নিজেকে প্রশ্ন করি, কেন লিখি? কলকাতার নানা কূট কচালি বার বার বাধ্য করে প্রশ্নের সামনে আসতে _কেন লিখি?
না। আমার কোনো দায় নেই। বাংলা সাহিত্য বহু গুণী জনে সমৃদ্ধ ...সেখানে আমার কোনো দায় বা দায়িত্ব কোনওটাই নেই।
সাহিত্য বলতে আমি বুঝি আলো। সঠিক ব্যাকরণ যারা জানেন , তারা নমস্য। কোথায় শব্দ , চিন্থ ইত্যাদি ঠিকমত পড়বে বা বসবে, বানান সঠিক লেখা হল কি না সাহিত্যের এগুলো প্রয়োজন, কিন্তু মাপকাঠি না।
লেখাটি পড়ার পরে সামনে কিছু এসে যদি দাঁড়ায়, একটা ছবি, সে ছবি প্রাত্যাহিক হয়েও অনন্তের, আজকের হলেও চিরকালীন, যে ছবি কখনো মুছে যায় না। শুধু কালের প্রভাবে এদিক ওদিক হয় মাত্র।
জল পড়ে / পাতা নড়ে__কিছুই নেই। কোনো তত্ত্ব। ভাব। ব্যাকরণ__কিছুই না। ফুটে উঠছে ছবি। জেগে উঠছে অমলিন শৈশব। মায়ের হাতের শাঁখা পলা, পানের বাটা। বৃষ্টির জল ভেজা নারকেল পাতা। বারান্দায় খবরের কাগজের আড়ালে বাবার মুখ! চোখ ভিজে আসে। জল পড়ে/ পাতা নড়ে।
মনের অন্ধকার কোন গুলিতে আলো ফেলে সাহিত্য। কোনো পত্রিকার প্রকাশনায় নাম যদি না ও থাকে, তবু আমার লেখা পড়ে কোনো তাপিত প্রাণের কখনো মনে হয়, এ যেন আমার কথা__তবে সে লেখা সার্থক।
![]() |
জয়তী রায় |
জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবোধ। স্বপ্ন। ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসা। তার জায়গায় আসছে অকারণ সন্দেহ, অভিমান, অহঙ্কার। লেখাতেও ছাপ পড়ছে লেখকের মানসিকতার। দুরকম ব্যক্তিত্ব বেশিদিন বজায় রাখা যায় না। যা নিজের বিশ্বাস, যে যেমন মানুষ, লেখার আয়নায় তার ছাপ পড়তে বাধ্য।
প্রচুর লেখা প্রকাশ হচ্ছে। পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে। সাহিত্য আসর বসছে। ফেসবুক ভরে উঠছে। সংখ্যার বিচারে কোনো কমতি নেই। তবু এত অন্ধকার কেন? কেন হতাশা? কেন হাহাকার? নিন্দে, নোংরা রটনা। কেন?
সাহিত্যে আলো নেই কেন? লেখকের নিজের উপর বিশ্বাস নেই । কেন? আস্থা নেই। কেন?
দায়ী কে? রাজনীতি? অর্থাভাব? প্রচুর কারণ দেখান যায়। আসল কারণ কিন্তু সামনেই। আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করালেই ফুটে উঠবে কারণ।
যত তর্ক ই থাকুক, এটা মানতেই হবে, লেখা শেষ করে যদি ভাবতে বাধ্য না হই, নাড়া না খাই, জীবন যদি সমৃদ্ধ না হয়__সে লেখা বেঁচে থাকে না।
অন্ধকার না। শেষ পর্যন্ত থাকে কিন্তু আলো।
সুচিন্তিত মতামত দিন