আষাঢ়- শ্রাবণের মাঝে একটা হাইফেনের সুক্ষ পার্থক্য থেকেই যায় আকাশের রঙে। আষাঢ় যেন স্বরগমের আলাপ আরোহণ, শ্রাবণ যেন তার বিস্তার। অনেক গভীরে তার ওঠানামা। নীল নয়, ঘন ধূসর বর্ণ। বিষাদ আর বিষণ্ণতার মাঝামাঝি। আষাঢ় নরম, শ্রাবণ দামাল। আষাঢ় প্রেমের আলিঙ্গন, শ্রাবণ আশ্লেষের চুম্বন।
আষাঢ়ের টুপটাপ বৃষ্টিতে জৈষ্ঠ্যতে শুকিয়ে যাওয়া চড়চড়ে বিবর্ণ দেওয়ালের গায়ের রঙ ভিজে ওঠে। কার্ণিশের ফালিতে লেগে থাকে কুচি কুচি জল। শ্যাওলা সবুজে লেগে থাকে থমকে যাওয়া জীবনের উপর। টুপটাপ বৃষ্টির ছাঁটে ভিজতে থাকে ব্যালকনিতে রাখা সারিসারি ফুলগাছের টব। টুংটাং মেসেজ ঢুকতে থাকে সারা দুপুর জুড়ে নতুন আলাপের।
আকাশের রঙ নীল থেকে হতে থাকে ঘন। ঘন বৃষ্টির মতো ফোন উপচে পরে মেসেজের পর মেসেজ। বাজতে থাকে গুলাম আলির হাঙ্গামা কিঁউ করতি হো--থোড়িসি যো পি হ্যায়!
আষাঢ়ের মল্লারে কচি কচি পাতায় বেড়ে ওঠে, ঘর কোণে লতানো পুঁই গাছ। আষাঢ়ের নতুন বারিশে বহুদিন পরে ম্যারিনেট করা বোল ফ্রিজে তুলে রেখে সেতার টেনে বসে পড়ে মধ্যচল্লিশা। দুপুরের লাঞ্চবক্সের জমা গল্পে মন পুড়তে থাকে তার নতুন করে। সন্ধ্যার ছপছপে জমা জল গায়ে মেখেই সে বেরিয়ে পরে রেলেগেটের ধারে। ঘন অন্ধকারে কাঁপতে থাকা ঠোঁট জুড়তে জুড়তে ভাবে, -এমন দিনে তারে বলা যায়---
শ্রাবণের গায়ে সে আলসেমি নেই। জড়ানো ওমের তাকিয়ায় সে আরামসে পা তুলে দিয়ে টুপটাপ বা চড়বড়ে বৃষ্টি দেখেনা,সারাদিন ঝমঝমে বৃষ্টিতে ভেসে যায় উঠোন, রান্নাঘরের দালান গাড়িবারান্দা, বহুতলার মিহি শরীরের ব্যালকনি। ওয়াইনের কাট গ্লাসের গায়ে লেগে থাকা বুদবুদ জীবন ভেজে না, ডুবতে থাকে গভীরে। আশাবরী পেরিয়ে মধ্যরাতের মালকোষে জারিত হতে থাকে মধ্যচল্লিশার শরীর। আরো একবার শ্রাবণ ভাসিয়ে নিয়ে যেতে থাকে,আর সে যায়ও।
কি আসে যায়ে,ভেজার বদলে ডুবলে! পাবার কি আছে আর তার। তবুও প্রেম আসুক, নষ্ট সম্পর্কগুলো আবাদ হোক আষাঢ় শ্রাবণের ভরা জোয়ারে।
ওদিকে দুলতে থাকে প্রবল বৃষ্টিতে পুঁই লতাটা! মন তার উচাটন। জল বাড়ছে। ডুবছে সে গভীরে, জাগছে সে আরো একবার। ভোর রাতের তিলক কামোদের মত। আহ! বৃষ্টি নামুক ভেতরে বাইরে!
"কিন্তু তুমি নেই বাহিরে অন্তরে মেঘ করে,ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে"
ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনসুচিন্তিত মতামত দিন