সুমিত্রা পাল

কলম, কালি ও মন
কলম, কালি ও মন- লেখে তিনজন। অর্থাৎ, কলম, কালি ও মন একসূত্রে গ্রথিত হলেই জীবনখাতার পাতাগুলি ভরে ওঠে জীবনের জলছবিতে। সেই জলছবি জুড়ে থাকতেই পারে জীবনের ভঙ্গুর গতিপথ, ছন্দপতন অথবা ভোরের অপেক্ষায় আত্মমন্থন… অথবা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ছিন্ন ভিন্ন অনুপাত, সমীকরণ… অথবা গুপ্তঘাতকের মত ভুলে যাওয়া কোন ভুল, প্রেম-অপ্রেমের দীর্ঘশ্বাস… 

ভাগ্যিস, আমাদের পূর্বপুরুষরা কলম ও কালির কথা ভেবেছিলেন! তাইতো আজও এই দুটি জিনিস আমাদের মন ও মননের আশ্রয়।

কলম ও কালিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রতিটি স্তরের মানুষের এক ভিন্ন জগত। যে জগত লেখাপড়ার জগত। যে জগত আমাদের চেতনা, আত্মসচেতনতা এবং মনের প্রসারতার বৃদ্ধি ঘটায়। প্রদান করে আমাদের পরিচিতি, আমাদের ব্যক্তিত্ব। এমনকি আমাদের সাহসিকতা, বিশ্বাসযোগ্যতা আর উজ্জ্বলতাও। 

মানবসভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত, কলম ও কালির উৎপত্তি আর ক্রমবিকাশ নিয়ে আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। তবে সেই ইতিহাসে দৃষ্টি না পেতে বরং এই দুটিকে মাধ্যম করে, যে মন একাগ্রচিত্তে লিখে চলেছে জীবনের কথা ও কাহিনি-তার কথাতেই আসি।

মনের গভীর চিন্তা-ভাবনা, অনুধ্যানের এক স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশকে যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা তুলে ধরেছেন তাদের লেখায়।

তাইতো আমরা পেয়েছি কবি কিটস্ এর সেই অমর পঙক্তি- “Truth is beauty/Beauty is truth.”

শুনেছি রবি ঠাকুরের আত্মসমর্পণের ভাষা —“আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার/ চরণধুলার তলে/ সকল অহংকার হে আমার/ ডুবাও চোখের জলে।“ 

কবি শেলি শুনিয়েছেন সেই আশার বাণী— “If winter comes/ Can Spring be far behind?” যা আজও আমাদের চলার পথের পাথেয়।

শুধু তাই নয়, রাজ্যে এবং রাষ্ট্রে, পারিবারিক-সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি স্তরের সমস্ত evils and odds কে তীব্র চাবুকের কষাঘাতে জর্জর করে তুলতে ছাড়েননি লেখক-কবি-সাংবাদিকেরা। এমনকি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকেও উদ্বুদ্ধ এবং ত্বরান্বিত করেছিল তাঁদের জ্বালাময়ী লেখনী।

আজও কলম, কালি ও মনের একত্র সমাবেশে ঘটে চলেছে কত গোপন, কত রুদ্ধদ্বার বৈঠকের উন্মোচন। এই তিন একসঙ্গে আছে বলেই বলে উঠতে পারি—“গোপন কথাটি রবে না গোপনে...” অথবা

“যাবার দিনে এই কথাটি / বলে যেন যাই—
যা দেখেছি যা পেয়েছি/ তুলনা তার নাই।“


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.