“মানুষ যবে থেকে রাজনীতির দাস হয়েছে, সেদিনই তার মনুষ্যত্ব খোয়া গেছে । রাজনীতির জঙ্গলে ঢুকে মানুষ জানোয়ারে রূপান্তরিত হয়েছে । মনেহয় আরও অপেক্ষা করলে মানুষ শব্দটি শব্দমালা থেকে মুছে যাবে। এখন সময় স্বপ্ন দেখা এবং তার বাস্তবায়ন – প্রাত্যহিক সুন্দর সকালের জন্য। তাই এখন আমাদের কাজ, মানুষকে রাজনীতির খপ্পর থেকে মুক্ত করে ..... রাজনীতিকে মানুষের দাসে পরিণত করা”
সমাজ – নাগরিকে রাজনীতি যেখানে অপরিহার্য, সেখানে ‘রাজনীতি’ শব্দটির এবং রাজনীতি সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত উপরোক্ত বিশ্লেষণ আদতে আর সব সাধারণের মতো, বিগত বছরের একটি ফেসবুক পোস্টে বর্ষীয়ান কবি সাহিত্যক শ্রদ্ধেয় মৃণাল চক্রবর্তীর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তীব্র এই শ্লেষ, এই ঘৃণা এবং পরিশেষে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস – যা তাঁর সুচেতন কবি থেকে শিল্পী মনের ফসল।
রাজনীতি কি?
প্রচলিত সাধারণ ভাবধারায় বা অর্থে আজ রাজনীতি বলতে কুক্ষিগত ক্ষমতাকেই বোঝায়। আরও গোদাবাংলায় বলতে গেলে রাজনীতি এখন একটি বাণিজ্যিক সংস্থার মতো, যার বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ুন্ত্রিত ডিস্ট্রিবিউটার আছে, ডিলার আছে আর আছে কতিপয় সুযোগ সন্ধানী যোগী থেকে ভোগী। যেখানে খুব সহজেই মেধাহীনে চাকরি, স্বজন পোষণ, কণ্ঠরোধ, প্রতিবাদে প্রতিরোধ এমন কি আত্মিক মুনফার অকুণ্ঠ লিপ্সায় আইনের বা ক্ষমতার যাবতীয় অপব্যাবহার স্বাচ্ছন্দ্যে করা যায়।
উপলব্ধি সত্য এবং অনস্বীকার্য - আজকাল অধিকাংশই মানুষ বলেন, “রাজনীতি হলো এক ধরনের স্বার্থ উপযোজনকারী প্রক্রিয়া”। আরও একদল মানুষের অভিমত ‘রাজনীতি হলো ক্ষমতার পর্যালোচনা’ – অর্থাৎ এখন আর দেশ, সমাজ, সর্বোপরি মানুষের হয়ে কাজ করে রাজনৈতিক সেবায়তদের জনপ্রিয়তা অর্জন করে থাকা নয়, মানুষকে অর্থাৎ সাধারণ নাগরিকদেরকে কে কত বেশী দমন পীড়ন, ভাউতাবাজি, চটকদারি রংচঙা সিধান্ত দিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত, ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে পারবে তারই একটি যেন অসম প্রতিযোগিতা। মূল ধান্দা – ক্ষমতা অর্জন এবং ভক্ষণ।
যেখানে, একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতা ও সম্পদগুলো একটি জাতির মধ্যে সুষম বন্টন করার কৌশল হলো রাজনীতি, সেখানে এখন এক কথায় রাষ্ট্র সমাজ নাগরিকে প্রভূত উন্নতি সাধনে ব্রত নয় বরং অনৈতিক নানা প্রকারনে যে যতটা ক্ষমতাধর, রাজনীতিতে যেন তার অবস্থানও ততটা জোরালো। অথচ, প্রাচীন গ্রিক থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক সমাজে রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ করা যায়। গ্রিক দার্শনিকদের থেকে জানা যায়, রাজনীতি হলো একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরি করার প্রক্রিয়া। সাধারণ ভাষায় রাষ্ট্রপরিচালনার নিয়ম-রীতিপদ্ধতিকে রাজনীতি বলা হয়ে থাকে। রাজনীতি হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মধ্য দিয়ে মানুষ তার রাজনৈতিক আদর্শ অনুসারে নিজের সমাজকে বিন্যস্ত করে। শাসন ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় মূলত এই রাজনীতির মধ্য দিয়েই।
তবে কি আমরা সাধারণ নাগরিকেরা বোধ হারিয়ে ফেলেছি সৎ, সত্য উচ্চারণের। আমরা কি সত্যিই আশা হারিয়ে ফেলছি আমলায়, কামলায় ... দুর্নীতি, দালালিতে, গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে। নাকি সেই ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ বাহিত রোগে শুধুই নিজের আখের গোছাতে ... সন্তানে দুধে ভাতে ... নাকি ঠাণ্ডা ঘরে শ্রমিকের ঘাম মোছায় কলমে নিয়োজিত।
কলমের কথা স্মরণে এলেই মলমের কথা চলে আসে। মলমের কথা স্মরণে এলেই যত্রতত্র ঢলনের দৃশ্য চোখে ভাসে। নিজের ধান্দায় পরিপাটী এই সব ন্যাংটো স্বার্থপর মানুষের মিছিলে সরকারী অর্থ অনুদান, পুরুস্কার রইলেও আর যাই হোক সাধারণ মানুষের কাছে সম্ভ্রম জাগায় না। মানুষের অপকার ছাড়া উপকারে আসে না।
স্বাভাবিক ভাবেই, জগৎ ও সমকালীন প্রেক্ষাপটে বাস্তব জীবনের নানা অনুষঙ্গ এবং গভীর অনুধ্যানের মধ্যে নতুন করে স্বপ্ন দেখছি -
দুঃসাহসী, অকপট, আনপ্রেডিক্টেবল এক দঙ্গল সমমন --- দেওয়ালে দেওয়ালে কাঠ কয়লায় লিখছে -গাধায় জীবন নয়, মেধায় হোক স্বপ্ন বপন – দিন যাপনের। কোথাও ... ঘুষখোর বাবা মায়ের মুখে কালি ছিটিয়ে অকাল হোলি নামিয়ে আনুক তাঁদের পবিত্র সন্তানেরা। কোথাও ... ধর্ম যার যার দেশ সবার। কোথাও ... রাজনৈতিক দল পরিবর্তনে খারিজ হোক প্রশাসনিক নির্বাচিত পদ, সম্মানিত হোক ভোটার । কোথাও ... রাজনীতিকে দাসে পরিণীত করো – আমরা নই জোকার। কোথাও ... শুধুই পরিবর্তন নয় ... চাই মর্মার্থে পরিশোধন ।
সুচিন্তিত মতামত দিন