শনির বচন

করোনা মোকাবিলায় তৃতীয় স্থানে ভারত
আসুন জয় শ্রীরাম বলে হাততালি দিন পাঁচ মিনিট ধরে। থালা বাজান। নয় মিনিট ধরে আলো নিভিয়ে প্রদীপ জ্বালান। না, পটকা ফাটানোর কথা বলা হয় নি রাত আটটার নির্দেশে। তবে ভক্তিতে পরিপূর্ণ হলে তাও ফাটাতে পারেন। অসুবিধা নাই। কিন্তু এই পথেই করোনার সাথে মোকাবিলা করতে হবে এক দেশ এক প্রাণ হয়ে। সেটাই আসল কথা। দেশ জুড়ে আমরা সকলে মিলে ‘মিলেমিশে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ’ বলে, তাঁর কথায় এইসবই করেছিলাম। আবারও যেদিন করতে বলা হবে আমাদের। নিশ্চয় করবো। অবশ্যই করবো। আমরা সকলেই দেশপ্রেমী। হিন্দী হিন্দু হিন্দুস্তান হ্যায় হামারা। ভারত মাতা কি জয়। আমরা তো জানি। বিশ্ব জুড়ে করোনা মোকাবিলায়, আমাদের সরকারের সাফল্যের কথা। আমাদের সামনে শুধুমাত্র দুটি দেশ আর অবশিষ্ট আছে। অনেক নীচ থেকেই আমাদের সরকার করোনা মোকাবিলায় আমাদেরকে টেনে উপরে তুলে নিয়ে এসেছে। একেবারে তৃতীয় স্থানে। বিশ্বাস হচ্ছে না তো?। হবে কি করে বলুন। বিরোধী পক্ষের দৃষ্টি দিয়ে দেখলে হবে? তারা তো সবসময় অর্ধেক খালি গ্লাসই দেখাবে। নিজের চোখে তাকিয়ে দেখতে হবে মশাই। তাহলেই দেখতে পাবেন। বুঝতে পারবেন বিরোধীরা কিভাবে টুপি পড়ায় আমাদের। 

এই যেমন। বিশ্বজুড়ে ওয়ার্ল্ড মিটারে করোনা আপডেটের তালিকায় ভারত এখন তৃতীয় স্থানে রয়েছে বলেই বিরোধীরা আমাদেরকে কেমন ভুল বোঝাচ্ছে দেখুন একবার। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ভারতবর্ষ করোনা পজিটিভ রুগীর সংখ্যায় বিশ্বে তৃতীয়। আমেরিকা ও ব্রাজিলের পরেই ভারত ৩৮ লক্ষ ৫৩ হাজার ৪০৬ টি পজিটিভ কেস নিয়ে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। এবং আমাদের সরকার অত্যন্ত তৎপরতার সাথে আর খুব অল্প কয় দিনের ভিতরেই আমাদেরকে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছিয়ে দিতে সক্ষম হবে। বর্তমানে ভারতবর্ষই বিশ্বে একমাত্র দেশ, যে দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় আশি হাজার মতো নতুন পজিটিভ রুগী ধরা পড়ছে। একশো তেত্রিশ কোটি মানুষের দেশে গড়ে প্রতিদন আশি হাজারের মতো পজিটিভ কেস ডিটেক্ট করা কি সোজা কথা? হ্যাঁ মানতেই হবে এই বিষয়ে পরিসংখ্যানের হিসাবে মোট পজিটিভ রুগী ডিটেক্ট করার সংখ্যায় আমেরিকা ও ব্রাজিল আমাদের থেকে এগিয়ে রয়েছে। এটাও মানতে হবে। এই দুই দেশের পরিকাঠামো অনেক বেশি উন্নত। কিন্তু আমরা আমাদের এত দুর্বল পরিকাঠামো নিয়েই ব্রাজিলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছি এখন। 

আমাদেরকে তো এটা বুঝতে হবে। করো‌নার সাথে মোকাবিলা করতে গেলে, আগে করোনার পজিটিভ কেসগুলি খুঁজে বার করতে হবে। প্রায় চিরুনী তল্লাশি করে সেই কাজ কতটা দক্ষতার সাথে করতে পারলে, প্রতিদিন গড়ে আশি হাজারের মতোন নতুন নতুন কেস খুঁজে বার করা সম্ভব ভাবুন একবার। অথচ চারপাশে তাকিয়ে দেখুন। সরকারের এহেন সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকার বিরোধী দেশদ্রোহীরা কেমন মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের বক্তব্য বাস্তবের একেবারে উল্টো!। দেশ জুড়ে ৩৮ লক্ষ ৫৩ হাজার ৪০৬ জনের ভিতরে করোনার উপস্থিতি তো এই সরকারই খুঁজে বার করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা কি বলেছিলেন? বলেছিলেন যত বেশি সংখ্যক টেস্ট করা যাবে। তত বেশি করে সাফল্যের সাথে করোনাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এবং এখানেও দেখুন। আমাদের সরকার বাহাদুরের বাহাদুরি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে শিরোধার্য্য করেই সরকার ঠিক সেই কাজটাই সাফল্যের সাথে রূপায়িত করে চলেছে। যে কাজে সাফল্যের নিরিখে আমাদের আগে রয়েছে মাত্র দুটি দেশ। আগেই বলেছি। আমেরিকা আর ব্রাজিল। যারা আমাদের থেকেও বেশি টেস্ট করে পজিটিভ রুগীর সন্ধান করতে পেরেছে। কিন্তু ওয়র্ল্ডমিটারের পরিসংখ্যানই বলছে গড়ে প্রতিদিনের টেস্ট রেজাল্টে পজিটিভ রুগীর সংখ্যা খুঁজে বার করতে পারার নিরিখে, আমরা সকল দেশকেই পিছনে ফেলে দিতে পেরেছি। আর কোন দেশই গড়ে প্রতিদিন আশি হাজারের মতোন করোনা রুগী খুঁজে বের করতে পারে না। আমাদের মতোন। এবং ভগবান করুন এই হার বজায় রাখতে পারলে, আর মাত্র মাস দেড়েকের ভিতরেই আমরাই জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবো। পজিটিভ কেসের নিরিখে ভারতই হবে প্রথম স্থানাধিকারী। বাকি আর সব দেশই থাকবে ভারতের পিছনে। সেই বিখ্যাত ডায়ালগের বাস্তব প্রয়োগ। আমার যেখানে দাঁড়াই। লাইন সেখান থেকেই শুরু হয়। সিনেমার ডায়ালগকে আমাদের সরকার বাস্তবে করে দেখাতে চলেছে। ভারত মাতা কি জয়। 

ফলে যারা আমাদের থালা বাজানো, আলো নেভানো প্রদীপ জ্বালানো হাততালি দেওয়া আর পুষ্পবৃষ্টি দেখা নিয়ে উপহাস করে থাকেন, তারা মূর্খের স্বর্গেই বাস করেন। না হলে বুঝতে পারতেন। কতটা বৈজ্ঞানিক ভাবে নিরপেক্ষ প্রশাসনিক দক্ষতায় এত দ্রুত হারে করোনা পজিটিভ খুঁজে বার করা সম্ভব। এবং এই বিষয়ে সরকারের নিরপেক্ষতা সব রকম বিতর্কের উর্দ্ধে। কেউ বলতে পারবেন না, সরকার শুধু নিজ দলের কর্মী সমর্থকদের ভিতর থেকেই করোনা পজিটিভ রুগী খুঁজে বের করছেন। সকলেই জানেন এই বিষয়ে আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকার জাতপাত ধর্ম সম্প্রদায় বর্ণ, ধনী দরিদ্র্য, রাজনৈতিক দল মত নির্বিশেষে, সকলের ভিতর থেকেই পজিটিভ রুগী খুঁজে বার করছেন। প্রতিদিন। কি একনিষ্ঠ পরিশ্রমে। কোন রকম পক্ষপাত নাই। সকলেই ভারতমাতার সন্তান। তাই সন্তান স্নেহে, বাড়িতে মা যেমন সন্তানের কপালে হাত দিয়ে দেখে নেন। সন্তানের জ্বরজারি হয়েছে কিনা? ঠিক তেমনই আমাদের বর্তমান সরকারও পরম মমতায় দেশবাসীর কপালে হাত দিয়ে রেখেছেন। রেখেছেন বলেই না এমন দ্রুত হারে প্রতিদিন আশি হাজারের বেশি মানুষের ভিতর করোনা ধরা পড়ছে। অন্য কোন সরকার হলে এই সাফল্য আশাই করা যেত না। 

জানি জানি, অনেকেই ঐ ৬৭ হাজার ৪৮৬টি মৃতদেহের সংখ্যা হিসাব করছেন তো? তা করুন ক্ষতি কি? শুধু মনে রাখার চেষ্টা করুন, একশ তেত্রিশ কোটির জনসংখ্যার দেশে মাত্র ৬৭ হাজার! তাও আবার বেশির ভাগই বয়স্ক মানুষ। আজ না হয় কাল যাঁদের মৃত্যু হওয়ারই কথা। ভাবুন ভাবুন। সরকারের সমালোচনা করা খুবই সহজ। কিন্তু ৬৭ হাজার ৪৮৬ জনের হিসাব করার সাথে এই সরকার ক্ষমতায় থাকায় কত কোটি কোটি মানুষ যে এখানো বেঁচে রয়েছেন সেটাও তো ভাবতে হবে। এই সরকার না থাকলে ঘরে ঘরে এত জীবন্ত মানুষ দেখতে পেতেন আজ? তাই সরকারের সমালোচনা করতে হলে করুন। কিন্তু সরকারের এহেন সাফল্যকে স্বীকার করে নিয়েই করুন। ওয়ার্ল্ড মিটারে যেদিন ভারতের স্থান সকল দেশের উপরে হবে। সেদিন প্রমাণ হবে সব কা সাথ সব কা বিকাশ, কোন কথার কথা নয়। গোটা দেশকে একসূত্রে বেঁধে না ফেলতে পারলে কখনোই প্রথম স্থান দখল করা সম্ভব নয়। এমনকি আজ যে আমরা এই তৃতীয় স্থানে। সেও ঐ সব কা সাথ সব কা বিকাশেরই বাস্তব প্রতিফলন। জাতি ধর্ম বর্ণ নিরপেক্ষ। জাতপাতের উর্দ্ধে। রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে সকলের মধ্যে থেকেই আমাদের সরকার পজিটিভ রুগী খুঁজে বার করার শপথ নিয়েছেন। এই যে পজিটিভ এটিচ্যুড, এই যে পক্ষপাতহীন সরকারী প্রকল্প। তার প্রশংসা না করতে পারুন, অযথা সমালোচনা করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা কি ঠিক। ভেবে দেখুন না একবার। নিজেরাই। 

তাই বলছিলাম। দেশজুড়ে হাততালি দিয়ে থালা বাজিয়ে আলো নিভিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে একদেশ এক প্রাণ না করতে পারলে। গোটা দেশকে একসূত্রে না বাঁধতে পারলে এমন সাফল্য অর্জন সম্ভব হতো কি কখনো? তাই তাঁর প্রজ্ঞা ও সাধনাকে বাঁকা চোখে না দেখে সোজা চোখে বরণ করে নেওয়াই আজ দেশপ্রেম। 


৩রা সেপটেম্বর’ ২০২০



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.