বনবীথি_পাত্র

বনবীথি_পাত্র

একটু আগেও রোদডোবা বিকাল ছিল, হঠাৎ করেই একটুকরো কালো মেঘ এসে যেন সব আলোটুকু গ্রাস করে নিল। সাথে এলোমেলো হাওয়া, টুকরো টুকরো ধূলোর কুচি ছুঁয়ে যাচ্ছে চোখ-মুখ। বাড়ির মধ্যে এই ব্যালকনিটুকুই যেন নিজস্ব জগৎ তোড়ার। দাদা-বৌদি-দুই ভাইজির সংসারটাতে ​ ভীষণভাবে অতিরিক্ত মনে হয় নিজেকে। অথচ এই বাড়িটাই তোড়ার একসময়ের "আমার বাড়ি" ছিল। বিয়ের পর ফেলা যাওয়া মেয়েবেলার সবটুকুই বুঝি ফেলে যেতে হয়। ফেলে যাওয়া খেলাঘরে ফিরে এসে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াটা যে এতটা কষ্টের, সাড়ে চার বছর আগে বোঝেনি তোড়া। প্রথম প্রথম অধিকারের বড়াই করতো, এখন সেটা মনে পড়লে নিজেকেই ছোট লাগে।

এ বাড়ির মতো স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না চয়নের। সব জেনেই বিয়ে তো বিয়ে করেছিল চয়নকে। কিন্তু সেই দ্বিরাগমনের অনুষ্ঠানের দিন থেকে মায়ের মুখে চয়নের আর্থিক অক্ষমতার কথা শুনতে শুনতে কখন যে তোড়াও বদলাতে শুরু করেছিল বুঝতেও পারেনি। প্রতি মুহূর্তে এক অশান্তির আগুনে পুড়তে পুড়তে সবকিছু অসহ্য হয়ে উঠছিল তোড়ার। দেড়বছরের মাথায় চয়নের সাথে সব সম্পর্ক মিটিয়ে ফিরে এসেছিল। দাদা-বৌদির কোন বারণ-ই শোনেনি।​
​ ​ ​ ​ ​ ​ 
গত আট-ন মাস ধরে মা পক্ষঘাতে বিছানাবন্দী। দাদা-বৌদি নিজেদের জীবনে ব্যস্ত। অলিখিত ভাবেই মায়ের সেবা-শুশ্রষার জন্য দায় তোড়ার। আজকাল তোড়ার বারবার মনে হয়, আজকের দিনটার জন্যই মা বুঝি সেদিন চয়নের সংসারে মানিয়ে নিতে দেয়নি ওকে। বিয়ের পর বাবার বাড়িতে ফিরে আসা মেয়ের হাল ডানা ভাঙা পায়রার মত। অমন একটা মেয়ে কাছে থাকা মানে অদিনের সহায়। মা এতখানি স্বার্থপর আগে কল্পনাও করতে পারেনি তোড়া। মুখে বলতে পারেনা, কিন্তু একরাশ ঘৃণা কাজ করে তো তোড়ার মনের মধ্যে।​

চয়নের সাথে শেষ দেখা কোর্ট চত্বরে। মনে পড়ে চয়ন বলেছিল, যদি কখনও ফিরে আসতে চাও, ফিরে এসো। সারাজীবন তোমার জন্য আমার দরজা খোলা থাকবে। সেদিন কথাটা ন্যাকামি মনে হয়েছিল তোড়ার। ঐ ভিখিরির সংসারে ফিরতে বয়েই গেছে তোড়ার।

চয়ন কি সত্যিই আজও অপেক্ষা করে আছে তোড়ার জন্য!!!! ফিরতে চাইলেও আর কি ফিরতে পারবে চয়নের কাছে!!!! ফিরতেই চায় সেকথাটা বলবে কিভাবে চয়নকে? ফেসবুকে চয়নের অ্যাকাউন্টটা নিয়মিত ফলো করা যেন অভ্যাস হয়ে গেছে তোড়ার। আবৃত্তির স্কুল নিয়ে তো সে দিব্যি আছে বলেই মনে হয়। তোড়ার জন্য একটুকু অনুভূতিও কি বেঁচে আছে চয়নের মধ্যে !!!!

ঝড়ের গতি বাড়ছে হুহু করে। তোড়ার মনও যেন সেই গতিতেই ছুটে যেতে চাইছে চয়নের কাছে। আর দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না ব্যালকনিতে, ঝড়ে এলোমেলো করে দিচ্ছে সবকিছু।

ঘরে এসে মোবাইলটা আবার চয়নের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা খুলে বসে তোড়া। বহুবার দেখা পোস্টগুলোই আবার দেখে। অভিমান ভুলে একসময় ইনবক্সে লিখেই ফেলে ,

" কিন্তু তুমি নেই বাহিরে - অন্তরে মেঘ করে​
ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের ভেতর ঝরে !"

ছিঃ ছিঃ চয়ন কি ভাববে কে জানে!!!! কিন্তু যেখানে নিঃসঙ্কোচে সব কষ্টটুকু স্বীকার করা যায়, সেটাই তো ভালো বাসা। খুব কি ক্ষতি হবে আজ যদি নিজে মুখে চয়নের ভালোবাসার ভালো বাসাতে ফিরে যেতে চায় !!!!
তোড়ার মনের মধ্যে যখন এই অসহ্য টানাপোড়েন, তখনই মেসেজটা আসে ম্যাসেঞ্জারে....

" বৃষ্টিরে তুই আসবি কবে বল
তুই আসলে কাঁদবো বলে
চোখে জমাই জল,
বুকের ভিতর গুমরে মরে
নীল কষ্টের ঢেউ
ঝুম বৃষ্টিতে কাঁদি যদি
দেখবে নাতো কেউ
দুঃখ আমার বন্ধু এখন
সুখ করেছে ছল
তুই আসলে কাঁদবো বলে
চোখে জমাই জল
বৃষ্টিরে তুই আসবি কবে বল
তুই আসলে ভরবো আমি
শূন্য করতল...."




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.