গৌরব রায়

আমার শহর  গৌরব রায়

আমার শহর
গৌরব রায় 
শহরের ভিতর ছড়িয়ে থাকা উপশিরার মতো কোনও এক ফুটপাতে, 
ঘর সাজিয়ে যারা করছে খেলা রান্নাবাটি...
ওরা দম্পতি।

গ্রামের থেকে বহুদূরে আজ রোদের তাপে ফেটে যাওয়া লাল মাটি
ঘরে নেই চাল, রয়েছে দু'টো রুটি বাসি...
ওরা চাষী।

আকাশচুম্বী কোনও এক বহুতলের সাতাশ তলার প্রথম ফ্ল্যাটের ঘর
শুয়ে আছে একা বেপরোয়া সেই মহিলা...
ওনার ভীষণ জ্বর।

শহরতলির ছোট গলিতে নতুন বাইক নিয়ে অপেক্ষারত এক প্রেমিক
ওইতো আসছে সে, নীল শাড়িতে...
ওরা ঘুরবে আজ গাড়িতে।

ভর দুপুরে স্টেশনে মুখোমুখি বসে আছে দুজন, সারা গায়ে নোংরা
চলছে তর্ক, গণতন্ত্র নাকি চিবিয়ে খাচ্ছে ছাগল...
ওরা পাগল।

মফস্বলের এক চায়ের দোকানে সন্ধ্যার আড্ডা, বিষয় হলো অর্থনীতি
বাড়িতে নাকি নুন আনতে ফুরোচ্ছে পান্তা...
ওরা সবজান্তা।

রাতের লগ্ন আগুন সাক্ষী করে বিয়ে করছেন তিনি, উচ্চারিত হচ্ছে মন্ত্র
মাস চারেক আগেই করেননি তিনি মায়ের শ্রাদ্ধ,
ওসব করে নাকি লোক দেখায় যারা আস্তিক...
উনি নাস্তিক।

আমার ক্লোরোফিল বুকে দেউলিয়া মন, গৃহহীন সৃষ্টিছাড়া দিশেহারা
উদাস জীবন পাগলপারা...
আমি বাউন্ডুলে ছন্নছাড়া।

ধর্মযুদ্ধ

চারিদিকে ধোঁয়ার পিন্ড থেকে আজ ধর্মেরা উঁকি মারছে,
ক্ষমতার ক্ষুদায় মানবিকতা আজ অস্তমিত।
গণতন্ত্রের অবক্ষয় খবরের শিরোনামে...
প্রতিহিংসার মোড়কে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে সকলে...
অথচ শিশুর পেটে নেই ভাত, 
সবাই খুঁজে চলেছে একে অপরের জাত।
হিন্দুর ভারত নাকি মুসলমানের ভারত???
এই প্রশ্নে আজ ওরা দুভাগ করেছে দেশ...
আল্লা বড়ো নাকি রাম, এই নিয়ে চলছে দর কষাকষি।
দাঙ্গার আগুনে ঝলসে যাচ্ছে সমাজ...
হিংস্রতা ছাড়িয়েছে পৈশাচিক বিকারে,
ঘৃণার প্রতিষেধক যে ভালোবাসা, গুলিয়ে গেছে সবার।
সরকার বাবু আবার কথা বলার অধিকার আজ কেড়ে নিয়েছেন...
প্রতিবাদ করলে জুটছে দেশদ্রোহীর তকমা।
ঘুমিয়ে থেকে থেকে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে বিপ্লবের,
বুলেটের শব্দে দেরিতে হলেও নাকি আড়মোড়া ভাঙছে সে।
মানুষ জন্মেছে কেবল মৃত্যুর অধিকার নিয়ে,
বুঝতে শিখছে সবাই এখন আস্তে আস্তে...
তোমার কপালেও জুটবে হয় কাফন না হয় শ্বশান এর আঁচ।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে কে যেন বলছে...
ধর্মযুদ্ধ শেষে জনশূন্যহীন পড়ে থাকবে মন্দির-মসজিদ,
ওরা জানে না, "মৃত্যুর ওপারে ধর্ম বলে কিছু নেই"।


Previous Post Next Post