প্রিয়দীপ

সুপ্রিয় নবীন । করোনা  ভাইরাসের সংক্রমন  আবহে খোলা চিঠি/ প্রিয়দীপ

সুপ্রিয় নবীন।

পরবাস থেকে তোমাদের মত অসংখ্য দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষ আমাদের জন্য উদ্বিগ্ন জেনেই অপরাধ বোধ করছি। জানতে চেয়েছো কেমন আছি?

রুগ্ন এবং উলঙ্গ এই চিঠি তোমার কাছে পৌঁছাবে কিনা জানি না, তবে আমি অবশ্যই চিঠির ইতি টেনে পৌঁছে দেবোই ডাক বাক্সে। 

পর সমাচার এই যে, ভয়াবহ এক সংক্রামিত রোগের আবহে- অধিকাংশ শহর গ্রাম মহল্লায় যখন জনজীবন স্তব্ধ অথবা এমন অসংখ্য মানুষ যারা চিকিৎসা, যারা ব্যবসা , যারা শিক্ষা অথবা যারা নিদেনপক্ষে সামাজিক অথবা পারিবারিক দায়বদ্ধতায় নিজ ভূমি থেকে দূরত্বে ভীষণ উদ্বেগে দিন যাপন করছেন, অথবা এই যেমন ঘরের মানুষ টি যখন দূর প্রান্তে রুটি রোজগারের আশায় পরিযায়ী চিহ্নিতে অত্যাচারিত হচ্ছেন, মৃত্যু বরণ করছেন রাষ্টের অবরুদ্ধ ইচ্ছে খুশীর ব্যারিকেডে, ঠিক বিপরীতে এই ধরো সবেতনে ছুটির হুল্লোড়বাজ, বিত্তশালী থেকে প্রভাবশালীর সৌজন্যে সাই সাই মটর গাড়ি, মাছ বাজার, সবজি বাজার, মুদি দোকান এমনকি উন্নত বিশ্বের উন্নত সামাজিক দর্পনগুলোও খুব কি প্রশংসার দাবি রাখে, মুহূর্তের? এইসব কি আদৌ ভালো থাকতে উজ্জীবিত করে?

ভাবছো জানতে চাইলে কুশলতা .... অথচ আমি তুলে ধরছি মন কেমনের ব্যাকুলতা।

তবে কি জানো নবীন, হ্যাঁ প্রশংসার দাবী রাখে অবশ্যই এখনকার মাছ বাজার, সবজী বাজার মুদি দোকান সাথে অবশ্যই ফেসবুক, ইউটিউব আর ঘরের কোণে বোকা বাক্সের সবজান্তা মোড়লেরা।

অন্যথায় জানতেই পারতাম না সব কিছু ভুলে ছাপ দেওয়া হাতি ঘোড়া ফুলে ফলে - রাজনীতির সংজ্ঞা, সেবায়তের সংজ্ঞা এমনকি সোশ্যাল অবজ্ঞা কি, সোশ্যাল ডিস্টেন্স কেমন এবং কত ধরণের!

এই তো গত সন্ধ্যায় , বাইশ জন পাইক পেয়াদায় অভ্যস্ত বিচ্ছিন্ন দ্বীপের এক ছিন্ন বিচ্ছিন্ন সুবিশাল বেতনভুক্ত সঞ্চালককে দেখছিলাম- বকে যাচ্ছে মন হন্তারক, মেধা হন্তারক, শ্রম হন্তারক কুশীলবে অনর্গল। যদিও ওঁদের এই চাপাবাজি প্রকারান্তরে কিছু মানুষ কে .... থাক সেইসব । অন্যদিন লিখব ।

নতুন একটা ট্রেন্ড চলছে জানো?। সে ফেসবুক বা আমার মুখ বা তার মুখ যাই বলো। মৃত্যুকে মানুষ তাচ্ছিল্য করে আলিঙ্গন করতে পারে এই স্টান্টবাজি আগে কখনো দেখিনি। 

এমনি একটি জনপ্রিয় স্টান্ট, চিঠি! সংকোচ করোনা। প্রসঙ্গ প্রেম , যৌনতার নয়। প্রসঙ্গ মৌনতা , প্রসঙ্গ স্থবিরতা, প্রসঙ্গ আমাদের শিক্ষার আমাদের দীক্ষার নিরঙ্কুশ নীরবতা। 

আজ যখন নিজ ভূমির অধিকাংশ মানুষ অনাহারে, আইন কানুন পুলিশ তাড়ায় ঝোপঝাড়ে অথবা এই ধরো জনজীবন স্বাভাবিক করণে কি করণীয় সেই সব ভাবনা উড়িয়ে, বাহুবলী গুঁতিয়ে কেউ মরার হিসেব নিয়ে, কেউ ভাগের হিসাব নিয়ে কেউবা চিঠি পাল্টা চিঠিতে .... দায়িত্বের বহরে, সাত দশক অতিক্রান্তে শেখাচ্ছেন বি আর আম্বেদকারের সংজ্ঞা!

অথচ, খুব সাধারণ মস্তিস্কে অনুধাবন করলেই বোঝা যায় , রাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রথাগতভাবে একই থাকলেও স্থান-কাল- পাত্রভেদে রাজনীতিবিদদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তন কখনো ইতিবাচক, কখনো নেতিবাচক।আমাদের মতো সার্ক ভুক্ত দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রই যা নেতিবাচক। তাই আমরা উন্নত দেশগুলোর সাথে যুগপৎভাবে চলতে না পেরে পশ্চাৎপদ থাকছি বহুগুনে।

এ দায়ভার আমরা কখনই এড়াতে পারি না। কেননা এর পশ্চাতে যেমনটি রাজনীতিবিদদের অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও অশিক্ষা দায়ী, তেমনি দায়ী আমাদের মতো আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ও সু বিশাল শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত জনগনের অদূরদর্শিতা ও আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতা।

তাই এই মুহূর্তে ভীষণ প্রয়োজন সমাজের দায়বদ্ধতায় বা উন্নয়নের জন্য আদর্শ সন্তানদের। কারণ ন্যায় নীতি আদর্শবাদী মানুষরাই তো হলেন জাতির দিকনির্দেশক, সমগ্র জাতিসত্তার চিন্তা ও চেতনার প্রতিচ্ছবি। 

প্রিয় নবীন, দুঃখে র বিষয়- খুব কম সংখ্যক রাজনীতি চর্চিত মানুষের মধ্যেই উল্লেখিত বিষয়গুলোর মাণ শূন্য। এখন মোড়ে মোড়ে দল বদলানো নেতা, মিথ্যা ভাষণের নেতা, চোর থেকে ডাকাতে উন্নত নেতা, অপশাসনের নেতার থকথকে ভীড় । 

এই ভীড় থেকে রেহাই পেতেই শুধু করোনা ভাইরাস নয়, এদের থেকেও প্রয়োজন সামাজিক ডিস্টেন্স। সামাজিক প্রতিরোধ। 

জাতির ভয়াবহ এই দুঃসময়ে যেখানে প্রকৃত উচ্চশিক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধ, সমাজ সেবার উন্নত মননশীল রাজনীতিবিদদের প্রয়োজন - সেখানে .... আজ চোর বাটপারদের সকাল বিকাল কুচকাওয়াজ।

এই তো চলছে ২৪ ঘন্টা , এনি টাইম অল দা টাইম .... মৃত্যুমুখি .... মরণ আনন্দে !

ইতি -
প্রবীণ



Previous Post Next Post