আজ সারাদিন বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে। জানালার সামনে বসে আছি , বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি চলছে। আমি এসেছি এখানে সকাল ন’টার সময়, এখন দশটা ; বৃষ্টি থামবার নাম নেই ।
আমরা মানে আমি আর মুমিন ত্রিনয়নদার ঘরে বসে আছি । এখন সকাল দশটা । এতো সকালে এখানে আসবার কারণ শুধু আড্ডা মারব । নতুন কোন কেস হাতে নেই । অনেকটাই আরামে সময় কাটবে । আমাকে আমার মাসিক পত্রিকাটির জন্য লেখা দিতে হবে । ভাবছি , ত্রিনুদা যদি কিছু সাহায্য করতে পারে ।
ত্রিনুদা খাটে শুয়ে আছে । বুকের কাছে একটা বই ধরে । বই পড়ছে । যখন বই পড়ে ,তখন আমরা অবাক হয়ে দেখি । তার কথায় , যারা মনোসংযোগ করতে চাইছে , অথচ পাচ্ছেন না --- তারা ভালো বই পড়লে খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন । ত্রিনুদার হাতে যে বইটি রয়েছে , তাতে বিশ্বের নানাবিধ এন্টিক জিনিসের কথা বলা আছে । এই কয়েকদিন ধরেই দেখছি দাদা এই নিয়ে মেতে আছে । বুঝতে পারছি দাদা নতুন কোন বিষয় নিয়ে খোঁজ চালাচ্ছে । এখন হাতে কাজ নেই । ত্রিনুদা সেই সময়টাকে ব্যবহার করছে ।
আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল হাতে কতক্ষণ সময় আছে ?
আমি বললাম – দাদা আমার হাতে কোন কাজ নেই ।
মুমিন বলল – আমিও ফাঁকা ।
আমরা দু’জনেই খাটের একদিকে বসেছিলাম । ত্রিনুদার পায়ের দিকে । বেশ লম্বা খাট । ত্রিনুদার উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি । এতক্ষণ শুয়ে ছিল । উঠে , বইটা পাশে রেখে বসল । পা মুড়ে বসল , বাবু হয়ে । বলল – আমার অনেক দিন আগেকার একটা ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে ।
আমি বললাম - অনেক দিন বলতে ?
ত্রিনুদা হাসল । পাতলা সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা পড়েছে । দেখে মনে হচ্ছে আজ বেশ হাল্কা মুডে আছে । বলল –প্রায় দশ বছর আগে । মানে আমি যখন কিশোর ছিলাম । এখন অবশ্য বয়স বেড়েছে ।
মুমিন বলল – একফোঁটাও বাড়েনি বয়স । আগের মতনই আছো ।
ত্রিনয়নদার এই বছর অক্টোবরে চল্লিশ হবে । দেখে মনে হয় তিরিশ । চেহারা যেমন স্বাস্থ্যবান , মুখে নিষ্পাপ আর নরম হাসি ছড়িয়ে থাকে । চোখ দুটো গভীর । শব্দ এতটাই সম্পূর্ণ পরিণত মানুষের মতন , শুনলে যে কেউ আকর্ষিত হয়ে যাবে । ভারী গলা , মোলায়েম উগ্র নয় , গোটা ব্যবহারে ব্যক্তিত্বের ছাপ । শুধু বাঁ –দিকের চোখে একটু সমস্যা রয়েছে । ঝাপসা দেখে । এই চোখটা এমন ভাবে ক্ষতি কেন হল ? আজও রহস্য । অনেকবার এই নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেও , ত্রিনুদা একপ্রকার এড়িয়ে গিয়েছে ।
ত্রিনুদা বলল
-আমার বয়স তখন একুশ । তখনো ভৌতিক জগত নিয়ে আগ্রহ ছিল না । অভিজ্ঞতা নেই । আমি প্রতিদিন খবরের কাগজ দেখছি । অনেক গুলো সংবাদপত্র রাখতাম । হিন্দি সংবাদপত্র রাখা হত । লাল কালি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর মানে আমার আগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ খবর গোল দাগ দিয়ে রাখতাম ।
এক রবিবারের সকাল আমি ঘরের আসবাব পরিষ্কার করছিলাম । টেবিলের উপর আজকের সংবাদপত্র দেখেই হাতে তুলে নিলাম । এমন সময় বাড়ির সামনে হাল্কা ভিড়ের শব্দ শুনতে পেলাম ! জানালায় হাত রেখে ঝুঁকে দেখলাম , পুলিশের গাড়ি এসেছে । ঘড়িতে সকাল নটা । এই সময় এমন একটা দৃশ্য আমাকে অবাকই করে দিল !
আমি একাই রয়েছি । তাই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলাম ।
বাড়ির সামনে বেশ কিছুটা জায়গায় বাগান করেছি । লোহার গেট খুলে সামনেই দেখলাম উল্টোদিকে বাড়ির সিঁড়িতে পরিচিত মুখ ! এদের সাথে তিনমাস হল পরিচয় । বাড়িটার মালিক পল্লব বসু । আশির উপর বয়স একাই থাকেন । তিনমাস হয়েছে ছেলে আর ছেলের বউ এসেছে ।
আমাকে দেখেই অচিক বাবু এগিয়ে এলেন । ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছি , এখানে কিছু একটা বাজে ঘটনা ঘটে গিয়েছে !
অচিক বসু আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল – কাল রাতে বাবা আত্মহত্যা করেছে !
কথাটা শুনেই আমার শরীরে কেমন অদ্ভুত অস্বস্থি হতে শুরু করল । এই লোকটা আচমকা কেন নিজেকে মারতে গেলেন ! অবশ্য আমি ঘুমানোর আগে ধ্যান করি । ধ্যান ভাঙতে রাত এগারোটা । এই পাড়া তখন প্রথম পর্বের ঘুম শেষ করে ।
নিস্তব্ধ রাস্তা , নির্বাক গাছ , নির্জন অন্ধকার, পাড়ার বাড়ি গুলোতে সব আলো নিভে যায় । ধ্যান থেকে নেমে, সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে এলাম । আমি একাই থাকি এখানে । দেখি ছাদ থেকে রাতের পাড়া । এক অদ্ভুত একাকীত্ব আমাকে ঘিরে ধরে , আর ঠিক সেই সময় উল্টো দিকের ছাদে অচিক বসুর বাবা পল্লব বাবুকে দেখেছিলাম । আচমকা দেখে অবাকই লেগেছিল । কিছুটা ঘাবড়েও গিয়েছিলাম । এতো রাতে ছাদে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকলেও ; আমি ঠিক চিনেছি । আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি স্পষ্ট যেন কানে ওনার নিঃশ্বাস শুনতে পেলাম ! হ্যাঁ , আবারো । এমনটা কেন হচ্ছে ? মানে উনি ওই দিকে দাঁড়িয়ে আছেন । এতোটুকু বুঝতে পাচ্ছি এই দিকে তাকিয়ে রয়েছেন । কিন্তু উঁচু গলায় কথা না বললে , কেউ নিজের আওয়াজ এই দিকের ছাদের শোনাতে পারবেনা । আর ওনার নিঃশ্বাস শুনব কেমন করে ? সবটাই আমার ভুল হবে । একা রয়েছি , তাই হয়ত শুনছি । এইবার দেখলাম লোকটি দুটো হাত তুলল ! কিছু ঈশারা করছে । এতো রাতে আর কথা বাড়ালাম না । ছাদ থেকে নেমে এলাম ।
ঘরে এসে দেখলাম রাত বারোটা দশ । ধ্যান ছেড়েছিলাম , রাত এগারোটা কুড়ি হবে । এখন বারোটা দশ ; মানে পঞ্চাশ মিনিট ছাদে পায়চারি করেছি । ছাদের অভিজ্ঞতায় বিছানায় শুয়ে মনটা খুব অগোছালো হয়ে গিয়েছে । অশান্ত । মনে হচ্ছে , পল্লব বাবু আমাকে বিশেষ কিছু বলতে চেয়েছিল আমি হয়ত বুঝতে পারলাম না !
অচিক বসুর কথা শুনেই , আমার খুব শরীর খারাপ লাগছিল , লোকটা আত্মহত্যা করেছে !
আমি বললাম – কখন ?
অচিক বসু বলল - দেখুন রাত বারোটা পর্যন্ত আমরাই ছিলাম । তারপর বাবা দরজা বন্ধ করে দেয় । মা মারা যাওয়ার পরেই বাবা একাই শুতেন । আমাদের অনুমান বারোটার কাছাকাছি হবে ।
-না ।
আমার কথা শুনে , অচিক বসু বলল – মানে ?
আমি বলতে পারলাম না , বারোটা পর্যন্ত আপনারা থাকলে ,আপনাদের সামনেই হয়ত আসেনি । তাহলে পরের দশ মিনিটে এসেছিলেন ! কেননা বারোটা দশ পর্যন্ত আমিই ছিলাম । তারপর হয়ত আত্মহত্যা করেছেন । আমি চেপে গেলাম ।
বললাম - বডি ?
সামনেই পুলিশের ভ্যান দাঁড়িয়ে । আমি গিয়ে দেখলাম , মৃতদেহ কাপড় দিয়ে ঢাকা । সেই কাপড়ের ফাঁক দিয়ে দেখি , ভিতরে বীভৎস হয়ে রয়েছে । পুলিশ প্রিজম ভ্যানের ভিতর ফেলে রেখেছে । কেন জানি আগের রাতের নিঃশ্বাসের শব্দ কানে ভেসে এলো ।
২
রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রথমেই আগের দিনের কথা ভাবছিলাম । কেন ? মানুষের মনে এমন অনেক কথাই আসে , যে কথার মানে থাকেনা । এইসব কথা গুলো ভাবতে হয়না , এমনিই চলে আসে । এখন রাত নটা । পাড়ার মুখটা খুব চুপ হয়ে আছে । এমনটা হওয়ার কথা নয় । বাড়িতে একা থাকি , বাবা-মা মামা বাড়ি গিয়েছে । আমি একা থাকতেই বেশি পছন্দ করি । আগের দিন পল্লব বাবুর আত্মহত্যার করা মৃত দেহটা দেখবার পর , রাতে ভালো ঘুম হয়নি । আমার মনে হচ্ছিল , উনি হয়ত এখনো অপেক্ষা করছেন !কিন্তু কার জন্য ? কেন ? এইসব থেকেও অবাক করা কথা হচ্ছে এমন একটা উদ্ভট চিন্তা আমার মাথায় কেন এলো ?
শুনেছি একা থাকলে এইসব বাজে চিন্তারা ভিড় করে । সারাদিন একাই ছিলাম । বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম । ফিরতে রাত এগারোটা । চারদিক অন্ধকার । নিস্তব্ধ।
আমি এতটুকু বুঝতে পাচ্ছি , এই যে চিন্তা --- এমনি –এমনি আসছে না ; কোন শক্ত ভীত আছে হয়ত । এটা আমার মনের ভিতর থেকেই আসছে । মানুষের মন যখন স্থির হয়ে কিছু বলে , মেনে নিতে হয় । আমি নিচ্ছি । আমার মনে হচ্ছে দুপুরে যাতে এই চিন্তা আমাকে না খেতে পারে , তাই ব্যারাকপুরে বন্ধুর বাড়ি ছিলাম । নাও ফিরতে পারতাম , কিন্তু মনে হল বাবা- মা য়ের ফিরতে দু’ দিন বাকী । এতদিন বন্ধুর বাড়ি থাকা যায় না । তাছাড়া আমি কি নিজের একাকীত্বের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছি ? এই অজানা ভয় কিসের ?
আমি নিজেকে বোঝালাম - ত্রিনয়ন , পল্লব বাবু মারা গিয়েছেন , আর এমন হতে পারে মরবার আগে ছাদে উঠেছিল তোমাকে দেখে অবাক হয় । আর তারপর থেকেই যা দেখে আসছ -- সবটাই স্নায়ু ঘটিত ব্যাপার । মৃতেরা এই জীবিতদের পৃথিবীতে ফিরে আসেনা ।
পল্লব বাবুদের বাড়ির কাছে আস্তেই কিছুটা দূরে একটা ছায়া মূর্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম । সেইদিকে হাঁটছি ।
বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়াতেই , স্পষ্ট দেখলাম বামদিকে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় পল্লব বাবু দাঁড়িয়ে ! গলা শুকিয়ে এসেছে , যেই লোকটার দেহ আমি ভ্যানে দেখেছি সে এখানে কেমন করে ? মনে হচ্ছিল চোখ বন্ধ করে রাখি । আমি কিছুক্ষণের জন্য মুখের উপর হাত রাখলাম । হাত সরিয়ে দেখতেই দেখি চারপাশে কেউ নেই । সবটাই মনের ভুল । অথচ আমি বুঝতে পারছি একটা চাপা ভয় আমাকে ঘিরে ধরছে ।
অনেক কষ্টে দেখলাম ঘড়িতে রাত এগারোটা । আমার চারদিক ঝাপসা , চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে । মনে হলও চোখ দুটো বন্ধ হওয়ার আগে পল্লব বাবু ! কতক্ষণ শুয়ে ছিলাম জানিনা । চোখ খুলতেই দেখলাম চারপাশে চেনা মুখ ।
অচিক বসু আমার পাশেই বসেছে। ঘরটাতে হাল্কা আলো আছে । উনি আমার মাথার কাছে বসে আছে । আমাকে বলল – বাড়ির সামনে শুয়ে ছিলে । রাস্তায় মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে যাও । আমি অফিস থেকে ফিরবার সময় তোমাকে দেখে বুঝেছি , খুব চাপে আছো । কেন বলতো ?
আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা । পল্লব বাবুকে দেখেছি বললে আমায় উন্মাদ ভাববে । আমি নিজেও নিশ্চিত নই , একজন মৃত মানুষ দেখা দিচ্ছে । এটা হতে পারেনা , কেননা মৃতরা এই জীবিতদের পৃথিবীতে ফিরে আসেনা । আমার মনের ভুল হবে । আবার আমার চখে ঘুম নেমেছে বুঝলেও , অজ্ঞান হয়ে গেলাম কেন ?
- জল হবে ? খুব তেষ্টা পেয়েছে ।
আমার দিকে তাকিয়ে অচিক বসু বলল – দাঁড়াও দিচ্ছি ।
আগের থেকে আমার এখন কিছুটা সুস্থ বোধ হচ্ছে । অচিক বসুর স্ত্রী আমার জন্য গরম দুধ নিয়ে এসেছে গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলল – আজ এখানে থেকে যেতে পারো । মনে হচ্ছে শরীর খারাপ ।
-তা নয় কাকিমা । আসলে একটু চিন্তায় আছি । রাতে ঘুম হচ্ছে না । তাই হয়ত দুর্বলতা দেখা দিয়েছে ।
-মা কবে ফিরবে ?
-দু’দিন বাদে ।
-এই দু’দিন ।
-ভালো এই দু’দিন আমার কাছে থাকবে ।
আমার খুব অস্বস্থি হচ্ছিল । এমন একটা বিশ্রী ব্যাপার ঘটে গেল ! লজ্জা লাগছে । মাথা নিচু করে বললাম
-দেখুন আমাকে নিয়ে এতো ব্যস্ত হবেন না । আমি ঠিকাছি ।
-সে তুমি বলবে হবে । এখন তোমার অভিভাবক আমরা । আমার নিজের ছেলে কানাডায় আছে । আমি বুঝি মায়ের বুক ফেটে যায়, সন্তানকে কাছে দেখতে না পেলে । আমরা তোমাদের ভবানাই সারাক্ষণ ভাবছি । তোমার মাও হয়ত ভাবছেন । ডাক্তার বলেছেন মানসিক চাপে তুমি জ্ঞান হারিয়েছিলে । এমন কিছু নয় । তবুও আমি চাই বাড়ির লোক না আসা পর্যন্ত তুমি আমাদের সাথেই থাকো ।
-দেখুন এটা বলবেন না । আসলে আমার কিছু কাজ আছে । ওগুলো রাত জেগে করি । তাছাড়া এই দিক আর ওইদিক । অসুবিধা হলে ডাকব ।
অচিক বসুর স্ত্রী নীলিমা দেবী কিছুক্ষণ আমার দিকে কড়া চোখে চেয়েছিল । বলল – রাতের খাওয়া আমার সাথেই খাবে । এখন বারোটা । খেয়ে নাও এসো ।
-ঘরে হাল্কা কিছু খাবার আছে । খেয়ে নেব । তাছাড়া আপনাদের এখন অশৌচ চলছে । ঝামেলা নেবেন না । এতে অসুবিধা বাড়বে , আমারও খারাপ লাগবে ।
নীলিমা দেবী বলল - তোমার কাকু পাক্কা কমিউনিস্ট। এই সব হিন্দু নিয়ম উনি মানেন না। যদিও আমি লুকিয়ে –লুকিয়ে যতটা সম্ভব করব । এই বাড়িটা ছেড়ে যেতে হবে ।
-মানে ?
-কানাডাতে ছেলেকে পড়াতে পাঠিয়েছি । এখানে শ্বশুর মশাইয়ের জন্য আসা । মানে ওনাকে নিয়ে যাওয়া যাবে না । উনি যেতে চাইছিলেন না । আমরা বুঝতেও পারিনি ,ওনার ভিতর এমন কিছু চলছিল ।
আমি নীলিমা দেবীর পিছনে খোলা দরজা দিয়ে বারান্দায় একটা আরাম কেদারা দেখলাম , খুব হাল্কা আলো আছে । সেই আলোয় একটা ছায়া মূর্তি বসে আছে ! অচিক বসু আমার সামনেই পাশের ঘরে গিয়েছেন । উনি নন । এই বাড়িতে অচিক বসু আর নীলিমা দেবী বাদে আর কেউ নেই । অচিক বসুর মা মারা গিয়েছেন ছোটবেলাতেই । পল্লব বাবু আত্মহত্যা করেছেন । তাহলে মূর্তিটা কার ?
বুকটা কেমন যেন কাঁপছে । এই দৃশ্য নতুন নয় । বুঝতে পারছি , হ্যাঁ অন্ধকারেও চোখের চাহনি দেখে বুঝলাম পরিচিত । একেই আমি বারংবার দেখেছি । অজ্ঞান হওয়ার আগেও । আমি মন শক্ত করে নীলিমা দেবীকে বললাম
-আমিও বুঝতে পারছি না !
-মানে ?
-উনি মনে হচ্ছে এখনো মনের মধ্যে কিছু চালাচ্ছেন !
-বুঝলাম না।
সম্বিত ফিরতেই টের পেলাম বাড়তি বলেছি । বললাম –এই বাড়িটা বেঁচে দেবেন ?
-তেমনই কথা চলছে ।
৩
রাতে আমি নিজের ঘরেই থাকতে বেশি পছন্দ করি । চলে এলাম । আমি এতক্ষণে এই ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হয়েছি , আমি যখন অচিক বসু আর নীলিমা দেবীর সাথে ডাইনিং টেবিলে খাচ্ছিলাম – দূরে আমাদের কেউ লক্ষ্য করছিল ! সে মানুষ নয় । জন্তুও নয় । ছায়া । এই ছায়া হুবহু পল্লব বাবুর মতন দেখতে । তার মুখে আমি বেদনা দেখেছি । আমিই শুধু তাকে দেখতে পারি । আমিই তার কষ্ট বুঝতে পারি । এই যে আর সবাইকে এড়িয়ে আমার আর পল্লব বাবুর মধ্যে যে যোগাযোগ হয়েছে , এখন আমি বেশ উপভোগ করছি ।
এতটুকু বুঝতে পেরেছি পল্লব বাবু আমার ক্ষতি করবেন না । তাহলে আমি নিজেই স্বীকার করলাম , মৃত্যুর পরেও আত্মা ফিরে আসে ! অবশ্য এমন অভিজ্ঞতা এর আগেও আমার হয়েছে । এইবার আমি আরও টের পেলাম । এখনো মনে হচ্ছে শরীর ছাড়াও একটা মানুষ আরেকটা মানুষের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারে না । সে মানুষ নয় , কিন্তু জীবিত মানুষের অনুভূতিতে সে ফিরে আসে ।
আমার রোমাঞ্চ হচ্ছে । এখন রাত বারোটা । নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে আছি । জানালাটা বন্ধই করে দিয়েছি । এখন আর ভয় নেই । কেননা পল্লব বাবুর অস্তিত্ব আমাকে এতটুকু সজাগ করেছে , উনি কিছু বলতে চাইছেন ।
আমি বুঝতে পারছি না , ওনার কথা আমি বুঝব কেমন করে ? আর যদি সত্যিই মৃত্যুর পরেও আত্মা বলে কোন কিছু থেকে থাকে তা আমাকেই কেন দেখা দিচ্ছে ? আজ সারাদিন অনেক ধকল গেল । এখন একা ঘরে একটু ভয় – ভয় করছে , কেননা আমি নিজেও জানিনা আত্মাটির আমার কাছে আসবার উদ্দেশ্য । আমি এটাও জানিনা এই আত্মা ক্ষতিকারক কতটা ? নিজেকে মাঝে -মাঝে নিজেই শক্তি দিতে হয় , আমার পুরো অভিজ্ঞতাটাই নতুন । খুব ঘুমে চোখ দুটো ভারি ভারী হয়ে আসছে ।
অস্পষ্ট আলোয় ভরে আছে ঘর । একজন মধ্যবয়স্ক লোক , বয়স পঞ্চাশের কাছে হবে । লোকটা দরজা খুলে ঢুকল । টেবিলে দুধের গ্লাসে অনেক গুলো ওষুধ দিচ্ছে । তারপর লোকটা চলে গেল !
ঘরে আলো নেই। ছায়া –ছায়া আলো যেন এদিক ওদিক ছড়িয়ে আছে। সেই আলোয় ঘরটা দেখা যাচ্ছে । বড় খাট । জানালা। জানালা বন্ধ । দরজাও বন্ধ । বেশকিছুক্ষণ সময় চলে গিয়েছে । একজন দরজা খুলে ঢুকল ।
আগের লোকটার বয়স যদি পঞ্চাশ হয় , এই লোকটা বৃদ্ধ । আশি পেরিয়েছে । চুল গুলো সাদা । মুখ গুলো দীর্ঘ রোগে ভুগবার ইঙ্গিত বহন করছে । লোকটা দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে দুধটা গলায় ঢেলে নিল । তারপর শুয়ে পড়ল বিছানায় ।
আরও রাত , চুপিচুপি দুটো মানুষ ঘরে ঢুকল । এদের মধ্যে একজন পুরুষ , যে আগে এসেছিল , দুধে ওষুধ মিশিয়েছে । আরেকজন প্রায় কাছাকাছি বয়সী মহিলা । তারা কানে-কানে কিছু বলছে । মহিলাটি চুপ করে রইল । পুরুষটি খাটের উপর উঠে বয়স্ক লোকটির পাশে দাঁড়িয়ে হাতে ঈশারা করছে । মহিলা বেশ মোটা দড়ি এনে সিলিং ফ্যানের সাথে বেঁধে , বয়স্ক লোকটির গলায় বাঁধছে ! মর্মান্তিক । এক্ষুনি লোকটি বৃদ্ধ লোকটিকে ঝুলিয়ে দেবে । লোকটির হাতে চকচকে রুপোর আংটির উপর চোখ ঝলসানো আলো। এটা দিনের বেলা নয়। রাত । এইসব যখন ঘটছে , তখন ঘরে বৃদ্ধ লোক , মধ্যবয়স্ক পুরুষ , মহিলা বাদ দিয়ে আরেকজন রয়েছে ! কে ? হ্যাঁ হুবহু সেই বৃদ্ধ লোকটি , যাকে দড়িতে ঝোলানো হবে! এটা শুধু হতবাক করা দৃশ্য নয়, একটা অসম্ভব, একজন মানুষ নির্বিকার চোখে দাঁড়িয়ে নিজের মৃত্যু দেখছে ! তাহলে দু’জনে এক চেহারার হলেও তারা আলাদা ? হয়ত এই বয়স্ক লোকটা খুনে এই তিনজনের ভূমিকা আছে !
বৃদ্ধ লোকটি তাকিয়ে আছে ...
আচমকাই দেখল আরেকজন একইরকম দেখতে বৃদ্ধ লোককে ঝুলিয়ে দেওয়া হল । এই খুনটা দেখেই লাফিয়ে উঠলাম !
আমি চোখ খুলতেই দেখলাম নিজের ঘরেই শুয়ে আছি । শরীরের ঘাম দিচ্ছে । এতক্ষণ আমিই এই স্বপ্ন দেখছিলাম ! না এটা কোন ইঙ্গিতবহন করবে , কেননা ওই একই চেহারার বয়স্ক লোক হচ্ছে পল্লব বসু ।
মানে ? উনিও তো আত্মহত্যা করেছেন । কিছুক্ষণের জন্য যদি ধরেনি পল্লব বাবু যেইরাতে আত্মহত্যা করেছেন , এই ঘটনা সেই রাতেরই । তারমানে খুন হয়েছেন , আত্মহত্যা করেননি !
পল্লব বসু সেই রাতে নিজের উপর ঘটে যাওয়া অন্যায় ভুলত পারেনি , তারমানে আমি ধরে নেব , এটাই সেইরাতের দৃশ্য !
আমি পাশে রাখা জলের বোতল থেকে জল নিজের গলায় ঢাললাম । কপালে বিব্দু – বিন্দু ঘাম জমেছে । আমি হাফাচ্ছি । সাথে –সাথে মনে হচ্ছে , আমাকেই এই রহস্যের সমাধান করতে হবে , কাল একবার অচিক বসুর সাথে কথা বলতে হবে ।
৪
কাল সারারাত আমি ভেবেছি । যেই দৃশ্য আমার চোখের সামনে অভিনীত হয়েছে ; মন বলছে তা নিছকই স্বপ্ন নয় । আমি স্বপ্ন দেখলেও , তা নিয়ে এতটা ভাবনায় থাকিনা । আজ এই ভোরে শেষ রাতের সেই অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে । আমি আরেকটু মন দিয়ে ভেবেছি , সেখানে মন বলছে ঘরের ভিতরে যে স্বামী আর স্ত্রী ছিলেন --- অচিক বসু আর তার স্ত্রী নীলিমা দেবী । এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারা এমন কাজ করলেন কেন ?
আমি এইসব কথা অচিক বসুকে জিজ্ঞেস করব । আমাকে জানতেই হবে । যদিও উনি আমাকে পাত্তা দেবেন না হয়ত । আমি অন্তত নিজের মনে এতটুকু আস্থা পেয়েছি , পল্লব বাবুর আত্মা আমাকে সেই রাতের কথা বলতে চেয়েছেন । আমার শরীরের চিন্তা প্রবাহকে নিয়ন্ত্রিত করে , ঘটে যাওয়া অনুভূতিকে দৃশ্যরূপ দিয়েছে । এমনটা ঘটেছে , তাই আমি দেখেছি ।
যোধপুরপার্কের সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম , অচিক বসু নার্সারির লোকটির সাথে কথা বলছে । আমি জানি উনি পার্কে ঝিলের ধারে এসে হাঁটাহাঁটি করবেন । এখন ভোর পাঁচটা । হাল্কা গরম পড়ছে । আমকে বেশীক্ষণ সময় নিলে চলবে না । লোক ঘন হয়ে গেলে । সমস্যা বাড়বে । আমি এতটুকু বুঝে গিয়েছি , পুলিশ হয়ত গোটা ব্যাপারটাই ধরে ফেলবে । তার আগে আমাকে এই খুনের কারণ জানতে হবে । হ্যাঁ আগের রাতে দেখা রুপোর আংটি দেখতে পাচ্ছি । এইবার আমি আরও দৃঢ় হচ্ছি , খুনটা দু’জনে মিলেই করেছে । আগের রাতের দৃশ্য মনগড়া নয় ।
-কেমন আছো ?
খেয়াল করিনি , অচিক বসু যোধপুর পার্কের নার্সারী থেকে বেরিয়ে , আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন । আমি বললাম
-স্যার আপনার সাথে কথা আছে ।
-বলনা ।
-আপনি আমার সাথে পার্কে যেতে পারবেন ?
-কেন নয় ?
আমরা পার্কে এসে বসলাম ।
-স্যার , আমি কিছু কথা বলব । আমি জানি আপনি অস্বীকার করবেন না ।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে অচিক বসু বললেন
-বলতে পারো ।
স্যার , পল্লব বাবু আত্মহত্যা করেন নি ।
-মানে !!!!
যতটা বিস্মিত হবেন ভেবেছিলাম , অচিক বসুর প্রতিক্রিয়া তাকেও ছাপিয়ে গেল !
-এটা কেমন কথা ! মানে আত্মহত্যা করল । আর তুমি বলছ আত্মহত্যা নয় !
-আমি বলছি । তাকে খুন করা হয়েছে ।
-মানে ?
-পুলক বাবু আত্মহত্যা করলেন অথচ , কোন সুইসাইড নোট লিখলেন না !
-দেখো , এটা আমি কেমন করে বলব ! মানে বাবাই এর উত্তর দিতে পারতেন ।
-স্যার , আপনার বাবাই দিয়েছেন ।
-মানে ? কিছু বুঝতে পারছি না । তোমার কথার মানে বুঝলাম না ।
-আপনাকে আমি একটা রাতের ঘটনা বলব দেখুন তো মিলছে নাকি ?
-মানে ?
-আপনার বাবা উচ্চ রক্তচাপের এর রুগী । হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন । আপনার বাবা রাতে একগ্লাস দুধ খেয়ে ঘুমোতেন । পল্লব বাবুর আসবার আগেই আপনি অনেক ওষুধ দুধে মিশিয়ে দেন । আমি অনুমান করছি ঘুমের ওষুধ ছিল । মাঝরাতে পল্লব বাবু ঘুমিয়ে গেছেন , আপনি আর আপনার স্ত্রী গলায় দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে
দিলেন ।
অচিক বসুর মুখে হাসি নেই । অবিশ্বাস নেই । হয়ত আচমকাই ঘাবড়ে গিয়েছেন ! কেননা আমার কাছ থেকে উনি এতটা নিখুঁত বর্ণনা হয়ত আশা করেননি । মুখটাকে শক্ত করে , জোর করেই বলল
-তোমার আজ কি হয়েছে ? মানে এইসব ভুল বকছ ?
-দেখুন আমি যা বলছি , সবটাই ঠিক । আপনি মানবেন । স্বীকার করতে চাইছিলেন না । আমি এইসব কিছু দেখেছি পল্লব বসুর চোখ দিয়েই । আপনাকে একটা কথা বলছি , আপনি ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলেন , তখনই পল্লব বাবু হার্টফেল করে মারা যান । আপনি দ্বিতীয়বার নাও করতে পারতেন । আমি জানি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আশি বছরের বৃদ্ধের খুনকে চেপে যাবেন । আমায় একটা উত্তর দিন , পল্লব বসুকে খুন করলেন কেন ? যে পিতা আপনাকে এতো বড় করল । ভবিষ্যৎ দিল । তাকেই আর কয়েকটা বছর বাঁচতে দিলেন না ! এতাই তার পাওনা ?
কিছুক্ষণ মাটির দিকে তাকিয়ে , দুহাত দিয়ে নিজের মাথা ধরল । হাঁটু ভেঙে বসে পড়েছে , বলল –হ্যাঁ এই লোকটা না মরলে আমি এই বাড়িটা বিক্রি করতে পারছিলাম না। ছেলে কানাডায় পড়ছে । টাকা দরকার । নিজের ছেলের ভালো ভবিষ্যতের জন্য খুন করেছি । নীলিমা ছিল না ।রাজি হয়নি । কিন্তু অন্ধ সন্তান স্নেহ , নিরাপত্তার লোভ ...আমার কথা শুনতে বাধ্য হল । আমরা বারোটা পর্যন্ত ছিলাম । উনি ঘরে ছিলেন না , তখনই অনেক গুলো ওষুধ দুধে মিশিয়ে দিয়েছিলাম । বাবা এসে দুধ খায় । বাবা আধ ঘণ্টা গল্প করত । সেইদিন ও করেছিল , তারপর ঘুমিয়ে পড়ল । আমরা বারোটা পনেরো নাগাদ গলায় ফাঁস লাগাই । কিন্তু তুমি জানলে কেমন করে !!
আমি হেসে বললাম – আপনার বাবার আত্মা এসে আমাকে দেখা দিয়েছিল। সম্ভবত ওনার হার্ট এতটাই দুর্বল ছিল যে মাত্রারিক্ত ওষুধের চাপ নিতে পারেন নি। বারোটা পাঁচ এর খুব কাছেই মৃত্যু হয় । আমি সেই সময় ছাদে উঠে পায়চারি করছিলাম। আচমকাই ছাদ থেকে নামবার সময় আপনার বাবাকে দেখি। পরের দিন আপনার কাছে ওনার আত্মহত্যার কথা ভেবে চমকে গিয়েছিলাম।পল্লব বাবুর অতৃপ্ত আত্মাই তাকে হত্যার কারণ জানবার জন্য আমাকে দেখা দিচ্ছিলেন। আমি জানিনা আমাকেই কেন? আপনি বিশ্বাস করবেন না তাই বলিনি । কেননা আমার নিজেরও এইসব আত্মা , ভৌতিক ব্যাপারে আগ্রহ নেই । অথচ দেখুন সেই আমিই কেমন এই সবের মধ্যে জড়িয়ে পড়লাম !
এরপর অচিক বসু শিশুর মতন –‘ বাবা ...বা...বা।।’ ...... বলে কাঁদতে শুরু করল ।
এইসময়টা আমার এখানে থাকা উচিত নয় । আজ মা –বাব ফিরে আসবে । কেন জানি আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছে । একদিন অচিক বসুরাও হয়ত তাদের সন্তানের কাছে এমনই অপাংক্তেয় হয়ে উঠবেন ! এই সত্যটা বুঝতে পেরেই কী তাঁর এই স্বীকারোক্তি ? নাকি নিজের কর্মফলের জন্য কাঁদলেন ? জানিনা । এতটুকু বুঝতে পারছি আগে পরিস্থিতি আরও পাল্টাবে । কয়েক বছর বাদে বৃদ্ধ বাবা –মা কে খুন করাটাই না রীতি হয়ে ওঠে
৫
ত্রিনয়নদা গল্পটা শেষ করেই জানালার কাছে চলে গেল । বাইরে বৃষ্টি থেমে গিয়েছে । দুপুর দুটো । ত্রিনুদা বলল - সেই দিনের অচিক বসুর যন্ত্রণা ভরা মুখ আজও মনে পড়ে । খারাপ লাগছে আমি কিছু করতে পারলাম না ।
-তোমার কিছু করবার ছিল না ।
মুমিনের কথা শুনে আমি বললাম - তুমি ওনাকে জেলেও পাঠাতে পারতে না । তোমার কথা কেউ বিশ্বাস করত না ।
ত্রিনুদা আমার দিকে তাকিয়ে বলল - তারপর বাড়ি বিক্রি হলেও , শুনেছি অচিক বসু আর নীলিমা দেবী নিজেদের অন্যায় স্বীকার করে নেন । শাস্তিও হয় শেষ জীবন পর্যন্ত জেলেই কাটাতে হয়েছিল । অবশ্য আমি আর খবর নিইনি ।
-ছেলে যোগাযোগ রেখেছে ?
-বলতে পারব না ।
আমি বললাম - ত্রিনুদা , এরপর রুমি পল্লব বসুর আত্মাকে আর দেখেছিলে ?
ত্রিনুদা বলল – না দেখেনি । তবে মনে এক অদ্ভুত শান্তি পেয়েছিলাম । আমার মনে হয় পল্লব বাবু হার্টফেল করে মারা যাওয়ার পরেই এবং ছাদে আসেন আমার সাথে যোগাযোগ করবার জন্যই । আমার সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সফল হন । তার আত্মা মুক্তি পাচ্ছিল না , কারণ নিজের মৃত্যুর উৎস খুঁজছিল । আশা করি মুক্তি পেয়েছেন । আমি এই ঘটনার আগে পর্যন্ত মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে খুব একটা ভাবতাম না । ওরা এখানেই আছে আমাদের খুব কাছাকাছি ...
-তারমানে তুমিই শুধু তার সাথে যোগাযোগ করতে পারতে ?
-হ্যাঁ । মৃত মানুষের আত্মাও আমাদের সাথেই থাকে । আমরা বুঝতেও পারিনা । আমাদের দেহ আসলে কন্ডাকটর বা এন্টেনা । আর মৃত আত্মারা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ । মাঝে যথার্থ ট্রান্সমিটার থাকলে মৃত আর জীবিত আত্মাদের মধ্যে যোগাযোগ করা সম্ভব। অনেক সময় বিশেষ কোন মানুষের অবস্থানগত পরিবেশই ট্রান্সমিটারের কাজ করে । আবার সেই মানুষটি নিজের ইচ্ছা শক্তি থেকেও এই ব্যাপারটা ঘটাতে পারে । আসল কথা হচ্ছে , ওরা এখানেই আছে , আমাদের কাছাকাছি ।
এখন মধ্য দুপুর । সিঁড়ির মুখেই কেষ্টদার গলা শোনা যাচ্ছে । দুপুরের খাবার সাজানো হয়েছে । মেনু ভালোই । ডাক এসেছে । এতক্ষণে আমাদেরও মুক্তির বার্তা ভেসে এলো ! ক্ষিধে থেকে মুক্তি । মুমিনের মুখটা আনন্দে ভরে উঠল ।
chakrabortypinaki50@gmail.com
সুচিন্তিত মতামত দিন