শিক্ষাদান পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের মধ্যে অনেক সময় মতানৈক্য থাকলেও শিক্ষার লক্ষ্য কিন্তু একই। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানো।
আমেরিকার বিখ্যাত প্রয়োগবাদী দার্শনিক, মনোবিজ্ঞানী তথা শিক্ষা সংস্কারক জন ডিউই বলেছেন, ‘বিদ্যালয় হল সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ’। যে সমাজ হবে পবিত্র, সরলীকৃত, ক্রমান্বিত, সুষম, অনুপ্রেরণায় জীবন্ত সক্ষম। সমাজের খারাপ নয়, যা কিছু ভাল সেগুলিই স্কুলের পরিবেশে পরিবেশিত হওয়া উচিত।
অথচ, বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা এক গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি। চতুর শিক্ষা ব্যবসায়ীদের কাছে কোভিড ১৯ সংক্রামিত ভাইরাস যার আরও একটি মহার্ঘ্য সুযোগ।
কোভিড ১৯ সংক্রমন রোধে সরকারি বিভিন্ন স্কুল কলেজের অধিকারিকগন, শিক্ষকমন্ডলীগণ যেমন সামাজিক ভূমিকা গ্রহণ করেছেন, তাঁদের শ্রম অর্জিত অর্থদান করেছেন মহৎ সেবায় ঠিক বিপরীতে গালগপ্পের প্রাইভেট অর্থাৎ ব্যক্তি মালিকানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক ততটাই নিজেদের সযত্নে দুরুত্বে রেখে ভয়াবহ এই আতঙ্কের মাঝেই তাদেরই শিক্ষক, শিক্ষিকা, অশিক্ষক কর্মচারিদের বাধ্য করছেন - কখনো বই বিক্রী, কখনো ইউনিফর্ম, কখনো অনলাইনের জন্য মোবাইল ল্যাপটপ ক্রয়ের নামে মানসিক চাপ আবার কখনো কোনকিছু পরিষেবা না দিয়েই মাসিক ক্লাস ফিস, বাস ফিস, স্পোর্টস লাইব্রেরি ফিস এর ... লাগাতার লক্ষী বন্দনায় ।
প্রশ্ন, শিক্ষা ব্যবস্থায় এত ভণ্ডামি, এত কৌশল কেন? কেনই বা প্রাইভেট স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে সাধারণ অভিভাবকদের মতো শিক্ষামন্ত্রীকেও গর্জে উঠতে হচ্ছে বারংবার? কেনই বা এই সঙ্কটকালে সাধারণ ফিস না দেবার অপরাধে অনলাইন ক্লাস থেকে ছাত্রদের বিতাড়িত হতে হয়? তবে কি এরা ভূষিত শক্তিশালী! বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার মতোন ইচ্ছে খুশির বাহুবলী?
এই একশ্রেণীর পেটুয়া- লোভী, অসৎ, তাবেদারদের স্বতঃপ্রণোদিত মদতে, এই ভয়াবহ করোনা সংক্রমনের মাঝেও শুধুমাত্র সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার তাগিদেই প্রকৃত শিক্ষক অশিক্ষক কর্মীরা আজ কিন্তু সত্যিই দিশাহারা, এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
যার একদিকে নিষ্ঠা নয় অর্থে বিশ্বাসী যেমন মালিকপক্ষ, মালিকপুষ্ঠ অধ্যক্ষ নামক স্বৈরাচারের স্কুল খোলার চাপ, অন্যদিকে তাঁদের মুখ চেয়ে অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী এবং অসহায় অজস্র মা বাবা!
মূলত চতুর্ভুজ এই চাপ তাঁদের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠলেও মূলত তাঁরাও কাজ হারানোর ভয়ে, রপ্ত করতে শিখছেন আত্মকেন্দ্রিকতায় ভর করে অতীব চাটুকতা।
খবরের শিরোনামে যেখানে এখন প্রতিদিন রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা, সেখানে এই মুহূর্তে এই সংক্রমন রুখতে স্কুল কলেজ অফিস এমনকি পরিবহন ব্যবস্থায় সব কি স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশমতো চলছে বা চলবে? সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে, কোন রকমের সাবধানতা অবলম্বন না করেই, প্রচুর মানুষ আজ রাস্তায়, অফিসে, পরিবহনে। এই অব্যবস্থায় শিক্ষাকেন্দ্র গুলো কতটা নিরাপদ? আরো বেশি সময় নিয়ে, আরো পরিকল্পনার সহিত করোনার মোকাবেলায় সমস্যা কোথায়? জীবন কি টাকার চেয়েও দামি!
কি ভাবছেন? কি শিখবে সন্তানেরা এই চাটুয়া ব্যবস্থায়?
ভাবছেন! তিথি দেখছেন ? অসভ্য বর্বর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে, শিক্ষা ব্যাপারীর বিরুদ্ধে কখন গর্জে উঠবেন? অথবা করোনার সংক্রমন কে উপেক্ষিত করে সন্তানদের এত খুল্লাম খুল্লায় আদৌ কি স্কুলে দেবেন? বাস কাকু - ভ্যান কাকু - মাসি, প্রার্থনার অজস্র বিষ বাঁশি ? ইয়া বড়া বিল্ডিং, ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল, দরজা জানালা বাগান আর বাথরুম বাঁশ ফুল?
তাই বলছি, একটু সত্যি ভাবুন। অসংখ্য এমন শিক্ষক তিনিও কারো পিতা, যিনি শিক্ষিকা তিনিও কারো মাতা। আবার অশিক্ষক সকল কর্মচারীর ক্ষেত্রেও তাই। সর্বস্তরের চাকুরীর ক্ষেত্রেও তাই। ছাত্র ছাত্রী তারাও অনুরূপ আত্মজন, তাদের পিতামাতার।
ভাবুন। অন্তত নিজের জন্যই ভাবার প্র্যাকটিস করুন। বলার চেষ্টা করুন। প্রতিবাদ করুন। বলা তো যায় না .... খেলা শেষের বাঁশি ..... না বেজে ওঠে ....
Srigo
সুচিন্তিত মতামত দিন