ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়

খাওয়া না খাওয়ার গল্প


‘খাইখাই কর কেন এসো বস আহারেখা
ওয়াব আজব খাওয়া ভোজ কয় যাহারে’

মানুষের খাওয়ার কথার কোন শেষ নেই, না-খাওয়ার কথাও । আমাদের সব কথা যেন শেষ হয় খাওয়ার কিংবা নাখাওয়ার কথায় । সেই আদিম মানুষের যাযাবর জীবনের কন্দমূল, শেকড়-বাকড় আর পশু-মাংস খাওয়া দিয়ে শুরু । প্রবীণ কিংবা নবীন - আমাদের সব কথার, সব গল্পের শেষ যেন খাওয়া দিয়ে । প্রবীণদের গল্প হয়তো শেষ হয় চৌরঙ্গীর অনাদির মোগলাই পরটা, ডেকার্স লেনের চিত্তদার দোকানে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে চিকেন স্ট্রূ কিংবা সাব্বিরের রেজালা আর নবীনদের আর্সেনালের বিরিয়ানি ইত্যাদি । এখন তো জিভে জল আনা খাওয়া-খাদ্য, ছবিতে ফেসবুক ভরে যায়, ভিড় জমাই প্রতি বছরের খাদ্য উৎসব, ইলিশ উৎসবে । কোন খাওয়াকেই আর আজব বলে মনে হয় না ।

মানুষের খাওয়ার জন্য বাঁচা না বাঁচার জন্য খাওয়া তা নিয়ে মিমাংশাহীন তর্ক চলতে পারে, কিন্তু মানুষ আদিকাল থেকেই তার বিশ্বাসের দেবতার কাছে খাদ্য আর খাওয়া -পরার সুখের জন্য প্রার্থনা জানিয়ে এসেছে, বৈদিক মন্ত্রে সেই প্রার্থনার উল্লেখ আছে । সেই যাযাবর জীবন থেকে গোষ্ঠী , পরিবার ও সমাজ গঠনের প্রক্রিয়ার মূলে ছিল খাদ্য । আর কে না জানি যে বিশ্বের তাবৎ যুদ্ধ সে ট্রয়ের যুদ্ধ কিংবা কুরু-পান্ডব বা রাম-রাবনের যুদ্ধ হোক তার কার্যকারণ ছিল খাদ্য এবং নারী। নারীও তো পুরুষের কাছে উপাদেয় খাদ্যই !

খাওয়ার এমন বৈচিত্র্যই বা আর কিসে ? চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয় এই চার রকমের খাদ্যের বাইরে সুকুমার রায় তাঁর ছড়ায় একটা লিষ্টি দিয়েছেন সেগুলি খাদ্য বা অখাদ্য নয় কিন্তু আমরা খাই। তেমনই একটা খাওয়ার তালিকা সুকুমার রায়ের ছড়ায় পাওয়া যাবে – জেঠা ছেলের বিড়ি খাওয়া, মহাজনের সুদ, দারোগার ঘুস, বাবুদের হাওয়া খাওয়া, গুলিখোরের গুলি, যুদ্ধেতে গুলি, ঘুরপাক আর খাবি খাওয়া, ভ্যাবাচাকা, থতমত, ভিরমি, বকুনি, ধমক, কিল, চড়, লাথি, ঠেলা, ধাক্কা, কানমলা, ডিগবাজি – সবই আছে সেই তালিকায় আর অভিজ্ঞদের সাত ঘাটের জল খাওয়া তো আছেই । ইদানিং আবার তার সঙ্গে দুটি নতুন সংযোজন হয়েছে পালটি আর কাটমানি খাওয়া । এগুলো না খেলেও বাঁচা যায়, বরং আরো ভালো করে বাঁচা যায়, তবু খাই । সেকথা থাক । বরং বাঁচার জন্য খাওয়ার কথা বলা যাক ।

দেবতারা অমর, তাদের বাঁচার জন্য খেতে হয় না, খাওয়ার জন্যেও বেঁচে থাকতে হয় না । তবু তারাও খান । শিবায়ন কাব্যে দেবাদিদেব মহাদেবের খাওয়ার বৃত্তান্ত আছে । পুরীর জগন্নাথদেবের রন্ধনশালায় ছাপ্পান্ন রকমের ভোগ রান্না হয় । দক্ষিণশ্বরের ভবতারিনী, কালীঘাটের কালি মা ও তারাপীঠের তারা মা কে অন্ন ভোগের সঙ্গে মাংস ও মাছের ভোগও নিবেদন করা হয় । দেবে নাই বা কেন ? এরা তো বাঙালির আরাধ্যা দেবী । আর ‘মাছেভাতে বাঙালি’, ‘মৎস মারিব খাইব সুখে’ প্রবাদদুটি তো এমনি এমনি তৈরি হয়নি !

আমাদের বেদ পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারতে হরেক কিসিমের খাওয়ার বৃত্তান্ত আছে । রামায়ণে রামের সঙ্গে যুদ্ধযাত্রার জন্য কূম্ভকর্ণের কাঁচাঘুম ভাঙানোর পর তাকে দিতে হয়েছিল –

“শয্যা হইতে উঠি বীর চক্ষে দিল পানি
ভক্ষণের দ্রব্য দিল থরে থরে আনি।।
মদ্যপান করিলেক সাতাশ কলসী ।
পর্বতপ্রমাণ মাংস খায় রাশি রাশি ।।
হরিণ মহিষ বরা সাপটিয়া ধরে ।
বারো তের শত পশু খায় একবারে”।। (কৃত্তিবাসী রামায়ণ)

মহাভারতের ভীমও খুব ভোজনপ্রিয় ছিল একথা আমরা সবাই জানি।

বাঙালির কাব্য-সাহিত্য-সঙ্গীতে কত যে খাওয়ার কথা তার ইয়ত্তা নেই । কবিকঙ্কণের চন্ডীমঙ্গল থেকে এযুগের মান্না দে’র গান ‘আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না পর্যন্ত’ ছড়িয়ে আছে বাঙালির খাওয়ার হরেক কিসিমের বৃত্তান্ত । কবিকঙ্কণ মুকুন্দরামের চন্ডীমঙ্গল কাব্যে ধনপতি সওদাগরের খাওয়ার বৃত্তান্ত আছে এই রকম :

“প্রথমে শুকতা আনি দিলা ঘন্টাশাক ।
প্রশংসা করয়ে সাধু ব্যঞ্জনের পাক ।।
ঘৃতে ভাজা খন্ডমিশ দিলা ফুলবড়ি ।
পাঙ্খা ধরি করয়ে বাতাস দুয়া চেড়ি ।।
ভাজা মিন ঝোল ঘন্ট মাংসের ব্যঞ্জন ।
গন্ধে আমোদিত কৈল ভোজনভবন” ।।

ষোড়শ শতকের এই খাদ্যতালিকা পাঁচশো বছর পরেও মধ্যবিত্ত বাঙালির মোটেই অপরিচিত নয় । প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির বেসিক আহার্য হল গব্য ঘৃত সহযোগে ভাত ও বিভিন্ন শাক ও শবজির ব্যঞ্জন । কালক্রমে মুঘল ও ইউরোপীয়দের আগমনে কিছু আহার্য বস্তুর সংযোজন ঘটেছে ও খাদ্যরুচির কিছু পরিবর্তন ঘটেছে । যেমন আলু পর্তুগীজদের অবদান । ডক্টর নীহাররঞ্জন রায় ‘বাঙালির ইতিহাস’ গ্রন্থে চতুর্দশ দশকে বাঙালির আহার্যবস্তু সম্পর্কে জানিয়েছেন “ভাত সাধারণত শাক ও অন্যান্য ব্যঞ্জন সহযোগে । দরিদ্র ও গ্রাম্য লোকেদের প্রধান উপাদানই ছিল বোধ হয় শাক ও অন্যান্য শব্জি তরকারী । ডাল খাওয়ার কোন উল্লেখই কিন্তু কোথাও দেখিতেছি না । উৎপন্ন দ্রব্যাদির সুদীর্ঘ তালিকায়ও ডালের বা কোন কলাইর উল্লেখ কোথাও যেন নাই” ।

আবার অষ্টাদশ শতকের কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলে কোন স্থানে ভিক্ষা না পাওয়া শিবকে অন্নপূর্ণা কর্তৃক অন্নদান ও তার খাওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন:

“পায়স পয়োধি সপসপিয়া।
চুকুচুকুচুকু ছোষ্য চুষিয়া ।।
কচরমচর চর্ব্ব্য চিবিয়া ।
লিহলিহ জিহে লেহ্য লেহিয়া ।।
চুমুকে চকচক পেয় পিয়া ।
নাচেন শঙ্কর ভাবে ঢলিয়া” ।।

আমরা দেবী অন্নপূর্নাকে খাদ্যের দেবী বলে মানি, পূজা করি । রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র সেই অন্নপূর্নার হেঁশেলের বর্ণনা দিয়েছেন তাঁর অন্নদামঙ্গল কাব্যে । জিভে জল আনার মত সেইসব খাদ্য । সামান্য কিছু উদ্ধার করা যাক–

“হাস্যমুখী পদ্মমুখী আরম্ভিলা পাক ।
শড়শড়ি ঘন্টা ভাজা নানামত শাক ।।
দালি রান্ধে ঘনতরছোলা অড়হরে ।
মুগ মাস বরবটি বাটুলা মটরে ।।
বড়া বড়ী কলা মূলা নারিকেল ভাজা ।
দুধথোড় ডালনা শুক্তানি ঘন্ট তাজা ।।
কাঁটালের বীজ রান্ধে চিনিরসে বুড়া ।
তিল পিটালিতে লাউ বার্তাকু কুমড়া ।।
নিরামিষ তেইশ রান্ধিলা অনায়াসে ।
আরম্ভিলা বিবিধ রন্ধন মৎস্যমাসে” ।।

দেবী অন্নপূর্ণার হেঁশেলের আমিষ মেনুর বর্ণনা এই রকম:

কাতলা ভেকুট কইঝাল ভাজা কোল ।
সীকপোড়া ঝুরি কাঁটালের বীজে ঝোল ।।
ঝাল ঝোল ভাজ রান্ধে চিতল ফলই ।
কই মাগুরের ঝোল ভিন্ন ভাজে কই” ।।

আরো কত আমিষ পদের বর্ণনা - চিংড়ির ঝাল, রুই-কাতলার মাথা, তিতা দিয়ে পচা মাছ রান্না, আম দিয়ে শোল মাছের চচ্চড়ি, আদা, বড়ি দিয়ে য়াড়মাছ রান্না, মাছের ডিমের বড়া, খয়রা মাছ ভাজা, কচ্ছপের ডিমের বড়া, কচি ছাগ-মাংসের ঝোল, শিক কাবাব ইত্যাদি । আর নানাপ্রকার পিঠা পুলি, পায়স ও মিঠাই । জিভে জল আনার মত মেনুই বটে ! রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র আঠেরো শতকের কবি, অন্নদামঙ্গলের রচনাকাল১৭৫২। তখন মুঘল বাদশা জাহাঙ্গীরের আর বাংলায় আলিবর্দি খানের শাসনকাল । তাই বাঙালির হেঁশেলে শিককাবাব ইত্যাদি মুঘলাই রান্নাও ঢুকে পড়েছে তা বোঝা গেল অন্নপূর্নার হেঁসেলের বর্ণনা থেকে । কিন্তু বাঙালির প্রিয় মিষ্টান্নের উল্লেখ তেমন নেই । তি্লকুট, পায়েস, পিঠাপুলি এগুলিই ছিল সেই সময়কার মিষ্টান্ন । রসগোল্লা, পান্তুয়া এসেছে অনেক পরে, ইংরাজ শাসনকালে ।

এখন বাঙালির বিয়েবাড়ির ভোজের মেনু থেকে কুমড়োর ছক্কা নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে সত্তর আশি বছর হল। সেকালে বাঙালির যজ্ঞিবাড়িতে কুমড়োর ছক্কাই ছিল আঙ্গুলচাটা প্রধান নিরামিষ আইটেম । ইংরাজ আমলে – উনিশ শতকের বাঙালির হেঁশেলের বর্ণনা পাওয়া যায় বিবেকানন্দের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মহেন্দ্রলাল দত্তর ‘কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা’ গ্রন্থে । লিখছেন “আমরা যখন পাঁচ-ছ বৎসরের তখন এইরূপ প্রচলিত ছিল, যথা বড় বড় লুচি, বিলাতি কুমড়া, পটল, মটর ভিজা দিয়া ছক্কা হইত । তাহাতে নুন দেও্যা হইত না । নুন যার যার পাতে দেওয়া হইত । লুচি আর ছক্কা এই ছিল তখন প্রধান আহার, মিষ্টান্ন অনেক প্রকার হইত, যথা খাজা, গজা, কচুরিন নিমকি, পান্তুয়া, মতিচুর, কাঁচাগোল্লা” ।...... আলুর তখন প্রচলন হয় নাই এইজন্য আলুর তরকারী হইত না । আলু তখন বোম্বাই হইতে আসিত । ... ফুলকপি, বাঁধাকপি তখন দুষ্প্রাপ্য, ক্রিয়াকর্মে ব্যবহৃত হইত না” । যজ্ঞিবাড়ির রান্নাবান্না প্রসঙ্গে মহেন্দ্রলাল লিখেছেন সন্দেশ পানতুয়া মোটামুটি ছিল কিন্তু রসগোল্লা ও বহুবিধ সন্দেশ ঢের পরে হইয়াছে। ক্ষীরের খাবার প্রচলিত ছিল না এবং লোকেও পছন্দ করিত না । তিলকুট তখন প্রচলিত ছিল এবং চন্দ্রপুলির বহুল পরিমাণে প্রচলন ছিল” ।

খাওয়ার গল্প যখন হচ্ছে তখন না-খাওয়ার কথাও বলতে হবে । যুগে যুগে সর্বকালে খাওয়ার গল্পের পাশেই না-খাওয়ার কথা । যেমন আলোর পাশে অন্ধকার । না-খাওয়া মানে খেতে না পাওয়া । সর্ব দেশে যুগেযুগে খাওয়ার আলোর পাশে না-খাওয়ার অন্ধকারের কার্যকারণ একই । মানুষের লোভ ।

মানুষ নামক প্রাণীটির বেঁচে থাকার জন্য দরকার নাকি তিনটি মৌলিক বস্তু ‘রোটি, কাপড়া ঔর মকান’ । পরিধান এবং মকান ছাড়া সব দেশেই লাখো লাখো মানুষ বেঁচে থাকছে, তাদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে । কিন্তূ রোটি ? এটা না হলে বিশ্বের কোন লড়াইই তো হত না, রুজি আর রুটির লড়াই বলে কোন কথাই তো থাকতো না । আর না খাওয়ার গল্প কিংবা রুটির লড়াইয়ের ইতিহাস তো প্রায় পৃথিবীর বয়সের সমান । দার্শনিক কার্ল মার্কস সেই কবেই বলেছিলেন মানুষের ইতিহাসের পনেরো আনাই রুটি নিয়ে পারস্পরিক কামড়াকামড়ির গল্প ।

কারা মাখন দিয়ে রুটি খাবে, মাংস দিয়ে রুটি খাবে আর কাদের একটুকরো শুকনো খটখটে রুটি জুটবে কি জুটবে না তার গল্প । না খাওয়া বা খেতে না পাওয়ার কার্যকারণ খাদ্যের আকাল, যার সবটাই মানুষের তৈরি করা তা পৃথিবী নামক এই গ্রহ কম দেখেনি । ‘১০০০ থেকে ১৮৫০ এই সাড়ে আটশো বছরে ইউরোপে বড় রকমের দুর্ভিক্ষ হয়েছে কমপক্ষে সাড়ে চারশ’বার । ১৮৪৬-৫১ আয়ারল্যান্ডে আলু দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিল দশ লক্ষ মানুষ’ (তথ্যসূত্র : নানা রকম/ শ্রীপান্থ) । আমাদের দেশটাও তো আকাল কম দেখেনি । আকালের আর একটা প্রতিশব্দ আছে মন্বন্তর । ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে সুবে বাংলার এক তৃতীয়াংশ মানুষ খাদ্য না পেয়ে মারা গিয়েছিল, তখন কিন্তু বিত্তবানদের খাওয়ার গল্পে কোন খামতি ছিল না । পঞ্চাশের মন্বন্তরেও না । খাওয়ার রোশনাইয়ের পাশে না খাওয়ার অন্ধকার সভ্য দুনিয়ার নিত্য সহচর । তাইতো কবি লেখেন ‘মন্বন্তরে মরিনি আমরা...’।

খাওয়ার কথা দিয়ে শুরু করলেও সে কথা শেষ হয় ‘না-খাওয়া’র গল্পে । কেন এমন ? সভ্য দুনিয়ায় ভবিতব্য কি তবে খাওয়ার রোশনাইয়ের পাশে না-খাওয়ার অন্ধকার ? এই প্রশ্নের কোন উত্তর অজানা । ইতিহাসে কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল একবার । ১৭৮৯এর ১৪ই জুলাইয়ের ষোড়ষ লুইয়ের ফ্রান্স । বাস্তিলের পথে নেমেছিল ক্ষুধার্থ নর-নারীদের মিছিল। ওরা কি চেয়েছিল? বলেছিল ‘রুটি নেই রুটি চাই’ । আর রাজা লুইয়ের রাণীর মুখ থেকে বেরিয়েছিল সেই বিখ্যাত নাকি কুখ্যাত উক্তি ‘বেশ তো, রুটি নেই তো ওরা কেক খাক’ । পরিণতি সবার জানা – হয়েছিল বাস্তিলের পতন - ফরাসী বিপ্লব ।

খাওয়ার গল্প শুরু করলেও সব কথা এসে মিশে যায় শেষে ‘না-খাওয়া’র গল্পে ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.