রৌদ্রাশ্ব মেসবাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সান্ধ্য চা-টা তাড়িয়ে পান করছিল ।কলেজ থেকে ফিরে রামুর হাতের মোটা রুটি ও সব্জি খেয়েই সে বসে পড়ে,সারাদিনে কলেজে যা যা ক্লাস হয়েছে তা আরও একবার বই-খাতা খুলে সে ভালো করে দেখে নিয়ে নিজের মত করে সাজিয়ে লিখে নেয় ।তারপর চা পানের পর শুরু হবে সেগুলো আত্মস্থ করার পালা। তা চলবে গভীর রাত পর্যন্ত ।মাঝে একবার ডিনার এর জন্য ব্রেক। এভাবেই রুটিন ফলো করে চলে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পড়তে আসা রৌদ্রাশ্বর ।
এহেন নিয়ম-নিষ্ঠ , গ্রাম্য ছেলেটির পেছনে মেসবাড়ীর অন্যান্য ছেলেরা প্রথম প্রথম কম লেগে থাকতো না ।কিন্তু যার পেছনে লাগা তার যদি ভালো-মন্দ কোন রিয়াকশনই না হয়,তবে কাঁহাতক ভালোলাগে এত কসরৎ! অগত্যা তারা আবার ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন। কিন্তু হলে হবে কি! আবার সে পথটা খুলে দিল সই ।রৌদ্রাশ্বর সহপাঠিনী ।প্রায়ই সে মেসে আসে রৌদ্রাশ্বর কাছে । কখনও পড়াশুনো নিয়ে একটু আলোচনা করতে,কখনও লাইব্রেরীর বই অদল-বদল করতে,কখনও নোটস্ আদান-প্রদান করতে ।
সই এর মত সুন্দরী, স্মার্ট মেয়ে রৌদ্রাশ্বর দোরে বারংবার,কী ব্যাপার ?এমন সব প্রশ্ন তাড়া করে রৌদ্রাশ্বকে কলেজ ও মেসে,একটু মজার ছলেই ।রৌদ্রাশ্ব বড় বিরক্ত বোধ করে এসবে ।আরো খারাপ লাগে এই ভেবে,সই এর কানে এসব গেলে কী বাজেই না ভাববে তাকে, ছিহ্ !
#
সই ব্ল্যাক লঙ স্কার্ট, স্লিভলেস লাইট ইয়ালো টপ পড়ে আয়নার সামনে নিজেকে ক'বার দেখে নিল ।এবার শ্যাম্পু করা চুলটা ড্রায়ার দিয়ে ঈষত শুকিয়ে বেশ ক'বার স্ট্রেইটনার চালিয়ে নিল চুলে ।নভেম্বর মাস শীত যেমন পড়েনি কলকাতায় তেমনি বিশ্রী গরম ভাবটাও নেই ।বেশ একটা মনোরম আবহাওয়া। ।তাই চুল ছেড়ে বেরোতে কোন অসূবিধাই নেই ।মুখে প্রসাধন বলতে জাস্ট সানস্ক্রিন লোশন ও ঠোঁটে ন্যাচরাল কালারের লিপস্টিক ।আর বেরোনর আগে একটু পারফিউম,এই তার সাজ ।
কলেজে বেরোবে অমনি মা এসে,''সোনাই এই বাটির পায়েসটুকু খেয়ে নে বাবা, তোর ফিরতে ফিরতে সেই তো সন্ধ্যে !''
-উফ: মা !পেটপুরে পাস্তা খাওয়ার পর কি আর বাটি ভর্তি পায়েস খাওয়া যায় ?
-খুব যায় বাবা,খুব যায় ।
মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন মায়া হল তার । দু'চামচ তুলে নিয়ে বলল, --এবার তুমি খুশি তো ! মেয়ের এমনতর পরিণত কথা শুনতে বেশ লাগে তনিমার, একটু হেসে মেয়েকে বলল ... সাবধনে যাস কেমন !
কলেজে পৌঁছেই সইএর চোখ দুটো খোঁজে রৌদ্রাশ্বকে । রৌদ্রাশ্ব কি তা বোঝে ?জানে না সই !এভাবেই কেটে গেল তিনটি বছর,এবার ফাইনাল ইয়ার ।তারপর কে কোথায় ছিটকে পড়বে তার নেই ঠিক ।এ ক'বছরে কত সম্পর্ক গড়লো আবার ভেঙেও গেল আবার গড়লো ।এই ভাঙা-গড়ার খেলায় তার আর রৌদ্রাশ্বর সম্পর্ক যে কোন পর্যায়ে পড়ে কে জানে ! কতদিন ভেবেছে সই,আজ তার রৌদ্রাশ্বকে বলবে তার মনের কথা কিন্তু তারপরেই আবার হারাবার ভয়ে আর এগোনো হয়নি ।
মেইন এন্ট্রান্স দিয়ে ঢুকে মাঠ পেরিয়ে এগোতেই আম্রপালির সাথে দেখা, ভালোই হল তোর সাথে দেখা হয়ে, আজ আমার প্রক্সি দিয়ে দিবি রে ! সই একটু হেসে, কেন নীলার্কর সাথে কোথাও চললি বুঝি ? না রে,কাজটা হলে এসে বলবো । কথার গুরুত্ব বুঝে সই বলল, ওকে,তুই নিশ্চিন্তে যা,আমি প্রক্সি দিয়ে দেব কেমন!
--বাই ।----অল দ্য বেস্ট ।
#
কে.বি.স্যার এর ইকনমিক্স ক্লাসে ঢুকতেই রোদ্রাশ্বকে একবার খুঁজে নিতে চাইল সই এর চোখ দুটো । ধড়াস করে উঠল বুক । কোথায় রৌদ্রাশ্ব ? এমন তো কখনও হয় না । ক্লাসে বসলো বটে,মন বড্ড ছটফট ।ইচ্ছে হচ্ছে এই মাত্র বেরিয়ে গিয়ে সারা কলেজটা খুঁজে বেড়াতে ।ক্লাস শেষে সই দৌড়ে গেল লাইব্রেরী,তারপর ক্যান্টিন । নাহ,কোথাও নেই ।হল কী ছেলেটার ! একবার মেসে গিয়ে দেখে আসি,অমনি ছুটলো সই । ভরদুপুর অলি-গলি পথে রিক্সার বিশেষ দেখা মেলে না, একটু এগোতেই দেখে রৌদ্রাশ্ব,সঙ্গে কে ? আম্রপালী ! কী এত কথা হচ্ছে তাদের মধ্যে ? সই এর খুব অস্থির লাগছে শরীর । সমস্ত শরীর দিয়ে এক শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে যেন । কোনক্রমে দৌড়ে পালিয়ে এসেছে কলেজ ক্যান্টিনে । এ ঘটনার পর আর কখনও সে রৌদ্রাশ্ব ও আম্রপালীর মুখোমুখি হয়নি ।তারপর ফাইনাল ইয়ার কমপ্লিট করে জি.আর.ই. দিয়ে সে চলে যায় ম্যাসাচুসেট্স,মাস্টার অফ সাইন্স পড়তে । দীর্ঘ বছর কোন বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করেনি সই ।একদিন কি মনে করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রোফাইল খুলে ফেলল । পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ ।বেশ ভালো লাগছে তার । কেন যে এতকাল সে কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি ।নিজেকে বড্ড বোকা মনে হচ্ছে তার । এমনই একদিন ইনবক্সে কথা চলছিল রূপকথার সঙ্গে, হঠাত্ রূপকথা বলে বসলো,''একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিছু মনে করবি নাতো ? ''এ প্রান্ত থেকে সই জানায়,''বল না, এত ভনিতা করবার কি প্রয়োজন ।'' রূপকথা একটু ইতস্তত করে,''বলছিলাম এ ক'বছর রোদ তোকে খুব খুঁজেছে রে,জানি না কেন !আমি তার কারণ কোনদিন রোদকে জিজ্ঞেসও করিনি,আমার মনে হয়,রোদ তোর প্রেমে আচ্ছন্ন গভীরভাবে। বন্ধু হিসেবে আমার তোকে এটুকুই বলবার ছিল । ''সই এবার নিজেকে যারপরনাই সংযত রেখে জিজ্ঞেস করে,''আম্রপালীর কোন খবর জানিস ? ''রূপকথা বিন্দু মাত্র সময় ব্যায় না করে,''সে তো দুবাইতে সেটেল্ড, আমি,আম্র,রোদ,নীল কলেজের আরো ক'জন একটি অনাথ আশ্রমের সাথে যুক্ত ছিলাম, আশ্রমের হয়ে আমরা ফান্ড কালেক্ট করতাম, রোদ আর আম্র আশ্রমের অনাথ ছেলে-মেয়েদের জন্য খুব পরিশ্রম করতো ।''
এবার সই এর যেন অনুতাপ হতে লাগলো,সে কি না জেনে-বুঝেই রোদকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে !এবার ফিরে যেতেই হবে রোদের কাছে ;রোদ ক্ষমা করবেতো তার সই কে !
এহেন নিয়ম-নিষ্ঠ , গ্রাম্য ছেলেটির পেছনে মেসবাড়ীর অন্যান্য ছেলেরা প্রথম প্রথম কম লেগে থাকতো না ।কিন্তু যার পেছনে লাগা তার যদি ভালো-মন্দ কোন রিয়াকশনই না হয়,তবে কাঁহাতক ভালোলাগে এত কসরৎ! অগত্যা তারা আবার ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন। কিন্তু হলে হবে কি! আবার সে পথটা খুলে দিল সই ।রৌদ্রাশ্বর সহপাঠিনী ।প্রায়ই সে মেসে আসে রৌদ্রাশ্বর কাছে । কখনও পড়াশুনো নিয়ে একটু আলোচনা করতে,কখনও লাইব্রেরীর বই অদল-বদল করতে,কখনও নোটস্ আদান-প্রদান করতে ।
সই এর মত সুন্দরী, স্মার্ট মেয়ে রৌদ্রাশ্বর দোরে বারংবার,কী ব্যাপার ?এমন সব প্রশ্ন তাড়া করে রৌদ্রাশ্বকে কলেজ ও মেসে,একটু মজার ছলেই ।রৌদ্রাশ্ব বড় বিরক্ত বোধ করে এসবে ।আরো খারাপ লাগে এই ভেবে,সই এর কানে এসব গেলে কী বাজেই না ভাববে তাকে, ছিহ্ !
#
সই ব্ল্যাক লঙ স্কার্ট, স্লিভলেস লাইট ইয়ালো টপ পড়ে আয়নার সামনে নিজেকে ক'বার দেখে নিল ।এবার শ্যাম্পু করা চুলটা ড্রায়ার দিয়ে ঈষত শুকিয়ে বেশ ক'বার স্ট্রেইটনার চালিয়ে নিল চুলে ।নভেম্বর মাস শীত যেমন পড়েনি কলকাতায় তেমনি বিশ্রী গরম ভাবটাও নেই ।বেশ একটা মনোরম আবহাওয়া। ।তাই চুল ছেড়ে বেরোতে কোন অসূবিধাই নেই ।মুখে প্রসাধন বলতে জাস্ট সানস্ক্রিন লোশন ও ঠোঁটে ন্যাচরাল কালারের লিপস্টিক ।আর বেরোনর আগে একটু পারফিউম,এই তার সাজ ।
কলেজে বেরোবে অমনি মা এসে,''সোনাই এই বাটির পায়েসটুকু খেয়ে নে বাবা, তোর ফিরতে ফিরতে সেই তো সন্ধ্যে !''
-উফ: মা !পেটপুরে পাস্তা খাওয়ার পর কি আর বাটি ভর্তি পায়েস খাওয়া যায় ?
-খুব যায় বাবা,খুব যায় ।
মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন মায়া হল তার । দু'চামচ তুলে নিয়ে বলল, --এবার তুমি খুশি তো ! মেয়ের এমনতর পরিণত কথা শুনতে বেশ লাগে তনিমার, একটু হেসে মেয়েকে বলল ... সাবধনে যাস কেমন !
কলেজে পৌঁছেই সইএর চোখ দুটো খোঁজে রৌদ্রাশ্বকে । রৌদ্রাশ্ব কি তা বোঝে ?জানে না সই !এভাবেই কেটে গেল তিনটি বছর,এবার ফাইনাল ইয়ার ।তারপর কে কোথায় ছিটকে পড়বে তার নেই ঠিক ।এ ক'বছরে কত সম্পর্ক গড়লো আবার ভেঙেও গেল আবার গড়লো ।এই ভাঙা-গড়ার খেলায় তার আর রৌদ্রাশ্বর সম্পর্ক যে কোন পর্যায়ে পড়ে কে জানে ! কতদিন ভেবেছে সই,আজ তার রৌদ্রাশ্বকে বলবে তার মনের কথা কিন্তু তারপরেই আবার হারাবার ভয়ে আর এগোনো হয়নি ।
মেইন এন্ট্রান্স দিয়ে ঢুকে মাঠ পেরিয়ে এগোতেই আম্রপালির সাথে দেখা, ভালোই হল তোর সাথে দেখা হয়ে, আজ আমার প্রক্সি দিয়ে দিবি রে ! সই একটু হেসে, কেন নীলার্কর সাথে কোথাও চললি বুঝি ? না রে,কাজটা হলে এসে বলবো । কথার গুরুত্ব বুঝে সই বলল, ওকে,তুই নিশ্চিন্তে যা,আমি প্রক্সি দিয়ে দেব কেমন!
--বাই ।----অল দ্য বেস্ট ।
#
কে.বি.স্যার এর ইকনমিক্স ক্লাসে ঢুকতেই রোদ্রাশ্বকে একবার খুঁজে নিতে চাইল সই এর চোখ দুটো । ধড়াস করে উঠল বুক । কোথায় রৌদ্রাশ্ব ? এমন তো কখনও হয় না । ক্লাসে বসলো বটে,মন বড্ড ছটফট ।ইচ্ছে হচ্ছে এই মাত্র বেরিয়ে গিয়ে সারা কলেজটা খুঁজে বেড়াতে ।ক্লাস শেষে সই দৌড়ে গেল লাইব্রেরী,তারপর ক্যান্টিন । নাহ,কোথাও নেই ।হল কী ছেলেটার ! একবার মেসে গিয়ে দেখে আসি,অমনি ছুটলো সই । ভরদুপুর অলি-গলি পথে রিক্সার বিশেষ দেখা মেলে না, একটু এগোতেই দেখে রৌদ্রাশ্ব,সঙ্গে কে ? আম্রপালী ! কী এত কথা হচ্ছে তাদের মধ্যে ? সই এর খুব অস্থির লাগছে শরীর । সমস্ত শরীর দিয়ে এক শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে যেন । কোনক্রমে দৌড়ে পালিয়ে এসেছে কলেজ ক্যান্টিনে । এ ঘটনার পর আর কখনও সে রৌদ্রাশ্ব ও আম্রপালীর মুখোমুখি হয়নি ।তারপর ফাইনাল ইয়ার কমপ্লিট করে জি.আর.ই. দিয়ে সে চলে যায় ম্যাসাচুসেট্স,মাস্টার অফ সাইন্স পড়তে । দীর্ঘ বছর কোন বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করেনি সই ।একদিন কি মনে করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রোফাইল খুলে ফেলল । পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ ।বেশ ভালো লাগছে তার । কেন যে এতকাল সে কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি ।নিজেকে বড্ড বোকা মনে হচ্ছে তার । এমনই একদিন ইনবক্সে কথা চলছিল রূপকথার সঙ্গে, হঠাত্ রূপকথা বলে বসলো,''একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিছু মনে করবি নাতো ? ''এ প্রান্ত থেকে সই জানায়,''বল না, এত ভনিতা করবার কি প্রয়োজন ।'' রূপকথা একটু ইতস্তত করে,''বলছিলাম এ ক'বছর রোদ তোকে খুব খুঁজেছে রে,জানি না কেন !আমি তার কারণ কোনদিন রোদকে জিজ্ঞেসও করিনি,আমার মনে হয়,রোদ তোর প্রেমে আচ্ছন্ন গভীরভাবে। বন্ধু হিসেবে আমার তোকে এটুকুই বলবার ছিল । ''সই এবার নিজেকে যারপরনাই সংযত রেখে জিজ্ঞেস করে,''আম্রপালীর কোন খবর জানিস ? ''রূপকথা বিন্দু মাত্র সময় ব্যায় না করে,''সে তো দুবাইতে সেটেল্ড, আমি,আম্র,রোদ,নীল কলেজের আরো ক'জন একটি অনাথ আশ্রমের সাথে যুক্ত ছিলাম, আশ্রমের হয়ে আমরা ফান্ড কালেক্ট করতাম, রোদ আর আম্র আশ্রমের অনাথ ছেলে-মেয়েদের জন্য খুব পরিশ্রম করতো ।''
এবার সই এর যেন অনুতাপ হতে লাগলো,সে কি না জেনে-বুঝেই রোদকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে !এবার ফিরে যেতেই হবে রোদের কাছে ;রোদ ক্ষমা করবেতো তার সই কে !
moumitasenguptaslg@gmail.com
সুচিন্তিত মতামত দিন