দেয়ালগুলোর গায়ে মরা বিকেলের আলো
চুঁইয়ে নামছে। এই বৃষ্টিতে
ধুয়ে যাওয়া পলেস্তারা, ভোটের প্রচারছবি সবাই ম্লান
“এই চিহ্নে বোতাম টিপুন” লিখনও ফ্যাকাশে
ডিশ অ্যান্টেনায় কাটা ঘুড়ি, অন্যের নিয়তি হয়েই
ধীর পায়ে ঘনিয়ে উঠছে ভবিতব্য, জলঢোঁড়া
সাপের মতোই মুহূর্ত তোমার পা বেয়ে উঠে আসবে,
পিছল, নির্বিষ, গন্তব্যবিহীন
একটা এস.এম.এস ঢোকার কথা ছিল,
যেন কারও মনে পড়ল তোমায়, সে কতো দূর ?
কোন মহল্লা ? কোন শহরের নিঃসঙ্গ সাইবার কাফেতে বসে
কেউ ছুঁতে চাইবে তোমায় ? স্কাইপের কানেকশন
হঠাৎ ছিঁড়ে যাবার পর যেরকম ভরশূন্য লাগে,
তেমনই একদলা ব্যথা, কী যেন বিঁধছে,
ঢোঁক গিলতে গেলে কান্না বমি করতে পারো
না, কেউ তোমার জন্য অপেক্ষায় নেই…
একটা দম-আটকে-যাওয়া শূন্যতা নিয়ে ঘুরে বেড়াই । পথ থেকে পথে দেখি হাইরাইজ, দামি বিদেশি গাড়ির নির্লজ্জ পশরা । এই রাস্তা, এই ফুটপাথ, এই বারিস্তা-সিসিডি, এই আইনক্স জানে আমাদের সেইসব তুমুল মুহূর্তযাপন । যেদিন হাত ধরেছিলাম, যেদিন নৌকোর ছইয়ের ভিতর অন্ধকারকে অস্বীকার করে চুমু খেয়েছিলাম তীব্র আশ্লেষে, যেদিন স্বপ্ন দেখেছিলাম, যেদিন ওর খোলা চুল উড়ে গিয়েছিল ট্যাক্সির জানলায়, যেদিন ও খুলে দিয়েছিল বুকের দু’জোড়া করুণ শঙ্খের মতো আর্দ্র স্তনযুগল, যেদিন গোটা কলকাতা জুড়ে প্রবল বৃষ্টি আর মুহূর্মুহু বিদ্যুতের আলোয় ঝলসে গিয়েছিল আকাশ, যেদিন ছুটন্ত অটোর ভিতর চেপে ধরেছিলাম হাত চোখ থেকে চোখে ছুটে গিয়েছিল এক অদৃশ্য কসমিক রেখা, সেদিনও আমরা কেউই জানতাম না নক্ষত্রেরও আয়ু শেষ হবে, ফুরিয়ে যাবে এই তীব্র মুহূর্তগুলোর ভেতর লুকোনো সন্ত্রাস । তবু সেই অমোঘ দিনটা এল অবশেষে। যেদিন ও নিজেকে ছিঁড়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল আমার কাছ থেকে । মনে হয়েছিল একটা কালো আকাশের গায়ে হাত বুলিয়ে নক্ষত্রের পাঠ নিচ্ছি আমি । এতোটাই আকস্মিক আর নির্মম ছিলা সেই অভিজ্ঞতা । এটা এমন এক লিমিট-এক্সপিরিয়েন্স, যা ভাঙা যায় না । যার রেশ হয়তো টিকে থাকে বছরের পর বছর পেরিয়েও ।
ভাষা, আজ আমরা জানি, সিগনিফায়ার আর সিগনিফায়েডের এক অমোঘ আর জটিল খেলা । যাকে আমরা তৈরি করেছি ‘ভাষা’-র নিজস্ব ‘সিস্টেম’-এর সাপেক্ষে । বস্তুত, কোনো শব্দেরই কোনো স্থির ও অনড় অর্থ নেই ।
যাকে আমরা বলি ‘প্রেম’, যাকে আমরা বলি ‘শূন্যতা’, তারও কোনো ‘স্থির’, ‘গিভেন’ অর্থ নির্দিষ্ট নেই কোনোকালেই । তবু আমরা কেন ভাবি, ‘প্রেম’ সেই মিডাসের লাঠি, যা, ছুঁয়ে দিলে যেকোনো বস্তুর অন্তর্নিহিত অর্থ বদলে যায় ? কারণ, ইতিহাসগত ভাবে এই ‘অর্থ’ নির্মিত হয়েছে । হোক ‘আর্বিট্রারি’, তবু আমরা নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছি একে । তাই, এই একটি শব্দের সামনে নতজানু হতে হতে আমরা ধারণা করে নিয়েছি, ওই শব্দের অনুষঙ্গে আরও বহু কিছু জড়িয়ে আছে, যা খুব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই আসবে । একটা ‘গাছ’-কে যে আমরা ‘গাছ’ বলে চিনি, ‘জলাশয়’ বা ‘রাস্তা’ বলে চিনি না, তার পিছনে আমাদের বহুযুগলালিত সংস্কার আর অভ্যাস লুকিয়ে আছে মাত্র । সত্যিই ‘গাছ’ শব্দটির ভেতরে আজ আর কোনো স্থিরীকৃত অর্থ লুকিয়ে নেই, যা থেকে তাকে ‘বৃক্ষ’ বলে চিনে নেওয়া যায় । ‘প্রেম’ শব্দটিও ঠিক সেরকমই এক আশ্চর্য বিভ্রম মাত্র । যার কোনো সিগনিফিকেন্স নেই আজ আর ।
কারণ, যেকোনো সত্তার ভেতরেই রয়ে গেছে এক স্থির শূন্যতা । এক চিরন্তন ‘ভয়েড’। অনড়, স্থানু সত্তার অস্তিত্ব আজ অর্থহীন । সেই কবে, জাঁ পল সার্ত্র তাঁর যুগান্তকারী ‘বিয়িং অ্যান্ড নাথিংনেস’-এ বস্তুর অন্তর্নিহিত এই ভয়েডকে চিহ্নিত করেছিলেন । আমাদের ‘নেচার অফ বিয়িং’-কে আমরা বলতে পারি ‘অন্টোলজি’ । ১৯২৭-এ প্রকাশিত ‘বিয়িং অ্যান্ড টাইম’ বইতে মার্টিন হাইডেগার দেখিয়েছিলেন অস্তিত্ব আসলে একধরনের আপতিক অবস্থা, যার ভিতর আমাদের ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে । ‘বিয়িং’ আসলে এক অযৌক্তিক অবস্থা যা এক চিরকালীন উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তাকে ধারণ করে চলে । সার্ত্র হাইডেগারের এই দার্শনিক প্রত্যয়কেই আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বললেন, মানুষী অস্তিত্ব আসলে এক প্রতিনিয়ত মুছে-যেতে-থাকা অনস্তিত্বকে ধারণ করে আছে । তাই ‘অস্তিত্ব’ সর্বদাই একধরনের ‘রিস্ক-ফ্যাক্টর’-কে বয়ে নিয়ে চলে । এই আপতিকতার একমাত্র সদর্থক দিক হল, আমরা এই নিয়ত অস্তিত্বহীনতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমাদের ‘চয়েস’-এর স্বাধীনতাকে পূর্ণাঙ্গ রূপে উপলব্ধি করতেই পারি, আর এই স্বাধীনতাই আমাদের অস্তিত্বকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে । যেহেতু আমাদের ‘অস্তিত্বের’ কোনো প্রাক্-নির্ধারিত প্যাটার্ন নেই । বিষয়টি আরও বিস্তারে বলা প্রয়োজন ।
সার্ত্রের দর্শনে স্বাধীনতাবোধ এবং উদ্বেগের মধ্যে এক যোগসূত্র বিদ্যমান । তিনি চেতনাকে বস্তু থেকে পৃথক করেন এবং বলেন, ‘বস্তু’ সম্পর্কে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছুই বলা যায় না । বস্তু একটি অনড় অচলায়তন এবং তার নিজের কোনো সম্ভাবনা নেই ।
কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা কোনো কিছুর ‘শূন্যতা’ অনুভব করি এবং কোনো কিছু ধ্বংস হয়ে গেলে, আগে কী ছিল তার সাপেক্ষে কোনো কিছু নেই এটা বুঝতে পারি । কিন্তু এই যে শূন্যতা, অনুপস্থিতি, ধ্বংস, এগুলো বস্তুর দ্বারা ব্যাখ্যাত হতে পারে না । কারণ ‘বস্তু’ হল ‘পিওর আইডেনটিটি’ । অতএব, শূন্যতা বা কোনো কিছুই নেই, এমন কিছুর ব্যাখ্যা এমন কোনো সত্তাই করতে পারে, অস্তিত্বহীনতাই যার অস্তিত্ব, অর্থাৎ, যার অস্তিত্ব কোনো কিছু না-থাকার মধ্যে দিয়েই একমাত্র নিজেকে প্রকাশ করতে পারে । সার্ত্রের মতে, এই ধরনের সত্তা হল ‘চেতনা’, কারণ ‘চেতনা’কেই একমাত্র কী তা নির্ধারণ করা যায় না এবং অবিরাম পরিবর্তনের মধ্যেই তার জীবন । সার্ত্র বলেছেন, তবু, চেতনা আছে । আছে, আমরা বলতে পারি, যদিও তা এমন কোনো সত্তা হতে পারে, যা তাই, যা তা নয় এবং যা যা নয়, তাই । একমাত্র চেতনাই এই শূন্যতাকে ব্যাখ্যা করতে পারে, কারণ, চেতনা শূন্য । শুধু তাই নয়, চেতনা পৃথিবীতে বস্তুগুলিকে এক অবয়ব সংস্থান দিতে পারে এবং পৃথিবীকে সে অর্থময় করে তুলতে চায়, যদিও তার অর্থ হয়তো জগতের সঙ্গে ঠিক খাপ খায় না । চেতনা অভিজ্ঞতার মাধ্যমেও শূন্যতাকে প্রত্যক্ষ করে । শূন্যতার উদ্ভব আমাদের প্রত্যাশার ভিত্তিতে হলেও যেকোনো শূন্যতার অভিজ্ঞতাই হল বাস্তব । তাকে বাস্তব পৃথিবীতেই বাইরের জগতে আমরা প্রত্যক্ষ করি । ধ্বংসের বেলাতেও চেতনায় আগের বস্তু সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ছিল বলেই, যখন সে বস্তুকে দেখতে পাই না, তখনই ধ্বংসের তাৎপর্য বোঝা যায় । কিন্তু এখানেও চেতনার দুই জাগতিক অবস্থাকে তুলনার মধ্য দিয়ে ধ্বংসের নেতিমূলক দিকটি অনুভূত হয় । চেতনা তাই ধ্বংস, শূন্যতা সব কিছুর ধারক, বাহক । এই শূন্যতাই তার ‘না’ বলার ক্ষমতা, তার স্বাধীনতা ।
সার্ত্র কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করেন না । আমাদের অতীত আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে না, আর আমাদের ভবিষ্যৎকে আমরা গড়ে তুলি । সম্পুর্ণ স্বাধীন আমাদের অস্তিত্ব এবং নিজের পূর্ণ স্বাধীনতায় জীবনকে গড়ে তোলাই আমাদের অস্তিত্ব । বস্তুজগৎ থেকে স্বতন্ত্র হয়ে নিজের সম্ভাবনাকে পূর্ণ রূপ দেবার মধ্যেই মানুষের অস্তিত্ব নিহিত আছে । আমাদের অস্তিত্বের অর্থ, বস্তুজগতের মধ্যে বাস করেও, আমরা যে বস্তুর সঙ্গে এক নই, তাকে উপলব্ধি করা । তারপর, কীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎকে গড়ে তুলব, তা আমাদের স্বাধীনতার উপর নির্ভর করে । আমরা স্বাধীন হতে দন্ডিত, সার্ত্রের ভাষায় ‘I am condemned to be free’, স্বাধীনতা আমাদের জন্মগত অধিকার । কিন্তু যে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের হাতে, তার অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ ও আশঙ্কা থেকে আমাদের মুক্তি নেই। এখানেই সার্ত্র কিয়ের্কেগার্দকে অনুসরণ করে ‘ভয়’ এবং ‘উদ্বেগ’-এর মধ্যে একটা পার্থক্য করেছেন । বাইরের বস্তু আমাদের ক্ষতি করতে পারে, এরকম আশঙ্কাকে বলা যায় ‘ভয়’, কিন্তু সমস্ত রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও আমাদের নিজেদের স্বাধীন আচরণ এরকম কিছু করে ফেলতে পারে, যাতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় । এই অবস্থাকে, যেখানে ভয়ের ক্ষতি থেকে নিজেদের রক্ষার কোনো উপায়ই যথেষ্ট মনে হয় না তাকেই সার্ত্র বলেছেন ‘উদ্বেগ’ । এ যেন এক খুব সরু সুতোর উপর দিয়ে হেঁটে চলা । আমাদের স্বাধীনতা যেখানে একটা নিশ্চিত ব্যবস্থাকে উলটে দিতে পারে, এতেই উদ্বেগের সৃষ্টি হয় । স্বাধীনতার সঙ্গে তাই রয়েছে দৃঢ় ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং সেই অনুভূতির মধ্য দিয়েই আমরা জানি, আমরা স্বাধীন ।
অর্থাৎ অস্তিত্ব মিশে রয়েছে অনস্তিত্ব তথা একধরনের ‘মুছে-যাওয়ার’ সঙ্গে । এই মুছে-যাওয়া আসলে একধরনের ‘অনুপস্থিতি’-কে সামনে নিয়ে আসে । এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন জাক দেরিদা । তাঁর ‘স্পেকটারস অফ মার্ক্স অ্যান্ড নিউ ইন্টারন্যাশনাল’ বইতে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এক ‘নন্-প্রেজেন্ট প্রেজেন্ট’-এর উপস্থিতি । গ্রন্থিচ্যুত সমকালীনের অন্তঃকেন্দ্রে এক মায়া-অপসৃয়মান অতীতের পুনরাবির্ভাব । এক ‘কনজয়েন্ড সময়’ থেকে উৎসারিত অতীতের ‘ইনজাংশন’ । এই ‘পলিটিক্স অফ মেমরি’-ই হয়ে উঠতে পারে আমাদের অস্তিত্বের এক দুর্মূল্য ‘এথিক্স’ । অতীতের, মুছে-যাওয়া বর্তমানের বিশুদ্ধ নির্দেশ দ্বারা তাড়িত না হলে, ‘হন্টেড’ না হলে সেই ‘মেসায়ানিক প্রতিশ্রুতি’-র আবির্ভাব সম্ভব নয় । ‘হন্ট’ নামক সিগনিফায়ারটির অর্থ, দেরিদার ভাষায়, ‘it is necessary to introduce haunting into the very construction of the concept…’ । আমাদের ‘সত্তা’ থেকে ‘কাল’ সবকিছুর ভিতরেই ঘটে চলে এই ‘হন্টিং’-এর অনুপ্রবেশ । একদা ইউরোপীয় ‘এনলাইটেনমেন্ট’ ও ‘অন্টোলজি’ চেয়েছিল প্রেতের নির্বাসন । কিন্তু দেরিদা দেখান কীভাবে অতীতের ‘মায়া’ ও ‘এথিক্স’ ‘হন্টোলজি’-র মাধ্যমে প্রেতের পুনঃপ্রবেশ ঘটায় । দেরিদা সময়ের এক ‘উভমুখী অনুপস্থিতি’-র কথা বলেন । ‘অনাগত ভবিষ্যৎ’ ও ‘বিলীয়মান অতীত’ যে ‘এনজয়েন্ড স্পেস’ তৈরি করে, সেখান থেকেই উৎসারিত হয় ‘মায়া’, অনুজ্ঞা’ ও ‘প্রতিশ্রুতি’ ।
এখানেই আমি আর একবার ফিরে আসতে চাই এই লেখার শুরুতে বলা আমার ব্যক্তিগত একান্ত সংরক্ত অভিজ্ঞতার সাপেক্ষে । আমাদের ‘নিও-লিবারাল’, মুক্তপুঁজিতে ভেসে যাওয়া বর্তমান যে নিষ্ঠুর ‘পারপেচুয়াল প্রেসেন্স’-এর কাছে আত্মসমর্পণ করে চলেছে, সেখানে, এক তুচ্ছ মানুষের ততোধিক তুচ্ছ ভেঙে-যাওয়া প্রেমের স্মৃতির অবশেষ আর কোনো তাৎপর্যই হয়তো অবশিষ্ট রাখে না । সে বোঝায়, এই মর্মন্তুদ শূন্যতাই এই সময়ের নিয়তি । কিন্তু যা কিছু হারিয়ে যায়, তা কি চিরকালের মতোই মুছে যায় ? এ এমনই এক সময় যখন ‘পলিটিক্স অফ ভ্যানিশিং’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে একমাত্রিক শিল্পরূপ । যে এই ভ্যানিশিং প্রসেসের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে না, আত্মস্থ করতে পারবে না এর অভ্যন্তরীণ রক্তাক্ত বাস্তবতা, এই পৃথিবী তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে অনায়াসেই, এক বাতিল, অপ্রয়োজনীয়, আবর্জনা হিসেবে । সেই মেয়েটিও সেদিন হয়তো সেই চোখেই দেখেছিল আমায় । পরে, সে যখন হয়ে উঠল আমার পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসের চরিত্র, আমি, নিজের অজান্তেই তাকে ফিরিয়ে এনেছি সেই ‘পলিটিক্স অফ মেমোরি’-র সাপেক্ষে । অপসৃয়মান বর্তমানের ভিতরেই খুঁজতে চেয়েছি এক ‘মেসায়ানিক রিটার্ন’-কে । এবছর শারদীয় ‘এই সময়’ কাগজে বেরিয়েছে উপন্যাসটির প্রথম দুটি দীর্ঘ অধ্যায় । সেদিন আবার লেখাটি নতুন করে পড়ছিলাম । জানি না কেন
আর কীভাবে নিজের অজান্তেই স্পর্শ করে ফেলেছি সেই ‘নন্-প্রেজেন্ট প্রেজেন্ট’-কে । সে আসলে কোথাও অবলুপ্ত হয়ে যায়নি । বারবার স্মৃতির ভিতরে, বর্তমানের দোলাচল আলোছায়ায় আমি টের পাই তার পিছল অস্তিত্ব । এক তীব্র শূন্যতার ভিতরেও সে আসলে প্রবলভাবে জানান দিয়ে চলেছে নিজের ‘উপস্থিতি’ । প্রগাঢ় শূন্যতার ভিতরেও চোখ মেলে তাকালে আমি রিকালেক্ট করতে পারি জীবনানন্দের সেই অমোঘ পঙ্ক্তিগুলো :
সুচিন্তিত মতামত দিন