সেদিন বিকেলে পাঁচটা নাগাদ নানা কাজ আর গাদাখানেক টেলিফোন কল নিয়ে বেশ ব্যস্ত ছিলেন অনিকেত মল্লিক, প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সি জিভাগোর হেড। লকডাউনে অনেকদিন অফিস বন্ধ থাকার পর সবে খুলেছে। এতোদিন বন্ধ ছিলো বলে খোলার সঙ্গে সঙ্গে নানা কেসও এসে পড়েছে। করোনা ভাইরাসের দাপটে শহর মৃতপ্রায়, তাও দুনম্বরী কার্যকলাপের শেষ নেই। মানুষের যে কবে শিক্ষা হবে! এই অবস্থায় কাজকর্মের ধরণও পাল্টেছে! বেশীরভাগই ফোন আর ইন্টারনেট দিয়ে সারতে হচ্ছে। হঠাত সিকিউরিটি এসে বললো লালবাজার থেকে মিস্টার পাকড়াশী এসেছেন। মিস্টার পাকড়াশী অনেকদিনের বন্ধু। দাদার মতো সম্পর্ক অনিকেতের সঙ্গে। বেশ কিছু কেসে ওনাকে হেল্প করেছে অনিকেত। এখন উনি গোয়েন্দা পুলিশের ডিজি। কিন্তু বিনা ফোনে ডিজি সাহেব একেবারে দমদমের অফিসে হাজির এই অসময়ে – নিশ্চই কোন ব্যাপার তো হবে। তাড়াতাড়ি হাতের কাজগুলো বন্ধ রেখে দরজার দিকে পা বাড়ালেন অনিকেত।
- “আসুন স্যার! এই অবেলায় অধমকে মনে পড়লো? বসুন, বসুন!” তাড়াতাড়ি মিটিং রুমে মিস্টার পাকড়াশীকে নিয়ে বসালেন অনিকেত। মিস্টার পাকড়াশীর মুখে একখানা এন৯৫ মাস্কের ওপর একখানা শিল্ড! হাতে লম্বা দস্তানা! ঘর্মাক্ত চেহারায় ধপ করে বসে পড়লেন। শিল্ডটা খুলে পাশে রেখে বললেন “আমাদের পুলিশের চাকরী যা হয়েছে এখন! আর পারা যায় না অনিকেত! লোকে লকডাউন মানছে না, তাদের প্যাঁদাতে পুলিশ! লোকে করোনা রুগীকে ধরছে না, তাকে হাসপাতালে পৌঁছোতে পুলিশ, পলিটিক্যাল দাদারা র্যালি বার করবেন, তার ম্যাও সামলাতে পুলিশ! তারপর ক্রাইমের পর ক্রাইম তো আছেই! পুলিশকর্মীরা ভাইরাসে এক্সপোসড হয়ে পটাপট মারা যাচ্ছে – সেদিকে কারো দৃষ্টি নেই!”
- “সে তো বটেই স্যার! আপনারাই তো বাঁচিয়ে রেখেছেন! তা আজ হঠাত কী মনে করে?”
- “এদিকে এসেছিলাম একটা কাজে, ভাবলাম তোমার সঙ্গে একটু গল্প করে যাই – অনেকদিন দেখাসাক্ষাত নেই! তা তোমার কাজকর্ম কেমন চলছে?”
- “এই তো সবে খুললাম স্যার – তার মধ্যেই গাদাখানেক গন্ডগোলের কেস এসে গেছে! এদিকে ছেলেদের মাইনেপত্র দিতে পারিনি কমাস – সব এখন চুকোতে হবে। নইলে আর কেউ গা লাগাবে না।“
খাবারদাবার এসে গেলো। চুপচাপ খেয়ে চলেছেন মিস্টার পাকড়াশী। বসে বসে অনিকেত ভাবছেন আসল উদ্দেশ্যটা কী আসার। চা খেয়ে, মুখ ধুয়ে, হাত স্যানিটাইজ করে গলা খাঁকারি দিলেন মিস্টার পাকড়াশী। অনিকেত বুঝলো এবার উনি কাজের কথায় আসবেন।
- “বুঝলে অনিকেত, একটা কেসের গপ্পো বলি শোন। ভারী দুঃখের ঘটনা। এই প্রথম বুঝলে, দোষী ধরা পড়েছে, কিন্তু তাকে শাস্তি দিতে মন চাইছে না। আবার – সেই যে দোষী, এমনটাও ঠিক বলা যায় না। অথচ যে দোষী তার তো অস্তিত্বই পাওয়া যাচ্ছে না!”
মাথা চুলকে অনিকেত বলে “মাথার ওপর দিয়ে গেলো স্যার! দোষী, কিন্তু দোষী নয় – ধরা পড়েছে, কিন্তু পড়েনি – ইন্টারেস্টিং গপ্পো! একটু খুলে বলুন। এমনিতেও আজ অবেলায় মেঘ ঘনিয়ে এসেছে! বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কাজকর্মে আর মন লাগছে না। দাঁড়ান, সিকিউরিটিকে বলি আমার ঘরটা বন্ধ করে দিতে। তারপর এসে জমিয়ে বসা যাবে। আরেক রাউন্ড চায় আর মুড়ি তেলেভাজার অর্ডার দিয়ে ফিরে এলেন অনিকেত। মিস্টার পাকড়াশী তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে চশমাটা মাথার ওপর তুলে হেলান দিয়ে বসে শুরু করলেন। “
- “মাসখানেক আগে এভারেস্ট পেপার মিল থেকে একটা কমপ্লেন আসে যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সে তাদের কারখানা খোলার পর, তারা কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য একটি স্যানিটাইজার টানেল কেনে এবং সেই টানেলে স্যানিটাইজার সাপ্লাই হয় নিউ নরম্যাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে। টানেল দিয়ে সমস্ত কর্মীকে পাস করিয়ে তবে তাদের অফিসে ঢোকানো হতো প্রতিদিন। দেখা গেলো এর পরেও ঐ অফিসের প্রায় কুড়িজন কর্মী কোভিডে আক্রান্ত হয়ে পড়েন । শুধু তাই না, ঐ টানেল দিয়ে পাস করার পর বেশ কিছু কর্মী অসুস্থও হয়ে পড়েন। পেপার মিলটি আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওরা বেশ কয়েকটি বড়ো অর্ডার পেয়েছিলো দেশ বিদেশ থেকে। সেগুলি সাপ্লাই করতে না পারায় ওদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। নিউ নরম্যালের পার্টনার বিকাশ দাসকে যোগাযোগ করলে তিনি এ ব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন যে তাদের কোম্পানী মার্চ মাস থেকেই স্যানিটাইজার বানিয়ে সাপ্লাই করছে এবং অনেক মানুষ দোকান থেকেও তাদের মাল কিনেছেন। ইন্ডাস্ট্রিতেও সাপ্লাই হয়েছে। প্রথম থেকে কোন কমপ্লেন আসেনি। সোনারপুরের দিকে ওদের কারখানা। এভারেস্ট কন্সিউমার কোর্টে কমপ্লেন করে। তখন ওদের যে মাল এভারেস্টে সাপ্লাই হয়েছিলো, তাঁর স্যাম্পল টেস্টিং-এ পাঠানো হয়। টেস্টিং-এ দেখা যায় যে সেখানে অ্যালকোহল রয়েছে মাত্র দশ থেকে পনেরো ভাগ। বাকী অংশ শুধু জল, তাও কন্ট্যামিনেটেড। তার মধ্যে নানা মেটালের ট্রেস পাওয়া যায়। ওদের সব মাল বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং বিকাশ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়।“
- “এ আর নতুন কী স্যার? এ সব তো এক্সপেক্টেড! করাপশনে তো দেশ ভর্তি! তা এমন লোককে শাস্তি দিতে আর দ্বিধা কী? এরা তো সমাজের শত্রু! এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতেও তাদের বিবেকে লাগে না!”
- “হুম! অতো সোজা হলে তো হয়েই যেতো অনিকেত! ব্যাপার আরো অনেক গভীর। যেহেতু কন্সিউমার কোর্ট থেকে পুলিশের কাছে কেস আসে, তাই সরাসরি লালবাজার গোয়েন্দা দফতর এর দায়িত্ব পায়। বিকাশ দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলো । এই দেখো লোকটির ফটো। নেহাত নিরীহ গোবেচারা চেহারা। প্রশ্ন করতেই একেবারে ভেঙ্গে পড়লো। বললো ও একটা ছোট অফিসে মার্কেটিং এর কাজ করতো। মার্চের শেষ থেকে কোম্পানী বন্ধ। সেই থেকে মাইনেপত্তরও নেই। এদিকে বাড়িতে সবাই ওর মাইনের ওপর নির্ভর। বৃদ্ধ বাবা মা, বৌ রয়েছে। কী করবে ভেবে যখন মাথা খারাপ হচ্ছে তখন ওর সঙ্গে ওর এক এক্স অফিস কোলিগের দেখা হয়। সে মাস ছয়েক কাজ করে কোম্পানী ছেড়ে দিয়েছিলো। সে ওকে বলে যে এখন বাজারে একমাত্র ডিম্যান্ড হচ্ছে মাস্ক, স্যানিটাইজার আর এই ধরণের প্রোডাক্টের। তার সোনারপুরের দিকে খানিকটা খালি জমি আছে। হাতে জমি বিক্রির কিছু টাকাও আছে। দুজনে পার্টনারশিপে এইরকম একটা কোম্পানী খুললে হয়। বিকাশের কাজ হবে মার্কেটিং দেখা আর ব্যবসা আনা আর বাকী ফিনান্স আর প্রোডাকশনের ভার তার হাতে। বিকাশ পার্টনার হিসাবে প্রফিটের ত্রিশ ভাগ পাবে আর সে বাকীটা। বিকাশ রাজী হয়ে যায়, কারণ তার আর কোন উপায় ছিলো না সেই সময়।“
- “তা সেই পার্টনার ভদ্রলোক গেলেন কোথায়? তাকেও তো গ্রেপ্তার করা উচিত!”
- “বলছি, বলছি। শোন। ব্যবসা তো শুরু হলো। আর বেশ ভালোই বিক্রি হতে লাগলো মালপত্র। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে, বাইরে - সব জায়গায়। দোকানে দোকানে মাল দিতো এরা, আর কলকারখানাতেও ভালোই কাটতি ছিলো। ওরা লিখেছিলো যে ওদের প্রোডাক্টে সত্তরভাগ অ্যালকোহল। গত তিনমাস চুটিয়ে ব্যবসা করে ওরা। বিকাশ ওর ভাগের টাকা প্রথম দু মাস পায়। গত মাস থেকে ও কিছু পায়নি। ও ভেবেছিলো কোন কারণে একটু দেরী হচ্ছে। ও বন্ধুর সঙ্গে এই নিয়ে কোন কথা বলেনি। এই কান্ডের পর কনসিউমার কোর্ট যখন এভারেস্টকে কম্পেনসেশন দিতে বলে, তখন বিকাশ অ্যাকাউন্টেন্টের কাছে খোঁজ করে নাকি দেখে যে কোম্পানীর ভাঁড়ে মা ভবানী। সেই পার্টনার ভদ্রলোক নাকি প্রফিটের সব টাকা ছাড়াও যা কিছু টাকা ইনভেস্টেড হয়েছিলো, মায় কোম্পানীর কারখানাটিও বেচে দিয়ে সব টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন। এর পর তো কোম্পানীতে তালা, কর্মীরা সব হাওয়া। বিকাশ নাকি কিছুই জানতো না! তাই তো বললাম অনিকেত, বিকাশ দোষী হিসাবে গ্রেপ্তার হলো ঠিকই কিন্তু ওর শাস্তি হওয়া উচিত কিনা বুঝতে পারছি না। তবে ধরা পড়লে সব বান্দাই বলে আমি কিছু জানি না। তাই একেবারে ভাজা মাছ উলটে খেতে জানে না, এমন ভাবতেও পারছি না।“
- “বলেন কী স্যার! এ তো জালিয়াতি! তা সেই নাটের গুরুর নাম কী? তিনি গেলেন কোথায়!”
- “বিকাশ বললো তার নাম ইমন মুখার্জী। ব্যাঙ্কে, অফিসে সব জায়গায় ঐ নামেই সই সাবুদ করা। ছবি পেলাম ব্যাঙ্ক থেকে। তাতে মুখ পরিষ্কার কামানো, মাথায় পাতলা চুল একটি মাঝবয়সী মাঝারি চেহারার ব্যক্তিকে দেখলাম। চেহারায় কোন বৈশিষ্টই নেই যা দেখে –“
- “না স্যার, ভালো করে খেয়াল করে দেখুন – কিছু অদ্ভুত জিনিস দেখতে পাবেন ছবিতে!” ছবিটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখতে দেখতে হঠাত বলে অনিকেত ।
- “কী অনিকেত? এই জন্যই তো তোমার কাছে আসা হে – তোমার চোখটাই অন্যরকম!”
- “স্যার, লোকটার কপালটা খেয়াল করে দেখুন। ঠিক মাঝখানে একটু ওপরের দিকে একটা কালচে গোল দাগ দেখতে পাচ্ছেন? দাগটা খানিকটা হালকা হয়ে গেছে, কিন্তু তবুও বড়ো করে দেখলে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে!”
- “ও হ্যাঁ! তাই তো! কিন্তু সে তো কতো লোকের শরীরে কতো দাগ থাকতে পারে – তার সঙ্গে –“
- “স্যার এটা সাধারণ দাগ না স্যার। এমন দাগ মুসলিমদের কপালে হয়ে যায় – যারা রেগুলার নামাজ পড়ে আর মাটিতে মাথা ঠোকে!”
- “বলো কী! তা ইনি তো হিন্দু বামুন হে! তবে কি – তবে কি নাম ভাঁড়ানো! কিন্তু কেন?”
- “শুধু তাই নয়! আরো লক্ষ্য করে দেখুন। নাকের দুদিকে পরিষ্কার চশমার দাগ। অর্থাৎ ইনি রেগুলার চশমা পরেন। কিন্তু ফটোতে পরেননি। কারণ তিনি আগের চেহারা পরিবর্তন করতে চেয়েছেন যথাসাধ্য! কিন্তু যিনি এমন রেগুলার চশমা পরতেন, তিনি বেশীদিন তা না পরে থাকতে পারবেন না। চশমা তাকে পরতেই হবে। আচ্ছা স্যার, ইনি ব্যাঙ্কে কী কী আই ডি দিয়েছিলেন, কী ঠিকানা দিয়েছেন - দেখেছেন?”
- “তা আর দেখিনি? অ্যাই দ্যাখো। ইনি এই গাড়ির লাইসেন্স আর এই প্যান কার্ড দিয়েছেন। বলেছিলেন আধার কার্ডে নাকি কারেন্ট অ্যাড্রেস নেই। কারণ উনি কিছুদিন আগেই বাড়ি চেঞ্জ করেছেন। লাইসেন্সটি নতুন।“
- “তা ব্যাঙ্ক মেনে নিলো! আশ্চর্য! আধার কার্ড ছাড়া তো –“
- “প্রাইভেট ব্যাঙ্কে সবই টাকার খেলা অনিকেত – এতো বড়ো একটা বিসনেস অ্যাকাউন্ট পাবার জন্য তারা মুখিয়ে রয়েছে।“
- “তাহলেই দেখুন স্যার, ড্রাইভিং লাইসেন্স বার করার চেয়ে সোজা আর কিছু হয়না। আর প্যান কার্ড তো এখন এজেন্ট দুদিনে বার করে দেয়! তাই দিয়ে উনি ব্যাঙ্কে খাতা খুলে ফেললেন, কিন্তু তার আসল নাম, পরিচয় কেউ জানলোই না! আর মোবাইল স্যার? মোবাইল নম্বর থেকে তো এখন -”
- “সে গুড়েও বালি অনিকেত। যে নম্বরের কথা বিকাশ বলছে তা পারমানেন্টলি সুইচড অফ। আমার মনে হয় সিম ফেলে দিয়েছে!”
- “প্রোভাইডারের কাছ থেকে আই এম ই আই নম্বরটা নিয়ে নিন স্যার হ্যান্ডসেটের। ঐ ফোনে অন্য কোন সিম ঢুকিয়ে অন করলেও ধরে ফেলা যাবে স্যার!”
- “সেটা নেওয়া আছে অনিকেত। কিন্তু ওই ফোন কেউ অন ও করছে না। এ তো খুব পাকা খেলোয়াড়! শোন অনিকেত, বিকাশকে কথায় কথায় নাকি ইমন একদিন বলে ফেলেছিলো ওর আসল বাড়ি মুর্শিদাবাদে! যদি সত্যি কথা বলে থাকে তবে মুর্শিদাবাদেই ওর লুকিয়ে থাকার চান্স প্রচুর। এ ব্যাপারে তোমাকে একটু সাহায্য করতে হবে।“
- “এমনিতে তো খুব ডিফিকাল্ট স্যার। তবে – লোকটি মুসলিম – তাই মাদ্রাসা আর মসজিদ দরগাগুলোতে নজর রাখলে হয়তো – বেশ কিছু খরচ আছে স্যার।“
- “ও নিয়ে কোন চিন্তা কোরো না। তবে খুব সাবধানে কাজটা করতে হবে। এই লোকটির কী উদ্দেশ্য, শুধু কি এই জালিয়াতি না আরো কিছু বোঝা যাচ্ছে না।“
- “আমি আমার টিমের দুজনকে পাঠাচ্ছি স্যার। ওরা নজর রাখবে।“
এরপর মাস তিনেক কেটে গেলো। আকাশ আর টিনা রেগুলার রিপোর্ট পাঠায় মুর্শিদাবাদ থেকে। ওরা বিভিন্ন মাদ্রাসা আর দরগাগুলোর বাইরে ঘুরে ঘুরে নজর রাখে দিনের বিভিন্ন সময়। যাওয়ার আগে ইমনের ছবিতে দাঁড়ি গোঁফ চশমা লাগালে কেমন হবে – একটা ছবি বানিয়ে দিয়েছেন অনিকেত।
দিন পনেরো আগে হঠাত মিস্টার পাকড়াশীর ফোন! ফোনে খুব উত্তেজিত গলায় বললেন “অনিকেত! ঐ হ্যান্ডসেটটা অন হয়েছিলো! লালগোলার কাছাকাছি কোথাও! অঞ্চলটা বোঝা যাচ্ছে! তোমার টিমকে পাঠাও তো! তারপর আমি ওখানকার পুলিশের সঙ্গে কথা বলছি!” টিম ওখানে গিয়ে দেখে কাছাকাছি কোন মাদ্রাসা বা দরগা ইত্যাদি নেই! হঠাত কী মনে হতে আকাশ লোক্যাল মোবাইলের দোকানগুলোতে খোঁজ করতে থাকে ঐ আই এম ই আই নম্বরের মোবাইল কেউ বিক্রি করেছে কিনা। তারপর দেখা যায় রাস্তার ধারের একটা মোবাইল দোকানে সেটটা একটি লোক বিক্রি করে দিয়েছে কদিন আগে। দোকানী খেয়ালই করতে পারছে না, যে বিক্রি করতে এসেছিলো তার চেহারা কেমন ছিলো! ব্যাস মোবাইলের সূত্র ওখানেই হাওয়া।
অবশেষে হপ্তা খানেক আগে, হঠাত সকালে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছিলো অনিকেত। মুর্শিদাবাদের লালগোলা থেকে জনাতিনেক আল কায়দা জঙ্গীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে প্রচুর টাকার অস্ত্রশস্ত্র ধরা পড়েছে। সেগুলি বাংলাদেশ থেকে আমদানী করেছে কোনভাবে। ওদের নাকি কোন আতঙ্কবাদী হামলা করার ছিলো আর কয়েকদিনের মধ্যেই। ওদের আরো কিছু সঙ্গী সাথী ধরা পড়লো মুম্বাই, আর দিল্লী থেকে। রিপোর্ট পড়তে পড়তে হঠাত একজন জঙ্গীর ছবিতে চোখ আটকে গেলো অনিকেতের। ইমনের ছবিতে দাঁড়ি গোঁফ চশমা যোগ করে যে ছবিটা এঁকেছে অনিকেত, তার সঙ্গে আশ্চর্য মিল! নাঃ মিস্টার পাকড়াশীকে ফোন করতেই হচ্ছে! তাড়াতাড়ি ফোন লাগায় অনিকেত। মিস্টার পাকড়াশী সঙ্গে সঙ্গে একটি টিম পাঠালেন লোকটিকে কলকাতায় আনার জন্য। বহু ইন্টারোগেশন, মারধোরের পর জানা গেলো ইমনের আসল নাম সৈয়দ ইমানুল্লা। টেরর নেটওয়ার্কে অনেক পয়সার দরকার হয়। তাই পয়সার জোগাড় করতে দল তাদের নানা জায়গায় পাঠায় । সেখানে নাম ভাঁড়িয়ে নানা ধরণের চুরি ডাকাতি জালিয়াতি করে টেরর ফান্ডে জমা করে তারা। সেই সূত্রেই কলকাতায় এসে নিউ নরম্যাল খুলেছিলো সে। বিকাশ দাস এ সবের কিছুই জানতো না। জালি স্যানিটাইজার সাপ্লাইয়ের মামলাও যোগ হলো ইমানুল্লার নামে। আর ছাড়া পেলো বিকাশ দাস।
মিস্টার পাকড়াশী স্পেশাল প্রাইজের ব্যবস্থা করলেন অনিকেত মল্লিকের জন্য, কারণ সেই প্রথম নজর করেছিলো যে ইমন আসলে মুসলিম এবং চশমা পরে। টেররিস্টদের দলেও লোকটিকে আইডেনটিফাই করেছিলো সে।
সুচিন্তিত মতামত দিন