মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে হৃদয়মথিত-করা অসংখ্য গান প্রচারিত হয়েছে। অতুলনীয় সব গান। হায়েনা কবলিত ভয়ঙ্কর সেই দিনগুলোতে অবরুদ্ধ স্বদেশে অগ্নিঝরা এইসব গান একদিকে যেমন নিরন্তর ভরসা জুগিয়েছে, অন্যদিকে তেমনি মৃত্যুঞ্জয়ী প্রেরণা সঞ্চারের মাধ্যমে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ভাষাশহীদদের স্মরণে ১৯৬৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি গানটি রচনা করেন ।
আরও লক্ষণীয় যে এটাকে কবিতা বা গান যাই বলা হোক না কেন, তার উপস্থাপনা সরল কিন্তু কোনোভাবেই সাধারণ নয়। সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে তো নয়ই। প্রথম দুটি পঙ্ক্তি একেবারেই সাধারণ‘সালাম সালাম হাজার সালাম/সকল শহীদ স্মরণে’, কিন্তু পরবর্তী দুটি পঙ্ক্তিতে এসে থমকে দাঁড়াতে হয় যখন অবলীলায় কবি বলেন, ‘আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই/তাদের স্মৃতির চরণে॥’ এ দুটি পঙ্ক্তির যে-ব্যঞ্জনা তা কখনো ফুরাবে বলে মনে হয় না।
প্রায় অর্ধশতকের দীর্ঘ পথযাত্রায় ফজল-এ-খোদার কলম কখনো ক্লান্ত হয়নি। বিপুল বিচিত্র তার সৃষ্টিসম্ভার। অসংখ্য গান তিনি লিখেছেন। তার মধ্যে আমার প্রিয় গানের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। দেশ যখন অন্ধকারকবলিত তখন গানের আলো দিয়ে সেই অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। নিরাপদ চাকরি ছেড়ে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। দেশের প্রতি এ ভালোবাসার জন্যে উপযুক্ত মূল্যও দিতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু তিনি তাঁর স্বধর্ম ত্যাগ করেননি কখনোই। ভাবতে গ্নানি বোধ করি যে স্বাধীনতার পর চার দশক চলে গেছে। কতো বামনের গলায় ঝুলেছে চন্দ্রহার। কিন্তু জীবনের পড়ন্ত বেলাতেও ফজল-এ-খোদার প্রাপ্তির খাতা শূন্যই রয়ে গেছে।