এটা কে জানিস?
হু…সাদ রবিন্দনাথ।
মানে এটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর… সাদ আবার কি?
কথা হচ্ছে আমার আর আমার বাড়িতে গ্রাম থেকে সদ্য আগত একটি বাচ্চা মেয়ের। সে তিন চার দিন ইস্কুল গেছে। তার অনেকগুলো বোন।ঘর ঝাঁট মোছা , হাতে হাতে কাজ করে দেওয়ার জন্যে নিয়ে আসা হয়েছে আমাদের বাড়ি।আমিও তখন ইস্কুলের নিচের ক্লাসে পড়ি।‘সাদ’ মানে সাধ। সাধ নামের একটি কবিতা সে ইস্কুলে জেনেছিল। যেটা রবীন্দ্রনাথ এর লেখা।
আমরা কি জানি রবীন্দ্রনাথ কে অনেক মানুষ চেনে না জানে না? না জানা কে আধুনিক শিক্ষিত সমাজ বড্ড হ্যাঁটা করে।এই না জানা নিয়ে এত্তু লিখি।
তসলিমা নাসরিনের মা আর বাবার মধ্যে লেখা চিঠি দেখবেন। তসলিমা বড্ড সাহসী তাই এই রকম দগদগে ‘না জানা’ ‘না বোঝা’ কে এতো সাবলীল ভাবে সবার সামনে আনতে...। মায়ের হৃদয় মথিত করা প্রেম সম্ভাষণের উত্তরে বাবা কেবল বলছেন হিসেব করে সংসার করতে... অভিভাবক সুলভ প্রেমহীন চিঠি। এ গল্প আমাদের দেশে ঘরে ঘরে।
কলকাতায় নেমতন্ন হল।বিরাট বড় ব্যাপার। প্রথম ক্যাটারিং শব্দটা শিখলাম।আমি আর বাবা খেতে বসেছি। আমাদের চিনামাটির প্লেট দেওয়া হয়েছে… সাথে চারকোনা ভাঁজ করা খুব সুন্দর পাতলা কাগজ। এ কাগজ লইয়া কি করিব? আমি আর বাবা খাঁটি মফস্বল ইস্টাইলে সরবে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম।মা চিরকাল স্মার্ট। কাছে এসে শান্ত হতে বলছে। আমাদের এই আচরণে লজ্জা পাচ্ছে। চারপাশে ‘কলকাতার লোক’। এক দাদা এসে বুঝিয়ে দিল কাপড়ে যাতে খাবার না পরে সেইজন্যে কোলে বিছিয়ে দিতে হবে।
তারপর খাবার শেষে যখন সাবান আর গরম জল এলো তখন ভদ্র ছিলাম। খেয়ে নিইনি। হাত ধুয়ে ছিলাম।
কলকাতা থেকে এক সহৃদয়া এলেন গ্রাম উন্নয়নের জন্যে। গ্রামের মানুষ তাঁর কথা বোঝে না। কিন্তু তাঁকে ভালোবাসে। একদিন ভন্নি দুপুরে একটি গাভীর প্রেম উঠলো উথলিয়া... সে কেবল ডাক দেয় জোরে জোরে।তিনি পশুপাখী ভালবাসেন।তিনি সকল কে ডাকাডাকি করতে থাকেন।“এর কি হল দ্যাখো”
সকলে কোন কথা না বলে সরে যায়। এক বৃদ্ধা ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বলেন “অরে পালান লাগবে... অর মা হবার ইচ্ছা হইছে”।বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য পঠন এই জ্ঞান দিতে সক্ষম?
একটি পথ শিশুদের সংস্থাতে বাচ্চাদের অনুষ্ঠানে ,গল্প পড়তে গিয়েছেন অনেক প্রথিতযশা। শিশুদের জন্যে একটা খুব সুন্দর লাইব্রেরি আছে। যারা গল্প পড়তে গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন বেশ জোরের সাথে কাগজ তুলে দেবার কথা বলছেন। বই পড়তে চাইলে ‘কিনডলে’ কিনে নেওয়া উচিৎ। বাচ্চাদের হাতে সেটায় তুলে দেওয়া উচিৎ।দুজন লম্বা মানুষএর কথা ঘাড় উঁচু করে শুনছে একটি বাচ্চা। অস্ফুট স্বরে সে বলে,
‘আমি বই নিয়ে গিয়ে কোথায় রাখবো ঠিক করতে পারি না।মা একবার বইএর মলাট ছিঁড়ে উনুন ধরিয়ে দিয়েছিল।’ শহর জানে ! যে পথের শিশুর নিজের সম্পদ বলে কিছু থাকে না।পথের জীবন গুলোর আসলে দরকার একটা ঘরের।
রোজ খেতে পাওয়া মানুষ খেতে না পাওয়া মানুষের কষ্ট বোঝে না। লক ডাউনের শুরুতে আমি এই রকম বহু মানুষ দেখলাম। যারা হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরতে চাইছিল... তাদের কে কিছু মানুষের বোকা বলে মনে হচ্ছিল। “বোকার মত কেন হাঁটছে”। কি বুদ্ধিমান সুলভ বক্তব্য।যারা হাঁটছিল তারা জানে, তাদের জন্যে কোন ব্যবস্থা রোজ খেতে পাওয়া... বারান্দা থাকা ... সুরক্ষিত থাকা মানুষরা করবে না। তাই তারা বোকার মত হাঁটে। তারা মরে যায়... তারা পিষে যায়। আর কিছু জানা থাকুক না থাকুক এই বোকারা জানে কোন রাজনৈতিক দল তাদের জন্যে ভাবে না। ভাবতে জানে না। ‘রাজনৈতিক দল’ গুলো জানে যদি সত্যি তাদের কথা ভাবতে শুরু করে, তাহলে তারা ‘ভালো’ হয়ে যাবে। ভালো হয়ে গেলে তারা ভোট পাবে না।
Tags:
ধারাবাহিক