► নজরুল ইসলাম তোফা / জনপ্রতিনিধিরাই দরিদ্র মানুষের খাদ্য ভোগ করছে ।

জনপ্রতিনিধিরাই দরিদ্র মানুষের খাদ্য ভোগ করছে
অর্থ বা সম্পদ মানব জীবনের জন্যে অপরিহার্য হলেও অর্থ কিংবা সম্পদের যথাযোগ্য ব্যবহার নাহলে তা যেন ব্যক্তি এবং সমাজ জীবনে নেমে আসে অকল্যাণ। জানা কথা হলো, সুশীল সমাজ গঠনে প্রয়াসী মানুষ ব্যক্তি ও সমাজজীবনের বৃহত্তর কল্যাণ ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার করার জন্যই গড়ে তুলা হয়েছে 'রাষ্ট্রীয় অনুশাসন এবং অনুকরণীয় ন্যায়-নীতি'। কিন্তু সমাজ জীবনে এমন কিছু লোক থাকে যারা এসব অনুশাসন কিংবা ন্যায়নীতি মান্য করেনা। তারা অন্যকে উৎপীড়ন করে, অন্যের অধিকারেও যেন তারাই অন্যায় হস্তক্ষেপ করে, তারা উচ্ছৃঙ্খল আচরণে যেন সামাজিক শৃঙ্খলাকে নস্যাৎ করে, সামাজিক স্বার্থ বিরোধী অন্যায় কিংবা অবৈধ কর্মতৎপরতায় লিপ্ত হয়। এরাই সমাজের চোখে অন্যায়কারী ও আইনের চোখেও অপরাধী বলেই বিবেচিত হয়। এদের অপরাধ অবশ্যই দণ্ডনীয়। সুতরাং, বিবেকবান মানুষকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এই বিবেকবান মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার চেতনাতেই নানা বাঁধার সম্মুখীন করে থাকে, 'নীতিকথা' যদি তুলেই ধরি তাহলে বিবেকবান মানুষ হিসেবে অন্যায়কে দিনের পর দিন সহ্য করা ঠিক নয়। আবার বলা যায় যে, এমন অন্যায় সহ্যকারীরাও ঠিক সরাসরি অন্যায় না করলেও অন্যায়কে সহযোগিতা এবং সমর্থন করা কোনো ভাবেই ঠিক হবেনা। কিন্তু দেশের যা পরিস্থিতি কি করবে তারা, অন্যায়কারীর বিরুদ্ধেই সমাজের ভালো মানুষ প্রতিবাদ করতে যে ভয় পায়। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে, প্রতিবাদ করলে ভালো মানুষেরা ঠিক ফেঁসে যায়। বস্তুত অন্যায় প্রবণ মানুষদের সংখ্যা কম হলেও সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষেরা অন্যায়ের প্রতিবাদে যেন বিপদ-ঝুঁকি নীরবেই সহ্য করে থাকে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এখন আতঙ্কিত বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব। এই চরম ক্রান্তিকালে এইদেশে হতদরিদ্র মানুষের সাহায্যের জন্য হাত পাতছে তাদেরই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে। থমকে গেছে তাদের অর্থনৈতিক কাজ-কর্ম, থমকে গেছে জীবনযাত্রা। এখন চারিদিকে শুধুমাত্র মৃত্যুর মিছিল ও নিত্যদিনেই অসহায় মানুষের খাদ্য সংগ্রহের নানা দুঃসংবাদ। এ "বাংলাদেশে অদৃশ্য করোনাভাইরাস" যে তাণ্ডব চালাচ্ছে, সেইটাকেই সামাল দিতে পৃথিবীর উন্নত ও মহাশক্তিধর দেশগুলোও হাবুডুবু খাচ্ছে। স্বভাবতই এমন প্রভাবের বাইরে থাকতে পারছে না বাংলাদেশও। ক্রমাগতই বাড়ছে যে করোনার সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। বাড়ছে বেকারত্ব কিংবা মানুষের ক্ষুধা। মুখ থুবড়ে পড়েছে এইদেশের অর্থনীতি। এরই মধ্যে সরকার বিরোধী একটি চক্র  হতদরিদ্র মানুষকে উসকে দিয়ে সরকারকে বিপাকে ফেলছে। সরকার গরিব-অসহায় মানুষদের জন্যে সাহায্যে দিচ্ছে না তা নয়। কিন্তু শোনাও যাচ্ছে, এক শ্রেণীর মানুষ তারা এ সংকট মুহূর্তে অসৎ উপায়েই গরীব-অসহায়দের নাম ভাঙিয়ে লুটেপুটে খাচ্ছে। বর্তমানের এই সরকার গরীব- অসহায়দের নানা ভাবে খাদ্য সংকটের মোকাবিলা করা সত্ত্বেও সরকারের জনপ্রতিনিধিরাই চাল সহ অন্যান্য সামগ্রী চুরি করছে। কি নিষ্ঠুর এই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। শোনা যাচ্ছে, এই গরিব অসহায় মানুষরা খাদ্যের জন্যে প্রতিবাদ করলে সে সকল প্রতিনিধিরা তাদের শারীরিক ও মানসিক আঘাত করছে। সরকারের উচিত হবে খুবদ্রুত তাদেরকে চরম শাস্তি দেওয়া। তারা এই দেশের সাধারণ মানুষদের ভোটে- কখনই নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না। 


সুতরাং যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে খুব শক্ত হয়ে। হতদরিদ্র মানুষের নিত্যদিনের জন্যে সাধারণ খাবারের অধিকার রয়েছে। আমাদের ভাবনায় শুরুর মাত্র একমাস না যেতেই ক্ষুধার নতুন রাজ্যে যেন প্রবেশ করছে মানুষ। আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশটার কোনো মানুষ না খেয়ে না মরে সেই লক্ষে সর্ব প্রথম এই সরকারকেই ভাবতে হবে। সম্মিলিত ভাবেই চেষ্টা করতে হবে, যাঁরা পারবে তাঁরাও গরিব অসহায় মানুষের জন্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। অসহায় মানুষের ইচ্ছা এবং সামর্থ থাকলেও এই ভাইরাসের স্বাস্থ্য-ঝুকির কারনে সবার দরজায় গিয়ে সাহায্য চাওয়া বেশ কঠিন। তাই অনলাইনেও তো পারি মিলিত হয়ে সাহায্য করতে। আপনার অংশগ্রহণ যত সামান্যই হোক না কেন বিশ্বাস নিয়েই পাঠানো চেষ্টা করা উচিত।

বর্তমান সরকার সকল সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের একদিনের বেতনটা কেটে নিয়ে হতদরিদ্র মানুষদের সাহায্যের জন্যে একটি মহৎ কাজ করছে। কিন্তু সকল শ্রেণী পেশার মানুষের এ সরকার সাহায্যের জন্য কোনো আবেদন করতে পারছে না। তাই উচিত হবে, সকল পেশার সামর্থযোগ্য মানুষের এই দেশের গরিব অসহায় মানুষদের জন্য সাহায্য করা। 

পরিশেষে আবারও বলতেই হচ্ছে অন্যায় স্বার্থ হাসিলের জন্য অর্থকে কোনো মহল বা শ্রেণীর অসৎ মানুষ টোপ হিসেবে কাজে লাগায়। এরাই হীন চরিত্রে মানুষ, সম্পদ হোক বা খাদ্য কিংবা অর্থই হোক লোভের জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। ঠিক এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে তা ঘটছে। এদের ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা, নীতি-আদর্শটা লোপ পায়। সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও সীমাহীন দুর্নীতি করার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হলেই যেন উদগ্র অর্থলালসা এবং অসহায় গরিবদের দেওয়া সামান্য খাদ্যদ্রব্য গুলোকেও হাত ছাড়া করতেই চায় না। অন্যায় পথে অর্জিত কোনো কিছুই সেই মানুষকে বিবেকহীন ও দাম্ভিক করে তোলে। এক শ্রেণীর মানুষ শুধুই সুযোগ খোঁজে কখন তার সময় আসে চুরি করার বা আত্মসাৎ করার উপযুক্ত সময়। 

এ ভাবেই সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে, ধনী-দারিদ্র্যের বৈষম্য। গরিব মানুষের খুব সাধারণ খাদ্য দ্রব্যটাকে যারা এমন দুর্দিনে চুরির ইচ্ছা পোষণ করে তারা এক কথায় বলতে গেলেই বলা যায় বিবেকহীন পশুরূপী শয়তান।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.