বাবলু কাজি

মহত্ব

হাসপাতালে​ নাইট ডিউটি​ সেরে​ ডাঃ বোস হাসপাতালের গেটে এসে দেখেন​ একটাও টোটো নেই।​ গতরাতে দেওয়ালি ছিলো,নিশ্চয় সব​ রাত জেগে ভাগ্যপরীক্ষা ও খানা পিনা করে আজ বিশ্রাম নিচ্ছে। হঠাৎ দেখেন একমুখ দাড়িওয়ালা এক​ টোটো চালক দুজন যাত্রী সহ গেটের মুখে গাড়ি থামালো।

ডাঃ বোস নিজের গন্তব্যের উল্লেখ করে টোটোয় উঠতে যাবেন, টোটোওয়ালা সবিনয়ে বলল " ডাঃ সাহেব,আজ প্যাসেঞ্জার তেমন নেই,তাই দশ টাকার জায়গায় কুড়ি টাকা দিয়্যান, অনেকটা পথ যেতে হবে আপনাকে পৌঁছাতে।"

ডাঃ বোস " বেশ তাই পাবে" বলে আসনে বসলেন।

ভাঁড়শালা মোড়ের আগে কবরস্থানের কাছে কিসের ভিড় যেন,টোটোওয়ালা গাড়ি থামালো। " আরে এ তো মহিউদ্দিন,মাড়গ্রামে আমারই পাড়ারই লোক।"টোটো চালককের কথা শুনে তাকে দেখে যেন আহত লোকটির ধড়ে প্রাণ এলো। জানা গেল​ আহত মহিউদ্দিনকে দ্রুতগামী বাইকের কোনো ছোকরা ধাক্কা মেরে তুরন্ত পালিয়ে​ গেছে।​ ডাঃ বোস নেমে দেখেন হাঁটুর কাছে চরম আঘাত,হাড় ভেঙে গেছে বলে মনে হচ্ছে।এতক্ষণ লোকটার ক্ষতস্থানেই নজর ছিলো তাঁর।মুখের দিকে তাকিয়ে​ চমকে উঠলেন।লোকটিও ডাঃ বাবুর মুখের দিকে​ তাকিয়ে যেন বিদ্যুতের শক খেলো। ভিড়ের লোকগুলো একে একে কেটে পড়েছে এখন শুধু তিনজন। ডাঃ বোস টোটোওয়ালাকে বললেন​ শোনো আগে একে ইমারজেন্সি​ বিভাগে নিয়ে গিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করি।তারপর তুমি আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিও।তোমাকে আমি আরো কিছু টাকা বাড়তি দেবো।

দুজনে ধরাধরি করে লোকটিকে টোটোয় উঠাতেই​ সে বহু কষ্টে সিটে কাত হয়ে বসে​ ডুকরে কেঁদে উঠলো। টোটোওয়ালা ওকে সান্ত্বনা​ দিতে বলল" এত চিন্তা কিসের​ মহি,তুমি জলদি সেরে উঠবে।"

এবার মহিউদ্দিন​ কাঁন্না থামিয়ে বলল " আমি নিজের জন্যি কাঁদিনি​ ইশাক ভাই, মুনের খ্যাদে কান্দছি। এই ডাঃ বাবুকে আমি হাসপাতালে​ একদিন খামোকা অপমান করে বড় গুনাহ করেছি।"

ডাঃ বোস বললেন " বাদ দাও ওসব কথা,এই যে তোমার চোখের জল এলো এতেই​ সব গুনাহ ধুয়ে গেল।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.