সময় সর্বত্র আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই যেমন বদলে যায়, তেমনই আরও দৃঢ় হয় মানুষের ভাবনা, বিশ্বাস এবং উদ্যম। দশকের পর দশক অতিক্রান্ত। উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, জীবন যাপনে অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষান্তে কর্মসংস্থান, আইন কানুন এবং তার প্রয়োগ অপ্রয়োগ প্রায় সব ই প্রত্যক্ষ করেছি, করছি আমি –আমরা।
খুব বেশি সময়কালের নয়, বিগত দশক থেকেই আমরা খুব বেশি প্রত্যক্ষ করছি সমাজের বিভিন্ন স্তরের সরকারের জনবিরোধি নীতির বিরুদ্ধে কবি সাহিত্যিকদের নিরাবতা । উপঢৌকন প্রাপ্তির বহরে বিগত দশকে অনেক কবি সাহিত্যিক ই যেমন তাঁর দায় এড়িয়ে যাননি তেমনি অধিকাংশ কবি সাহিত্যিক এবং সাহিত্য সংস্কৃতির অন্যান্য ধারার মানুষেরা সযত্নে দায় এড়িয়ে বাঁচার পথ খুঁজেছেন প্রাপ্তিযোগের আশায়।
তাই খুব স্বাভাবিক, গণ মানুষের জন্য প্রকৃত কবি সাহিত্যিকদের প্রত্যয়ী কণ্ঠ, বলিষ্ঠ প্রতিবাদ আজ ম্রিয়মাণ। আজ যত সাহিত্যিক কবি, অধিকাংশই আপোষের প্রতিচ্ছবি।
তাই খুব স্বাভাবিক, গণ মানুষের জন্য প্রকৃত কবি সাহিত্যিকদের প্রত্যয়ী কণ্ঠ, বলিষ্ঠ প্রতিবাদ আজ ম্রিয়মাণ। আজ যত সাহিত্যিক কবি, অধিকাংশই আপোষের প্রতিচ্ছবি।
পড়ছিলাম বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বেশ কিছু কবিতা এবং কবির জীবনধারা। যিনি বড় বড় প্রকাশক / প্রতিষ্ঠানের তাঁবেদারি না করে ছোট আকারের এক ফর্মার পত্রিকায় কখনো নিজের লেখা কখনো সমসাময়িক অনান্যদের লেখা মুদ্রিত করে নিজে কাঁধ ঝোলায় ফিরি করেছেন জীবনের দীর্ঘ সময়। আজীবন প্রতিষ্ঠান বিরোধী এই কবি সচেতন করেছেন মানুষকে নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্যে।
বোধের সঞ্চার থেকে তাই তিনি অনুভব করেছেন, লিখেছন - উপোসেও তার মুখে হাসি থাকে , কে শিখিয়েছে তাকে ঐ সাহস ?
সারা জীবন এক ক্লেদহীন, সুন্দর সমাজ জীবনের স্বপ্নকে আকঁড়ে ধরা কবির লেখাগুলো যখন পড়ছি, এবং জানতে চেষ্টা করছি তাঁকে আরও বেশি – তখন আমিও প্রত্যক্ষ করছি রাজনৈতিক পালাবদলের পরিবর্তনের ফসল ‘শোষণের আরও এক রূপ” ।
তাঁর সময়কালে তাঁর একান্ত প্রতিবাদে লিখেছিলেন 'প্রতিবাদ' কবিতাটি-
'এভাবে মানুষ নিয়ে খেলা
মানুষের স্বপ্ন সাধ বিশ্বাস সম্মান নিয়ে
মানুষের মস্তিষ্ক হৃদয় নিয়ে
হৃদপিণ্ড ধমনী রক্ত অস্থি নিয়ে খেলা
চক্ষু জঠর গর্ভ পৌরুষ মাতৃত্ব নিয়ে খেলা
এর চেয়ে আর কী নরক, স্বাধীন স্বদেশ।'
সংগ্রামটা ছিল তাঁর মজ্জাগত, কবিতার মধ্য দিয়ে সারাটা জীবন তাই আপোষহীন সংগ্রামের কথা বলেছেন, এমনকি আটের দশকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লড়তেও তিনি লিখেছেন-
'এ লড়াই মৃত্যুর সঙ্গে মানুষের
আর হার-জিত দুটো কথাই যখন অভিধানে রয়েছে
বিনা যুদ্ধে কেউ কাউকে মাটি ছেড়ে দেবে না।'
দিন বদলের সাথে সাথে তাঁর দূরদর্শিতা আজও সমপ্রাসঙ্গিক।তাঁর লেখায়, ‘রাজা আসে যায় / আসে আর যায় / শুধু পোশাকের রং বদলায় / শুধু মুখোশের ঢং বদলায় /… দিন বদলায় না৷ ’
ঠিক যেমন রাজীবরা বদলায় না...
পদলেহনে বৈশাখী শোভন
হরেক ডজন ডজন
কেউ না।
ওরা তাঁবেদার। শিল্পী, সাহিত্যক, নেতা ক্যাডার
যেথায় সব একাকার।
বেদনা, যন্ত্রণা, ক্রোধ বিক্ষোভ সব মিলিয়ে বিরুদ্ধ পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ না করে বিরুদ্ধ পরিস্থিতির বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানোয় আবহমানকাল ধরে যারা অগ্রণী, তাঁরাই তো প্রকৃত কবি সাহিত্যিক। রুঢ় বাস্তবতার সামগ্রিক ফসলের প্রেক্ষাপট যারা প্রত্যক্ষ করে্ রচিত করেন, লিপিবদ্ধ করেন সহস্র শব্দের আলপনায় মানুষের বেঁচে থাকার সাহস।
অথচ এই সময় প্রবাহে, অগণিত রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সফল পদচারণায়, বুদ্ধিজীবির মোড়কে অসংখ্য দুর্বুদ্ধিজীবীর উত্থান এবং তাদের নির্জীবতা এই সময়ের অশনি এক সংকেত। এই দায় আমাদেরই ।
তথাপি, পঁয়তাল্লিশ অনূর্ধ্ব আজ নিজ দেহছায়ায় ‘কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়’ আমার সাহস ৷ বাঁচার সাহস ! প্রতিবাদের সাহস। চোখে চোখ রেখে বলার সাহস। তাঁর তীব্র সচেতনতা ও দায়বদ্ধতায় আবারও ঋজু হয়ে উঠি আগামীর প্রত্যয়ে। বিশ্বাস করি প্রতিবাদ নীরব হলেও তা সত্য, মর্মস্পর্শী।
শ্রীগোপী
দক্ষিণ দিনাজপুর
সুচিন্তিত মতামত দিন