কাজী রুনালায়লা খানম

উলঙ্গ রাজা ও এক শাপগ্রস্ত কলমচি / কাজী রুনালায়লা খানম
সময়ের পরতে পরতে জমেছিলো শতবর্ষের ক্ষোভ,ক্রোধ,লোভ,হিংসা, জিঘাংসার ঝুলকালি। মানুষ ভুলে গিয়েছিলো আত্মশুদ্ধির মন্ত্র। এখন নিরাময়কাল। আবহমানের শুশ্রুষার ভার প্রকৃতি নিজেই তুলে নিয়েছে হাতে। কঠিন ধমকে থামিয়ে দিয়েছে সভ্যতার অপ্রতিরোধ্য চাকা! তর্জনি তুলে শাসিয়ে দিয়েছে দিয়েছে "ওয়র্ক অ্যাট হোম" বলে। প্রচন্ড বেগে ছুটন্ত মানুষগুলো প্রবল ঝাঁকুনি সইতে না পেরে ছিটকে পড়েছে নিজস্ব বলয় থেকে। বন্ধ দরজার ভেতর থেকে একচিলতে আকাশ দেখার, একখন্ড মাটি ছোঁবার জন্য পৃথিবীর শাসক মানুষ নামক জীবের কী করুণ আর্তি চোখে মুখে!ছোট্ট একটা ভাইরাস গ্লোবাল ভিলেজটাকেই ঘরবন্দী করে ছেড়েছে। এতো এতো মৃত্যুমিছিল, আর্ত মানুষের হাহাকার। স্বজনহীনভাবে ভয়ঙ্কর মৃত্যুযন্ত্রণা এ বিশ্ব এর আগে দেখেছে কিনা সন্দেহের অবকাশ আছে।

প্রকৃতি যেন বলছে চলো আজ সব হিসেব নিকেশ মিটিয়ে নেয়া যাক। শোধবোধ হয়ে যাক যা কিছু পাওনা গন্ডা।

তাবড় তাবড় দেশগুলিকে ধরাশায়ী করে, অর্থনৈতিক দিক থেকে একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছে এই COVID -19 (কোরোনা ভাইরাস)প্রতিটি দেশ এইসময় সর্বশক্তি প্রয়োগ করে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে যথাসাধ্য কোভিড মোকাবিলার উপযুক্ত করে, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান করে,এপিডেমিক রোধে অত্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করছে। অন্তত আন্তর্জালিক সংবাদ মাধ্যম তাই বলছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বিজ্ঞানীদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। যতোদিন না কার্যকরী ওষুধ ও টিকা আবিষ্কার ফলপ্রসূ না হয়, ততোদিন সংক্রমণ এড়ানোর জন্য সাপোর্টিভ মেজার হিসেবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। সামাজিক মেলামেশা বন্ধ থাকলে অন্তত সংক্রমণটা রুখে দেয়া যাবে অনেকটাই। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি তাদের শাসনতন্ত্র অনুসারে লকডাউনকে ফলবতী করতে অবস্থা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে। কেউ সফল হয়েছে কোনো দেশ সংখ্যাতীত মৃত্যুর অসহায় সাক্ষ্য থেকেছে নিরুপায় ভাবে।

আমাদের দেশ ভারতবর্ষ করোনা মোকাবিলায় কি পদক্ষেপ নিলো সেটাই আলোচ্য। কতোটা ফলপ্রসূ তা সময় বলবে। গত বাইশে মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পূর্ব পরিকল্পনাহীন ভাবে রাত বারোটায় মক লকডাউন ঘোষণা করলেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি চিনে ডিসেম্বরে করোনা ছড়ানোর সময়ই বিরোধী শিবির হতে রাহুল গান্ধী করোনা প্রতিরোধে সজাগ ও সক্রিয় হবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র সরকার মাছি তাড়ানোর ভঙ্গীতে তা নস্যাৎ করে স্বভাবসিদ্ধভাবেই। রোগটার আমদানি স্থল বিদেশ জেনেও আন্তর্জাতিক উড়ানে নিষেধাজ্ঞা না করেই দেশে লকডাউন ঘোষণা হলো। গল্পটা এখানেই শুরু। দেশে যখন অকস্মাৎ লকডাউন ঘোষিত হলো খুব স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে রাজ্যান্তরে যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন তাঁরা আটকে পড়লেন! যাঁরা চিকিৎসা করাতে ভিনরাজ্যে গিয়েছিলেন তাঁরাও আতান্তরে! এদিকে বিশেষ বিমানে চললো বিদেশ থেকে এন আর আই দের দেশে ফেরানো। সেইসাথে করোনাকেও! কারণ করোনা বহন করে এনেছেন এই বিদেশাগতরাই! এদিকে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক মজুর কাজ হারিয়ে, আস্তানা থেকে উৎখাত হয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো রেলওয়ে স্টেশন, বাসস্টপে ভীড় জমালো। বাড়ি ফেরার নিদারুণ আর্তি নিয়ে "কেঁদে গেলো ব্যর্থ প্রার্থনায়।" সরকার বাহাদুরের অবশ্য এইসব তুচ্ছ বিষয়ে নজর দেবার মতো সময় নেই। সময় কোথায় সময় নষ্ট করার? অতএব প্রাণ হাতে করে তাঁরা পা দুটিকে সম্বল করে হাঁটতে শুরু করলো ভিটের টানে। হাজার, বারোশো কিমি পথ খাদ্যহীন বিরামহীন। সুসভ্য বিশ্ব দেখলো বিশ্বের একটি উন্নত জনগণতান্ত্রিক দেশের গণনাতীত জনগণ সার সার হেঁটে চলেছে গৃহের নাকি মৃত্যু অভিমুখে? উদোম আকাশের নীচে, যমুনার তীরে, বান্দ্রা স্টেশনে,পথে ঘাটে অনিশ্চিত ভবিতব্যের দিকে চেয়ে পড়ে থাকলো হাজার হাজার মানুষের সৎভাই। যারা দেখতে ঠিক মানুষেরই মতো। দেশের প্রতিটি খাদ্যকণায়, ইমারতে, সেতুতে, রেলে, উড়ানে শকটে যাদের রক্ত ঘাম অশ্রুর বারোমাস্যা লেখা আছে। 

কিছু মানুষ থাকেন চিরটাকাল যাঁরা প্রশ্ন করেন। আর প্রশ্ন করেন বলেই শাসক চরম স্বৈরাচারী হতে হতেও গুটিয়ে নেন থাবা। থাবার নখ। এদেশেও প্রশ্ন উঠেছে। আর কি করে প্রশ্নের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেয়া যায় এ বিদ্যায় যাঁরা সর্বসেরা তাঁরা যে নিজামুদ্দিনের তাবলীগ জামায়াতকে তুরুপের তাস করবেন এতে আর দ্বিমতের অবকাশ কোথায়?হলোও তাই তাবলীগদের সাথে সাথে অন্য আরো যে বরপুত্রেরা বয়ে আনলেন মৃত্যুবীজ তাঁরা চলে গেলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে আর হাজারদুয়েক নন্দ ঘোষের অপরিণামদর্শিতার জন্য কোনো ভুল না করেও তিরিশ কোটির জন্য বরাদ্দ হলো ঘৃণা- বিদ্বেষ -অপমান, সোশাল মিডিয়া জুড়ে শাস্তির নানা ফরমান। না এ প্রশ্নের উত্তর কেউ পান নি সেই শ্রমিকেরা, কামিন বধুরা, তাঁদের কিশোর কিশোরী সন্তানেরা, দুধের শিশুরা __তারা কোথায় এখন? কেমন আছেন তাঁরা? পেরেছেন পৌঁছাতে নিজস্ব ফুটোচাল আর আগাছাময় উঠোনে?তাঁরা কেমন আছেন, যাঁরা নিজরাজ্যে উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবাটুকু না পেয়ে ভেলোর চেন্নাই ছুটেছেন নবজাতক সন্তান, বৃদ্ধ বাবা, মরণাপন্ন মা অসুস্থ স্বজনকে নিয়ে? তাঁরা ওখানে খেয়ে পরে আছেন কি না ? নিজরাজ্যে ফিরতে পারলেন কি না? যে ডে লেবারারটি কাজ না করলে উনুনে হাঁড়ি চড়ে না তাঁর কি হলো? কেমন আছেন ঝুপড়ি বাসী ফুটপাতবাসীরা? না এসব প্রশ্ন নিজে নিজেই ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে যাবে শুধু। উত্তর?এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে বয়েই গেছে তাদেঁর!তাঁরা তখন জাতির প্রতি অ্যাপীল রাখছেন, নিজের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডাক্তারদের সম্মানার্থে থালা বাজানোর! জনগণও বেরিয়ে পড়লেন রাস্তায়! যেখানে অধিকাংশের ঘরই নেই তো ঘরের বারান্দা! কি করবেন তাঁরা রাস্তাই যাদের ঘর তাঁরা তো রাস্তাতেই বেরোবেন। আর ভক্তির মাত্রাটা যদি মাত্রাতিরিক্ত হয় তাহলে সে যাত্রায় একটু খোল কর্তাল কাঁসরঘন্টা যুক্ত হলে ক্ষতি কি? না হয় দুচারটে ডাক্তার নার্সকে উৎখাত করা হয়েছে ঘর থেকে, তাড়ানো হয়েছে পাড়া থেকে। না হয় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই হয়ে ওঠেনি। তাঁদের জন্য পিপিই কেনার টাকা জোগাতে সেই পথে নেমেছে, দোরে দোরে ঘুরে চাঁদা তুলছে সেই সাধারণ 'মানুষ'! কিন্তু এসব নিয়ে প্রশ্ন করলেই তুমি দেশদ্রোহী! অতএব কয়েকটা শ্রমিক মরলো কি মরলো না তাতে কী যায় আসে? কৃষকের জমির ফসল তুলতে না পেরে জমিতেই পচে গেলে কি এমন হবে! এবং গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের একটা বিরাট অংশ এখানে স্পীকটি নট। 

এদিকে দেশজুড়ে ত্রাণের টাকা স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে নয়, জমাতে হবে পি এম কেয়ার ফান্ডে। যে অর্থ নন অডিটেবল! উঁহুঁ, প্রশ্ন করা যাবেনা! তাহলেই আপনি দেশদ্রোহী। প্রশ্ন করলেই আপনার দিকে ধেয়ে আসবে উন্মত্ত আক্রোশ "মার শালেকো।" না এখানেই নয়।আরো আছে। এসব রাজনীতির কথা নয়, একজন সাধারণ নাগরিকের অতি সাধারণ অনুভব। কিন্তু বললেই আপনি চিহ্নিত হয়ে যাবেন। সারা দেশ যখন আতঙ্কগ্রস্ত, ভয়ার্ত।এই মহামারী হতে পরিত্রাণের উপায় খুঁজছেন, নিরাময়ের জন্য সরকারী পদক্ষেপ জানার জন্য উদগ্রীব, তখন আমাদের দেশের কর্ণধার আবার আবির্ভূত হলেন স্পিরিচুয়াল এনার্জির দাওয়াই বাতলাতে। যে দেশের একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী শুধু কাগজে কলমে স্বাক্ষর সেখানে মোমবাতি জ্বালানোটাও যে থালা বাজানোর মতো প্রহসনে পরিণত হবে এতে দ্বিমত থাকার কথা নয়। অতএব মোমবাতি ঘরের জানালা, বারান্দা পেরিয়ে এলো রাস্তায়, সঙ্গে বাজি পোড়ানো ফ্রী।এমনকি অতি উৎসাহে নেত্রীর শূন্যে গুলি ছোঁড়াও! অকাল দীপাবলিতে মেতে উঠলো দেশ সোশাল ডিসট্যান্সিং শব্দটার বলাৎকার করে। নাহ্ এতে করোনা ছড়ানোর কোনো আশঙ্কা কখনোই তৈরী হয়নি। মহামারী কবলিত দেশে অতিথি অভ্যাগত পরিবেষ্টিত হয়ে মন্ত্রীর জন্মদিন পালনেও থাকেনা বিধিভঙ্গের।গল্পটা এখানেই শেষ নয়, তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী এলেন মন কি বাত বলতে। আমরা চাষারা আবার আশায় বুক বাঁধলাম এবার নিশ্চয়ই স্বাস্থ্যকর্মী নিরাপত্তাকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণের কথা বলবেন তিনি। বলবেন আটকে পড়া শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপের কথা! মধ্যবিত্তের জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তার কথা। না, বলেননি কিছুই। তিনি বরং আরো একবার ভানুমতীর খেল দেখিয়ে গেলেন। কি? না, ডক্টর নার্স পুলিশ সাফাইকর্মীরদের জন্য পিপিইর ব্যবস্থা নয়, গরীবের পেটে ভাতের কথা নয়, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কোন শব্দ খরচ নয়। বায়ুসেনার বিশেষ হেলিকপ্টারে প্রায় সাতশো কোটি টাকার ফুল ছড়ানো হবে ডক্টরদের প্রতি সম্মান জানাতে! এহো বাহ্য,স্কুল কলেজ, অন্যান্য পরিষেবা সমস্ত বন্ধ রেখে খুলে দেয়া হলো মদের দোকান। আবারও সোশাল ডিসট্যান্সিং কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেশজুড়ে মেয়েমদ্দ হামলে পড়লো মদের দোকানে। না, এখানে করোনা সংক্রমণের কোনো আশঙ্কা নেই। ও তো কেবল একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীই ছড়ানো! 

নাহ্ এ বিচিত্র দেশে মহামারী নিয়েও রাজনীতি হচ্ছে। হচ্ছে বিভাজনের মধ্য দিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে। প্রশ্নের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়ে আখের গোছানোর ছলচাতুরীতে। রাজ্য সরকার গুলি স্ব স্ব ক্ষেত্রে মহামারী মোকাবিলা করছেন। কেউ সফল, কেউ আংশিক সফল কেউ সামান্য সফল, কারও বা পরিস্থিতি হাতের নাগালে। প্রতিদিনের পরিসংখ্যানের ওঠাপড়া দেখে যা অনুমেয়। আমাদের রাজ্যও কাজ করছে সামর্থ্য অনুযায়ী।লকডাউন ঘোষণা থেকে রেশনিং সিস্টেম চালু করে, পুলিশ বিভাগের স্বতস্ফুর্ততা বৃদ্ধি করে, হাসপাতাল গুলোতে সীমিত হলেও পরিকাঠামো তৈরী করে চেষ্টা করছেন রাজ্যের কর্ণধার। মানছি সীমাবদ্ধতা আছে। যে কেউই স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার অপ্রতুলতার দিকে আঙুল তুলবেন। আঙুল তুলবেন খবরে প্রকাশিত রোগীর পরিসংখ্যান নিয়ে।প্রশ্ন তুলবেন রেশনিং ব্যবস্থার ত্রুটি নিয়ে। হ্যাঁ ত্রুটি আছে। আছে সীমাবদ্ধতাও। তারজন্য আমরা সাধারণও কি দায়ী নই সামান্য অংশে হলেও? যেখানে করোনার ভয়াবহতা নিয়ে এতো প্রচার, ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নিয়ে এতো শোরগোল! সোশাল ডিসট্যান্সিং নিয়ে এতো কড়াকড়ি সেখানে আমরা কতোটা সচেতন? আজও যাঁরা সকাল হলেই গান্ডেপিন্ডে গেলার জন্য থলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ছি বাজার করতে? হরেকরকম খাবারের ছবি তুলে সোশালমিডিয়ায় আপলোড করে বিনোদন করছি? পুলিশের লাঠি খেয়ে পুলিশ চলে যেতেই মেতে উঠছি আড্ডায় জমায়েতে? নিরক্ষর পরিশ্রমজীবীর কথা ছেড়েই দিলাম। ডিগ্রীধারী অশিক্ষিতেরা যারা লকডাউনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিদেশ থেকে ফিরে তথ্যগোপন করে ঘুরে বেরাচ্ছি? তাদের কী বলবো?যারা নিজেই সচেতন নই কয়েকজন মন্ত্রী, কয়েকহাজার পুলিশ কি করতে পারেন? তবু এই ভয়াবহ সময়ে নিজের নিরাপত্তার পরোয়া না করে তিনি যেভাবে ছুটে বেরিয়েছেন, বেরাচ্ছেন তা অনুকরণীয়। রাস্তায় চকের গন্ডীকাটাটা হয়তো অতিনাটকীয় কিন্তু রেশনে ফ্রীতে চাল বিতরণ,গরীবদের অর্থ অনুদান,চিকিৎসা ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলি নিরসনে সচেষ্ট হওয়া সবই তো করছেন! পুলিশ বাহিনী যেভাবে ল এন্ড অর্ডার রক্ষার পাশাপাশি প্রচারকারী ও মানবসেবাব্রতীর ভূমিকা পালন করছেন তা অনন্য নজির। তাঁদের আন্তরিকতাকে স্বীকার না করলে নিজের কাছে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। 

তবু যথাসমে লকডাউন ঘোষণা করে আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান যে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন তাতে তাঁকে স্বাগত জানাতেই হয়। বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার দ্বারা ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন তিনি মহামারী প্রতিরোধে। যার জন্য মৃত্যুহার বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলির তুলনায় নগন্য একথা স্বীকার করতেই হবে। তবু এতে আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। পথ এখনো অনেক বাকি। নতুন সংক্রমণ এখনো অব্যহত। সময় বলবে সঠিক কথাটি। তারজন্য সম্মিলিত ভারতবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চাই। 

পরিশেষে বলি এমন মহামারীর কবলে এ প্রজন্ম তো পড়েনি! লকডাউন, কোয়ারেনন্টিন, আইসোলেশন শব্দগুলি বড় নতুন এ প্রজন্মের কাছে। ধাতস্থ হতে সময় লাগবে। আশঙ্কা তাতে যেন দেরী না হয়ে যায়। মানুষ সচেতন হোক।দেশ মহামারী মুক্ত হোক। একটা সকাল এমন আসুক যেদিন ঘুম ভেঙে শুনবো লকডাউন উঠে গেছে। আমরা নিজের নিজের ক্ষুদ্র বৃত্তগুলো থেকে বেরিয়ে আসবো হাসিমুখে, বৃহৎ আকাশের নীচে,অখন্ড মাটির ওপর দাঁড়িয়ে শুধু 'মানুষ' পরিচয়ে স্বাগত জানাবো মহামারী জয়ীদের। অমৃতস্য পুত্র আমরা। জরা ব্যাধি মহামারী এবং অজস্র মৃত্যুর পথ পার হয়ে এসেছি আমরা। বিশ্বাস করি আমাদের হাতেই বিনির্মাণ হবে উত্তরপুরুষের জন্য একটা গ্রীনজোন। আমাদের দ্যুতিময় হাতেই হবে মহামারী জয়।




Previous Post Next Post