শরৎকাল বলতেই আমরা বুঝি আলো, 'আলোর অমল কমলখানি'; শরৎকাল মানে রেললাইনের ধারে হেসে গড়িয়ে পড়া কাশফুল। শরৎকাল মানে শারদীয় উৎসব,তা শুধু পুজো নয়, তা সর্ব অর্থে উৎসব, ধর্মের বাইরে, রঙের বাইরে মানুষের মেলাবার উৎসব। ওস্তাগারের কারখানায় সেলাই মেশিনের ঘরঘর থামেই না। কেউ প্যান্ডেল বানায়, কেউ প্রতিমা।কেউ আলোয় সাজায় মন্ডপ, কেউ ' হ্যালো টেস্টিং' বলে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে।ঠাকুরের শাড়ি বানায় কেউ, জরির কাজ করে কেউ, ডাকের সাজ করেন কেউ, নানা মডেল বানান কেউ।
ঢাকির ঘরে নতুন কাপড় আসে, চাল ডাল আসে, কিছু টাকা আসে। শিল্পীর ঘরে আসে হাততালি, উত্তরীয়, সাম্মানিক। শরৎকাল আগমনীর উৎসব। সবার ঘরে অর্থ, স্বচ্ছলতার আগমন। তাতে ধর্ম নেই, সাম্য আছে।রঙ নেই, আলোর অমল স্পর্শ আছে।
যুগ যুগ ধরে শরৎ এসেছে তার অপরূপ রূপ নিয়ে। তার তুলো তুলো মেঘে ছোট ছোট খুশি রাখা। তার রোদের ডানায় খুশি খুশি গন্ধ। তার শিউলি তলায় কোচড় ভরা পূর্ণতা। শরতের এই অরুণ আলোর অঞ্জলি কারো জন্য ভাগ করা নয়। শরৎ তার অকৃপণ দান এই পৃথিবীর ফোঁটা ফোঁটা প্রাণ যেখানে মুকুলিত হয়ে আছে, সেখানে ই ঢেলে দেয়।
এক অতিমারী, পৃথিবী জুড়ে আর্থিক মন্দা, সারসার মৃত্যু মিছিল, পরিযায়ী শ্রমিকের রক্তের ছিটে লাগা শেষ আশ্বাসের রুটি এই সবকিছুর মধ্যে আবার শরৎ আসে। আবার শিউলি ফোটে। মানুষ নিকিয়ে নেয় মনের উঠোন। কত সর্বজয়া বোঝেন এই শরতে নতুন জামাটি আর দুর্গার পরা হবেনা। শূন্য কোলের দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেও একসময় তাকায় ঝকঝকে সূর্যটির দিকে। যুগযুগ ধরে মানুষের মিছিল চলেছে, একটু আলো পাওয়ার জন্য, একটু সচ্ছন্দ জীবনের আশায় ।যুগযুগ ধরে তারাই করজোড়ে দাঁড়ায় ঈশ্বর-আল্লাহ-যীশুর সামনে, তাদের ঔদ্ধত্য কম, সমর্পণ অপরিসীম, তাদের অসহায়তা বেশি, ক্ষমতা কম।তাদের এমনকি ইমিউনিটি বেশি, আরাম কম। তারা অনাহারে মরে বেশি, প্রতিরোধে ফেটে পড়ে কম।
এই সমস্ত মানুষ যারা মিছিলের একটি সংখ্যা মাত্র, তাদের সকলের চোখে এই শরতের আলো লাগুক, তাদের মনে ধূপ ধুনো জ্বলুক, কিন্তু তাদের জানলায় বোধের আগুন থাকুক এই শরতে। একমাত্র শুভবোধ তাদেরকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলতে পারবেনা, একমাত্র শুভবোধ তাদেরকে জাগিয়ে রাখবে এই আফিম খাওয়ানো রাষ্ট্রে।বোধের আগুন জ্বলুক, চিন্তার পরিসরে বিস্তৃতির উৎসব প্রাণের উৎসব চলুক বছরভর।
শরৎ ও তবে হিংসে করবে যে!
মৌমিতা ঘোষ
কলকাতা
কলকাতা
সুচিন্তিত মতামত দিন