে হবে।বিশ্বাস আমার রোজ বদলায় না।"

" ওর স্বভাব হচ্ছে তোর কথা লুফে নিয়ে অন্য মানে দাঁড় করিয়ে দেবে। দশ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার বানিয়েছে, এসব বিতর্ক তৈরি করে। প্রতিটা ইন্টারভিউ এর ভিউ কম করে আড়াই লাখ।"

" দেখা যাক।"

" শুরু করছি আপনাদের সকলের প্রিয় শো "সেলেব নিজের আয়নায়, আর আজকের অতিথি সবদিক থেকেই স্পেশাল, তিনি লেখিকা, গায়িকা ও স্যোশাল অ্যাকটিভিস্ট। তিনি নারীবাদী আন্দোলনের এই মুহূর্তে পথিকৃৎ।

মন্দিরা চ্যাটার্জি ইইই।

মন্দিরাদি , ওয়েলকাম টু দ্যা শো।"

" নমস্কার।"

" আজ আমি নিশ্চিত, অনেক মহিলা উল বোনা রেখে, রান্নাবান্না ফেলে রেখে, বাড়ির লোককে উপোসী রেখে বসে পড়েছেন আমাদের শো দেখতে।

তাদের উদ্দেশে আপনার প্রথম মেসেজ কী?"

" তাদের আগে আপনাকে একটি প্রশ্ন বেদান্ত বাবু।"

" দিদি আমাকে তুমি বলুন।"

" না, আপনিই ঠিক আছে। আপনি শুধু উল বোনা, রান্না করার কথা বললেন কেন? উল বোনা, রান্না করা ছাড়া মেয়েরা আর কোন কাজ করেনা? নাকি একমাত্র তারাই হাঁ করে নারীমুক্তি র কথা শোনে,আর বাকি মেয়েরা মুক্ত?"

" আমি এই কারণে বলেছি দিদি, যে বাড়িতে যারা আছেন,তারা অ্যাভেইলেবল আপনার কথা শুনতে।"

" আর যে প্লেন চালাচ্ছে,সে পরে আপনার ইউটিউব চ্যানেল শুনতে পারেননা?নাকি মেয়ে বলতে আপনার চোখে এখনো একজন রুটি করা মহিলা ছাড়া কিছুই ভাসে না?"

বেদান্ত (হেসে,) " বুঝতেই পারছেন ,কত কঠিন জায়গায় এসে পড়েছি আমি! একজন নারীবাদী কে ঈশ্বর ও ডরান,আর সে যদি মন্দিরা চ্যাটার্জি হয় তো , বেদান্ত মুখার্জি র কী দশা হয়!"

" আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। একটা শো দেখলে বাড়ির লোক উপোসী থাকবে কেন? একটা মেয়ে সবকিছু ছেড়ে প্রায়োরিটি দিয়ে শুধু রান্নাটাই করবে, আর তার পছন্দের একটা শো দেখলেই বাড়ির লোক উপোস করে থাকবে? আপনারা আগে পরে সেই মহিলাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেন না?সে শো দেখে গিয়ে শুয়ে পড়বে? এত ভালো কবে থেকে হয়ে গেল সবাই? আমি তো জানতেই পারলাম না!"

" দিদি, খুব ভুল হয়ে গেছে। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনার ব্যক্তিগত জীবনে খুবই ঝামেলা, আপনি সরাসরি না রেখে ঢেকে সেসব লেখেন বহুবছর ধরে। সেইজন্য আপনি ভাবতেই পারেন না, কারো পরিবারে ভালো কিছুও হতে পারে।"

"আপনি আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর অবধি অপেক্ষা ই করতে পারেননি বেদান্ত।সো ইমপেশেন্ট!" মন্দিরা হাসে।

আমার মেসেজ সব মহিলার প্রতি একটাই " নিজের শর্তে, নিজের ভালোলাগায় বাঁচুন।তার জন্য দাম একটু দিতেই হবে। কোন স্বাধীনতা ই পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা হয় না।অর্জন করতে হয়।"

" আর অর্জন করার জন্য তারা প্রতিবাদ করুক, ঝগড়া করুক, মার খাক, পরিবার ভাঙুক...।"

" কেন? ২০২০সালে দাঁড়িয়ে মার খেতে হবে কেন?তার মানে আপনি মানছেন যে মেয়েরা নিজেদের ইচ্ছেয় বাঁচতে গেলে এখনো মার খায়!

" খায়, তা অস্বীকার করবো কী করে? খবর কাগজ তো তাই বলে।"

" ও , আপনি,এসব দেখেন টেখেন নি।"

" আপনি তো প্রচুর দেখেছেন, তা ক'বার মার খেয়েছেন স্বামীর হাতে?"

" প্রথমতঃ একান্ত ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন না। করলেও উত্তর দেওয়া টা আমার ইচ্ছে র উপরে নির্ভর করে।"

" এই অনুষ্ঠানটাই সেলেবদের নিজেদের আয়নায় দাঁড় করানোর জন্য। সেখানে ব্যক্তিগত প্রশ্ন আসবেই।"

"আগের কথার প্রসঙ্গে বলি, আমার কোন ইচ্ছা নেই 'ঘর ভেঙে দাও' আন্দোলন করার। নিজের শর্তে বাঁচতে গেলে ঘর ভাঙতে হয়না, ঘরে থেকেই বাঁচা যায়।"

" আপনি বলবেন কী করে? আপনি তো বরের এত নিন্দা করেও বরের সঙ্গে পড়ে আছে ন এত বছর!"

মন্দিরা বেশ সময় নিয়ে হাসে।

"হাসছেন যে?"

" এই আপনি বলছেন আমি ডাক দিচ্ছি ঘর ভেঙে ফেলার, এই বলছেন স্বাভাবিকভাবেই আমি ডাক দিতে পারি না, বিষয়টা স্ববিরোধী হচ্ছে না , বেদান্ত বাবু?'

"আসলে নারীবাদ ব্যাপারটাই কনফিউজিঙ।একটু বুঝিয়ে বলবেন, নারীবাদ বলতে আপনি কী বোঝেন।"

" বেশি কিছু না। এই পৃথিবীর যা কিছু আপনার,সেই সবকিছু আমার ও, এইটুকুই প্রতিষ্ঠিত করা।"

" তেমন টা কি সত্যিই হয়? হবে কোনদিন?"

" যতদিন না হবে কোন না কোন মন্দিরা লিখে চলবে।"

" আপনি কিন্তু এড়িয়ে গেলেন আগের প্রশ্নটা। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হয়েছেন?"

" ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের অনেক স্তর। খুব কম মহিলা আছেন যিনি কোন স্তর দিয়ে যাননি।আমি তো গিয়েছিই। "

"কী ধরণের?"

" ভার্বাল অ্যাবিউজ থেকে শুরু হয়,তারপর নানা রকমের তার রঙ রূপ, মারধোর, পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, মেরে ফেলা, এগুলো এক্সট্রিম।"

" আমি আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছি, দিদি।"

" ও , ভুলে গিয়েছিলাম, আপনার তো শোটাই ব্যক্তিজীবনকে হাটে বাজারে নিয়ে আসার। বলছি।এত কথা বলবেন, কফি খাওয়াবেন না, আপনার শো তে?"

" ব্যবস্থা করছি। আমরা চালু রাখি ডিসকাশন। কফি এসে যাবে।"

​ " আমার কথা বলি তাহলে।আমি খুব সাধারণ একটা জীবন চাইতাম, বর-ছেলে নিয়ে হাসিখুশি।ছোট ছোট চাহিদা থাকবে, আমার বর সেগুলো পূরণ করবে। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। আমার সমস্ত সহজতার বুকে জল ঢেলে দিতে পারে আমার পড়াশোনা, কখনো ভাবিনি। কখনো ভাবিনি, যে আমার শ্বশুর বাড়িতে সবসময় সব ডিসকাশন এসে শেষ হবে এই কথায়," হবে না? বারণ করেছিলাম বেশি শিক্ষিত মেয়ে আনতে, এখন বোঝ।"

আমি পরবর্তী সময়ে মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, সব শিক্ষিত , ভালো রেজাল্ট করা মেয়েকেই এ কথা শুনতে হয়। রেজাল্ট টা শুধু বিয়ে হওয়ার জন্য ম্যাটার করে, বিয়ের পরের জীবনে ওটা একটা বোঝা। আমার জন্য এটা অসম্মানের ছিল। আমার জন্য আমার ব্যাগ ,ডায়েরি হাতড়ানো অসম্মানের ছিল, আমার জন্য সবার সামনে চেঁচিয়ে বৌকে যা খুশি বলা অসম্মানের ছিল। আমার চাকরি ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর প্রতি কথায় এটা প্রমাণ করা হতো, আমি তো রোজগার করিনা, দুনিয়াদারির কী বুঝবো? ঘর ঘর কি কাহানি, বেদান্ত বাবু সত্যিই আপনি ইন্টারেস্ট পাচ্ছেন এই কথা শুনে? এ ঘটনা তো রোজ ঘটে , সবার সাথে।"

"যে ঘটনা রোজ ঘটে সবার সাথে তাতে এত রিভোল্ট করার কী ছিল তবে?"

" রোজ ঘটে মানে সামান্য কে বলল? আফ্রিকায় কালো মানুষের সঙ্গে রোজ এক ই ঘটনা ঘটতো, একজন মহাত্মা গান্ধীর কেন হঠাৎ মনে হল, এটা চলতে পারে না?"

" কিন্তু তিনি অসহযোগে বিশ্বাস করতেন।"

" আমি কৌনসা বটি কাটারি নিয়ে তাড়া করছি। ঠিক বলেছেন, ওই অসহযোগটাই শিখে গেলাম।আর জিতে গেলাম।"

" ইন্টারেস্টিং। কী করে?"

" অসহযোগ বলে আমি আমার মতে প্রতিষ্ঠিত থাকবো, তোমার সঙ্গে লড়াই করবোনা, তোমাকে আর সহযোগিতা করবোনা, যতক্ষণ না আমার মূল্য তুমি দিচ্ছ।আমিও শুরু করলাম অসহযোগ।এত বছর ধরে বুঝিয়ে চলেছি আমার সহযোগিতা না থাকলে সংসারটা চলবেই না।"

" ও আপনার ই একার প্রচেষ্টায় সংসার চলে?"

" না। একদমই নয়।তাহলে সংসার বলতাম কেন? তিনি যদি সংসার চালান, আমার সহযোগিতা নিয়ে চালান এটা স্বীকার করুন। ব্যাস।

" ও, তবে স্বীকার করছেন, আপনার স্বামীও কিছু করেন সংসারের জন্য? "

" আমি গান্ধীজির উদাহরণ কেন নিয়েছিলাম, জানেন? উনি আমার হিরো। ওনার আদর্শে আমি নিজেকে বদলিয়েছি। ওনার আরেকটি আদর্শ ছিল সত্যাগ্রহ।কোন কিছুর মূল্যে সত্যকে ত্যাগ করবো না।আপনার এই শো তে হাজার উস্কানি দিলেও না। আমার ভ্যালু সিস্টেম ভীষণ গ্রাউন্ডেড বেদান্ত বাবু।

" আমি কেন উস্কাতে যাবো, আপনি ই উস্কান মহিলাদের," পুরুষের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও..।"​

খুব হাসে মন্দিরা," আর কতো বছর একই রকম ভাবে নারীবাদীদের সম্পর্কে আপনারা এক ই বক্তব্য রাখবেন? হাস্যকর। আপনি সত্যিই জানেন না যে আমি বা আমরা এসব বলিনা। ভেঙে দেবো? গুঁড়িয়ে দেবো? মে আমি একটা পিঁপড়ে মারতেও কষ্ট পাই। যে আমি আজ অবধি বহু মন চাইলেও ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে পারিনি সেইসব পুঁচকে ছোঁড়াদের যারা কিস্যু না বুঝে আমার কাজ নিয়ে কথা বলতে এসেছে। আমার নিজের হাতে পায়ের ,সবার উপরে মনের শেকল ছাড়া আর কিছুই ভাঙার ছিল না আমার বেদান্ত বাবু, আজ ও নেই।

কফি না খাওয়ালে আমার সংসারে আর এক মিনিট ও উঁকি দিতে পারবেন না বেদান্ত বাবু।

" হ্যা। কফি এসে যাবে দু মিনিটে।আমরা চালু রাখি?"

" উঁহু। দুমিনিট নীরবতা পালন। ও আপনি এডিটিঙ এ বেয়াদপি কেটে দেবেন জানি।তাই নিশ্চিন্তে কফি এলেই শুরু করবো।"

বেদান্ত উঠে চলে যায়। বেশ রেগে গেছে।

মন্দিরা চুপ করে বসে থাকে।

কফি আসে।মন্দিরা বসে বসে খায়। শেষ হলে বেদান্ত ফিরে আসে।মন্দিরা হেসে বলে, " রাগ করলে আপনি কফি খাননা?"​

বেদান্ত উত্তরে বলে," শুরু করি?"

" অবশ্যই।"

" আপনি একটু আগেই বললেন, সংসারটা দুজনেই চালান, আপনার শুধু স্বীকৃতি চাই।বহু ফোরামে এও বলেছেন, আপনিই সব দায়িত্ব নেন।কোনটা মিথ্যে বলে বাছবো?"

" দুটোকেই বাছতে পারেন।আসলে সময় বিশেষে বদলে যায় সম্পর্ক, দায়িত্ব-বোধ, সব । আমি হয়তো তিন বছর আগের কোন একটি ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলাম, আমাকেই সব দায়িত্ব নিতে হয়, তারপর প্রতিদিন জীবন বদলায়। আমি আমার স্বামীকে শত্রু বলে চিহ্নিত করিনি, ওর বিরুদ্ধতা করাটা আমার ভাঙিয়ে খাওয়ার জিনিস নয় যে সবসময় করে যেতে হবে। ও ভালো করলে ভালোই বলবো।খারাপ করলে খারাপ।"

" আপনার উপর নাকি কত কত মানসিক, শারীরিক অত্যাচার হয়েছে, কত জায়গায় মেয়েদের আপনি মসিহা, আর সবাইকে তাতিয়ে নিজে দিব্য সংসার করে গেলেন সেই অত্যাচারী স্বামীর সঙ্গে?"

" এই ইন্টারভিউ টা কবে শ্যুট হয়েছে?"

রাকাকে জিজ্ঞেস করে সন্দীপ।

"'আমি কী করে জানবো? আজ ইউটিউবে এসেছে। এরপরে কী বলেন উনি সেটাই হবে ইন্টারেস্টিং।"

" পুরোটাই তো ইন্টারেস্টিং তোমার কাছে। ওই মহিলার তো তুমি ফ্যান। আমারই কিনে দেওয়া স্মার্ট টিভিতে বসে আমার ই বিরুদ্ধে বলার কথাগুলো লিখছো, গিলছো।"

"'তোমার কেনা স্মার্ট টিভি থেকে আমার নিজের পয়সায় কেনা ফোনে শিফট করে যাই? আচ্ছা উনি কোন কথাটা তোমার বিরুদ্ধে বলেছেন? "

" আমার মানে আমাদের!"

" উঁহু। এখানে ই সবচেয়ে বড় ভুল। উনি তোমাদের বিরুদ্ধে বলেননি , আমাদের সপক্ষে বলেছেন। তোমাদের মতো লোকদের বিরোধিতা করে সময় নষ্ট করার ও গুরুত্ব দেওয়ার উনি ঘোর বিরোধী।উনি নিজের অধিকারের সপক্ষে সওয়াল করেন, মেয়েদের অধিকারের সপক্ষে সওয়াল করেন। আর কী আশ্চর্য, তোমরা সেটাকে তোমাদের বিরোধিতা ছাড়া কিছুই ভাবতে পারোনা।

তার মানে আমার আর বাকি মানুষের মতো সবকিছু তে নিজের স্বাভাবিক অধিকারটাই খুব অন্যায় বলো?"

" আবার লেকচার? মুখ ভেঙে দেবো।"

রাকা একটু এগিয়ে এসে বলে, " চেষ্টা করে দেখো একবার।জেলের হাওয়া যদি না খাইয়েছি!"

আজ আনমনা ছিল সারাদিন রাখি। এতগুলো বছর পর এইরকম অপমান সহ্য করতে হবে ভাবেনি।

হঠাৎই আলাদীনের চেরাগের মতো ওর হাতে এসে যায় কিছু হোয়াটসঅ্যাপ সেক্স চ্যাট, কিছু ছবি, একটা লুকানো ড্রাইভে ছিল ল্যাপটপে।ড্রাইভটাও হিডেন ছিল, পাস ওয়ার্ড প্রোটেক্টেড । তবু কী এক জাদুবলে খুলে গেছে ওর কাছে রহস্য। প্রশ্ন করতে অনিবার্য চেঁচামেচি, অসভ্যতা এবং শেষমেষ বলা "এত অ্যাভারেজ মেয়েকে নিয়ে চলবে না সুশান্তর। আঁখি এই অপমান টা নিতে পারছেনা। ও চাকরি করে না। কিন্তু কেন করেনা? কারা ওকে সাবলম্বী হতে দেয়নি? কারা ওকে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে? আর আজ ,ও অ্যভারেজ?"

​হোয়াটসঅ্যাপে লিঙ্ক পাঠিয়েছে রাকা," ওনার ইন্টারভিউটা দেখ, অনেক কিছু বদলে যেতে পারে।"

রাখি কী আর নতুন দেখবো, ভেবে দেখা শুরু করেছিল, কিন্তু এই মহিলা কেমন সম্মোহিত করে রেখেছে। কী শান্ত কথা বলার ভঙ্গি অথচ কী দৃপ্ত দুটো চোখ! নিজেকে চিনলে বোধহয় এমন শান্তটি হওয়া যায়।

রাখি এই প্রথম ফেমিনিজমের মানে বুঝছে।

" বলুন, মন্দিরাদি কেন থাকলেন?"

" ভালোবাসি বলে।"​

" ওহ্ মাই গড।আপনি অবাক করলেন।এ কী কথা শুনলাম নারীবাদীর মুখে? আপনার বিপ্লব কোথায় গেল?"

" নারীবাদী রা মানুষ নয় না? তাদের জীবনে তো প্রেম আসতেই নেই!"

"তাই বলে "যে খারাপ বলে" ভাঙিয়ে খেলেন এতদিন, জনপ্রিয় হলেন, তার প্রতি প্রেম?"

হেসে, মন্দিরা বলে," আপনি তো একথা শুনলে চেয়ার থেকে পড়ে যেতেও পারেন বেদান্ত বাবু, আমি কখনো কখনো খাইয়েও দিই আমার বরকে।"

"আরিব্বাস, মাননীয় মহোদয়াগণ এবার আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন,এটা দ্বিচারিতা নয়? মুখে বলবো, আমাদের চাকর বাকর বানিয়ে রাখা হয়, এদিকে গ্রাস তুলে দেবো স্বামীর মুখে, এই দ্বিচারিতা কি ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার মতো না?"

" বেদান্ত বাবু, আপনি তো নেন ই নি আমাদের মতামত,তবে ছুঁড়ে আর কী করে ফেলবেন? আর মেয়েরা তাদের জীবন দিয়ে বুঝে নেবে নিজেদের মতো। তারা না আমার, না আপনার কথায় ইনফ্লুয়েন্সড হয়ে কিছু করবে। মেয়েদের বোঝার বুদ্ধি নেই ,এটাই নির্বোধ রা ভাবে।"

" আপনি আমাকে নির্বোধ বললেন?"

" আপনি যদি ভাবেন মেয়েদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই, তবে নিশ্চিত করে বলেছি, আর যদি না ভেবে থাকেন, তবে গা atয়ে মাখার কোন কারণ দেখি না।"

" তাহলে আপনার প্রেমের সঙ্গে প্রতিবাদের মিলনকাহিনীটি শুনি।

উঁহু, ভুল শব্দ চয়ন। মিলন নয় সহাবস্থান।আমার স্বামী সুরজিৎ আমার কোন পরিচিত লোক , আমার বাড়ির লোক আমাদের বাড়িতে এলে যত্ন করে আপ্যায়ণ করে, স্ত্রীর বন্ধু বলে এড়িয়ে যায়না।আমার ভাইয়েরা ওকে মনের কথা বলে, আমার বাপের বাড়ির সব দরকারে ও ছুটে যায়, আমার বহু বান্ধবীর বরেরা যান ই না, অথচ এটাই খুব স্বাভাবিক হওয়ার ছিল।'

" ও। এতক্ষণে বোঝা গেল, আপনার বাপের বাড়ির লোককে উনি দেখাশোনা করেন বলে ,উনি আপনার কাছে এখন ভালো।"

"আপনি এত সহজে কনক্লুশন টানেন, ছেলেমানুষি দেখে ভারি আমোদ হয়।" আরেকবার কফিতে চুমুক দেয় মন্দিরা।

হালকা ঘিয়ে রঙ , গোলাপী পাড়ের সাউথ কটনের সঙ্গে উজ্জ্বল দুটো চোখ, গমরঙের ত্বকের মন্দিরাকে অন্যরকম লাগে।

" প্রসঙ্গটা আমার স্বামীর নয়, প্রসঙ্গটা একজন মানুষের মানবিক দায়িত্বের। সেখানে সে উত্তীর্ণ হয়েছে বারবার। আমার কোন বান্ধবী বিপদে থাকলে আমাকে শুধু একবার বলতে হয়েছে, সে ছুটে গিয়ে তাকে সাহায্য করেছে, তখন সে " বাবা, ঝামেলায় পড়ি যদি" বা," তোমার এত ওস্তাদির কী আছে? তুমি কি ধর্মশালা খুলেছ নাকি" বলে এড়িয়ে যায়নি, বরং তাকে নিয়ে এসেছে আমাদের বাড়িতে,যাতে আমি তাকে সাহায্য করতে পারি। এরকম কত ঘটনা আছে, যেখানে আমি পৌঁছাতে পারিনি, ও পৌঁছে সাহায্য করেছে। এটা সহাবস্থান। ও আমার সহযোদ্ধা ও এসব ক্ষেত্রে। ওর বাড়ির ভ্যালু সিস্টেম ওকে পুরুষ হওয়ার কিছু ভুল ব্যাখ্যা শিখিয়েছে, সেটার বিরুদ্ধে আমি লড়েছি, আজ ও মাথা চাড়া দিলে লড়ি, মানুষটার সঙ্গে কোনো লড়াই নেই। ভালোবাসি।"

" আশ্চর্য কথা শোনালেন, আপনার আদ্যপান্ত পুরুষ তান্ত্রিকতার শিক্ষা পাওয়া স্বামী আপনাকে মেয়েদের সমস্যা য় লড়তে সাহায্য করে?"

" হ্যা, ঠিক তাই। কেন? দেখেননি, ছেলেরা নিজের বৌকে বলে ঘরে থাকো, অন্যের বৌকে বলে, বৌদি আপনি কী ট্যালেন্টেড, আমার বৌটা যদি এরকম হত!​

এটা যদিও নেগেটিভ উদাহরণ হল। কিন্তু কেউ বিপদে থাকলে ও ঝাঁপিয়ে পড়ে, পুরুষ থাকলে ওর পড়ে। আজকের দিনে এরকম একটি রেয়ার মানবিক গুণের অধিকারী কে ভালোবাসবো না ,বলুন?​

আমি রক্তাক্ত বেড়াল ছানা রাস্তা থেকে এনেছি, ও তোয়ালে পেতে দিয়েছে,আমি রাস্তার কুকুর ছানাকে বড় কুকুরের থেকে বাঁচাতে তুলে এনেছি, ও খাবার খাইয়েছে। আমি ডিপ্রেশনে থেকেছি, ও শান্তিনিকেতন এর টিকিট কেটেছে। আর কী চাই ,এক জীবনে? ভালোবাসা টা আসলে আর যাই হোক, লিখে, বলে বোঝানো যায় না বেদান্ত বাবু, বোধের ব্যাপার।"

মালতী দেখছিল বৌদির সঙ্গে বসে টিভিতে এই ইন্টারভিউ।

বৌদি টিভিতে দেখছে মোবাইলের কী যেন চ্যানেল।

মালতী হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো। " বৌদি আমি যাই বাড়ি।"

" সে কী রে, সব কাজ হয়ে গেছে।"

" বাকিটুকু কাল সকালে এসে করবো। এখন যাই।"

" কিন্তু কেন?"

"ভালোবাসা টা বোঝাতে হবে বরকে। বোঝাতে হবে ওর সঙ্গে আমার যুদ্ধ না, ওর গালাগালি র সঙ্গে।একটু চেষ্টা করি, কী বলো, বৌদি?"

রাকা একটু আনমনা হয়ে যায়।কথা বলার দরকার , কথা বলতে হবে। ভালোবেসেই তো সংসারটা করতে এসেছিল। সব অবস্থাতেই ঘুরে দাঁড়ানোর একটা জায়গা তো থাকেই।

সব যুদ্ধের পরে মানুষ ক্লান্ত হয়ে নাহলে কোন হাতটার উপরে নিশ্চিন্তে মাথা রেখে ঘুমোবে?"

বেদান্ত পরের দিন দেখে ষাট হাজার ভিউ আর পঞ্চাশ হাজার লাইক।

" এসব ভুলভাল কনফিউজড মালকে এত লোকে কী করে পছন্দ করে? যত্তোসব!"




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.