সমাজে ঘটে চলা ধর্ষণ, নারী লাঞ্ছনা এখন প্রতিদিনের শিরোনাম। শিশু শ্রমিক, ভ্রুন হত্যা আমাদের অভ্যাসে। জাতপাতের নামে উলঙ্গ করে দেওয়া শিক্ষার হাল আত্মস্থ না হলেও বাধ্য বাধকতায় ধাতস্ত। মেধা হত্যা , স্বজন পোষণ, দমন পীড়ন এখন মূলত সভ্য শাসন। রাজনীতি আদর্শের না হলেও স্তাবকতায় অপরিহার্যের। সংবিধান, প্রণীত আইন, প্রশাসক ... কতটা রক্ষক!
ভোগ রোগ যেখানে ক্রমবর্ধমান সেখানে দুর্নীতি, বিচ্যুতি, হুজ্জুতি এখন উৎসবের চেহারায়, অবাধে অযোগ্যতায় লুটপাটের ব্যপকতায়।
লিখছেন, অনেকেই লিখছেন বিগত সঙ্কলনগুলির বিভিন্ন বিষয়ে শব্দের মিছিলে, বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁদের মতো করে সমাজ কে নব আঙ্গিকে গড়ে তোলার অদম্য বাসনায়। রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থার প্রকৃত উন্নত সাধনে এঁদের বেশিরভাগই বিশ্বাস করেন – গাধা নয় মেধায় মনোনীত হোক সংসদ থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ অনান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গুলির সহিত যোগ্য প্রশাসন / আধিকারিক ।
আবার অধিকাংশ মানুষই ‘ ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ বাহিত প্রবল প্রকট রোগে আছন্ন বলেই ... রাজনীতির সুলভ চটুলতায় নিরঙ্কুশ অবস্থান করছেন।
আসন্ন সঙ্কলনটির আহবায়িত বিষয় ( থিম ) নিয়ে ভাবার পর পড়ছিলাম অপারের কবি বীরেন মুখার্জীর একাধিক কবিতা এবং কবিকে নিয়ে বিশ্লেষণ ধর্মীয় ব্যক্তি কলাম। একদিকে কবিতা অন্যদিকে বিশ্লেষণ ... । বীরেন মুখার্জীর কবিতা পাঠে এ সত্যই প্রতীয়মান হয়, তিনি মহান উদ্দেশ্যে প্রেমিকমানব হয়ে উঠতে চেয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, কবি সাহিত্যিকদের আদতে কোন ঘর নেই, গোটা পৃথিবীই তাদের বসস্থল।
যাদের চিন্তা-জগতের সবটুকু জুড়ে রয়েছে মানুষ-সমাজ-রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা, মূলত তাঁদের এই ‘দায়বদ্ধতা’র মধ্যে থেকেই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাঁদের দর্শনের প্রকৃতক্ষেত্র। নব্বইয়ের অন্যতম কবি বীরেন মুখার্জীও এঁদের একজন, যিনি সমাজের নানামাত্রিক ক্ষয়ের ভেতর দিয়েও আলোর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে।
তাঁর শিল্প-চোখে অবলোকন করেছেন কীভাবে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় অবক্ষয়ের সার্বিক কর্কটরোগে, মানুষের পারিবারিক বন্ধন বিনষ্ট হয়েছে, ছিন্ন হয়ে গেছে পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানের নিবিড় সম্পর্ক, স্বামীর সঙ্গে স্ত্রী এমন কি এক পড়শি মানুষের সঙ্গে অন্য মানুষের নিদারুন সম্পর্ক।
তিনি যা ভেবেছেন, তাই সরাসরি কবিতায় উপস্থাপন করেছেন। সৌহার্দ্য সম্প্রীতি এবং ভালোবাসায় বিবেকের কাছে থাকতে চেয়েছেন নিরপেক্ষ। যেমন এক কবিতায় ...
“দ্রোহের প্রজ্জ্বলিত আগুন থেকে উৎসারিত
বোধের রেখায় পারাপার হতে দেখেছি-
মানুষের সুচতুর লোভ”।
(প্রণয় ও লোভ)
এ জীবন সরল নয় সব সময়। আবার এই জীবন কঠিন নয় সব সময়। সময়ের সাথে বিবর্তনের রাক্ষুসীধারা আমাদের যতই গ্রাস করতে এগিয়ে আসুক না কেন, আমরা ধ্যানস্থ প্রেম ও প্রজ্ঞায়। এই প্রেম মানবিক। যার মধ্যে সবকিছুই বিদ্যমান। এই প্রেম- যার মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে সময়, স্বদেশ, চেতনা, প্রকৃতি আর মানুষের প্রতি মমত্ববোধ।
এই বোধ থেকেই ৭৩তম সঙ্কলনের আহবায়িত বিষয় ‘মূল্যায়ন’। যা ... অত্যন্ত জরুরি একটি শব্দ...। সময় এসেছে সেই শব্দটিকে ভিত্তি করে আমাদের চারপাশটিকে নতুন করে দেখে নেওয়ার...। কোন পথে চলেছে আমাদের সমাজ?
ক্রমাগত অবনতির পথে কেন চলেছে এই দেশ তথা এই রাজ্যের রাজনীতি? কেন এই ভয়ানক অবক্ষয়ের মুখে আজ আমাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা? কেন আজ ক্রমশ নিম্নগামী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য-পরিষেবা, শিল্প-সম্ভাবনা?
কোন পথে চলতে গিয়ে ক্রমশ পথ হারাচ্ছে মনুষ্যত্ব? কেন আজ ভয়ানক অবক্ষয়ের মুখে মানুষের মূল্যবোধ? অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী কেন আজ দলদাস? কোন অন্ধকার আজ আবার আমাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে ধর্মীয় উন্মাদনা, বিভেদ ও অবিশ্বাসের দিকে? কেন ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে সাধারণ মানুষের অধিকার আর ফুলেফেঁপে উঠছে ধনবান সম্প্রদায় ?
উৎসব-মরসুমের আনন্দ শেষ হওয়ার পরে, আসুন আমরা একটু তাকিয়ে দেখি এইসব সমস্যার দিকে... । মূল্যায়নের চেষ্টা করি, আমাদের চারপাশের অবস্থান। সমাধানের চেস্টা করি আমাদের বোধ, আমাদের বিবেক, আমাদের শিক্ষা, আমাদের কর্ম, আমাদের সক্রিয় শুভ ইচ্ছার মধ্যদিয়ে।
স-বোধ থেকেই প্রত্যাশা, সমবেত সমমন থেকেই অনুভব করি অসংখ্য হৃদয়ের প্রতিধ্বনি ... আমরা করব জয় একদিন ...
Tags:
সম্পাদকীয়