তপশ্রী পাল

ভাষাহারা
ভাষা নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রথমেই মনে হল কখনো কখনো ভাষা স্তব্ধ হয়ে যায় । এখন তেমনি এক সময় । ভাষা আজ বাকরুদ্ধ ! আজ আমাদের প্রত্যেক ভারতবাসীর মনের ক্ষোভ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । হ্যাঁ, আমি বলতে চাইছি কাশ্মীরের পুলোয়ামারর ঘটনার কথা । চুয়াল্লিশটি তাজা ভারতীয় সৈনিকের এক মূহূর্তে মৃত্যুর কথা ! ভাবার বিষয় যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ভাষা কি? তারা কি বোঝাতে চায় এই নৃশংস নরহত্যার মধ্য দিয়ে ? আমরা কি কেউ বুঝি সেই ভাষা? যে সব বাবা মায়েরা, স্ত্রীরা, পুত্র কন্যারা হারালেন তাদের ভালোবাসার ধনকে, ঐ নরপিশাচরা কি বোঝে তাদের পাথর হয়ে যাওয়া বুকের ভাষা আর বাঁধনহারা অশ্রুর ভাষা? অর্থাৎ ভাষা আজ অক্ষম মানুষের মনের ভাব বোঝাতে, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে তুলতে ।

তাহলে ভেবে দেখতে হয় কখন ও কেন এই ভাষাহারা নিঃসীম অন্ধকার নেমে আসে । এটি তখনই হয়, যখন কবির ভাষায়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গৃহের প্রাচীর পৃথিবীকে শতধা বিভক্ত করে দেয় । ক্ষুদ্র ব্যাক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থকে বৃহৎ স্বার্থের ওপরে স্থান দেয় মানুষ । ইংরাজীতে যাকে বলে communication gap তাই গ্রাস করে সবাইকে । তাই কোন চিৎকার পৌছয় না কারো কানে । মানুষে মানুষে, দেশে দেশে, ধর্মে ধর্মে যেন সমুদ্রের দূরত্ব । রাজনীতির চোরা স্রোতের কালো গহ্বর গ্রাস করে নেয় সব সদিচ্ছা ।

আতঙ্কবাদীদের ভাষা ধর্মীয় জিহাদের ভাষা, ভয়ের ভাষা, যুদ্ধের ভাষা । এ ভাষা কি কোন রাষ্ট্রের ভাষা হতে পারে? না । আবার রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে রাজনীতি, ষড়যন্ত্র, দেশবিভাগ কি কোন সাধারণ মানুষের ভাষা হতে পারে? এর উত্তরও না । তাই আজ আমরা কোন ভাবেই একে অপরের ভাষা বুঝি না । পারস্পরিক আলোচনায় সমাধান করতে পারি না কোন সমস্যা । সুযোগসন্ধানীরা এই অবস্থার সুযোগ নেয় । অস্ত্র সরবরাহ করে, যুদ্ধ লাগায় । 

আজ ভাষাদিবসের প্রাক্কালে তাই চিন্তার বিষয় যে আজ আমরা কোন বিশেষ ভাষা বা বাংলা ভাষার কথা ভাবার সাথে সাথে আজ বুঝি মানবিকতার ভাষা সন্ধান করার সময় এসেছে । আসুন আমরা সবাই আজ বিভেদের ভাষা না বলে মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ স্থাপনের ভাষা বলি । আমাদের প্রত্যেকের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাই একদিন বৃহৎ রূপ নেবে । নইলে কোনদিনই কাটবে না এই নিঃসীম অন্ধকার ।



tapasripal57@gmail.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.