■ মনোনীতা চক্রবর্তী / ভাঙা আগুন

■ মনোনীতা চক্রবর্তী / ভাঙা আগুন

আপনাকেই বলছি শুধু এমন ভাবার কোনোই কারণ নেই। কিন্তু আপনিও যে নেই সে-কথাও বলা যায় না। খুব নিশ্চিতভাবেই এই বলা আমার। অযথা ঋদ্ধ সমালোচকের ভূমিকা না-ই-বা নিলেন। আমার ঘরে আগুন। আমার মুখে হাসি। আমার বাচ্চারা উপোস করে নেই। তাদের ঘরে আগুন নেই। হাসি নেই। ওদের ঘরে উপচে পড়ছে স্কচ-হুইস্কি আরও কত-কী। আমার কাছে মিডিয়ার কোনও 'বিশেষ' নেই। তাই, কোনও কাজ যত ভালোই হোক প্রচারে নেই। আমি নিজেও সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি নই; ক্লোন খবরের কোনও সুযোগ নেই। আমার কোনও খবর নেই। আমার ঘুমহীনতার কোনও অনুবাদক নেই। আক্ষেপ নেই। তবু আছে। কেন জানেন, বিক্রি হয়ে যাওয়া মানুষের মুখ আমাকে বেহালা বাদকের মুখ মনে পড়ায়। কী নির্লজ্জের মতো এই করোনা-দিনে এরা নিজেদের অন্তর্বাস ছাড়ছে সকলের সামনে! কী বিচিত্র! কী বিচিত্র! আমরা এদের খুব চিনি। এত সুলভ এরা হয় কী-করে! এটা কোনও কবিতা নয়। এটাই 'সময়'! ভাগ্যিস সত্যিই একটা মুর্ত-মুখোশ এখন সকলের!

আপনাকেই বলছি, এমন ভাবার কারণ নেই। এত সস্তা হতে নেই। কী চাই, আপনার?! আপনাদের? মসনদ হারালে রাজা আর প্রজার কোনও পার্থক্য থাকে না। অন্যের ভুল না-ধরে একটি অন্তত বিষাদ না-হলেও প্রেমের কবিতা লিখুন। লেখাটি বারবার পড়ুন। আবারও বলছি, রিয়াজ আর রেওয়াজ; গুলিয়ে ফেললেই গণ্ডগোল! ভুল মাপের অন্তর্বাসের মতো ঢলঢলে ব্যাপার অথবা..!

দোহাই, এমন করুণ দিনে রকমারি খাবারের ছবি দেওয়া বন্ধ করুন। বন্ধ করুন আপনার ফার্ম-হাউজ আর বৈভবের গল্প। সবার জীবন পোজড ক্লিকে নেই, বিশ্বাস করুন নেই! হ্যাঁ, মানছি আপনার থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। দোষেরও নয়। কিন্তু সময়টা বুঝুন। ভুল বুঝলেও কিছু করার নেই। আসলে, আপনাদের দিয়ে আর যাইহোক সমাজের কোনও উপকার আসলে হয় না। মানুন বা না মানুন। অতএব, এখনই বন্ধ করুন এসব "দিখাবা'! অপেক্ষা আর প্রার্থনা করুন ওদের জন্যও; দেখবেন একদিন সুদিন আসবেই! তখন নয় আমরা সবাই মিলে হৈহৈ করবো! আপনার বৈভব, আপনাদের বৈভব দূর থেকে দেখবো! আসলে আপনারা তো চিরকালের রক্তচোষার দল...

আর প্রিয়তম প্রেমিকদের বলছি, প্রেমের জন্য অকারণ আঙুল ব্যথা করবেন না অথবা কাগজের অপচয় করবেন না। ভালোবাসা কোনও শেকল পরা সংলাপ নয়। আসলে, যে-থাকার সে থাকে। আর যার না-থাকার তাকে কারও সাধ্য নেই ধরে রাখার। আকাশ দিতে তাকে না-ই পারুন, কিন্তু আকাশ তো নিজেও দেখতে পারেন...যে-মানুষটি একদিন আপনাকে একদিন জড়িয়ে-জাপটে থাকতে চেয়েছিল; কোনও একদিন হঠাৎ সে আপনার হাতটা ছেড়ে দিলে বুঝবেন আপনার আয়না দেখার সময় এসেছে। বিশ্বাস করুন! তাকে জোর করবেন না। কখনও ভালোবেসেছিল বলে আজীবন ভালোবেসেই যাবে এমন কোনও মানে নেই। এটাই বাস্তব। সন্তানের সাথেও তো মা-বাবার ভাবনার বাঁধন আলগা হয়! কোন পাখি, কোন ফুল চায় বা কোন ফুল কোন পাখি চায় অথবা কোন মনে কী থাকে, কে থাকে আসলে শেষে জায়গাটা কে পায় সেটা শুধু মনই জানে।

হাসির ভিতর ক্ষয় থাকে। হ্যাঁ, থাকে কিন্তু; ভুলে যাবেন না। যে-প্রেমিক পুরুষ আপনাকে ছেড়ে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে শুধু বাড়ির কথা বলে; বুঝবেন ওটা নিছকই একটা অজুহাত। দূরে থাকুন তার থেকে। নিজেকে নীচে নামাবেন না! দীর্ঘ দাম্পত্যে ক্লান্তি আসতে পারে, ইনফ্যাক্ট সব সম্পর্কেই। আপনি দিনের পর দিন শুধু নিজের সুখের জন্য তাকে আটকে রাখছেন, এ কেমন কথা! বড়ো-বড়ো কথা আপনার অনেক শুনেছি। দোহাই, এবার তো অন্তত নিজের মুখোমুখি হোন!

বিশ্বাস করুন আপনি কিছু পোস্ট করলে আপনার ইচ্ছে হয় দায়সারা একটা রিয়াকশন নয়, ছোট্ট একটা মতামত। কি তাই তো? অবশ্যই। নইলে কেনই-বা পোস্ট করেন!? শুধু নিজে দেখবেন বলে? এক্কেবারেই না!তাহলে, অন্যের বেলায় এমন 'সেলেব'-'সেলেব' ভাব কেন বলুন তো! একটু বেরিয়ে আসুন-না প্লিজ! দেখবেন, পৃথিবীটা কত সুন্দর! কত সহজ! কত আনন্দ এই এখানেই!

হ্যাঁ, শুধু আপনাকেই বলছি এমন ভাববার কোনোই কারণ নেই। কথাগুলো নিজেকেও  বলা। এবং ভীষণভাবে বলা...

জানেন তো,আগুন ভেঙে গেলে বসন্ত উধাও হয়... কোথাও কোনও পাখি ডাকে না; ফুল ফোটে না...

Previous Post Next Post