সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

জীবন্ত জন্মদাগ   / সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

জীবন্ত জন্মদাগ       

বসন্তের শেষরাতে চাঁদের মায়াভরা বাদামী ছায়া নেমে আসে।
পুরুষালী বাঁশবন, জন্মদাগ ঢাকা আঁচলের মত বারান্দা
শুষে খাক করে দেওয়া নিরস শালের জানালার সদ্যজন্মা ফোঁকর টপকে
ছায়া এসে মেশে ঘামা শরীরে।

আমার ছায়া পানাভরা কুণ্ডের ঘোলাটে জলে ঢাকা দেওয়া আছে—
কখনও জলঢোঁড়া হলুদে সাপ হয়ে, কখনও রামধনু আঁকা মাছরাঙা হয়ে
রক্তাভ গোলাপী পুঁটিমাছ ধরে বেড়ায় রোদালু সূর্য আলোয় ...

রাত শেষ হবার আগেই লেবু ফুলের গন্ধ উড়ে আসে সারা ঘরে,
নীল ব্যগবন্দী বই-এর মতো
তামাটে কালোটে বর্ণা নর-নারীর
ফেলে রাখা কেলে সাপের রাস্তায় কদম ফুল ছুটে বেড়ায়।
নিজের জ্যামিতি না দেখা চাঁদ
আলাদা সরিয়ে রাখা আমার ভাঁড়ারের ছায়াকে
আরও আলাদা করে দিয়ে অচেনা নীল কদম্বের সাথে মেশে।
 সাদা থান পড়া মৃত ঠাকুমা সজনে ফুলের গন্ধ ভরা চটা হাতে
ঐ চাঁদকে মামা বলতে শিখিয়েছিল…

দুবার গর্জে ওঠা মা ডাক
একবার গেয়ে চলা মা'কে ছোট আরও ছোট করে তোলে।
মায়ের নেতিয়ে ওঠা পেটে আমার জন্মদাগের চিহ্ন তাই
শুকিয়ে ওঠা কলমি লতার মতো হয়ে ওঠে।
চোখের সামনে থাকা জং ধরা ঠাকুরদার কাস্তেটা
গাভীটার ঘাস কাটা ছেড়ে, বাবাটার কলমির শাক পাতা ছেড়ে
বসন্তে ঘামভেজা কম্বল নিয়ে ছোটে


(c) সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়
Previous Post Next Post