মনোনীতা চক্রবর্তী / 'একলা'-র কথা; একা-একা ।

 'একলা'-র কথা; একা-একা /মনোনীতা চক্রবর্তী

এত ব্যাখ্যা কে চেয়েছে, বলুন তো?!
ব্যাখ্যা দিলে পাপ হবে,ব্যথা হবে। অরণ্যে  অপ্রণয় ৪৮ মাত্রার তান-সরগম গাইবে। ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখি উড়বে... বৃষ্টি রাস্তা ভুল করবে...

হৈহৈ করে তাবৎ সংসার এসে সওয়াল-জবাবে  ছুটন্ত নদীকে এজলাস বানিয়ে, বাঁক বদল করতে বাধ্য করবে... একটা ভুল থেকে ফোয়ারার মতো ভুল নামবে...আমি দুই-এর ঘরের নামতাও ভুল করবো...  একটা সাদা পৃষ্ঠার অপমৃত্যু ঘটবে...

এমন মহামারীতে পাপ বাড়িও না। বাড়াতে নেই। নিউটন সাহেব সেই কবেই আসল কথা বলে গিয়েছেন! আমি তোমার নেই। কিন্তু আসলে আছি। আসলে নেই কিন্তু আছি। আছি-নেই একটা আস্ত মায়া!  মির্নাভা হল থেকে ছুটে চলে আসে ধর্মতলা... ধর্মতলা থেকে একশ শতাংশ অধর্মে...

একটা গাছ কাটলে আমার কনিষ্ককে মনে পড়ে। হুহু করে কান্না পায়!  হোহো করে চিৎকার করে হাসতে ইচ্ছে করে! সমস্ত ভাতের হাঁড়ি উলটে অভুক্ত থাকতে ইচ্ছে করে। নিরন্ন মানুষের চাল চুরি করা লোকগুলোকে প্রকাশ্যে গুলি করে রক্ত হোলি খেলতে ইচ্ছে করে! আমার ভীষণ ইচ্ছে করে! দু'দিনের কথোপকথন যখন কোনও হিল-স্টেশনের উডেন-কটেজ আর লাল-নেইলপলিশের সম্মোহন ছুঁড়ে দেয়, স্লিভলেস রাত্রি দর্জির কাছে  ছুটতে থাকে আর ছুটতেই থাকে!  সেলুকাসকে মনে পড়ে ভীষণ!

আমার তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে।  একটা গাছ অনেক বেশি আপন। আমার ঝাঁঝরা করা বুলেটবিদ্ধ বুক জানে ক্ষরণের মানে... আসলে কী বলো তো, একটা ক্ষরণ মানে ৩৫৩টা জলপ্রপাত। ৯৯৯টা বিদ্যুৎ-রেখা! অন্তহীন এক বৈরাগ্য। বৈরাগ্য অথচ নিবিড়তা। নিবিড়তা অথচ নিবিড় নই কেউ...প্রতিপক্ষও নই। একটা অবিন্যস্ত গানের মতো... সারাটা রাত সঙ্গী থেকেও চূড়ান্ত নিঃসঙ্গ রাতের মতো। দুপুরের মতো। সকালের মতো।

জলপ্রপাত আসলে ক্ষরণের দুদ্দাড় কৈশোর... সন্ধিক্ষণ। অপরিণত অন্ধকারের মতো উজ্জ্বল... আজকাল ব্র্যান্ড বদলানো মজ্জায় ঢুকে গেছে। গ্লিসারিন দিয়ে জল আনা সমাজ সেবক বদলে দিয়েছে 'সেবা' শব্দটির এনাটমি!  'দাতা' আর 'বিজ্ঞাপনদাতা'- এক বন্ধুর দৌলতে পেয়েছিলাম। ঠিক।সংজ্ঞাকে সংজ্ঞায়িত করার কোনও মানে হয় না।

না...না! স্ট্রেস-রিলিভারও কথা রাখলো না। আমার মতো। লক-ডাউনে আড্ডা-মারা 'জনসাধারণ'-এর মতো। ড্রোন ক্যামেরাও এমন করে কী-করে! লেন্সে পরকীয়া... অবাধ্য বাতাস... মেসমারাইজিং  ল্যুক... ডাবল-চিন।

বেঙ্গল-হোশিয়ারির লুঙ্গির বিজ্ঞাপন; আর একহাতে স্যানিটাইজার!  যেন স্বপ্নে দ্যাখা রাজপুত্তুর! মানবাধিকার কমিশনে এদের বাবা-মায়েদের থাকতে হয়। থাকতে হয়। কেন তুমি বোঝো না বলো তো!  খুশি বদল। হাত বদল। প্রেমিকা থেকে সোজা 'রেন্ডি'! প্রগতি একেই বলে। জেনে নাও। ওই কাগজের বিজ্ঞাপনের মতো!


চিরচেনা বৃক্ষ হয়ে তুমি ঋজু দাঁড়িয়ে। একজন জল দিচ্ছে, আর একজন এক্স-ওয়াই ফ্যাক্টর খুঁজছে। আমার ছায়ারও অনুবাদ হয়ে গেছে! ছায়া হয়ে অন্য কেউ। অথবা কোমল রেখাবে তুমি বা তোমার মতো আর-কেউ বা আমার মতো! আমি ছায়ার তলে... 'বনতল ফুলে-ফুলে ঢাকা...'


ওই যে বন্ধুটি বাঁশি বাজিয়ে দিয়েছেন! বললেন,  ' এখুনিই কি ফাইনাল করতে বলেছি?'

অতএব, সেরে ওঠো পৃথিবী...আমিও সেরে উঠি...আমরাও...  একটা দীর্ঘশ্বাসও সম্পাদক-বাবু পুরো করতেই দেন না! কী-ই জ্বালারে বাবা!

 লাল রং-টা ভারী বেয়াদব! কিছুতেই ছাড়ে না; আমিও ছাড়তে চাই না  ( অব দ্য রেকর্ড) ...

সেরে ওঠো পৃথিবী...
'তবে পথের কাঁটা, ও তুই রক্ত মাখা চরণ তলে একলা দলো রে..'



Previous Post Next Post