শর্মিষ্ঠা ঘোষ / কেউ দেখে শেখে কেউ ঠেকে শেখে

শর্মিষ্ঠা ঘোষ  /  কেউ দেখে শেখে কেউ ঠেকে

কেউ দেখে শেখে কেউ ঠেকে। একটা বিপদের সময় এটা আরও বোঝা যায়। গোটা পৃথিবী বিশেষত উন্নত বিশ্ব আজ ঠেকে শিখছে। গোটা স্পেন সরকারের আন্ডার এ নিয়ে নিয়েছে সব বেসরকারি হাসপাতাল। সব কর্মচারীদের চাকরির নিরাপত্তা দিচ্ছে সরকার। আমাদের সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে সরকার লকডাউন এ খেতে দিলেই অনেক আবার মাইনে কিসের। 

কি দিন কাল দেখতে হোল মাইরি একটা রোগের দৌলতে, বিশ্বের বড়দা শেষ মেষ ছিচকে চুরি করছে। ফ্রান্স এর জন্যে মাস্ক যাচ্ছিল চীন থেকে। বড়দা মাঝপথে গাপ করে ফেলল।

কেন বড়দা, পরমাণু বোমা টোমা দিয়ে ভাইরাস মারা গেল না?

আরো কমেডি আমাদের দেশের ক্ষেত্রে। যে বেঙ্গল কেমিক্যাল বেচে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র কোমর বেঁধেছিল, কর্মী সংগঠনকে কোর্টে যেতে হয়েছিল বিক্রি ঠেকাতে সেই বেঙ্গল কেমিক্যাল ই আবার গোটা ভারতে সবচেয়ে বেশি বানায় হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন যা নাকি খানিকটা কাজ করছে করোনা প্রতিরোধে।

পোয়েটিক জাস্টিস আর কাকে বলে। ভারত এই হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন, প্যারাসিটামল ইত্যাদি ওষুধ এর রপ্তানি আপাতত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতেই বড়দার ধমক এবং সুরসুর করে ব্যান প্রত্যাহার।

ধর্মের কল নড়া শুরু হয়েছে আর কি।

একে একে কোল্যাপস করছে মেডিক্যাল সিস্টেম। কোলকাতার এন আর এসের ৬৪ জন ডাক্তার নার্স এর কোয়ারান্টিনে যাওয়া , মুম্বাই এর দুটি হাসপাতাল একই কারণে সাট ডাউন হয়ে যাবার পর এবার দিল্লীর এইমস এর কার্ডিও নিওরোলজির ৩০ ডাক্তার নার্স কোয়ারান্টিনে।

মনে রাখা দরকার আমাদের দেশে প্রতি ১১ হাজার মানুষ পিছু ডাক্তার একজন। জনসংখ্যার ০.৭ পার্সেন্ট হাসপাতালের চিকিৎসার সুযোগ পেতে পারেন। আমাদের হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ভয় দেখিয়ে আদায় করল মোটাভাই। সেই ওষুধের কাঁচামাল আবার পাঠায় চীন।

আমাদের ডাক্তার নার্সদেরই মাস্ক গ্লাভস পিপিই র অভাব। আমরা আবার সেগুলো রপ্তানি করছি সার্বিয়াতে।

বেশ সার্কাস সার্কাস ব্যাপার। রিং মাস্টার একবার বললেন তালি দাও থালা বাজাও। আমরা হেব্বি মিছিল টিছিল করে থালা ভেঙ্গে ডাক্তারদের নার্স দের পাড়া ছাড়া করলাম। পিপিই র বদলে রেইনকোট পেয়েছে বলায় ডাক্তারকে গ্রেফতার করে ফেললাম। এর মধ্যেই ১০০ লোক মরে গেল। আক্রান্ত তখন ৪০০০।

আলো উৎসব করতে বললেন। আমরা পুরো দিওয়ালি দেখিয়ে দিলাম। পাটনায় বাজিব় আগুনে নিহত ৩ আহত ১৮। রাজস্থানে পুড়ল বাজি ।মরল কি বাঁচল মিডিয়া জানাতে ভুলে গেছে। কারণ তারপরই ২ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০০ ছাড়িয়েছে। মৃত সরকারি হিসেবেই ১৫০ পেরিয়ে গেছে।

আমাদের ফুল মিষ্টির দোকান খুলেছে একে একে। দোকানে তৈরী হচ্ছে করোনা মিষ্টি। হেব্বি কাটতি নিশ্চয়ই । মদের অভাব শুনছি লোক জন আপন হাত যশে মেটাচ্ছে। সামনে বৈশাখী উৎসব। আমরা বুঁদ মৌতাতে।

১৩০ কোটির দেশের ৮০ কোটি খাবার খুঁটছে। কয়েক লক্ষ ভিনরাজ্যে কাজ করতে গেছিল পেটের দায়ে। এখন পেট ও গেছে খিদেও নেই। এক বন্ধু বিশেষ ব্রান্ডের লিকার না পেয়ে মর্মাহত। সে আরেক বন্ধুকে সদুপদেশ দিয়েছে ঐ সব স্লাম ডুয়েলার অশিক্ষিত নগন্যদের চিৎকারে কর্ণপাত না করতে।

আমি শ্লা ভেবে যাচ্ছি আমি কার দলে। কে আমায় খেলতে নেবে। লুডো না। আমি পুতুল ও খেলি না। আমি কোথায় মানাই প্রভু?

Previous Post Next Post