মুনমুন মুখার্জী

সন্তর্পণ শাটল সফর
দীর্ঘ শীত রাত্রির কুহেলিকাময় অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে হতে একটু উষ্ণতার খোঁজে হাহাকার করি না আজকাল। অন্ধকারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি অতি ধীরে। অন্ধকারেরও একটা নিজস্বতা থাকে। একবার চোখ সয়ে গেলে আত্মোপলব্ধিতে পর পর খুলে যায় সব কটি জানালা। কি, কেন, কতটা, কিভাবে... বিশ্লেষণাত্মক সহস্র ক্যাকটাস কাঁটায় বিদ্ধ হতে হতেও অপেক্ষা করা যায় পরবর্তী সূর্যোদয়ের। 

মাঝে মাঝে কাক ডাকা ভোরে পরিতৃপ্তির চাদরটিকে গায়ে আলতো জড়িয়ে রেখে হাতে তুলে নেয়া গত জন্মের মহাভারত। প্রচ্ছদে এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গ কিলোমিটার আর পৃষ্ঠা জুড়ে অগুনতি সম্পর্কের হাস্নুহেনা। বুক ভরে শ্বাস নিতে নিতে ভুলবশত ভুলে যাওয়া- অপেক্ষারত কালো মেঘের বর্ষণ আখ্যান। 

সেদিন ভোররাত্রিতে এভাবেই অতীত হাতড়ে খুঁজে পেয়েছি বেশ কিছু গঙ্গা ফড়িং, একটা পিচ ঢালা পথ, দুপাশে সারি সারি ইউক্যালিপটাস; বট; অশ্বত্থ সহ নাম না জানা সবুজের মিলিত আশ্রয়, আর কিছু অর্থহীন স্বপ্ন। 

আজ ভোরেও গিয়েছিলাম। আপাতদৃষ্টিতে ঘুণে ধরা আমার পাহাড়ী শহরে, স্মৃতিময় এক শাটল সফরে। বাঁধা আছে জানি, তবু দৃশ্যমান যাবতীয় বাঁধা অতিক্রম করে, নিচ্ছিদ্র গোপনীয়তায় প্রায়শই যাই। স্মৃতির এক একটি স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে আঁচলে কুড়িয়ে নিই ঝরে যাওয়া শিউলি, বকুল। সন্তর্পণে নিয়ে ফিরি ফেলে আসা, ভুলে যাওয়া যাবতীয় সম্পর্কের উত্তাপ। এ জন্মে আমার বেঁচে থাকার অফুরন্ত রসদ। 

আদতে স্বপ্ন আর প্রাপ্তির মধ্যবর্তী ব্যবধান মেনে নিয়ে; উত্তাপহীন সূর্যকে ইউনিভার্সেল ধরে নিলে; হিসেব মেলানোটা অনেক সহজ হয়ে যায়, ভুলে থাকা যায় স্বেচ্ছায় বেছে নেয়া যাপন নির্বাসন।    


munmun.mukherj@gmail.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.