শুভশ্রী সাহা

মূল্যায়ন
মূল্যায়ন করার যোগ্যতা বড় কঠিন। আমরা এত অন্তঃ সার শূন্য জীবন নিয়ে বেঁচে আছি যে মনে হয় অব মুল্যায়নের সব গল্প আমাদের  চেনা। ছোট বেলায় ঠাকুমা দাদু মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে বলতেন তুমি জজ মেজেস্টর হয়ে দেশের দশের মুখ উজ্জ্বল করো। শামলা আঁটা মাথায় পাগড়ি পরা ন্যায়াধীশদের দেখলে যে সম্ভ্রম ভরসা জাগত, এখন সুপ্রীম কোর্টের বিচার পতিদের কাগজে কলমে পড়লে মনে হয় থানার চৌকিদার। 

সেই গুরু গম্ভীর চেয়ার, ন্যায়দন্ড কত হালকা হয়ে গেছে! দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা আর কাঁদে কই! সি বি আই  চোর ধরতে নেমে নিজেরাই ডাকাত হয়ে ধরা পড়ে যায়, নগরপাল দ্বার রক্ষা না করে ঢুকিয়ে দেয় সেনানী। মহিলা আই পি এস হাতে গোনা রাজ্যে, এমন কি দেশেও ।আজকাল তাদের ঘরেও বাক্স বাক্স সোনা, প্যাটরায় টাকা! না না এতো উনি নন ওনার ছেলের, স্বামীর, আরে কষ্ট করে রোজগার করা রে ভাই! আপনি বললেই হলো! বুদ্ধং শরণম গচ্ছামি, সঙ্ঘং শরণম গচ্ছামি! 

সত্যের ফলো করা বোকামি! আপনি মধ্যবিত্ত ... আপনি কিন্তু টাইমে টোটোর পারমিট না দেখাতে পারলে লাইনে বসিয়ে দেবে লাইন ম্যান! আপনার আধার কার্ড ঠিকমত জমা না দিলে, কেওয়াই সি জমা না পড়লে আপনার পেনশন একবারেই বন্ধ হয়ে যাবে! আপনি সিনিয়র সিটিজেন বলে সব মাফ হয়ে যাবে! বুড়ো তো কালের নিয়মেই হয়েছেন তাই বলে আপনি সন্তানদের দেখতে বাধ্য বলে তাদের মূল্যায়ন করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে! প্রশ্ন করবেন না, আপনি বেয়াদব লোক জানেন না, নিয়ম বড় কঠিন জিনিষ তার সঠিক মূল্যায়ন না করলে আহা দেশের, দশের ক্ষতি হয়? 

ছোটবেলায় বাসে উঠলেই কাকুদের কোল ছিল ফ্রি! হাত বাড়ালেই কোলে ঝাঁপানো, এখন ছোটরা জল ভরা চোখে নেমে পড়তে চাইলেও ক্লাস টেনের ছাত্রী কি করবে! সেতো লোক দেখিয়ে কাঁদতে পারেনা, সে আরও শক্ত হয়ে যায় ক্রমশ শরীর থেকে মনে! এমন ভাবেই বড় হতে হতে একসময় যেদিন প্রেমিক শরীর ঘেটে নিয়ে, ছেড়ে দিয়ে পালালো সেদিন সে ব্লেড টেনে দিলো হাতের শিরায়। পেছনে মা বাবা ছোট বোন টা পড়ে রইল সারা জীবন মলিন মুখে কাদা মেখে! 

কার অবমূল্যায়ন হলো, মেয়েটির না গোটা সমাজের? যা তাকে খন্ডিত হতে দিলো! আত্মহত্যা একটি পাপ তা জেনেও সময়ের অবমুল্যায়নে আমাদের হারতে হয় বার বার! কার মূল্যায়ন করবো চরিত্রে! সমাজের! না আমাদের মত অমেরুদণ্ডী প্রানীদের, ক্লীবদের যারা নিতে পারি দিতে পারিনা কিছুই! আমরা চোখ বুজে থাকি ভয়ে না বাঁচার আশায় না পালাবদলের তাগিদে উত্তর নেই! আসলে স্বান্তনা খুঁজি নিজেদের করা সমস্ত ভুলের কাছে। মূল্যায়ন নেই কাজের শুধু দমন আছে। অন্যায়, অত্যাচারের পাশে আমরা গুটিয়ে যাই শামুকের খোলের মত। 

যে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি রাজনৈতিক ইন্সটিটিউশন এর কাছে আমাদের বিবেক যেন  শিশুর মত ঘুমিয়ে পড়ে! সেখানে বিত্তে ক্ষমতায় মুল্যায়ন চলে। আমাদের মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ জাগে শুধুমাত্র ঝিকে মেরে বউকে শেখাতে, পাড়ার মোড়ে বসে বুজগুড়ি কাটতে আর বৃদ্ধ বাবা মাকে শাসন করতে।  

মূল্যায়ন কার করবো! সময় সমাজ দেশের দশের নাকি আসলে নিজের! নামতে নামতে কত নিচে নেমে গেছি আমি! আমি! আমি! আমি! এই সমগ্র আমরাদের মুল্যায়ন কে করবে! - আমি র লোভে আমি র পাকে আমরা বুঝি বিক্রি করে দিয়েছি বিবেক, বোধ এবং সঠিক মূল্যায়নে নির্ভীক মেরুদন্ডকে!

suvasree1972@gmail.com


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.