এরপর ২৩ মার্চ থেকে লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পর দেখা গেল তার অর্থ ও কর্মপ্রণালী নিয়ে মন্ত্রী, প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের কারোরই চিন্তাভাবনা পরিষ্কার নয়। কী করে থাকবে? পরিবহণ বন্ধ বলে তো পেট মানবে না। কখনও একলা মানুষ বাচ্চার দুধ কিনতে গিয়ে পুলিস বা নারগিক স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা প্রহারে মারা যায়, তো কোথাও দল জটলা প্রার্থনা সব চলে। পুলিসের লগুড় চালনায় রাশ টানতে যেই বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেওয়া হল, অমনি রাস্তাঘাটে মেলা বসে গেল। এ রাজ্যে করোনা চিকিৎসার সরঞ্জাম থেকে আক্রান্তের সংখ্যা, কেন্দ্রে পাঠানো ত্রাণ থেকে রাজ্যের রেশন বণ্টন, পুলিসের রেশন না পেয়ে বিক্ষোভ দেখানো মানুষদের পিটিয়ে ঠাণ্ডা করা (যেখানে মহিলার গায়েও পুলিসকর্মী অবলীলায় হাত থুড়ি লাঠি তুলতে পারে), অন্যদিকে লাথি খেয়ে পরিবারকে পুরস্কৃত করা ও কণ্ঠলগ্ন হয়ে শান্তি মিছিলে গায়ে গা লাগিয়ে পা মেলানো, আবার রোগীর সেবায় ছুটে চলা নার্সকে স্কুটার থামিয়ে চপেটাঘাত, হাসপাতালের আভ্যন্তরীণ দৃশ্যের ভিডিও জনসমক্ষে আসতেই চলভাষ নিষিদ্ধ হওয়া – সবকিছু নিয়েই জল এতটাই ঘোলাটে, যে তাতে ডুব দেওয়ার সাহস দেখাচ্ছি না।
বরং করোনা মোকাবিলায় দেশের প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপগুলি নিয়েছেন, সেগুলো বোঝার চেষ্টা করি; কারণ তাঁকে প্রশ্ন করার মধ্যে ততটা বিপদ নেই।
১. ১২ ঘণ্টার জনতা কার্ফিউ ঘোষণা করে নিজের নিজের ব্যালকনি বারান্দা ইত্যাদিতে দাঁড়িয়ে হাততালি, শঙ্খনিনাদ, থালা, ঘটি বাসন বাজিয়ে কার্ফিউ শেষে চিকিৎসাকর্মীদের উৎসাহ বর্ধনের পরামর্শ দিলেন। ইতালির অনুপ্রেরণা বলা বাহুল্য। কিন্তু মহারাজ, আমাদের ১৩৫ কোটির দেশে কতজনের ব্যালকনি বা বারান্দা এমনকি ন্যূনতম চাতালটুকও আছে, সেই তথ্য আপনি জানেন? ফলত বারো ঘণ্টা ঘরে থেকেই করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করা হয়ে গেছে, এই উৎসাহে সন্ধ্যাবেলা ঢোল, কাঁসর, ডিজে সহকারে অলিগলিতে গায়ে গা লাগিয়ে করোনা পার্টি হয়ে গেল।
২. জনতা কার্ফিউ জনতা করোনোৎসবে পরিণত হল দেখে ক্রমশ একে একে শহরগুলো বিচ্ছিন্নকরণের কাজ শুরু হল। অতঃপর আপনি সমগ্র দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিলেন। বিরোধীরা যথারীতি কখনও বলেছে আরও আগে করা উচিত ছিল, কখনও বলেছে তাড়াহুড়ো হল, কখনও বলেছে দরকার ছিল না, আবার কেউ কেউ তো শ্রমিকদের একদিনের রোজ নষ্ট হওয়ার প্রতিবাদে মাত্র ১২ ঘণ্টার কার্ফিউ অমান্য করে ‘মানব বন্ধনের ডাক দিয়ে বসেছিল। সে গণতান্ত্রিক দেশে এমন অনেক কিছুই হতে পারে। তবে প্রতিষেধক টীকার অভাবে সংক্রমণ বিস্তার রুদ্ধ করতে উপায় হিসাবে লকডাউনের উপযোগিতা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু অর্ধ দিবস কর্মবিরতি ঘরবন্দিতত্ব জারি করতে যেখানে তিন দিন ধরে বিজ্ঞাপন হল বিভিন্ন গণমাধ্যমে, সেখানে পুরোদস্তুর দেশব্যাপী তালা ঝোলানো হল মাত্র চার ঘণ্টার নোটিসে। নোটবন্দী হুট করেই করা হয়ে থাকে। কিন্ত পরিবার বিচ্ছিন্ন, দিন আনি দিন খাই মানুষগুলোকে সামান্য কটা দিন প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল না কি? লকডঅউন হচ্ছে জেনে ভিনরাজ্যের মানুষ নিজের ঘরে ফিরে এলে অনন্তবিহার বা বান্দ্রা ষড়যন্ত্র সফল হোত না।
৩. ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক প্যাকেজ দান, ত্রাণ অনুমোদন ও রাজ্যগুলোকে বণ্টন নিয়ে বিরোধী ও নিন্দুকেরা যাই বলুক, মানুষ আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে না। কিন্তু ত্রাণের জন্য তহবিল গড়তে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের একদিনের মাইনের পাশাপাশি আগামী দেড় বছরের জন্য তাদের মহার্ঘ্যভাতাও আটকে দিলেন। মূল্যবৃদ্ধিকে আটকাতে পারবেন তো? অথচ দিলেন কর্পোরেট ট্যাক্সে ছাড়, যার সুবিধা বড় বড় ঋণ খেলাপি শিল্পপতিরাও পাবে। কর্পোরেট কর কমানোয় ফলে সরকারের আয় কি কমবে না, নাকি ডিএ-এর তুলনায় তা নগণ্য। অর্থাৎ ঋণ খেলাপে উদারতা দেখিয়ে মামুলি কর্মীদের ডিএ তে কোপ! বোঝার চেষ্টা বৃথা।
৪. মান্যবর, লকডাউনের মধ্যে দিল্লীর নিজ়ামুদ্দিনে আপনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নাকের ডগা দিয়ে অতগুলো দেশ বিদেশ থেকে আগত অত লোকের সমাবেশ ঘটল কীভাবে? সেখানকার মার্কাজে সমাবেশকারীরা অতঃপর দেশময় সাধারণ মানুষ, পুলিস প্রশাসন, ডাক্তার নার্স, হাসপাতাল কর্মী – এদের সবার সঙ্গে কী ব্যবহার করেছে, তার বিবরণ দেওয়া নিষ্প্রয়োজন, বহু ভিডিওর মাধ্যমে তারা নিজেদের উদ্দেশ্য ও কর্মপদ্ধতি সরাসরি নিজেরাই প্রচার করেছে। তবু সমাবেশকারীরা ইচ্ছাকৃত রোগ ছড়াতে চাইছে বুঝতে পারার পরেও তাদের জামা্ আদর করে চিকিৎসা কর্মীদের অপমান, আক্রমণ, অসম্মান এমনকি যৌন হ্যানস্থার মুখে ঠেলে না দিয়ে তাদের উপাসনাগৃহেই কোয়ারেন্টাইন তথা আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে পারতেন। অনিচ্ছুকদের সুস্থ করতে গিয়ে দেশবাসীদের বিপদে ফেললেন, কত মূল্যবান চিকিৎস সেবিকার জীবন কেড়ে নিলেন, আবার কোভিড-অমর্ত্য কোভিড-অরুন্ধতীদের ভারতবিরোধী মানবতা বিনাশী বচনে ইন্ধনও দিলেন। এখন মানবতার শত্রুদের হয়ে যাদের দালালি করার তারা করবেই; কিন্তু এই বেআইনি সমাবেশ রুখতে না পারার দায়িত্ব আপনার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেই নিতে হবে। দায় বর্তাচ্ছে তাদের জোর করে আদর যত্ন করতে গিয়ে আমাদের জীবন বিপন্ন করার জন্যও। আর তাবলিগীরা দেশের কোন কোন রাজ্যে কোথায় কোথায় গিয়ে লুকিয়ে আছে, পুলিস ও গোয়েন্দারা সেসব খুঁজে বার করে ফেলল, আর হাজার তিনেক লোক লকডঅউন অমান্য করে বিশেষ এক জায়গায় জমা হচ্ছে, সেই খবরটুকুও পায়নি? মূল অভিযুক্ত মৌলানাকে সত্যিই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? পাথর, পেট্রল, অ্যাসিড ইত্যাদি মজুত করে দিল্লী দাঙ্গার প্রস্তুতিও কিন্তু আপনাদের নাকের ডগায় চোখের সামনেই হয়েছে। যাদের ভোটে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের ওপর কীসের প্রতিশোধ নিচ্ছেন? একের পর এক রাজ্য বিধানসভাগুলো হাতছাড়া হওয়ার বদলা?
৫. এই পরিস্থিতিতে দেশবাসী মানে প্রকৃত ভারতীয়রা যখন ফুঁসছে, অপেক্ষা করে আছে আপনাদের তরফ থেকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার, তখন খুব বড়ো ঘোষণা করতে চলেছেন বলে দু’দিন ধরে রহস্য তৈরি করে আপনি কী ঘোষণা করলেন? না ৬ এপ্রিল রাত নটা থেকে ঠিক ন মিনিটের জন্য ঘরের বড়ো আলোগুলো নিভিয়ে প্রদীপ, টর্চ, মোবাইল ইত্যাদি ছোট ছোট আলো জ্বালানোর আবেদন! আমরা হতভম্ভ। তবু দেশের নেতার ওপর তো ভরসা রাখতে হবে। তাই ঐ অন্ধকার ডেকে এনে টিমটিমে আলো জ্বালানোকেই রাষ্ট্রীয় সংকটে দেশবাসীর প্রতীকী অঙ্গীকার হিসাবে নানান ব্যাখ্যা দিতে শুরু করলাম। শুনতে পেলাম সারা বিশ্ব আপনাকেই করোনা সংকটে ক্যাপ্টেন বলে মেনে নিয়েছে। হুজুকে ভারতীয়কে প্রদীপ মোমবাতি জ্বালাতে বলার ফলশ্রতি রাতের আকাশ বাতাস আতশবাজির ঝলকানি ও শব্দে মুখরিত হয়ে অকাল দীপাবলি পালিত হল। বলছি বটে দীপাবলি, কারণ অতশত বাজি মূলত ঠিক তার পরের দিন ‘শবে বারাত’-এর জন্য মজুত ছিল বুঝতে পারলেও লেখাটা ঠিক হবে না।
৬. পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আপনার ভাবনা শুরু হল অনেকটা দেরিতে। ততদিনে বাড়ি ফেরানোর আশা জাগিয়ে, বারবার ঘোষণা করে, এমনকি শ্রমিক বসতিগুলোতে জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়ে দিল্লীতে তাদের উত্তরপ্রদেশ সীমান্তে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যাতে তারা ভালো করে মরণ ভাইরাসের শিকার কিংবা বাহক হয়ে পড়ে। সব জেনেও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন না। ফলে মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় অনুরূপ কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটল। জাতীয় বিপর্জয়ও যদি জাতীয় জরুরি অবস্থা হিসাবে বিবেচিত না হয়, তাহলে রাজ্য সরকারগুলোকে টাকা ও খাদ্য বণ্টনের দায়িত্ব না দিয়ে আমাদের জন্য জনপিছু সামান্য সায়ানাইডে আয়োজন তো করতে পারতেন।
৭. পরিযায়ী শ্রমিদের দেরিতে হলেও ঘরে ফেরার অনুমতি দিয়ে কৃতার্থ করেছেন। সেই সঙ্গে তাদের ট্রেন ভাড়া মকুব করে খরচটা কেন্দ্র সরকার ৮৫% ও রাজ্য সরকার ১৫% দেবে ঘোষণা করেছেন নিজের দলের সাংসদের চাপেই। এটাই তো হওয়ার কথা। যদি বদেশ থেকে বহুমূল্য বিমান ভাড়া দিয়ে দেশের মানুষকে ফেরাতে পারেন, তাহলে হতদরিদ্র রোজকর হারানো মানুষগুলোর কাছে রেল ভাড়া নেবেন কোন মুখে? কিন্তু মহারাজ, আপনি কি খবর পাননি, দিল্লীতে সরকারি বাসকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্যও আপনার কিছু কিছু ‘মিত্রোঁ’ দশ টাকার টিকিট একশো টাকায় ব্ল্যাক করেছিল। অতএব যদিও ঘর ফেরতাদের কাছে টাকা না নেওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন, কিন্তু টিকিটের গায়ে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া লেখা আছে দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে তাদের রেলভাড়া রেলমন্ত্রক মকুব করেনি। ওদিকে মুদ্রিত ভাড়ার চাইতেও বেশি আদায় করে কিছু কিছু রাজ্যে দালালচক্র এই দুর্দিনেও কামিয়ে দায়টা আপনার ঘাড়েই চাপাতে পারল। হাততালি, প্রদীপ জ্বালি – এইসব রসিকতা ঢাকঢোল পিটিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ হিসাবে পরিবেশণ করলেন, আর যাদের নিয়ে এত রাজনীতি ও জলঘোলা হচ্ছে, তাদের বাড়ি ফেরানোর জন্য কেন্দ্র সরকার যে সদর্থক পদক্ষেপ নিয়েছে, সে কথা গণমাধ্যমে প্রচার করতে পারলেন না? আপনি অভিজ্ঞ রাজনীতিক। আমার পরামর্শ আপনার নিষ্প্রয়োজন।
৮. এরপর পালিত হল নতুন উৎসব। এবার আর আপনি নির্দেশক বা ঘোষকের ভূমিকায় না নেমে থাকলেন নেপথ্যে। আর মঞ্চে নামলেন ভারতীয় সেনার তিনটি বিভাগের নবনির্মিত সাধারণ প্রধান পদাভিষিক্ত জেনারেল বিপিন রাওয়াত। মানছি জল স্থল অন্তরীক্ষ - এই তিন সেনার বিভাগেরই সাধারণ প্রধান হয়ে তিনি যারপরনাই পুলকিত। তাই বলে দেশময় পুষ্পবৃষ্টি করে অনর্থক অর্থব্যয় দ্বারা সেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে হবে? ঐ টাকায় পরিযায়ী শ্রমিক থেকে স্বাস্থ্যকর্মী-- এদের প্রতি আরও অনেক দায়িত্বশীল হওয়া যেত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হলে কারও জীবন ও কাজের সচিত্র সংবাদ জনমানসে পৌঁছে দেওয়াটাই প্রকৃষ্টতম উপায়। মহামারীর দাপটে যখন জনজীবন শুধু সাময়িক বিধ্বস্ত তাই নয়, দেশের শিল্প বাণিজ্য কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির সুদূরপ্রসারী রুগ্নতায় ভোগার আশঙ্কা, সেখানে ফুল ও তেলের অপচয় না করে বরং তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কমানো যেত। এখনও সীমান্তে শত্রুরা ও দেশের অভ্যন্তরে তাদের এজেন্টরা সক্রিয়। তাদের হিসাবনিকাশ কি মিটে গেছে? দূর বিদেশে ও প্রতিবেশে নিজেকে উজাড় করে সাহায্য পাঠানোর আগে সেই ওষুধ ও ত্রাণ যাতে উপকৃত দেশগুলোর উৎপীড়ত সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেও পৌঁছায়, সেই শর্ত রাখা যেত। তা না করে আন্তর্জাতিক মহলে নাম কিনতে, আর আভ্যন্তরীণ সংকট ভুলিয়ে রাখতে মুক্তকচ্ছ হয়ে দানধ্যান উৎসব পালিত হচ্ছে। তালি থালি বাজানোর সার্থকতা বুঝতে পারিনি, অন্ধকারে দীপশিখা জ্বালানো নিছক প্রতীকী একতা হিসাবে মেনে নিয়েছি; কিন্তু এবার আর বিরক্তি চেপে রাখতে পারলাম না।
৯. এই দুর্দিনে শুনশান রাস্তাঘাটে অন্তত নারী নিগ্রহ ও হত্যা বন্ধ হবে, যদিও পুরুষমানুষরা গৃহবন্দী থাকলে গার্হস্থ্য হিংসার আশঙ্কাও ছিল। পিতৃতন্ত্রের জয় – আশা পূরণ হয়নি, আশঙ্কাটি মিলে গেছে। কার্যত লকডাউন কিছু রাজ্যে চরম অরাজকতায় পর্যবসিত। করোনা পজেটিভ রটিয়ে মহিলাকে জোর করে আইসোলেশনে পাঠিয়ে ধর্ষণের খবর এসেছে রাজস্থান থেকে। পশ্চিমবঙ্গে পাওয়া গেছে মাস্ক পরিহিতা নারীর ধর্ষিত লাশ। কোথাও কোথাও পরিকল্পিতভাবে এক পক্ষকে তোষণ ও অন্য পক্ষকে শোষণের কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে আর সলতে ওস্কাতে চাই না। এদিকে বিশ্ব জোড়া মন্দার বাজারে করোনা নাম ‘ভল্লুক’টির আগমণে ভারতের অর্থনীতেও ভাঁটা। সারা বিশ্বে এমনকি শত্রু রাষ্ট্রগুলোতেও ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রপ্তানি ও দানধ্যান করে, নিজের দেশে লকডাইন করেও কোভিড-১৯-এর দাবানল নেভাতে কেন সামান্য নিয়ন্ত্রিতও করা যায়নি। যে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে সাধারণ মানুষ সবাই হয় অসচেতন নয় ষড়যন্ত্রকারী, সেখানে কোনও ইতিবাচক চেষ্টাই সফল হতে পারে না। তাই শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য রক্ষার হাল ছেড়ে দিয়ে সরকারি কোষাগারের হালে পানি আনতে চাইলেন। তাই মেয়েদের ওপর বাইরে অত্যাচার বন্ধ হয়নি বরং ঘরে আরও বেড়েছে, অপরাধীরা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে নিজেদের জায়গায় ফিরে যাচ্ছে – সব জেনেও আপনি অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর পাশাপশি মদিরালয়গুলিকেও খোলা অনুমতি দিলেন। সরকারের আর্থিক ভাঁড়ারে জোয়ার এলেও পারিবারিক আর্থিক অবস্থা যে শুকিয়ে যেতে পারে, যাবে – সংসারধর্ম না করলেও এইটুকু বোঝার ক্ষমতা আপনার নেই, হতে পারে না। কর্পোরেট করে উদারতা, বিপুল জ্বালানি খরচ করে পুষ্পবৃষ্টি এইসব অপব্যয় না করেও কিন্তু অনেকটাই সাশ্রয় হতে পারত। তার বদলে অবিবেচক পুরুষদের অধঃপতনের সহজ রাস্তা দেখিয়ে গার্হস্থ্য হিংসায় স্পিরিটাহূতি দিতে হল?!